মালয়েশিয়ার গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে দেশে ফেরত পাঠানোর ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট দেশটির অভিবাসন বিভাগের বিরুদ্ধে এই অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করে।
এর ফলে সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে এখনই বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না মালয়েশীয় অভিবাসন বিভাগ। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সোমবার স্থগিতাদেশ আরোপ করেন মালয়েশিয়ার হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ জাইনি মাজলান। মূলত সাবেক এই বাংলাদেশি হাইকমিশনারের আইনজীবীদের দায়ের করা হেবিয়াস কর্পাস রিট আবেদনের বিপরীতে এই আদেশ দেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অজ্ঞাত কারণে ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ খায়রুরুজ্জামানকে হাতে পেতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিতা রহমান অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে এম খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকা থেকে আটক করে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন শেষে এক যুগের বেশি সময় ধরে শরণার্থী হিসেবে দেশটিতে অবস্থান করছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
সেসময় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদ্দিন জানিয়েছিলেন, আইন মেনেই এম খায়রুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে। বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য তাকে (খায়রুজ্জামান) আটকের জন্য বাংলাদেশ সরকার অনুরোধ জানিয়েছিল।
সাবেক এই কূটনীতিকের আইনজীবী দল জানিয়েছেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) একটি কার্ডসহ খায়রুজ্জামান মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন এবং অভিবাসনবিষয়ক কোনো আইন তিনি লঙ্ঘন করেননি। আর তাই তাকে আটক করা অবৈধ।
বাংলাদেশের সাবেক এই হাইকমিশনারকে প্রত্যাপণের ওপর স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করার সময় বিচারপতি মোহাম্মদ জাইনি মাজলান বলেন, ‘আমি শুনতে চাই না যে তাকে এই আদালতের মঞ্জুর করা আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে অবসরে পাঠানোর পাশাপাশি জেলহত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামান জামিনে বের হয়ে আসেন। এরপর চাকরি ফিরে পেয়ে ফের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ২০০৪ সালে তিনি জেলহত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি লাভ করেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। তবে দেশে ফিরে আসাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে খায়রুজ্জামান কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।