পুতিনের পরবর্তী নিশানার শঙ্কায় মলদোভা

ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। সাবেক সোভিয়েত দেশ মলদোভা সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা শহরে সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। ফলে রুশ হামলার পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে পূর্ব ইউরোপীয় দেশটি।

 

৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তাপ রয়েছে দেশটির। ১৯৯১ সাল থেকে রুশ সমর্থিত ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা চালিয়ে আসছে বিদ্রোহ। ৯২’র যুদ্ধ বিরতি চুক্তির পর থেকেই অঞ্চলটিতে রুশ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।

 

ট্রান্সনিস্ট্রিয়াতে মোতায়েনকৃত রুশ সেনারা সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পশ্চিম সামরিক দফতরের আওতাধীন। অঞ্চলটির কোবাসনা গ্রামে রয়েছে পুরানো সোভিয়েত-শৈলীর গোলাবারুদ ডিপো।

 

কোবাসনায় প্রায় ২০ হাজার টন সোভিয়েত যুগের গোলাবারুদ মজুত রয়েছে। রয়েছে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর জার্মানি এবং সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া থেকে মলদোভায় আনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-যুগের সোভিয়েত বিস্ফোরক সামগ্রীও।

 

নিজ সীমান্তের নিকটে এত বড় রুশ সামরিক উপস্থিতি এবং বিপুল গোলাবারুদ থাকায় ইউক্রেনে যুদ্ধের ঘনঘোরে মলদোভানদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়া স্বাভাবিক। দেশটির প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিটালি মারিনুটা বলছেন, ‘‘উত্তেজনা তীব্রতর হচ্ছে। তাই, আমি মনে করি আজকাল আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে।’’

দেশটি রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পেছনে গুরুতর যুক্তি দিয়েছেন সামরিক বিশ্লেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাটালিয়া আলবু। ওডেসার কাছে আসা রাশিয়ান সৈন্যরা ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান অঞ্চলের সঙ্গে একটি সামরিক করিডোর তৈরি করতে চায় বলে মত তার।

আলবু বলেন, ‘‘যদিও আমাদের ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলে একটি সুপ্ত পরিস্থিতি রয়েছে, তবু বলা যাচ্ছে এই মুহূর্তে সেখানে শান্তি এবং শান্ত রয়েছে। এটি ইউক্রেনের পরিস্থিতি কীভাবে বিকশিত হবে তার উপর নির্ভর করে। যদি রাশিয়ানরা ওডেসায় যায় তবে এই সংযোগ বিপজ্জনক।’’ তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার লক্ষ্য অঞ্চলটিতে একটি করিডোর তৈরি করা যা মস্কো নিয়ন্ত্রণ করে।’’

 

৩ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন দাখিল করেছিল মলদোভা। একই কারণে ইউক্রেনের ওপর খড়গ হস্ত হয়েছে রাশিয়া। ফলে দেশটির নাগরিকরা এই ভেবে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছেন, রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য মলদোভা। অনুরূপ আবেদনের পর প্রতিবেশি জর্জিয়ার ওপর রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া স্মরণে রয়েছে তাদের।

 

মলদোভান একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক ফর ভ্লাদ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেনের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য প্রাক্তন অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ প্রসারিত করতে পারে মস্কো। ভ্লাদ বলছেন, ‘‘রাশিয়ানরা ওডেসায় নাও থামতে পারে, ট্রান্সনিস্ট্রিয়া এবং মলদোভায় আসতে পারে। আমি আশা করি এটি ঘটবে না, তবে সম্ভাবনা সবসময়ই আছে।’’  সূত্র: ইউরোনিউজ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» থাইল্যান্ডে দাউ দাউ করে জ্বলছে পুরো পাহাড়

» বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৪৯ জন আটক

» আদালতে নেওয়া হয়েছে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে

» এবারের আইপিএলে যত নতুন নিয়ম

» জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চিত্র প্রদর্শনীতে একাত্তরের গণহত্যার উপাখ্যান

» উরফিকে নিয়ে এবার মুখ খুললেন কারিনা

» ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৮ জন আটক

» ধারালো অস্ত্রসহ ছিনতাইকারী গ্রেফতার

» জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের পল্লী চিকিৎসককে কুপিয়ে গণপিটুনি খেলেন যুবলীগ নেতা

» কক্সবাজার সৈকত ভেসে আসছে অসংখ্য মৃত জেলিফিশ

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পুতিনের পরবর্তী নিশানার শঙ্কায় মলদোভা

ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। সাবেক সোভিয়েত দেশ মলদোভা সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা শহরে সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। ফলে রুশ হামলার পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে পূর্ব ইউরোপীয় দেশটি।

 

৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তাপ রয়েছে দেশটির। ১৯৯১ সাল থেকে রুশ সমর্থিত ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা চালিয়ে আসছে বিদ্রোহ। ৯২’র যুদ্ধ বিরতি চুক্তির পর থেকেই অঞ্চলটিতে রুশ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।

 

ট্রান্সনিস্ট্রিয়াতে মোতায়েনকৃত রুশ সেনারা সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পশ্চিম সামরিক দফতরের আওতাধীন। অঞ্চলটির কোবাসনা গ্রামে রয়েছে পুরানো সোভিয়েত-শৈলীর গোলাবারুদ ডিপো।

 

কোবাসনায় প্রায় ২০ হাজার টন সোভিয়েত যুগের গোলাবারুদ মজুত রয়েছে। রয়েছে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর জার্মানি এবং সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া থেকে মলদোভায় আনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-যুগের সোভিয়েত বিস্ফোরক সামগ্রীও।

 

নিজ সীমান্তের নিকটে এত বড় রুশ সামরিক উপস্থিতি এবং বিপুল গোলাবারুদ থাকায় ইউক্রেনে যুদ্ধের ঘনঘোরে মলদোভানদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়া স্বাভাবিক। দেশটির প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিটালি মারিনুটা বলছেন, ‘‘উত্তেজনা তীব্রতর হচ্ছে। তাই, আমি মনে করি আজকাল আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে।’’

দেশটি রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পেছনে গুরুতর যুক্তি দিয়েছেন সামরিক বিশ্লেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাটালিয়া আলবু। ওডেসার কাছে আসা রাশিয়ান সৈন্যরা ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান অঞ্চলের সঙ্গে একটি সামরিক করিডোর তৈরি করতে চায় বলে মত তার।

আলবু বলেন, ‘‘যদিও আমাদের ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলে একটি সুপ্ত পরিস্থিতি রয়েছে, তবু বলা যাচ্ছে এই মুহূর্তে সেখানে শান্তি এবং শান্ত রয়েছে। এটি ইউক্রেনের পরিস্থিতি কীভাবে বিকশিত হবে তার উপর নির্ভর করে। যদি রাশিয়ানরা ওডেসায় যায় তবে এই সংযোগ বিপজ্জনক।’’ তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার লক্ষ্য অঞ্চলটিতে একটি করিডোর তৈরি করা যা মস্কো নিয়ন্ত্রণ করে।’’

 

৩ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন দাখিল করেছিল মলদোভা। একই কারণে ইউক্রেনের ওপর খড়গ হস্ত হয়েছে রাশিয়া। ফলে দেশটির নাগরিকরা এই ভেবে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছেন, রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য মলদোভা। অনুরূপ আবেদনের পর প্রতিবেশি জর্জিয়ার ওপর রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া স্মরণে রয়েছে তাদের।

 

মলদোভান একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক ফর ভ্লাদ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইউক্রেনের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য প্রাক্তন অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ প্রসারিত করতে পারে মস্কো। ভ্লাদ বলছেন, ‘‘রাশিয়ানরা ওডেসায় নাও থামতে পারে, ট্রান্সনিস্ট্রিয়া এবং মলদোভায় আসতে পারে। আমি আশা করি এটি ঘটবে না, তবে সম্ভাবনা সবসময়ই আছে।’’  সূত্র: ইউরোনিউজ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Design & Developed BY ThemesBazar.Com