২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ধানমন্ডির ১৫নং লোবেলিয়া এ্যাপার্টমেন্টে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই জানায়, বিলাসী জীবন যাপন ও ভিকটিমের বাসার অর্থ সম্পদের প্রতি লোভ ও স্বর্ণালংকার লুণ্ঠনের জন্য ১০ বছর ধরে করা কাজের লোক ও তার সহযোগীসহ জোড়া খুন করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- বাচ্চু মিয়া (৩৪) ও সুরভী আক্তার নাহিদা। এর মধ্যে বাচ্চু মিয়া দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভিকটিম আফরোজা বেগমের বাসায় বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করে আসছিল।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ২জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও লুষ্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
বুধবার পিআইবির হেডকোয়ার্টার ধানমন্ডিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই-র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবীব পলাশ।
তিনি বলেন, আসামী বাচ্চু মিয়ার মধ্যে বিলাসী জীবন যাপনের জন্য ভিকটিমের বাসার অর্থ সম্পাদের প্রতি লোভ জন্মায়। স্বর্ণালংকার লুণ্ঠনের লোভ হওয়ায় সে কৌশল খুঁজতে থাকে। সহযোগী সুরভী আক্তার নাহিদা বাসায় কাজ খুজতে ধানমন্ডি এলাকায় আসে। ধানমন্ডি এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে কাজ খোজার সুবাদে কথাবার্তা ও ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়। এরপর আসামী বাচ্চু মিয়া পরর্তীতে সুরভী আক্তার নাহিদাকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবীব বলেন, বাচ্চু মিয়া নাহিদাকে লোভনীয় প্রলোভন দেখায় ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগী সুরভী আক্তারকে দিয়ে আগারগাঁও মার্কেট থেকে ছুরি কেনায়।
পিবিআই পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নাহিদাকে নতুন কাজের লোক সাজিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ভিকটিমের বাসায় নিয়ে যায় ও কাজের জন্য কথাবার্তা বলে। নাহিদা প্রায় দুই ঘন্টা সেখানে অবস্থান করে ও কিছু কাজ করে। বিকেল ৪টার দিকে আসামী বাচ্চু মিয়া বাসায় প্রবেশ করে ভিকটিমের কাছে আলমারীর চাবি চায়। এসময় সুরভীও ছুরি নিয়ে ভিকটিমের শয়ন কক্ষে যায়। ভিকটিম চাবি দিতে অস্বীকার করলে আসামী বাচ্চু মিয়া ও সুরভী আক্তার নাহিদা ভিকটিমকে ছুরি দ্বারা শরীরে, গলায় ও বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাত করে রক্তাক্ত ও জখম করে। এরপর বাচ্চু ভিকটিমের বালিশের নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে ১টি স্বর্ণের চেইন, ২টি স্বর্ণের চুড়ি, ১টি মোবাইল সেট লুণ্ঠন করে নিয়ে যায় ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবীব বলেন, ভিকটিমের বাসার অপর কাজের মেয়ে দিতি পাশের কক্ষ থেকে দেখে ফেলায় তাকেও নাহিদা ছুরি দ্বারা একাধিক আঘাত করে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। এতে ভিকটিম দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
পিআইবি জানায়, এ ঘটনায় ভিকটিমের মেয়ে এ্যাড. দিলরুবা সুলতানা রুবা (৪২) বাদী হয়ে ধানমন্ডি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ধানমন্ডি থানা ও ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তারা ২৬ দিন তদন্ত করে ২ আসামীসহ সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করে। আসামী সুরভী দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পুনরায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে। রিমান্ডে এসে সুরভীর দেয়া তথ্যমতে জানা যায় তার আগারগাঁও এর ভাড়া বাসার মাটি খুড়ে স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, এ সময় সুরভী মোবাইল বিক্রির কথা স্বীকার করে। সুরভী দোষ স্বীকার করে পুনরায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। বর্তমান এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে।
কাজের লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলে জানান পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা।