নিজ সম্পদ সবার আগে কার জন্য ব্যয় করবেন?

শুধু গরিব-অসহায়দের সাহায্য করার মাঝেই দান-সাদকার সওয়াব সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ব্যয় করার মাঝেও রয়েছে সর্বোত্তম দান-সাকার সওয়াব। কিন্তু ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে- মানুষ দিন দিন নিজ স্বার্থের দিকে খুব বেশি ঝুঁকতে শুরু করেছে। এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছছে যে, আপন বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া বা তাদের পেছনে খরচ করাকেও নিজেদের স্বার্থবিরোধী মনে করছে। অথচ নিজের অর্জিত অর্থ-সম্পদ থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-সন্তান কিংবা আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করা পরকালের জন্য অনেক বড় ইনভেস্টমেন্ট বা সঞ্চয়। ইসলাম প্রথমত এ সঞ্চয়ের পক্ষেই দিকনির্দেশনা দেয়। কী সেই দিকনির্দেশনা?

 

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যা কিছু খরচ করবে; তা সবই তার জন্য সাদকাহ। অর্থাৎ তা দান হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম)

সুতরাং পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ দেখার সুযোগ নেই বরং আসুন, শুধু দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই নয়; নিয়তকে পরিশুদ্ধ করে সওয়াবের প্রত্যাশায় নিজ পরিবারের জন্য যথাযথ ব্যয় করি। আর তাতেই মিলবে সর্বোত্তম সাদকার সওয়াব। যেই সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।

 

পাশাপাশি নিকটাত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখারও চেষ্টা করি। কেননা সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-সাদকার ছাড়া শুধু সুসম্পর্ক বজায় রাখায় নিহিত আছে রিজিক ও হায়াতের সীমাহীন বারাকাহ। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা দেন-
‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং হায়াত বেড়ে যাক; সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে।’ (বুখারি)

 

নিজ মালিকানার সম্পদ ব্যয় কোথায় ব্যয় করবেন?
তাহলে নিজ মালিকানার সম্পদ সওয়াবের আশায় কোথায় ব্যয় করতে তাও ওঠে এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়-
১. হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, বানু উজজাহ গোত্রের এক ব্যক্তি তার এক গোলামকে তার মৃত্যুর পর মুক্ত হওয়ার কথা দিলেন। এরপর এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, এ ছাড়া তোমার কাছে কি আর কোনো সম্পদ আছে? তিনি বললেন, ‘না’। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এমন কে আছ যে আমার কাছ থেকে এ গোলামটিকে ক্রয় করবে?

(তখন) হজরত নুআয়ম ইবনু আবদুল্লাহ আল আদাবি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে ৮০০ দিরহামে কিনলেন। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ দিরহামগুলো নিয়ে আসলেন। তিনি তা গোলামের মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন-

‘এ অর্থ তুমি প্রথমে তোমার নিজের জন্য ব্যয় করো। এরপর যদি কিছু বাকি থাকে তাহলে তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য তা ব্যয় করো। তারপর তোমার নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় করো। এরপরও যদি কিছু অবকাশ থাকে তাহলে তা এদিকে সেদিকে ব্যয় করো। এ কথা বলে তিনি সামনে, ডানে ও বামে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম)

 

সুতরাং এ হাদিস থেকে বুঝা গেলো; সম্পদ জমা করে রাখার জন্য নয়। বরং প্রথমত তা নিজের জন্য ব্যয় করা। তারপর পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় করা। এরপর সম্ভব হলে ডানে-বামে, সামনে-পেছনের পাড়া-প্রতিবেশির জন্য ব্যয় করা। আর এতেই রয়েছে কল্যাণ।

ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় সুসংবাদ যে, দুনিয়ায় নিজ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করায় রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের অনেক কল্যাণ। হাদিসে পাকের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও এর উজ্জল দৃষ্টান্ত।

 

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নবিজীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সর্ব প্রথম নিজের জন্য, নিজ ঘর ও পরিবার-পরিজনের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজনের জন্য নিজের ধন-সম্পদ ও অর্থ ব্যয় করা। এরপর সম্ভব হলে পাড়া-প্রতিবেশি, গরিব-অসহায়ের জন্য দান-সাদকা করা। আর এতেই রয়েছে অনেক সওয়াব ও পুরস্কারের ঘোষণা।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। দান-সাদকার সর্বোত্তম কল্যাণ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নিজ বাড়িতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

» ঈদযাত্রায় ১৩ জুন থেকে মিলবে বাসের অগ্রিম টিকিট

» রাজধানীজুড়ে নেমেছে অঝরধারায় বৃষ্টি, নগরজীবনে স্বস্তি

» গুণগত শিল্পায়নের পথে দেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে: প্রধানমন্ত্রী

» এক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা: রাষ্ট্রপতি

» ফতুল্লায় চার্জার ফ্যান বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ

» কিছুটা কমতে শুরু করেছে সবজির দাম

» বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ২৩ কিলোমিটারজুড়ে যানজট

» বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ঢাকা জেলা আ.লীগের শ্রদ্ধা

» আইপিএস-ইউপিএস কেনার আগে বিষয়গুলো জেনে নিন

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নিজ সম্পদ সবার আগে কার জন্য ব্যয় করবেন?

শুধু গরিব-অসহায়দের সাহায্য করার মাঝেই দান-সাদকার সওয়াব সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ব্যয় করার মাঝেও রয়েছে সর্বোত্তম দান-সাকার সওয়াব। কিন্তু ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে- মানুষ দিন দিন নিজ স্বার্থের দিকে খুব বেশি ঝুঁকতে শুরু করেছে। এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছছে যে, আপন বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া বা তাদের পেছনে খরচ করাকেও নিজেদের স্বার্থবিরোধী মনে করছে। অথচ নিজের অর্জিত অর্থ-সম্পদ থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-সন্তান কিংবা আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করা পরকালের জন্য অনেক বড় ইনভেস্টমেন্ট বা সঞ্চয়। ইসলাম প্রথমত এ সঞ্চয়ের পক্ষেই দিকনির্দেশনা দেয়। কী সেই দিকনির্দেশনা?

 

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যা কিছু খরচ করবে; তা সবই তার জন্য সাদকাহ। অর্থাৎ তা দান হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম)

সুতরাং পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ দেখার সুযোগ নেই বরং আসুন, শুধু দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই নয়; নিয়তকে পরিশুদ্ধ করে সওয়াবের প্রত্যাশায় নিজ পরিবারের জন্য যথাযথ ব্যয় করি। আর তাতেই মিলবে সর্বোত্তম সাদকার সওয়াব। যেই সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।

 

পাশাপাশি নিকটাত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখারও চেষ্টা করি। কেননা সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-সাদকার ছাড়া শুধু সুসম্পর্ক বজায় রাখায় নিহিত আছে রিজিক ও হায়াতের সীমাহীন বারাকাহ। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা দেন-
‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং হায়াত বেড়ে যাক; সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে।’ (বুখারি)

 

নিজ মালিকানার সম্পদ ব্যয় কোথায় ব্যয় করবেন?
তাহলে নিজ মালিকানার সম্পদ সওয়াবের আশায় কোথায় ব্যয় করতে তাও ওঠে এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়-
১. হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, বানু উজজাহ গোত্রের এক ব্যক্তি তার এক গোলামকে তার মৃত্যুর পর মুক্ত হওয়ার কথা দিলেন। এরপর এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, এ ছাড়া তোমার কাছে কি আর কোনো সম্পদ আছে? তিনি বললেন, ‘না’। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এমন কে আছ যে আমার কাছ থেকে এ গোলামটিকে ক্রয় করবে?

(তখন) হজরত নুআয়ম ইবনু আবদুল্লাহ আল আদাবি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে ৮০০ দিরহামে কিনলেন। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ দিরহামগুলো নিয়ে আসলেন। তিনি তা গোলামের মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন-

‘এ অর্থ তুমি প্রথমে তোমার নিজের জন্য ব্যয় করো। এরপর যদি কিছু বাকি থাকে তাহলে তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য তা ব্যয় করো। তারপর তোমার নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় করো। এরপরও যদি কিছু অবকাশ থাকে তাহলে তা এদিকে সেদিকে ব্যয় করো। এ কথা বলে তিনি সামনে, ডানে ও বামে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম)

 

সুতরাং এ হাদিস থেকে বুঝা গেলো; সম্পদ জমা করে রাখার জন্য নয়। বরং প্রথমত তা নিজের জন্য ব্যয় করা। তারপর পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় করা। এরপর সম্ভব হলে ডানে-বামে, সামনে-পেছনের পাড়া-প্রতিবেশির জন্য ব্যয় করা। আর এতেই রয়েছে কল্যাণ।

ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় সুসংবাদ যে, দুনিয়ায় নিজ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করায় রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের অনেক কল্যাণ। হাদিসে পাকের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও এর উজ্জল দৃষ্টান্ত।

 

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নবিজীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সর্ব প্রথম নিজের জন্য, নিজ ঘর ও পরিবার-পরিজনের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজনের জন্য নিজের ধন-সম্পদ ও অর্থ ব্যয় করা। এরপর সম্ভব হলে পাড়া-প্রতিবেশি, গরিব-অসহায়ের জন্য দান-সাদকা করা। আর এতেই রয়েছে অনেক সওয়াব ও পুরস্কারের ঘোষণা।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। দান-সাদকার সর্বোত্তম কল্যাণ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com