পাবনায় পোস্টমাস্টার ও পিয়ন গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে। সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়ন পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। নগদ-এর নামে এই টাকা জমা করার কথা ছিল তাদের। এ বিষয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডাক বিভাগ।
সাগরকান্দি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে জমানো ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পোস্টম্যান (পিয়ন) আব্দুল্লাহর পরামর্শে ৪ মাস আগে নগদের নামে হিসাব খুলে নূর ইসলাম বকুলের কাছে টাকা জমা দেন। ৪ মাসে তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে মুনাফাও দিয়েছে। গত সপ্তাহে মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে টাকা তুলতে আসেন তিনি।
তাকে একদিন পর আসতে বলেন। কিন্তু নির্ধারিত দিনে এসে জানতে পারেন আব্দুল্লাহ বদলি হয়ে অন্য পোস্ট অফিসে চলে গেছেন। খোঁজ নেই নূর ইসলাম বকুলেরও।
সাগরকান্দি বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রদীপ কুণ্ডু জানান, তিনি ২ মাস আগে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ৮ লাখ টাকা জমা রাখতে সাগরকান্দি পোস্ট অফিসে যান। এ সময় পোস্টমাস্টার নূর ইসলাম বকুল ও পোস্টম্যান (পিয়ন) আব্দুল্লাহ আল মামুন তাকে জানান ডাক বিভাগের নতুন সেবা ‘নগদ’, সেখানে টাকা রাখলে পাওয়া যাবে লাখে এক হাজার টাকার মাসিক মুনাফা। তাদের পরামর্শে নূর ইসলামের হাতে টাকা দিয়ে হিসাব খোলেন প্রদীপ। দেয়া হয় নগদের নামে ছাপা পাস বই ও হিসাব নম্বর। ‘এক মাস মুনাফা দেয়ার পরই তারা লাপাত্তা হয়েছেন।
এ ছাড়া একই ধরনের ভুক্তভোগী আলেয়া খাতুন, বুলু খাতুন, খালেক ফকির, সুফিয়া খাতুন, হুনুফা খাতুন, মানিক মোল্লাসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, একেক জনের কাছ থেকে ২ লাখ, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ৮ লাখ করে টাকা নিয়েছে। তারা আরও বলেন, পোস্ট অফিসে টাকা রাখার জন্য গেলে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাদের বলে নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি হবে। আমরা বকুলের কথা শুনে নগদে টাকা রেখেছি। বিনিময়ে বকুল আমাদের নগদের টোকেন দিয়েছে। টোকেনে লেখা আছে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ রেজিঃ নং-সি-৫৩৬৭৭ (৩৪২) ২০০৪। আমরা কিছু দিন পরে পোস্ট অফিসে টাকা তুলতে গেলে মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আমাদের সঙ্গে নানান টালবাহানা শুরু করেন। টাকা না দিয়ে দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকেন। তখন আমরা বিষয়টি স্থানীয় সাগরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরীকে জানালে তিনি পোস্ট অফিসের পোস্টম্যানকে পরিষদে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগী মৌখিকভাবে জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাবনা ডাক বিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির সদস্য শাহীন জুবায়ের হাসান খান জানান, ‘পোস্টমাস্টার আব্দুল্লাহ ও পিয়ন নূর ইসলাম গর্হিত অপরাধ করেছেন। তারা নগদের নাম লগো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমরা সরজমিন প্রমাণও পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্যও আমরা চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে পাবনা ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সাগরকান্দি পোস্ট অফিসের একজন পোস্টম্যান পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ-এর মতো করে বই তৈরি করে এক লাখে এক হাজার টাকা লাভ দেয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। পোস্ট অফিসের সঙ্গে কুরিয়ারের এধরনের কোনো সম্পর্ক নেই। বইতে নগদের লগো দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বদলি করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনা প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগীরা। সূএ:মানবজমিন