ছবি সংগৃহীত
প্রখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার পরিচয়ে পীরগঞ্জ সারাবিশ্বে পরিচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ড. ওয়াজেদ মিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী।
আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও তার কর্মজীবন অবলম্বনে রচিত ‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কর্মময় জীবন’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু পরমানু বিজ্ঞানী পরিষদ ও ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবনী তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আজ থেকে অনেক বছর আগে, ১৯৪২ সালের কথা। সেই সময়ের পীরগঞ্জ আর এখনকার পীরগঞ্জ এক নয়। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, অনেক উন্নয়ন হয়ে গেছে। কিন্তু তার পরেও এই মাটিরই সন্তান, মেধাবী সন্তান ড. ওয়াজেদ, যার পরিচয়ে আজ রংপুর বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বে পরিচিত।
স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, ওয়াজেদ মিয়ার লেখা বিজ্ঞান গ্রন্থগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও তার সুগভীর এক সম্পর্ক ছিল। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হলে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহে রাজনীতি শুরু করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে সেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক হলেও তিনি তাদের পাশে সুখে দুঃখে ছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি সেই পরিবারটিকে আগলে রাখেন। ড. ওয়াজেদ ৭৫ পরবর্তী সময়ে কীভাবে তিনি তার পরিবারকে নিয় ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গেছেন সবই এই বইটিতে আছে। তিনি ব্যক্তি জীবনে কতটা নির্লোভ ও নিরহংকারী ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও তিনি ছিলেন সাদামাটা এক মানুষ।
‘অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে’ ড. ওয়াজেদ মিয়া নিজেকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিলেন বলে জানান স্পিকার।
প্রকাশিত গ্রস্থটি পীরগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ও পীরগঞ্জের সংসদ সদস্য শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধান আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমরা যাকে নিয়ে আলোচনা করছি তিনি দেশের প্রখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া। আজকে ওয়াজেদ মিয়া ওপর যে গ্রন্থ রচিত হয়েছে, বইটিতে শুধু ওয়াজেদ মিয়া নয়, দেশে ইতিহাসের অনেক কিছুই উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক কিছু স্থান পেয়েছে।
বইটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ড. ওয়াজেদ মিয়া শুধু একজন ভালো ছাত্র নয়, তিনি একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিজ্ঞানী হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। তিনি দেশের শীর্ষ পরিবারে সঙ্গে তার আত্মীয়তা থাকার পরও তিনি স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন তিনি কখনো স্পটলাইটে আসেননি। অনেকেই যখন স্পট লাইটের দিকে ছুটে ঠিক তিনি তার উল্টো পথে হেঁটেছেন। সুযোগ ও ক্ষমতা থাকার পরও তিনি নির্লোভ ছিলেন, তার চরিত্রে সেই অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল।
তিনি আরও বলেন, ওয়াজেদ মিয়া ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন, কিন্তু নিজের জীবনে তিনি কখনো সেই প্রভাব ব্যবহার করেননি। জাতির জনকের জামাতা হয়েও তিনি সরকারের বড় কোনো পদ-পদবী গ্রহণ করেননি। কোনো সুবিধান নেননি। বরং এসব সুবিধা বা ক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি নিভৃতে গবেষণা করে গেছেন। যে কারণে তার লেখা দুটি বই আজ মহামূল্যবান গ্রন্থ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।
আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে টিভি টুডের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ড. ওয়াজেদ মিয়ার বহুমুখী প্রতিভার কথা আমরা জানি। তার মতো একজন গুণী মানুষকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে সব আলোচনা সম্ভব নয়। তার লেখা বইগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। সব দিক থেকে এই মানুষটা ভীষণ রকম গুণী। ওয়াজেদ মিয়া আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জামাতা বা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বামী এসব বিষয় কখনো তার পরিচয়ের উপর প্রভাব ফেলেনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. অশোক কুমার পাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পীরগঞ্জ সমিতির সভাপতি আ ন ম আল ফিরোজ, এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি (টেলিফোনের ভয়েস কলে) অংশ নেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রাক্তন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী ড. শহীদ হোসাইন।
‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, পরমানু শক্তি কমিশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক ড. এ কে এম ফজলে কিবরিয়া, বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এফএম মিজানুর রহমান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহীনুল ইসলাম, ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এ কে এম ফরহাদুল কবির, ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবনের উপর লিখিত গ্রন্থের লেখক ড. আসাদুজ্জামান ও গ্রন্থটির প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি প্রমুখ।