পাথর-ইস্পাতের কাঠামো এখন আমাদের আবেগ

গুলশাহানা ঊর্মি : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, “কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না” জাতির পিতার সেই কথাটিই আজ আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রমাণিত। এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু’র “সোনার বাংলা”। আর “সোনার বাংলা” গড়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতির পিতার রক্ত-আদর্শের উত্তরসূরী তার সুযোগ্যকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমরা এখন অপ্রতিরোধ্য, দুর্দমনীয়-অদম্য। বিশ্বের যেকোন দেশের সাথেই তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমরা সক্ষম।

 

দেশি-বিদেশী নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, শত্রুর মুখে ছাই চাপা দিয়ে পদ্মার বুকে মাথা তুলে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা ‘পদ্মা সেতু’ আজ আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা। আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু, সর্বসাধারণের পারাপারের জন্য খুলে দেয়া হবে এই সেতুটি। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাতাশ শতাংশ মানুষের প্রাণের দাবি ছিল এই পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জনপদে লাগবে নতুন প্রাণের ছোঁয়া। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন অন্তঃর্দেশীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, অপরদিকে আঞ্চলিক ক্ষেত্রেও যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এই ২১ জেলার মানুষের আয়-রোজগার ও জীবনমান উন্নত হবে এবং এর প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে।

 

অর্থনীতিবিদরা হিসাব করেছেন যে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের জিডিপি অন্তত ২ শতাংশ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে তখন দেশের জিডিপি বাড়বে অন্তত আরও ১ শতাংশ। ট্রান্স এশিয়ান রেল ও সড়ক এই সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হবে আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ভুটান, ভারত ও নেপালের সাথে বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য আরও দ্রুত সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগ দরজা খুলে দেবে।

 

বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শুরুতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি এই সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হয়, পরবর্তী পর্যায়ে এর সাথে যুক্ত হয় বিশ্বব্যাংক। কিন্তু হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাংক একটা মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ এনে এর অর্থায়ন নিয়ে তালবাহানা শুরু করে। দাতা সংস্থাগুলো দুর্নীতির অভিযোগ এনে অর্থনৈতিক সহায়তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর সেসময় মনে হয়েছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে। কিন্তু সেই সময় দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

 

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করব’। শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তাই দাতা সংস্থাগুলো তুলে নেয়নি, সমগ্র জাতির ওপর মিথ্যা অপবাদের বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছিল। এই বিষয়ে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের যুগান্তরে প্রকাশিত একটি লেখা থেকে তুলে ধরছি। তিনি লিখছিলেন, “সেই সময়টায় আমি খুব কাছে থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরো ষড়যন্ত্র কেমন করে বীরত্বের সঙ্গে লড়ে ভন্ডুল করে দিলেন সেই দৃশ্যও দেখেছি। খুবই দ্রুততার সঙ্গে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজেদের অর্থে এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিবেন আমরাও পারি।

 

পদ্মা সেতু নিয়ে যে টানাপোড়ন তৈরি হয়েছিল, এর পরিসমাপ্তি হয় কানাডীয় আদালতের দেওয়া রায়ে। ওই রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোন সুযোগই ছিল না। এই রায়ের পর বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলো অর্থায়নে আগ্রহী হলেও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী “নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ” বিষয়ক সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

 

এ সেতু নির্মাণে কারিগরি চ্যালেঞ্জও কম ছিল না। বিশ্বের খরস্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই আমাদের পদ্মা সেতুর অবস্থান। মাওয়া পয়েন্টে স্রোতের বেগ সবচেয়ে বেশি। এই নদীতে পিলার বসানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম পিলার স্থাপন করতে হয়েছে এই সেতুতে। এছাড়াও এটি একটি ডাবল ডেকার বা দোতলা সেতু, সেতুর উপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরে রয়েছে রেলপথ। কাজেই, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ আমাদের মতো দেশের জন্য সত্যিই দুরহ কাজ ছিলো। আর এই দুরহ কাজটি করার জন্য অগ্রসৈনিক যিনি, যিনি সাহসী সেনাপতির মতো একক নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যেভাবে সাহসিকতার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু’র কন্যা বলেই তা সম্ভব হয়েছিল।

 

পদ্মা সেতুকে কেবল রড-সিমেন্ট- ইস্পাত নির্মিত স্থাপনা বা কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করলে হবে না; সুদৃঢ় কাঠামো অতিক্রম করে এটি প্রযুক্তি, শিক্ষা, উন্নয়ন, ভূ-রাজনীতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আবহ নিয়ে আবর্তিত হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুধুমাত্র আমাদের আর্থিক সক্ষমতাই প্রমাণ করে নাই, এর সাথে প্রমাণিত হয়েছে আমাদের সততা, নিষ্ঠা, দৃঢ়চেতা, সাহসিকতা ও আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবেরও। বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে আমরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম জাতিই নই, সেই সাথে আমরা সাহসী সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালির ৫০ বছরের অর্জনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বদলে যাওয়া বাংলাদেশের একটি অনন্য মাইলফলক পদ্মা সেতু, আমাদের গর্বিত করে, আবেগে উদ্বেলিত করে চোখে আনন্দাশ্রু এনে দেয়।

লেখক: সহকারী পরিচালক, বিসিএস (তথ্য)
প্রেস উইং
প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়।     
সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ভাতিজা তোফায়েল গ্রেফতার

» ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতদের দাবি যৌক্তিক, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’

» অবশেষে গ্রেফতার দেখানো হলো পুলিশ কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন কে

» ভারতে পালানোর সময় নারীসহ তিনজন আটক

» রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা ১২ এপ্রিল, আবেদন শুরু ৫ জানুয়ারি

» চালের দাম কবে কমবে, জানালেন উপদেষ্টা আলী ইমাম

» মারা গেছেন মাথায় গুলিবিদ্ধ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ

» বিপিএলে খেলা অনিশ্চিত সাকিবের, বিকল্প ভেবে রেখেছে চট্টগ্রাম

» ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিশেষ ‍দূত নিয়োগ করছেন ট্রাম্প

» বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন করবে

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পাথর-ইস্পাতের কাঠামো এখন আমাদের আবেগ

গুলশাহানা ঊর্মি : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, “কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না” জাতির পিতার সেই কথাটিই আজ আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রমাণিত। এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু’র “সোনার বাংলা”। আর “সোনার বাংলা” গড়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতির পিতার রক্ত-আদর্শের উত্তরসূরী তার সুযোগ্যকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমরা এখন অপ্রতিরোধ্য, দুর্দমনীয়-অদম্য। বিশ্বের যেকোন দেশের সাথেই তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমরা সক্ষম।

 

দেশি-বিদেশী নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, শত্রুর মুখে ছাই চাপা দিয়ে পদ্মার বুকে মাথা তুলে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা ‘পদ্মা সেতু’ আজ আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা। আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু, সর্বসাধারণের পারাপারের জন্য খুলে দেয়া হবে এই সেতুটি। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাতাশ শতাংশ মানুষের প্রাণের দাবি ছিল এই পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জনপদে লাগবে নতুন প্রাণের ছোঁয়া। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন অন্তঃর্দেশীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, অপরদিকে আঞ্চলিক ক্ষেত্রেও যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এই ২১ জেলার মানুষের আয়-রোজগার ও জীবনমান উন্নত হবে এবং এর প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে।

 

অর্থনীতিবিদরা হিসাব করেছেন যে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের জিডিপি অন্তত ২ শতাংশ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে তখন দেশের জিডিপি বাড়বে অন্তত আরও ১ শতাংশ। ট্রান্স এশিয়ান রেল ও সড়ক এই সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হবে আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ভুটান, ভারত ও নেপালের সাথে বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য আরও দ্রুত সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগ দরজা খুলে দেবে।

 

বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শুরুতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি এই সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হয়, পরবর্তী পর্যায়ে এর সাথে যুক্ত হয় বিশ্বব্যাংক। কিন্তু হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাংক একটা মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ এনে এর অর্থায়ন নিয়ে তালবাহানা শুরু করে। দাতা সংস্থাগুলো দুর্নীতির অভিযোগ এনে অর্থনৈতিক সহায়তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর সেসময় মনে হয়েছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে। কিন্তু সেই সময় দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

 

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করব’। শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তাই দাতা সংস্থাগুলো তুলে নেয়নি, সমগ্র জাতির ওপর মিথ্যা অপবাদের বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছিল। এই বিষয়ে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের যুগান্তরে প্রকাশিত একটি লেখা থেকে তুলে ধরছি। তিনি লিখছিলেন, “সেই সময়টায় আমি খুব কাছে থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরো ষড়যন্ত্র কেমন করে বীরত্বের সঙ্গে লড়ে ভন্ডুল করে দিলেন সেই দৃশ্যও দেখেছি। খুবই দ্রুততার সঙ্গে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজেদের অর্থে এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিবেন আমরাও পারি।

 

পদ্মা সেতু নিয়ে যে টানাপোড়ন তৈরি হয়েছিল, এর পরিসমাপ্তি হয় কানাডীয় আদালতের দেওয়া রায়ে। ওই রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোন সুযোগই ছিল না। এই রায়ের পর বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলো অর্থায়নে আগ্রহী হলেও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী “নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ” বিষয়ক সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

 

এ সেতু নির্মাণে কারিগরি চ্যালেঞ্জও কম ছিল না। বিশ্বের খরস্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই আমাদের পদ্মা সেতুর অবস্থান। মাওয়া পয়েন্টে স্রোতের বেগ সবচেয়ে বেশি। এই নদীতে পিলার বসানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম পিলার স্থাপন করতে হয়েছে এই সেতুতে। এছাড়াও এটি একটি ডাবল ডেকার বা দোতলা সেতু, সেতুর উপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরে রয়েছে রেলপথ। কাজেই, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ আমাদের মতো দেশের জন্য সত্যিই দুরহ কাজ ছিলো। আর এই দুরহ কাজটি করার জন্য অগ্রসৈনিক যিনি, যিনি সাহসী সেনাপতির মতো একক নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যেভাবে সাহসিকতার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু’র কন্যা বলেই তা সম্ভব হয়েছিল।

 

পদ্মা সেতুকে কেবল রড-সিমেন্ট- ইস্পাত নির্মিত স্থাপনা বা কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করলে হবে না; সুদৃঢ় কাঠামো অতিক্রম করে এটি প্রযুক্তি, শিক্ষা, উন্নয়ন, ভূ-রাজনীতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আবহ নিয়ে আবর্তিত হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুধুমাত্র আমাদের আর্থিক সক্ষমতাই প্রমাণ করে নাই, এর সাথে প্রমাণিত হয়েছে আমাদের সততা, নিষ্ঠা, দৃঢ়চেতা, সাহসিকতা ও আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবেরও। বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে আমরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম জাতিই নই, সেই সাথে আমরা সাহসী সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালির ৫০ বছরের অর্জনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বদলে যাওয়া বাংলাদেশের একটি অনন্য মাইলফলক পদ্মা সেতু, আমাদের গর্বিত করে, আবেগে উদ্বেলিত করে চোখে আনন্দাশ্রু এনে দেয়।

লেখক: সহকারী পরিচালক, বিসিএস (তথ্য)
প্রেস উইং
প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়।     
সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com