খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া সুন্নাত?

আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে ‘খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়া সুন্নত’। বিশেষ কোনো কোনো দাওয়াতে গেলে খাওয়ার পর ডেজার্ট আইটেম থাকলে সেটা খেতে উৎসাহ দেয়ার সময় উক্ত কথাটি বারবার সামনে আসে। আসলেও কি খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া সুন্নাত?

 

খাবারের পর মিষ্টি খাওয়ার নানা রকম উপকার আছে। মিষ্টি খাবার হজমের অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা ঝাল খাবারে একটু বেশি নিঃসৃত হয়। যার ফলে পরিপাকক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হতে পারে।

তবে অনেকে মনে করেন, খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়া সুন্নত। অথচ এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, এই ধরনের কোনো বর্ণনা হাদিসে নেই। তাছাড়া রাসুল (সা.)-এর খানা খাওয়ার ক্ষেত্রে বিলাসিতা করার কোনো সুযোগ ছিল না। কখনো এমনও হতো যে, তিনি শুধু পানি ও খেজুর দিয়ে খাবার সেরেছেন। তবে খাওয়ার পরে কেউ চাইলে এমনিতেই মিষ্টি-জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারে।

মিষ্টি-জাতীয় খাবার:

রাসুল (সা.)-এর দিনের পর দিন পেটভরে খানা জুটতো না। মাসের পর মাস বাড়িতে চুলাই জ্বলত না। তখন খেজুরই হতো একমাত্র সম্বল, আর খেজুর মিষ্টিই হয়। সেই হিসেবে অনেকে হয়তো খানার পর মিষ্টি খাওয়া সুন্নত বলে থাকেন।

 

তবে নবীজি (সা.) খাবার খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খেয়েছেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং খেজুর দিয়ে খানা সেরেছেন মর্মে বর্ণনা এসেছে। অতএব, খানার শেষে মিষ্টি ভক্ষণ করাকে সুন্নত বলা ঠিক নয়।

 

আয়েশা (রা.) বলেন, আমাদের উপর দিয়ে মাস কেটে যেত, আমরা এর মধ্যে ঘরে আগুন জ্বালাতাম না। আমরা কেবল খুরমা ও পানির উপর চলতাম। তবে যৎসামান্য গোশত আমাদের নিকট এসে যেত। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৮; ইফাবা : ৬০১৪)

মিষ্টি খাওয়া কি সুন্নত?

খেজুর খাওয়াও সুন্নত

নবীজি (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন। মিষ্টি খাওয়া সুন্নত, তবে তা ইবাদতের সুন্নত বা অবশ্যই পালনীয় নয়। যেহেতু রাসুল (সা.) মিষ্টি খাওয়া পছন্দ করতেন, সেহেতু এটি অভ্যাসগত সুন্নত। এটিকে সুন্নতে আদিয়া বলা হয়, অর্থাৎ স্বভাবজাত সুন্নত।

 

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু খেতে পছন্দ করতেন।’  (বুখারি, হাদিস : ১২১; বুখারি, হাদিস: ৫৪৩১)

 

প্রিয়নবী (সা.) যা করতে পছন্দ করতেন, তা যদি কেউ ভালোবেসে করে থাকেন; তাহলে তিনি সেই কাজের জন্য সাওয়াব অর্জন করতে পারবেন। তবে তা অবশ্যম্ভাবী সুন্নতের ইবাদত নয়।

 

খেজুর খাওয়াও সুন্নত। প্রতিদিন তিনটি খেজুর খাওয়ায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। অনেকের প্রিয় ফল খেজুর। রমজান মাসে রাসুল (সা.) ইফতারের মুহূর্তে খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করতেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নতুন মায়েরা সকালে এই ৫ সুপারফুড খান

» হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী ১ থেকে ২ ঘণ্টা কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

» বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার ক্যাভিয়ার আসলে কী?

» এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশ, ফাইনালে ভারত

» মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক নিহত

» সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা ও আয়ের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

» সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল

» অলিম্পিক উদ্বোধনের আগে ফ্রান্সের রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা

» যুবলীগ কর্মী জুয়েলকে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা

» কেন বিষাক্ত মানুষদের ছেঁটে ফেলতে বললেন পরিণীতি?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া সুন্নাত?

আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে ‘খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়া সুন্নত’। বিশেষ কোনো কোনো দাওয়াতে গেলে খাওয়ার পর ডেজার্ট আইটেম থাকলে সেটা খেতে উৎসাহ দেয়ার সময় উক্ত কথাটি বারবার সামনে আসে। আসলেও কি খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া সুন্নাত?

 

খাবারের পর মিষ্টি খাওয়ার নানা রকম উপকার আছে। মিষ্টি খাবার হজমের অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা ঝাল খাবারে একটু বেশি নিঃসৃত হয়। যার ফলে পরিপাকক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হতে পারে।

তবে অনেকে মনে করেন, খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়া সুন্নত। অথচ এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, এই ধরনের কোনো বর্ণনা হাদিসে নেই। তাছাড়া রাসুল (সা.)-এর খানা খাওয়ার ক্ষেত্রে বিলাসিতা করার কোনো সুযোগ ছিল না। কখনো এমনও হতো যে, তিনি শুধু পানি ও খেজুর দিয়ে খাবার সেরেছেন। তবে খাওয়ার পরে কেউ চাইলে এমনিতেই মিষ্টি-জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারে।

মিষ্টি-জাতীয় খাবার:

রাসুল (সা.)-এর দিনের পর দিন পেটভরে খানা জুটতো না। মাসের পর মাস বাড়িতে চুলাই জ্বলত না। তখন খেজুরই হতো একমাত্র সম্বল, আর খেজুর মিষ্টিই হয়। সেই হিসেবে অনেকে হয়তো খানার পর মিষ্টি খাওয়া সুন্নত বলে থাকেন।

 

তবে নবীজি (সা.) খাবার খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খেয়েছেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং খেজুর দিয়ে খানা সেরেছেন মর্মে বর্ণনা এসেছে। অতএব, খানার শেষে মিষ্টি ভক্ষণ করাকে সুন্নত বলা ঠিক নয়।

 

আয়েশা (রা.) বলেন, আমাদের উপর দিয়ে মাস কেটে যেত, আমরা এর মধ্যে ঘরে আগুন জ্বালাতাম না। আমরা কেবল খুরমা ও পানির উপর চলতাম। তবে যৎসামান্য গোশত আমাদের নিকট এসে যেত। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৮; ইফাবা : ৬০১৪)

মিষ্টি খাওয়া কি সুন্নত?

খেজুর খাওয়াও সুন্নত

নবীজি (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন। মিষ্টি খাওয়া সুন্নত, তবে তা ইবাদতের সুন্নত বা অবশ্যই পালনীয় নয়। যেহেতু রাসুল (সা.) মিষ্টি খাওয়া পছন্দ করতেন, সেহেতু এটি অভ্যাসগত সুন্নত। এটিকে সুন্নতে আদিয়া বলা হয়, অর্থাৎ স্বভাবজাত সুন্নত।

 

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু খেতে পছন্দ করতেন।’  (বুখারি, হাদিস : ১২১; বুখারি, হাদিস: ৫৪৩১)

 

প্রিয়নবী (সা.) যা করতে পছন্দ করতেন, তা যদি কেউ ভালোবেসে করে থাকেন; তাহলে তিনি সেই কাজের জন্য সাওয়াব অর্জন করতে পারবেন। তবে তা অবশ্যম্ভাবী সুন্নতের ইবাদত নয়।

 

খেজুর খাওয়াও সুন্নত। প্রতিদিন তিনটি খেজুর খাওয়ায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। অনেকের প্রিয় ফল খেজুর। রমজান মাসে রাসুল (সা.) ইফতারের মুহূর্তে খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করতেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com