জাহাঙ্গীরনগরে ভয়ঙ্কর র‍্যাগ ডে

বরাবরই নানা ইস্যুতে আলোচনায় থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি র‌্যাগ ডে’তে নৃত্য নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে । গত ১০, ১১ ও ১২ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ-ডে। হইহুল্লোড় করে বিদায় নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ১১ই মার্চের একটি ব্যালে ড্যান্স ও একটি কাপল ট্যাঙ্গো ড্যান্সের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অশ্লীলতার অভিযোগ এনে অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন।

অভিযোগ- মূলত পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি নিয়ে। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যাপক।

আবার এটির পক্ষের লোকও নিহায়ত কম নয়। ২৬তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী মারুফ মল্লিক লিখেছেন, ক্যাম্পাসে রুচিশীলতার চরম অধঃপতন ঘটছে। এটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার জন্যই প্রযোজ্য। যে ভাষায় এখন শিক্ষার্থীরা কথা বলেন, আনন্দ প্রকাশ করেন বা শিক্ষকদের যেসব কীর্তির কথা শুনি তা স্পষ্টতই মানসিক বিকারগ্রস্ততার প্রমাণ।

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মাজেদ সীমান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, র‍্যাগের প্রোগ্রামে অনেক সিঙ্গেল, কাপল, দলীয় নাচ হয়েছে। ভিডিওতে দেখলাম, বেশ সুন্দর হয়েছে। যে নাচটা নিয়ে কথা উঠেছে সব জায়গায় সেখানে নিশ্চয় সমস্যা হয়েছে বলেই কথা উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হবে- সেটাই স্বাভাবিক। ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে যেটা ‘অপসংস্কৃতি/অশ্লীল’ সেটা আপনাদের ১০ জনের কাছে ‘শ্লীল’ হলেই হয়ে যাবে কি?

শনিবার টিএসসি’তে আড্ডায় মেতেছিলেন বর্তমান শিক্ষার্থীরা। আফনান আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ৪২তম ব্যাচের ভাই-আপুরা যে মানের অনুষ্ঠান আয়োজন করলেন তা নিয়ে আমরা লজ্জিত। আমার বাবা ফোন দিয়ে বলেছিলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম কিনা? আমি যাই বা না যাই, আমার পরিবারের কাছে খুবই বাজে বার্তা গেছে আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে।

সাদিয়া আফরিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার স্থান। এটা যদি মুক্ত চিন্তার মাধ্যম হয় তবে আমি এই মুক্ত চিন্তা করতে চাই না। অনেকেই বলছেন বেলে নাচের পোশাকটাই এই। কিন্তু দেশের মাটিতে আমি কি পোশাক নিয়ে সবার সামনে আসছি তা অবশ্যই ভাই-আপুদের বিবেচনায় থাকা উচিত ছিল।

সিম্রিতি সাহা বলেন, ভিডিও দেখে প্রথমে বুঝিনি এটা জাবি শিক্ষার্থী। প্রথমে ভেবেছিলাম বাইরে থেকে ড্যান্সার এনেছে।

আড্ডায় এর সমালোচনার বিরোধিতাও করেন এক নারী শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এই এতটুকু সংস্কৃতি ট্রান্সফরমেশন আমরা মেনে নিতে পারি না। এটা কোনো আধুনিক চিন্তা হতে পারে না। নৃত্যে ছেলের স্লিপলেস পোশাক ছিল। তিনি নিজের মাসল প্রদর্শন করেছেন। তবে একটা মেয়ে কেন স্বাধীনভাবে নৃত্য প্রদর্শন করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আশির দশকের নাকি সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হয়েছিল। তাহলে সে সময়ের নাচের মতো পোশাক কেন মেনে নিতে পারবো না আমরা?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতি ৪২ ব্যাচের অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি মনে করি অনুষ্ঠান খুবই ভালো হয়েছে। অনুষ্ঠান যদি ভালো না হতো তবে দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠান উপভোগ করতো না। আর সমালোচনা যারা করছেন তারা মূলত অনলাইনে ভিডিওটা দেখেছেন। এই ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর অ্যাঙ্গেলের কারণেও কিছুটা অশোভন লাগছে। অনেকেই ৪২তম ব্যাচের সমালোচনা করছেন। আমি বলবো আমরা সমালোচিত হওয়ার মতো কোনো কাজ করিনি। সূএ:  মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল হলে সব পক্ষ উপকৃত হবে: তথ্যমন্ত্রী

» এবার ম্যারাডোনা, পেলের পাশে বসলেন মেসি

» নির্বাচনে সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের বাধা দিলে ৭ বছর পর্যন্ত জেল

» আগামীকাল থেকে থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী জাতীয় ভূমি সম্মেলন

» ‘গ্র্যান্ড ইফতার টেকঅ্যাওয়ে ফেস্ট’ শুরু করেছে ফুডপ্যান্ডা

» ২ এপ্রিল বাজারে আসছে ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার রিয়েলমি সি৫৫

» বিএনপির আন্দোলন আগেও বিফলে গেছে, আবারও বিফলে যাবে : হানিফ

» ব্রয়লার মুরগির কেজি নামলো ২০০ টাকায়

» ছোট্ট এই ছিদ্র না থাকলে স্মার্টফোনই অচল, এর কাজ কি জানেন?

» বলিউড ছাড়ার আসল কারণ জানালেন প্রিয়াংকা

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জাহাঙ্গীরনগরে ভয়ঙ্কর র‍্যাগ ডে

বরাবরই নানা ইস্যুতে আলোচনায় থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি র‌্যাগ ডে’তে নৃত্য নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে । গত ১০, ১১ ও ১২ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ-ডে। হইহুল্লোড় করে বিদায় নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ১১ই মার্চের একটি ব্যালে ড্যান্স ও একটি কাপল ট্যাঙ্গো ড্যান্সের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অশ্লীলতার অভিযোগ এনে অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন।

অভিযোগ- মূলত পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি নিয়ে। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যাপক।

আবার এটির পক্ষের লোকও নিহায়ত কম নয়। ২৬তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী মারুফ মল্লিক লিখেছেন, ক্যাম্পাসে রুচিশীলতার চরম অধঃপতন ঘটছে। এটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার জন্যই প্রযোজ্য। যে ভাষায় এখন শিক্ষার্থীরা কথা বলেন, আনন্দ প্রকাশ করেন বা শিক্ষকদের যেসব কীর্তির কথা শুনি তা স্পষ্টতই মানসিক বিকারগ্রস্ততার প্রমাণ।

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মাজেদ সীমান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, র‍্যাগের প্রোগ্রামে অনেক সিঙ্গেল, কাপল, দলীয় নাচ হয়েছে। ভিডিওতে দেখলাম, বেশ সুন্দর হয়েছে। যে নাচটা নিয়ে কথা উঠেছে সব জায়গায় সেখানে নিশ্চয় সমস্যা হয়েছে বলেই কথা উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হবে- সেটাই স্বাভাবিক। ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে যেটা ‘অপসংস্কৃতি/অশ্লীল’ সেটা আপনাদের ১০ জনের কাছে ‘শ্লীল’ হলেই হয়ে যাবে কি?

শনিবার টিএসসি’তে আড্ডায় মেতেছিলেন বর্তমান শিক্ষার্থীরা। আফনান আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ৪২তম ব্যাচের ভাই-আপুরা যে মানের অনুষ্ঠান আয়োজন করলেন তা নিয়ে আমরা লজ্জিত। আমার বাবা ফোন দিয়ে বলেছিলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম কিনা? আমি যাই বা না যাই, আমার পরিবারের কাছে খুবই বাজে বার্তা গেছে আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে।

সাদিয়া আফরিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার স্থান। এটা যদি মুক্ত চিন্তার মাধ্যম হয় তবে আমি এই মুক্ত চিন্তা করতে চাই না। অনেকেই বলছেন বেলে নাচের পোশাকটাই এই। কিন্তু দেশের মাটিতে আমি কি পোশাক নিয়ে সবার সামনে আসছি তা অবশ্যই ভাই-আপুদের বিবেচনায় থাকা উচিত ছিল।

সিম্রিতি সাহা বলেন, ভিডিও দেখে প্রথমে বুঝিনি এটা জাবি শিক্ষার্থী। প্রথমে ভেবেছিলাম বাইরে থেকে ড্যান্সার এনেছে।

আড্ডায় এর সমালোচনার বিরোধিতাও করেন এক নারী শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এই এতটুকু সংস্কৃতি ট্রান্সফরমেশন আমরা মেনে নিতে পারি না। এটা কোনো আধুনিক চিন্তা হতে পারে না। নৃত্যে ছেলের স্লিপলেস পোশাক ছিল। তিনি নিজের মাসল প্রদর্শন করেছেন। তবে একটা মেয়ে কেন স্বাধীনভাবে নৃত্য প্রদর্শন করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আশির দশকের নাকি সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হয়েছিল। তাহলে সে সময়ের নাচের মতো পোশাক কেন মেনে নিতে পারবো না আমরা?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতি ৪২ ব্যাচের অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি মনে করি অনুষ্ঠান খুবই ভালো হয়েছে। অনুষ্ঠান যদি ভালো না হতো তবে দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠান উপভোগ করতো না। আর সমালোচনা যারা করছেন তারা মূলত অনলাইনে ভিডিওটা দেখেছেন। এই ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর অ্যাঙ্গেলের কারণেও কিছুটা অশোভন লাগছে। অনেকেই ৪২তম ব্যাচের সমালোচনা করছেন। আমি বলবো আমরা সমালোচিত হওয়ার মতো কোনো কাজ করিনি। সূএ:  মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Design & Developed BY ThemesBazar.Com