প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

ফাইল ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে) ২২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পি কে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে ১০ বছর ও অর্থপাচারের অপরাধে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৩ আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

 

রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৫২ মামলার মধ্যে এটি প্রথম মামলার রায়। বাকি ৫১ মামলা এখনো তদন্তাধীন।

 

এর আগে গত ৪ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রায় ঘোষণার জন্য ৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওইদিন যুক্তিউপস্থাপনের সময় কারাগারে থাকা চার আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়। পি কে হালদারসহ ১০ আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- লিলাবতী হালদার (পি কে হালদারের মা), পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি। এ মামলায় ১০৬ সাক্ষীর মধ্যে ৯৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

 

২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। মামলার এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। এছাড়া ওই অর্থ আড়াল করতে বিদেশে পাচার করে মানি লন্ডারিং আইনেও অপরাধ করেন তিনি।

 

মামলাটি তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

 

চার্জশিটে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল ক্রয় করেন পি কে হালদার। এর মধ্যে জমি কিনেছেন ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ। এই সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। দলিলে এসব জমির দাম ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত বাজারমূল্য প্রায় ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

 

চার্জশিটে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন নির্মাণ করেন, যার দাম প্রায় ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। পি কে হালদার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর র্যাডিসন নামে আটতলা হোটেল নির্মাণ করেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৪০ কোটি টাকা তার খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কেনেন, যার দাম প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা।

 

কলকাতার অনতিদূরে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। একই সঙ্গে তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।

 

গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। অর্থপাচার আইন-২০০২ এবং দুর্নীতি দমন আইন- ১৯৮৮’র বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্তদেরর নামে চার্জ গঠন করা হয়।

 

বর্তমানে পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ আসামি রয়েছেন প্রেসিডেন্সি কারাগারে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ছয় মাসে ৯ লাখ এনআইডি আবেদন নিষ্পত্তি : ইসি

» সাবেক বিরোধীদলীয় চীফহুইপ ফারুকের ওপর হামলার ১৪ বছর

» “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামটা আমি প্রস্তাব করেছিলাম: হান্নান মাসউদ

» ২ জুলাই শুরু হয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের কাউন্টডাউন

» সরকারি অনুদানে জুলাই নিয়ে হবে দুটি চলচ্চিত্র: তথ্য উপদেষ্টা

» প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হলেও ঐকমত্যের লক্ষ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে : আলী রিয়াজ

» আজ মিয়ানমার বাধা পেরোলেই এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ

» দাম কমলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের, আজ থেকেই কার্যকর নতুন প্যাকেজ

» মাদকেও সেনাবাহিনীর যুগান্তকারী অ্যাকশনের অপেক্ষা

» রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী আখতার হোসেন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

ফাইল ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে) ২২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পি কে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে ১০ বছর ও অর্থপাচারের অপরাধে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৩ আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

 

রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৫২ মামলার মধ্যে এটি প্রথম মামলার রায়। বাকি ৫১ মামলা এখনো তদন্তাধীন।

 

এর আগে গত ৪ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রায় ঘোষণার জন্য ৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওইদিন যুক্তিউপস্থাপনের সময় কারাগারে থাকা চার আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়। পি কে হালদারসহ ১০ আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- লিলাবতী হালদার (পি কে হালদারের মা), পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি। এ মামলায় ১০৬ সাক্ষীর মধ্যে ৯৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

 

২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। মামলার এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। এছাড়া ওই অর্থ আড়াল করতে বিদেশে পাচার করে মানি লন্ডারিং আইনেও অপরাধ করেন তিনি।

 

মামলাটি তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

 

চার্জশিটে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল ক্রয় করেন পি কে হালদার। এর মধ্যে জমি কিনেছেন ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ। এই সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। দলিলে এসব জমির দাম ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত বাজারমূল্য প্রায় ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

 

চার্জশিটে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন নির্মাণ করেন, যার দাম প্রায় ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। পি কে হালদার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর র্যাডিসন নামে আটতলা হোটেল নির্মাণ করেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৪০ কোটি টাকা তার খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কেনেন, যার দাম প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা।

 

কলকাতার অনতিদূরে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। একই সঙ্গে তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।

 

গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। অর্থপাচার আইন-২০০২ এবং দুর্নীতি দমন আইন- ১৯৮৮’র বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্তদেরর নামে চার্জ গঠন করা হয়।

 

বর্তমানে পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ আসামি রয়েছেন প্রেসিডেন্সি কারাগারে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com