স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘করোনা শনাক্তের তুলনায় এখনো হাসপাতালে রোগী ভর্তি অনেক কম আছে। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, সাধারণ শয্যা, আইসিইউ, এইচডিইউ সবই রয়েছে। ডিএনসিসি কভিড হাসপাতাল এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফিল্ড হাসপাতাল চালু আছে। করোনা রোগী কমে গেলে আমরা ননকভিড রোগীদের সেবার পরিসর বাড়িয়েছিলাম। করোনা রোগী ভর্তি বাড়লে আবার হাসপাতালগুলো করোনা ডেডিকেটেড করে সেবা দেওয়া শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় দুই বছর করোনা রোগী ব্যবস্থাপনায় আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেক কম ছিল। করোনার প্রথম-দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় আমাদের সক্ষমতা এখন কয়েক গুণ বেড়েছে। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারব।
গতকাল রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ৯৬১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ছিলেন ৩২০ জন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৪৫ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৮৭ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১৩ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৫ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২৩১ জন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ১৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬ জন। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ৩০ জন, আসগর আলী হাসপাতালে ২৪ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ১৯ জন, ইবনেসিনা হাসপাতালে ২৭ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪৩ জন, এভারকেয়ার হাসপাতালে ২৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হুদা খান গতকাল বলেন, ‘হাসপাতালে গত মাসেও ২০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ২২১ জন। আজ (গতকাল) ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন। সাধারণ শয্যার পাশাপাশি আইসিইউ, এইচডিইউতেও রোগী ভর্তি বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘টেস্টের সংখ্যা বাড়ায় রোগী শনাক্ত বেড়েছে। করোনা ডেডিকেটেড আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ জন সেবা নিচ্ছেন। করোনা রোগী বাড়ায় হাসপাতালে ১০০ শয্যার নতুন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ননকভিড রোগীর জন্য ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হলেও রোগী বাড়ায় এতে করোনা রোগী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
গত শুক্রবার রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৮৭৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ছিল ২৯৭ জন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৪৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৬৩ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২২১ জন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ১৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১ জন। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে ২৮ জন, আসগর আলী হাসপাতালে ১৬ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ২৬ জন, ইবনেসিনা হাসপাতালে ২০ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৩৬ জন, এভারকেয়ার হাসপাতালে ২৬ জন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি। গত সপ্তাহে ১৩ জন ভর্তি হয়েছিল, এ সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ৫৫ জন। বর্তমানে ৬৮ জন কভিড এবং ২১৪ জন ননকভিড রোগী ভর্তি আছেন। করোনা টেস্টে শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। তবে আক্রান্তের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কম। যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের মধ্যে জটিলতাও কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আউটডোরে করোনা ডেডিকেটেড বুথ চালু করা হয়েছে। সেখানে টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থাও আছে। আউটডোরে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে রোগী আসছেন। করোনা টেস্ট করে পজিটিভ রিপোর্ট এলে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন। আউটডোরে আসা অনেক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে আছেন। তারা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ফলোআপ সেবা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে যাদের প্রয়োজন তাদের হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।’ গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কনফারেন্সরুমে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে ৩৩ শতাংশ শয্যা ইতোমধ্যে পূর্ণ হয়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকা নেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মানায় জোর দেন তিনি।
সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন