বগুড়ার টুপি যাচ্ছে বিশ্ববাজারে

কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে বগুড়ার শেরপুরের টুপিপল্লী। গ্রাম্যবধূদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর সুতা ও ক্রুশ কাঁটায় মিলিত বন্ধনেই তৈরি হচ্ছে রং-বেরঙের রকমারি টুপি। রমজানের ঈদকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইনের টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টুপিপল্লীর কারিগররা। শেরপুরে তৈরি টুপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

 

জানা যায়, কয়েক দশক আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কল্যাণী গ্রামের গ্রাম্যবধূরা টুপি বুনোনের কাজ শুরু করে। সে গ্রামের নারী পুরুষ তখন টুপি তৈরি করে বিক্রি করতেন। এরপর থেকে তা আস্তে আস্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এমনকি বিগত ১৫ বছরের ব্যবধানে টুপি তৈরিতে অনেকটা বিপ্লব ঘটে যায়। বর্তমানে উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামে কমবেশি বাণিজ্যিকভাবে টুপি তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে জয়লা-জুয়ান, জয়লা-আলাদি, কল্যাণী,  চক-কল্যাণী, চকধূলি গুয়াগাছী, বিনোদপুর, মির্জাপুর, খানপুর, খানপুর দহপাড়া,  শেরুয়া, শেরুয়া বটতলা, হামছায়াপুর, কাঁঠালতলা, ভিমজানি গ্রাম অন্যতম। বছরের ১১ মাসই এই পেশার সঙ্গে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকেন। যাদের মধ্যে সিংহভাগই নারী। মরিয়ম, শিল্পী খাতুন জানান, জন্মের পর থেকেই নিজেকে টুপি তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তাদের মতে, বাড়িতে কর্মহীন হয়ে বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করাই ভালো। এমন ভাবনা এবং বংশীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করতে অনেকেই টুপি তৈরি শিল্পের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। শেরপুরের টুপি তৈরির কারিগর কুলসুম বিবি জানান, সংসারের সব কাজ শেষ করে ক্রশ কাঁটা নিয়ে বসে থেকে টুপি তৈরি করা হয়। একেকজন একেক নামের টুপি তৈরি করে থাকেন। টুপি তৈরির পর সে সব টুপি ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে দেওয়া হয়। পরিষ্কার টুপি পাইকাররা বেছে বেছে প্যাকেট করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন।

 

শিরিন আকতার জানান, টুপি তৈরির জন্য একেকটা একেক দাম দিয়ে থাকে। ভালোমানের টুপি ১০০ টাকা পর্যন্ত এবং জালি টুপি ২০ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে থাকে। এই টুপিই আবার বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

 

টুপি তৈরির কারিগর ছাবিনা খাতুন জানান, গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরি করে থাকে। এ ছাড়া গ্রামের গৃহবধূরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুপি তৈরি করে আয় করে থাকে। বিশেষ করে প্রতি বছর রমজান মাসে গ্রামে গ্রামে টুপি তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। সবকিছু বাদ দিয়ে গৃহবধূরা টুপি তৈরির কাজ করেন। এ সময় বাড়ির অন্যরাও বসে থাকেন না। তারাও কোনো না কোনোভাবে এ কাজে সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশ জালি টুপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জুয়েল আকন্দ জানান, বাংলাদেশের মধ্যে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি টুপি তৈরি হয়ে থাকে। তাহফিজ নামে জালি টুপির কদর এবার সবচেয়ে বেশি। তিনি জানান, করোনার কারণে বিগত দুই বছর ব্যবসায় স্থবিরতা ছিল। তবে সেটি ইতোমধ্যে কেটে যেতে শুরু করেছে। দেশীয় টুপি নিতে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা অগ্রিম অর্ডার দিয়ে থাকেন। সেই অনুযায়ী তিনি নারীদের পারিশ্রমিক দিয়ে টুপি তৈরি করে নেন। পরে এসব বাহারি ডিজাইনের টুপি সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিলেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত

» ড. ইউনূস চান সার্কের কার্যক্রম শুরু হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুদকের মামলায় হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের স্ত্রীর জামিন

» থার্টিফার্স্ট নাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট

» সিরিয়ায় আসাদের পতন নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

» জেনে রাখুন এই ভুলে গিজার বিস্ফোরণ হয়

» গাঁজা সেবন নিয়ে বিরোধে যুবক খুন, গ্রেফতার ২

» আটকে দেওয়া হলো বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা

» ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত: রিজভী

» অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: জাহাঙ্গীর আলম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বগুড়ার টুপি যাচ্ছে বিশ্ববাজারে

কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে বগুড়ার শেরপুরের টুপিপল্লী। গ্রাম্যবধূদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর সুতা ও ক্রুশ কাঁটায় মিলিত বন্ধনেই তৈরি হচ্ছে রং-বেরঙের রকমারি টুপি। রমজানের ঈদকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইনের টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টুপিপল্লীর কারিগররা। শেরপুরে তৈরি টুপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

 

জানা যায়, কয়েক দশক আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কল্যাণী গ্রামের গ্রাম্যবধূরা টুপি বুনোনের কাজ শুরু করে। সে গ্রামের নারী পুরুষ তখন টুপি তৈরি করে বিক্রি করতেন। এরপর থেকে তা আস্তে আস্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এমনকি বিগত ১৫ বছরের ব্যবধানে টুপি তৈরিতে অনেকটা বিপ্লব ঘটে যায়। বর্তমানে উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামে কমবেশি বাণিজ্যিকভাবে টুপি তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে জয়লা-জুয়ান, জয়লা-আলাদি, কল্যাণী,  চক-কল্যাণী, চকধূলি গুয়াগাছী, বিনোদপুর, মির্জাপুর, খানপুর, খানপুর দহপাড়া,  শেরুয়া, শেরুয়া বটতলা, হামছায়াপুর, কাঁঠালতলা, ভিমজানি গ্রাম অন্যতম। বছরের ১১ মাসই এই পেশার সঙ্গে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকেন। যাদের মধ্যে সিংহভাগই নারী। মরিয়ম, শিল্পী খাতুন জানান, জন্মের পর থেকেই নিজেকে টুপি তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তাদের মতে, বাড়িতে কর্মহীন হয়ে বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করাই ভালো। এমন ভাবনা এবং বংশীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করতে অনেকেই টুপি তৈরি শিল্পের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। শেরপুরের টুপি তৈরির কারিগর কুলসুম বিবি জানান, সংসারের সব কাজ শেষ করে ক্রশ কাঁটা নিয়ে বসে থেকে টুপি তৈরি করা হয়। একেকজন একেক নামের টুপি তৈরি করে থাকেন। টুপি তৈরির পর সে সব টুপি ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে দেওয়া হয়। পরিষ্কার টুপি পাইকাররা বেছে বেছে প্যাকেট করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন।

 

শিরিন আকতার জানান, টুপি তৈরির জন্য একেকটা একেক দাম দিয়ে থাকে। ভালোমানের টুপি ১০০ টাকা পর্যন্ত এবং জালি টুপি ২০ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে থাকে। এই টুপিই আবার বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

 

টুপি তৈরির কারিগর ছাবিনা খাতুন জানান, গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরি করে থাকে। এ ছাড়া গ্রামের গৃহবধূরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুপি তৈরি করে আয় করে থাকে। বিশেষ করে প্রতি বছর রমজান মাসে গ্রামে গ্রামে টুপি তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। সবকিছু বাদ দিয়ে গৃহবধূরা টুপি তৈরির কাজ করেন। এ সময় বাড়ির অন্যরাও বসে থাকেন না। তারাও কোনো না কোনোভাবে এ কাজে সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশ জালি টুপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জুয়েল আকন্দ জানান, বাংলাদেশের মধ্যে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি টুপি তৈরি হয়ে থাকে। তাহফিজ নামে জালি টুপির কদর এবার সবচেয়ে বেশি। তিনি জানান, করোনার কারণে বিগত দুই বছর ব্যবসায় স্থবিরতা ছিল। তবে সেটি ইতোমধ্যে কেটে যেতে শুরু করেছে। দেশীয় টুপি নিতে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা অগ্রিম অর্ডার দিয়ে থাকেন। সেই অনুযায়ী তিনি নারীদের পারিশ্রমিক দিয়ে টুপি তৈরি করে নেন। পরে এসব বাহারি ডিজাইনের টুপি সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com