দৃশ্যটি দেখলে যে কারও গা শিউরে উঠবে। রীতিটি যিনি পালন করেন, তার জন্যও পুরো প্রক্রিয়াটি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে পূর্বপুরুষের রীতিকে সমুন্নত রাখতে গত ৪০ বছরের মতো এবারও চড়ক গাছে ঝুলে পূজার আচার পালন করেছেন ঢাকার ধামরাইয়ের বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র সরকার।
সরকারিভাবে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালন করা হলেও পঞ্জিকার রীতি মেনে চৈত্র সংক্রান্তির একদিন পর শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলের দিকে উপজেলার পৌরসভা এলাকার যাত্রাবাড়ী মাঠে এ পূজা আয়োজন করা হয়।
তবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়িয়ে প্রতিবছর এটি রূপ নেয় এক উৎসবে। হাজারো মানুষ অংশ নিয়ে উপভোগ করে শূন্যে উড়ার দৃশ্য।
পূজা উদযাপনের আয়োজকরা জানান, একটি বিশাল গাছের কাণ্ডকে চড়কগাছ বলা হয়। সারাবছর এটিকে জলের তলায় ডুবিয়ে রাখা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ঢাকঢোল পিটিয়ে এটি উত্তোলন করে পূজা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এই পূজার নেতৃত্ব দেন একজন সন্ন্যাসী। তাকেই পিঠে বড়শি গেঁথে চড়ক গাছের কাণ্ডের সঙ্গে রশি বেঁধে শূন্যে ঝুলানো হয়।
উপজেলার পৌরসভার এলাকার কান্দিরকুল গ্রামের নিতাই চন্দ্র সরকার পূর্বপুরুষদের রীতি মেনে প্রতিবছরের মতো এবারেও পিঠে বড়শি গেঁথে চড়ক গাছে ঝুলে পূজায় অংশ নিয়েছেন। রীতি মানায় এই দিন কথা বলতে পারবেন না তিনি।
কথা হয় নিতাই চন্দ্র সরকারের বড় ভাই প্রাণ গোপাল সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের বাবা-দাদাসহ পূর্বপুরুষরা ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য এই পূজা করতেন। এইদিনের প্রস্তুতি হিসেবে গত একমাস ধরে আমার ভাই নিরামিষভোজী হয়েছেন। তিন দিন ধরে তিনি উপবাস রেখেছেন। আর পূজার একদম নির্বাক থাকবেন। এদিন সকাল থেকেই কালী পূজা, শিব পূজা, কুমির পূজাসহ কয়েকটি পূজা করা হয়েছে। বিকেলের দিকে তার শরীরে বড়শি গাঁথা হয়। এরপর কালীর মতো নৃত্য করে তাকে চড়কগাছের কাছে আনা হয়। সেখানেও পূজা দেওয়া হয়েছে। তারপর গাছকে সাত বার হেঁটে প্রদক্ষিণ করা শেষে রশির সঙ্গে চড়কগাছের আড়াঁয় বেঁধে তাকে ঝুলিয়ে সাত পাক ঘুরানো হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের মঙ্গল কামনায় শিশুকে কোলে নিয়ে ৩ পাক ঘুরেছেন তিনি।
উপজেলার আমতা ইউনিয়নের আমছিমুর গ্রাম থেকে চড়কগাছ পূজা দেখতে এসেছিলেন বীথি দাস। তিনি বলেন, ঈশ্বরের কাছে সমৃদ্ধি কামনা করে পূজা দেখতে এসেছি। চড়কগাছকে জড়িয়ে কপাল ঠেকিয়েছি। এরমধ্যে দিয়ে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন বলে আশা রাখি।
পৌরসভার বাসিন্দা দীপক চন্দ্র পাল বলেন, প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এই উৎসব পালন করা হয়। ভয়ঙ্কর এই কাজে সন্ন্যাসীরা অংশ নেন। যেনো ঈশ্বর সন্তুষ্ট থাকেন। ও আমাদের সকল অমঙ্গল কেটে যায়। গত দুই বছর এটা বন্ধ ছিলো। এবার আবার চালু হলো। এখানে আসতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ পূজার উৎসব দেখতে এসেছেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও। উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়ন থেকে চড়কগাছে মানুষ ঘুরানো দেখতে এসেছিলেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটা তাদের পূজা হলেও এমন দৃশ্য সহজে দেখা যায় না। তাই দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। অনেক উপভোগ করেছি।
বিকেলের দিকে শুরু হওয়া চড়কগাছ ঘুরানোর উৎসবের ইতি টানা হয় সন্ধ্যার কিছু আগেই। পূজাকে ঘিরে পুরো এলাকায় মেলারও আয়োজন করা হয়। এই মেলা শনিবার পর্যন্ত চলবে বলেও জানান আয়োজকরা। সূএ:রাইজিংবিডি.কম