গলায় ওড়নার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ফ্যান থেকে ঝুলছেন এক যুবক। বিছানায় পড়ে রক্তাক্ত এক যুবতী। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে ভারতের সার্ভে পার্ক থানা এলাকার কালিকাপুরের সর্দারপাড়ায় এ ভাবেই পাওয়া যায় এক যুগলকে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম শ্যামল রায় ওরফে জ্যাকি (৩২) এবং শেফালি খাতুন (৩০)। বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শ্যামলের বাড়ি সন্তোষপুরের লেক ইস্ট রোডে। শেফালির মুর্শিদাবাদের তালগ্রামে। লালবাজারের বিবৃতিতে শেফালিকে শ্যামলের স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই বাড়ির মালিক মন্টু হাজারি জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন।
পুলিশ জানান, শ্যামল ও শেফালি মাস দুই আগে ওই ভাড়ার ফ্ল্যাটে আসেন। তাদের ঘরে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। তবে শেফালির দেহে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তার দেহে কোনও জামাকাপড় ছিল না বলে জানান প্রতিবেশীরা। এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। সার্ভে পার্ক থানা দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। ঘটনার পরেই সেখানে যান লালবাজারের হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা ও পুলিশের পদস্থ কর্তারা। পরে দু’টি দেহই ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়।
শেফালির দেহে ধস্তাধস্তির চিহ্ন দেখে পুলিশের অনুমান, শ্যামল সম্ভবত তাকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না-পেয়ে এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে নারাজ। আজ শুক্রবার ময়না-তদন্ত হওয়ার কথা।
পুলিশ জানান, শ্যামলদের এক কামরার ফ্ল্যাটটি এ দিন বন্ধ ছিল। জানলার ফাঁক দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা শ্যামল ও শেফালির দেহ দেখতে পান। খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, শ্যামল ও শেফালির মধ্যে প্রায়ই গোলমাল হত। শ্যামল নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঠিক কী কারণে তাদের মধ্যে নিত্য অশান্তি হত, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ আরও জানান , সন্তোষপুরের লেক ইস্ট রোডে শ্যামলের পরিবার রয়েছে। খবর পেয়ে সেই পরিজনেরাও এ দিন এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে শ্যামলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন তদন্তকারীরা। তালগ্রামে শেফালির পৈতৃক বাড়িতেও খবর পাঠানো হয়েছে। দুই পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই এই জোড়া মৃত্যুর কারণ জানা যেতে পারে বলে পুলিশ মনে করছে।
এ দিন বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সামনে এলাকাবাসীর জটলা। এক প্রতিবেশী বলেন, কাল রাত দশটা নাগাদ ওরা বাড়িতে ফেরেন। জ্যাকির ফোন বন্ধ থাকায় সকালে বন্ধুরা এসে তাকে খুঁজে যান। তার পরেও ওদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে বেরোতে না দেখে দরজায় ধাক্কা মারি। দীপ পাল নামে আর এক বাসিন্দা জানান, কেউ দরজা খুলছেন না দেখে জানলায় উকি মেরে শ্যামলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। শেফালি বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তখনই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। ওই বাড়ির দোতলায় থাকেন কুণাল হাজারি। তিনি জানান, বুধবার রাতে দু’জনের মধ্যে অশান্তির আওয়াজ পাননি তিনি।সূত্র-আনন্দবাজার।