চাল কিনতে ওএমএস’র লাইনে উপচে পড়া ভিড়

ষাটোর্ধ্ব সফুরা বেগম থাকেন মিরপুর ১১ বড় মসজিদ এলাকায়। চালের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় এসেছেন ওএমএস’র (ওপেন মার্কেট সেলের) সাশ্রয়ী মূল্যের চাল কিনতে। কিন্তু চাল কিনতে এসে পড়েছেন বিপাকে। দীর্ঘ লাইনে ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার পরও ট্রাক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সফুরা বেগম সহ্য করতে না পেরে একসময় বসে পড়েন রাস্তায়। বলেন, সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করছি। কিন্তু ভিড় থাকার কারণে এখনো চাল নিতে পারিনি।

কেউ কেউ লাইনে না দাঁড়িয়েও চাল নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে বেশি টাকা দিয়ে অতিরিক্ত চাল কিনছে।

শেষ পর্যন্ত চাল পাবো কিনা বলতে পারছি না। সন্তানকে কোলে নিয়ে ভিড় ঠেলে চালের জন্য লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা যায় গৃহিণী ফাতেমা আক্তারকে। কখন চাল পাবেন, তা অনিশ্চিত। বাজারে চাল সহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ওএমএস’র ট্রাকের সামনে এভাবেই ভিড় করছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।

গৃহিণী ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী রিকশা চালিয়ে যে আয় করে তা দিয়ে ৫০ টাকা কেজিতে চাল কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই একটু কম দামে কেনার জন্য এখানে আসছি। প্রতি সপ্তাহে আমরা ৫ কেজি চাল পাচ্ছি। কিন্তু ৫ কেজি চাল দিয়ে কিছু হয় না। সরকার যদি পাঁচ কেজির জায়গায় ১০ কেজি চাল দিতো তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। মিরপুর ২ নম্বরে অবস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পানের দোকানি জসিম উদ্দীন বলেন, লম্বা লাইনে গাদাগাদি করে ৫ কেজি চাল কেনার আশায় ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে লাইন ছাড়াও চাল কিনছে। এ ছাড়া বিক্রেতারা চাল দিতে বেশি সময় নেয়ায় ভিড় বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

মিরপুর ১১ বড় মসজিদ রোডে তদারকি করার দায়িত্বে থাকা আমিরুল ইসলাম  বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্নবিত্ত শ্রেণির অনেকেই ওএমএস’র চাল ও আটা কিনতে আসছেন। এ জন্য প্রতিদিনই দীর্ঘ লাইন হচ্ছে এবং লাইনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলাদের লাইন ঠিক করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অনেক সময় তারা মারামারি পর্যন্ত করে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করার কিছু থাকে না। বেশি টাকার বিনিময়ে পাঁচ কেজি চালের জায়গায় দশ কেজি চাল বিক্রির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ১০ কেজি চাল কাউকে দিচ্ছি না এবং কোনো মানুষের কাছে অতিরিক্ত টাকাও নেয়া হয় না। মানবিকতার খাতিরে কিছু সময় অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদেরকে বেশি চাল দেয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে তিন টন চাল দেয়া হচ্ছে। কাউকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না।

মিরপুর ২ নম্বরের তদারকির দায়িত্ব পালন করা রায়হান ইবনে হোসেন বলেন, প্রতিদিন মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিকাল ৩টার মধ্যেই সব চাল ও আটা বিক্রি হয়ে যায়। এই এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থাৎ ৩ টন চাল ও ১ টন আটা বিক্রি করছি। ফলে কাউকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না। আমাদের অগোচরে অনেকে দুইবার করেও চাল ও আটা নিচ্ছে। অতিরিক্ত চাল বিক্রয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কাউকে বেশি চাল দিচ্ছি না। অনেক সময় মানুষ ব্যাগ আনে না। এমন সময় বস্তায় করে দুই জনের চাল একসঙ্গে দেয়া হয়। গর্ভবতী নারী ও লাইনে দাঁড়াতে পারে না এমন মানুষদেরকে আমরা আগে দেয়ার চেষ্টা করি।

সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দুই দফা দাম কমানোর পর ফের বাড়লো সোনার দাম

» রমজানে যানজট কমাতে পুলিশের ১৫ নির্দেশনা

» রমজানে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অনুরোধ রাষ্ট্রপতির

» দেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে, কাল থেকে রোজা

» গুড়ার নন্দীগ্রামে হাইওয়ে পুলিশের পথসভা অনুষ্ঠিত 

» বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে প্রথমবারের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেকচার সপ্তাহ অনুষ্ঠিত

» পাঁচবিবিতে তথ্য আপা প্রকল্পের বিশেষ উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত

» নগদ-এ কেনাকাটার পেমেন্ট করলে পাবেন বিএমডব্লিউ গাড়ি

» মোবাইল ব্যালেন্স থেকে পরিশোধ করা যাবে সরকারি সেবার বিল

» জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসিকে সহযোগিতায় আগ্রহী নেদারল্যান্ডস

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

চাল কিনতে ওএমএস’র লাইনে উপচে পড়া ভিড়

ষাটোর্ধ্ব সফুরা বেগম থাকেন মিরপুর ১১ বড় মসজিদ এলাকায়। চালের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় এসেছেন ওএমএস’র (ওপেন মার্কেট সেলের) সাশ্রয়ী মূল্যের চাল কিনতে। কিন্তু চাল কিনতে এসে পড়েছেন বিপাকে। দীর্ঘ লাইনে ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার পরও ট্রাক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সফুরা বেগম সহ্য করতে না পেরে একসময় বসে পড়েন রাস্তায়। বলেন, সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করছি। কিন্তু ভিড় থাকার কারণে এখনো চাল নিতে পারিনি।

কেউ কেউ লাইনে না দাঁড়িয়েও চাল নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে বেশি টাকা দিয়ে অতিরিক্ত চাল কিনছে।

শেষ পর্যন্ত চাল পাবো কিনা বলতে পারছি না। সন্তানকে কোলে নিয়ে ভিড় ঠেলে চালের জন্য লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা যায় গৃহিণী ফাতেমা আক্তারকে। কখন চাল পাবেন, তা অনিশ্চিত। বাজারে চাল সহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ওএমএস’র ট্রাকের সামনে এভাবেই ভিড় করছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।

গৃহিণী ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী রিকশা চালিয়ে যে আয় করে তা দিয়ে ৫০ টাকা কেজিতে চাল কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই একটু কম দামে কেনার জন্য এখানে আসছি। প্রতি সপ্তাহে আমরা ৫ কেজি চাল পাচ্ছি। কিন্তু ৫ কেজি চাল দিয়ে কিছু হয় না। সরকার যদি পাঁচ কেজির জায়গায় ১০ কেজি চাল দিতো তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। মিরপুর ২ নম্বরে অবস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পানের দোকানি জসিম উদ্দীন বলেন, লম্বা লাইনে গাদাগাদি করে ৫ কেজি চাল কেনার আশায় ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে লাইন ছাড়াও চাল কিনছে। এ ছাড়া বিক্রেতারা চাল দিতে বেশি সময় নেয়ায় ভিড় বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

মিরপুর ১১ বড় মসজিদ রোডে তদারকি করার দায়িত্বে থাকা আমিরুল ইসলাম  বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্নবিত্ত শ্রেণির অনেকেই ওএমএস’র চাল ও আটা কিনতে আসছেন। এ জন্য প্রতিদিনই দীর্ঘ লাইন হচ্ছে এবং লাইনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলাদের লাইন ঠিক করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অনেক সময় তারা মারামারি পর্যন্ত করে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করার কিছু থাকে না। বেশি টাকার বিনিময়ে পাঁচ কেজি চালের জায়গায় দশ কেজি চাল বিক্রির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ১০ কেজি চাল কাউকে দিচ্ছি না এবং কোনো মানুষের কাছে অতিরিক্ত টাকাও নেয়া হয় না। মানবিকতার খাতিরে কিছু সময় অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদেরকে বেশি চাল দেয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে তিন টন চাল দেয়া হচ্ছে। কাউকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না।

মিরপুর ২ নম্বরের তদারকির দায়িত্ব পালন করা রায়হান ইবনে হোসেন বলেন, প্রতিদিন মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিকাল ৩টার মধ্যেই সব চাল ও আটা বিক্রি হয়ে যায়। এই এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থাৎ ৩ টন চাল ও ১ টন আটা বিক্রি করছি। ফলে কাউকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না। আমাদের অগোচরে অনেকে দুইবার করেও চাল ও আটা নিচ্ছে। অতিরিক্ত চাল বিক্রয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কাউকে বেশি চাল দিচ্ছি না। অনেক সময় মানুষ ব্যাগ আনে না। এমন সময় বস্তায় করে দুই জনের চাল একসঙ্গে দেয়া হয়। গর্ভবতী নারী ও লাইনে দাঁড়াতে পারে না এমন মানুষদেরকে আমরা আগে দেয়ার চেষ্টা করি।

সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Design & Developed BY ThemesBazar.Com