ছবি সংগৃহীত
গাজীপুরে ডাকাতির সময় দুই পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় ৩ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ৩ জন হলো- ডাকাত দলের প্রধান মো. ইসমাইল সরদার ওরফে লিটন, সহযোগী মো. কামরুল মিয়া ও মো. হানিফ ওরফে মাস্টার।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। তাদের দলের সদস্য সংখ্যা ৮ থেকে ১০ জন। ইসমাইল এ ডাকাত চক্রটির প্রধান এবং হানিফ তার অন্যতম সহযোগী। তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ি ও দোকানে ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এছাড়া ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে বিভিন্ন বালুর জাহাজে ডাকাতি করতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন মামলায় কারাভোগের সময় কারাগারে থাকা অন্যান্য আন্তঃজেলা ডাকাতদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় এবং সেখানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতো তারা। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে কারাগারে থাকা ডাকাতদের কাছ থেকে রপ্ত করা কৌশল ব্যবহার করে ডাকাতি করে আসছিল।
এ র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ডাকাত চক্রটি গত ৩ মার্চ রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ডাকাতির সময় গাজীপুরের শ্রীপুর থানার টহলরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের কুপিয়ে জখম করে।
ডাকাতির কৌশলের বিষয়ে তিনি জানান, ইসমাইল ও হানিফসহ ৬ থেকে ৭ জন ডাকাতির উদ্দেশ্যে গত ৩ মার্চ দুপুরে কেরাণীগঞ্জ থেকে একটি পিকআপযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় যায় এবং শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক স্থান পরিদর্শন করতে থাকে। ঐদিন রাতেই শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের সিংগারদিঘীর হাসিখালী ব্রীজ এলাকায় রাস্তার উপর গাছের গুঁড়ি ফেলে দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে গণডাকাতি শুরু করে তারা।
কমান্ডার মঈন জানান, পুলিশ ডাকাতির সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। এ সময় পুলিশ সদস্য কনস্টেবল রুহুল আমিনের মাথায় এবং কনস্টেবল সেলিম মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের এক সদস্য রুবেল চলন্ত গাড়ির ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়।
গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আসামি ইসমাইল ১০ থেকে ১২ বছর ধরে একটি কেমিক্যাল কোম্পানির মালামাল রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটে সরবরাহ করতেন। ২০১৮ সালে কেরাণীগঞ্জ এলাকার এক ডাকাত সদস্যের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি ঐ মার্কেটে কেমিক্যাল সরবরাহের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় কেরাণীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় ডাকাতি শুরু করেন। এক পর্যায়ে নিজেই একটি ডাকাত চক্র গড়ে তোলার জন্য কেমিক্যাল সরবরাহের কাজ ছেড়ে দেন। এ সময় ডাকাতির কার্যক্রমে সুবিধার জন্য ছদ্মবেশে ইজিবাইক চালানো শুরু করেন।
ডাকাত সরদার ইসমাইলের বিরুদ্ধে ঢাকার দোহার, কেরাণীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে ডাকাতি সংক্রান্ত ৪টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় এক বছরের অধিক কারাভোগ করেছেন। এরই মধ্যে তার নেতৃত্বে ২০২৩ সালে ফরিদপুরে বেশ কয়েকটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং তিনি এই মামলায় ৭ মাস কারাভোগ করে গত মাসে জামিনে বের হয়ে আবারও ডাকাতি কার্যক্রম করতে থাকেন।
গ্রেফতারকৃত হানিফ ওরফে মাস্টার ও ইসমাইল একই এলাকায় বসবাস করতেন। সে ২০১১ সালে ডাকাতি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হন। ইসমাইলের অন্যতম সহযোগী ও ডাকাতির বিভিন্ন স্থান নির্ধারণ, কৌশল ও পরিকল্পনা করতেন। ডাকাতির পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত বলে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র তাকে মাস্টার উপাধি দেয়। সবাই তাকে মাস্টার বলে জানতো। ২০১৩ সালে হত্যা মামলায় দুই বছরেরও বেশি সময় কারাভোগ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছেন।
গ্রেফতারকৃত কামরুল ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য। ৩ থেকে ৪ বছর পূর্বে রাজধানীর জিনজিরা এলাকায় থাকার সময় পরিচয় সূত্রে তিনি ইসমাইলের ডাকাতি চক্রে যোগ দেন। ডাকাতি কার্যক্রমকে আড়াল করতে দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এবং গ্রেফতারকৃত হানিফকে আগাম তথ্য দিয়ে ব্রিফিং প্রদান করতেন। ডাকাতির পূর্বে পরিকল্পনা করার জন্য বিভিন্ন সময় গাজীপুর হতে জিনজিরায় গ্রেফতার ইসমাইল ও হানিফের নিকট আসতেন এবং পুনরায় গাজীপুরে ফিরে গিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করতেন। সূএ: ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম