ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বড় ভাইদের শাসন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। খুলনা থেকে রাজশাহী। বরিশাল থেকে সিলেট। সর্বত্রই একই চিত্র। ক্ষমতা যার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দখল তাদের। ক্ষমতা বদলায় জমিদারি তালুকের মতো হলের রাজত্বও বদলায়। বছরের পর বছর ধরেই এমন ব্যবস্থা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। হলে কে থাকবে কে থাকবে না এটিও অনেক ক্ষেত্রে ঠিক করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন।

শুধু কি তাই! বড় ভাই পরিচয়ে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে সব কিছু। নিয়োগ, টেন্ডার থেকে নিয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তাদের কথা না শুনলে নানা হয়রানি আর নির্যাতনের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। সালাম না দিলে, কথামতো কাজ না করলে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বড় ভাইদের শাসন নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন আমাদের স্টাফ রিপোর্টার পিয়াস সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হাসানাত মাহমুদ, ফুয়াদ পাবলো ও রাহাত মাহমুদ খান
ঢাবির হল নিয়ন্ত্রণ করেন বড় ভাইয়েরা: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো মূলত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত প্রাধ্যক্ষ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সিট বণ্টনের নিয়ম। যেখানে থেকে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শিখে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সিট ছেড়ে দেবেন নতুনদের জন্য। হলের এসব লিপিবদ্ধ নিয়ম-কানুন অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো শোনায় সমসাময়িক বাস্তবতায়। ঢাবি নিজের জৌলুস হারিয়েছে অনেক আগেই। সঙ্গে হারিয়েছে হলগুলোর ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ। মুষ্টিমেয় কিছু প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা ছাড়া হলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খুব একটা ক্ষমতা নেই। হলগুলো এখন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ছাত্রসংগঠনের কথিত বড় ভাইয়েরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য হল রয়েছে মাত্র ১৯টি। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রীদের জন্য, ১৩টি ছাত্রদের জন্য আর একটি হল বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। বিদেশি শিক্ষার্থীদের হল আর মেয়েদের হলে প্রশাসনের এখনো বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ছেলেদের হলে রাজনৈতিক বড় ভাইয়েরাই সর্বেসর্বা। প্রশাসন সেখানে অনেকটা ঠুঁটো জগন্নাথ। হলগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুন বিজয় একাত্তর হল এতদিন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম গণরুম তৈরি, প্রশাসনিক বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সিটে উঠতে না দেয়াসহ নানা উপায়ে এই হলও নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে ছাত্রলীগ।

শিক্ষার্থীকে হলে রাখা, হল থেকে বের করে দেয়া, ক্যান্টিন, হলের দোকান ইত্যাদিসহ এসব আবাসিক হলের সমস্ত কর্মকাণ্ডই ছাত্রলীগের বড় ভাইদের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর হলে সিট পেতে (গণরুমে) ছাত্রলীগের ভাইদের শরণাপন্ন হতে হয়। হলে ওঠার পর নবীন ছাত্রদের ওপর সাংগঠনিক দীক্ষা ও কথিত ম্যানারে শেখানোর নামে নিয়ম করে প্রতিরাতে নেয়া হয় গেস্টরুমে। এইখানে মূলত রাজনৈতিক বড় ভাইরা শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ এবং হলে তাদের আনুগত্যের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ম্যানারের নামে হলে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাফেরা করার ওপর আরোপ করা হয় বিধিনিষেধ। এগুলো পালনে কোনোরকম ব্যত্যয় ঘটলে শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অনেক সময় বড় ভাইদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

করোনা মহামারির দীর্ঘ বন্ধের পর আবাসিক হলগুলোতে গেস্টরুমে নির্যাতন, গণরুম বন্ধে প্রশাসনকে সহায়তাসহ ছাত্রলীগের সার্বিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি ছাত্রবান্ধব করার আশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে সেটি বাস্তবায়নে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি। গত বছরের অক্টোবরে হল খোলার পর থেকে বিগত পাঁচ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অনন্ত ১০টি শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে এসেছে। তবে শিক্ষার্থী নির্যাতন বেশিরভাগ ঘটনায় জড়িতরা কোনো ধরনের শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যায়। হলে ছাত্রলীগ করলেই যে সব শিক্ষার্থী নির্বিঘ্নে ও সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হলে থাকতে পারে বিষয়টি এমন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত হলকেন্দ্রিক পরিচালিত হয়। হলগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সংগঠনটির শীর্ষ চার নেতার (কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ) অনুসারী হিসেবে বিভিন্ন গ্রুপ-সাব গ্রুপে বিভক্ত। এ গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে হলের কক্ষগুলো ভাগ করে নেয়। সমপ্রতি হলগুলোতে প্রায় পাঁচ বছর পর নিজেদের কমিটি দিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে প্রতিটি হলের যেকোনো দু’টি গ্রুপ থেকে নেতা (হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচিত হয়েছেন। রীতি অনুসারে এতদিন অন্য নেতাদের পেছনে রাজনীতি করা বাকি গ্রুপগুলো এ সময় কমিটি পাওয়া গ্রুপের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। রুম বণ্টন ও হলে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পদবঞ্চিত এসব গ্রুপের নেতাকর্মীদের অনেক সময় বৈষম্যের শিকার হতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পদবঞ্চিত একটি গ্রুপের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, দীর্ঘদিন যেই গ্রুপের রাজনীতি করেছি সেখান থেকে নেতা আসেনি। এখন নেতৃত্বে আসা গ্রুপের নেতাকর্মীদের সমান সুযোগ-সুবিধা না পেলেও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েই হলে থাকতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে সংগঠনের অনেকেই বছরের পর বছর হলে অবৈধভাবে অবস্থান করেন। হলগুলোতে ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব যে শুধুমাত্র সিটকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ তা নয়, হলের খাবার দোকান, ক্যান্টিনেও তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। হলের দোকানে কোন খাবার কতটুক তৈরি করা যাবে, কি করা যাবে না সেটি হলের শীর্ষ নেতাকর্মীরাই ঠিক করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনগুলোয় দিনগুলোর খাবারের মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ক্যান্টিন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন কর্মচারী-মালিকের অভিযোগ, মান বৃদ্ধি করতে না পারার পেছনে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর নিয়মিত ‘ফাউ’ খাওয়া ক্যান্টিনের ইজারা পেতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ‘চাঁদা’ দেয়াও এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। এমনকি বিভিন্ন হলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও হল ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সরকারসমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রভাব নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগে কম বেশি থাকলেও মূলত বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিগত জোট সরকারের আমল থেকেই এই ধারা শুরু হয়। সে সময় হলে ছাত্রদলের আধিপত্য দেখেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় নিজেদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখে সংগঠনটি হলগুলোতে অনেকটা প্রশাসনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। তিনি এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। হলের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই শিক্ষক  বলেন, হলগুলোতে বর্তমানে যে প্রশাসনিক অবস্থা সেটি আগের যেকোনো সময়ের থেকে ভালো। তবে এর পরও কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। হলগুলোতে পুরোপুরি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণহীনতা দীর্ঘদিনের সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্রমান্বয়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নিয়েছি। সিট প্রদানের ক্ষেত্রে যেসব প্রভোস্টদের দুর্বলতা ছিল তাদের কেন্দ্রীয়ভাবে বলা হয়েছে। আগে যেভাবে হলগুলোতে তালিকা করে বছরে দু’একবার মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করা হতো, আমরা আবার সেই ধারাবাহিকতায় ফেরার চেষ্টা করছি। একটি সহনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হলগুলোকে দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে পারবো বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

পরিস্থিতি পাল্টেছে বুয়েটে: প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। দেশের অন্যতম শীর্ষ এই বিদ্যাপীঠে আটটি হলের অধিকাংশই এক সময় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল ছাত্রলীগের। সংগঠনের নেতাকর্মীদের কথা মতো না চললে বা তাদের মতের অমিল হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসতো অবর্ণনীয় নির্যাতন। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা খুব একটা মুখ না খোলায় ক্যাম্পাসের ভেতরই থেকে যেত নির্যাতনের ঘটনাগুলো। তবে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের নির্যাতনে শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর মুখ খুলতে থাকে সবাই। দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি। তখন থেকে হলগুলো প্রশাসনিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রথম বর্ষ থেকে হলে সিট পান শিক্ষার্থীরা। হলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও তিতুমীর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জুলফিকার সাদিক বলেন, আবরার ফাহাদের ঘটনার পর থেকে হলগুলোতে ছাত্রলীগে বা অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের দৃশ্যমান কোনো ধরনের তৎপরতা চোখে পড়ে না। হলগুলোর আসন খালি থাকা সাপেক্ষে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিট বণ্টন করে দেয়। প্রথম বর্ষেই প্রায় সবাই হলে সিট পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট সংলগ্ন দেশের অন্যতম আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ। তবে রাজনৈতিক চাপ তুলনামূলক কম থাকায় এবং শিক্ষার্থী তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সিট থাকায় এখানে পড়ুয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের খুব একটা অভিযোগ করতে দেখা যায় না।

রাবির আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণে ছাত্রলীগ: কাগজে কলমে হল প্রভোস্ট দায়িত্বে থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ফলে বৈধ উপায়ে আবাসিক হলে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আবাসিক হলের বিভিন্ন রুমে তালা দিয়ে সিট দখল, প্রভোস্টের তুলে দেয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে নামিয়ে দেয়া ও সিটবাণিজ্যের জন্য ফাঁকা সিটের তালিকাকরণসহ নানা অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য মোট ১৭টি আবাসিক হল রয়েছে। এরমধ্যে ছেলেদের ১১টি আবাসিক হলের প্রতিটিতেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের জন্য আলাদা ব্লক রয়েছে। ক্যাম্পাসে ‘পলিটিক্যাল ব্লক’ নামে পরিচিত এ সকল ব্লকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ সকল ব্লকের বাইরেও সাধারণ সিটগুলোও অনেকাংশে ছাত্রলীগের দখলে। অভিযোগ আছে তিন থেকে আট হাজার টাকার বিনিময়ে এ সকল সিট সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলগুলোতেও সিট দখলকে কেন্দ্র করে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন হলের সিট বণ্টনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, গত ২০শে অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ৩৪৪ নম্বর কক্ষ দখল নিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে চারটি তালা দেয়া হয়। এ ছাড়া মাদার বখশ হলেও এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে আরেকজনকে তুলে দেন হল ছাত্রলীগ নেতা। পরবর্তীতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তাকে আবার হলে উঠানো হয়। প্রায় প্রতিটি হলেই এ ধরনের চিত্র পাওয়া যায়। ফলে সিট দখল করতে না পারায় আবাসিক কার্ড থাকা সত্ত্বেও নিজেদের সিটে উঠতে পারেন না শিক্ষার্থীরা।

যদিও সকল অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, সিট দখল বা সিট বাণিজ্যের মতো কার্যক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ জড়িত নয়। তারপরও কেউ যদি উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে আমাদেরকে জানায় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আবাসিক হলের সিট দখল নিয়ে আমরা অবগত আছি। কারা কারা সিট দখলের সঙ্গে জড়িত তাদের একটি তালিকা করার কাজ করছি। আমরা দ্রুতই এ সকল বিষয় সমাধানের চেষ্টা করবো। এ ছাড়া হলের সিটের সুষ্ঠু বণ্টনে হল প্রভোস্টদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর দখলে চবির হল: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর অধিকাংশ কক্ষ ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর দখলে রয়েছে। মেধার পরিবর্তে ছাত্রলীগ করাই সিট পাওয়ার মাপকাঠি হয়ে উঠছে বর্তমানে। হলে নিয়মিত মাদকের আসর বসা ছাড়াও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায় নিয়মিত।

বিভিন্ন হলের রুমের দরজা এবং দেয়ালে লিখে দেয়া হয়েছে দখলদার গ্রুপের নাম। এ ছাড়াও স্যার এ এফ রহমান হলজুড়ে দেখা যায় বিজয় গ্রুপের চিকা। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমবেশি সব আবাসিক হল কোনো না কোনো গ্রুপের দখলে রয়েছে। যার ফলে আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিমাণ হাতেগোনা কয়েকজন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা থাকলেও বগিভিত্তিক রাজনীতি থেকে বের হতে পারছে না চবি ছাত্রলীগ। বর্তমানে বগিভিত্তিক নয়টি গ্রুপ ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। গ্রুপগুলোর নাম- সিক্সটি নাইন, সিএফসি ও বিজয় ভিএক্স, আরএস, একাকার, বাংলার মুখ, কনকর্ড ও এপিটাফ গ্রুপ।

এদিকে ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক রাজনীতি সক্রিয় থাকায় কিছুদিন পরপরই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়ায়। আবাসিক হলগুলোতেও রয়েছে বগিভিত্তিক সিট দখলের প্রথা। অধিকাংশ আবাসিক হলেই কোনো না কোনো বগিভিত্তিক গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। যার ফলে সংঘর্ষে জড়ালে আবাসিক হলের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রবণতা রয়েছে গ্রুপগুলোর মধ্যে।

২০২০ সালের মার্চে বিজয়, সিক্সটি নাইন ও কনকর্ড গ্রুপের মধ্যে ত্রিমুখী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় আলাওল এবং এএফ রহমানের হলের অন্তত ৮০টি কক্ষ ভাঙচুর হয়। আহত হন অর্ধশতাধিক। আটক করা হয় ৫৭ জনকে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ টাকার বেশি। অনেক শিক্ষার্থীর মোবাইল, ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় ডিভাইস, কাগজপত্র হারিয়ে যায়।

চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ সব হলে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেয়া হোক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পরপর দুইবার বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। এরপরও যারা বগির নামে হলের কক্ষগুলো দখলে রেখেছে, আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

হলের সার্বিক বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সমপ্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাইস চ্যান্সেলর ড. শিরীন আখতার বলেন, হলে কোনো অছাত্র থাকতে পারবে না। শিগগিরই সব আবাসিক হলে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, হলগুলোতে আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে থাকি। প্রশাসনের সঙ্গে দরকষাকষি করে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করি। হলগুলোতে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ শক্তিশালী। আমরা চেষ্টা করছি ছাত্রলীগের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, সোনার বাংলা গড়ার জন্য যে লক্ষ্য এগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, আবাসন সংকটের কারণে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু আমরা মনে করি আমাদের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং একাডেমিক কার্যক্রম সমুন্নত রাখার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা এগুলোর কারণে পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। ছাত্রলীগের লক্ষ্য আবাসন সংকট দূর করা। শিক্ষার্থীরা সবসময় ছাত্রলীগকে বন্ধু হিসেবে পাশে পায়। সূএ:মানবজমিন 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নতুন মায়েরা সকালে এই ৫ সুপারফুড খান

» হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী ১ থেকে ২ ঘণ্টা কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

» বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার ক্যাভিয়ার আসলে কী?

» এশিয়া কাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশ, ফাইনালে ভারত

» মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষক নিহত

» সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা ও আয়ের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

» সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল

» অলিম্পিক উদ্বোধনের আগে ফ্রান্সের রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা

» যুবলীগ কর্মী জুয়েলকে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা

» কেন বিষাক্ত মানুষদের ছেঁটে ফেলতে বললেন পরিণীতি?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বড় ভাইদের শাসন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। খুলনা থেকে রাজশাহী। বরিশাল থেকে সিলেট। সর্বত্রই একই চিত্র। ক্ষমতা যার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দখল তাদের। ক্ষমতা বদলায় জমিদারি তালুকের মতো হলের রাজত্বও বদলায়। বছরের পর বছর ধরেই এমন ব্যবস্থা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। হলে কে থাকবে কে থাকবে না এটিও অনেক ক্ষেত্রে ঠিক করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন।

শুধু কি তাই! বড় ভাই পরিচয়ে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে সব কিছু। নিয়োগ, টেন্ডার থেকে নিয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তাদের কথা না শুনলে নানা হয়রানি আর নির্যাতনের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। সালাম না দিলে, কথামতো কাজ না করলে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বড় ভাইদের শাসন নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন আমাদের স্টাফ রিপোর্টার পিয়াস সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হাসানাত মাহমুদ, ফুয়াদ পাবলো ও রাহাত মাহমুদ খান
ঢাবির হল নিয়ন্ত্রণ করেন বড় ভাইয়েরা: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো মূলত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত প্রাধ্যক্ষ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সিট বণ্টনের নিয়ম। যেখানে থেকে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শিখে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সিট ছেড়ে দেবেন নতুনদের জন্য। হলের এসব লিপিবদ্ধ নিয়ম-কানুন অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো শোনায় সমসাময়িক বাস্তবতায়। ঢাবি নিজের জৌলুস হারিয়েছে অনেক আগেই। সঙ্গে হারিয়েছে হলগুলোর ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ। মুষ্টিমেয় কিছু প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা ছাড়া হলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খুব একটা ক্ষমতা নেই। হলগুলো এখন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ছাত্রসংগঠনের কথিত বড় ভাইয়েরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য হল রয়েছে মাত্র ১৯টি। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রীদের জন্য, ১৩টি ছাত্রদের জন্য আর একটি হল বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। বিদেশি শিক্ষার্থীদের হল আর মেয়েদের হলে প্রশাসনের এখনো বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ছেলেদের হলে রাজনৈতিক বড় ভাইয়েরাই সর্বেসর্বা। প্রশাসন সেখানে অনেকটা ঠুঁটো জগন্নাথ। হলগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুন বিজয় একাত্তর হল এতদিন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম গণরুম তৈরি, প্রশাসনিক বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সিটে উঠতে না দেয়াসহ নানা উপায়ে এই হলও নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে ছাত্রলীগ।

শিক্ষার্থীকে হলে রাখা, হল থেকে বের করে দেয়া, ক্যান্টিন, হলের দোকান ইত্যাদিসহ এসব আবাসিক হলের সমস্ত কর্মকাণ্ডই ছাত্রলীগের বড় ভাইদের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর হলে সিট পেতে (গণরুমে) ছাত্রলীগের ভাইদের শরণাপন্ন হতে হয়। হলে ওঠার পর নবীন ছাত্রদের ওপর সাংগঠনিক দীক্ষা ও কথিত ম্যানারে শেখানোর নামে নিয়ম করে প্রতিরাতে নেয়া হয় গেস্টরুমে। এইখানে মূলত রাজনৈতিক বড় ভাইরা শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ এবং হলে তাদের আনুগত্যের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ম্যানারের নামে হলে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাফেরা করার ওপর আরোপ করা হয় বিধিনিষেধ। এগুলো পালনে কোনোরকম ব্যত্যয় ঘটলে শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অনেক সময় বড় ভাইদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

করোনা মহামারির দীর্ঘ বন্ধের পর আবাসিক হলগুলোতে গেস্টরুমে নির্যাতন, গণরুম বন্ধে প্রশাসনকে সহায়তাসহ ছাত্রলীগের সার্বিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি ছাত্রবান্ধব করার আশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে সেটি বাস্তবায়নে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি। গত বছরের অক্টোবরে হল খোলার পর থেকে বিগত পাঁচ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অনন্ত ১০টি শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে এসেছে। তবে শিক্ষার্থী নির্যাতন বেশিরভাগ ঘটনায় জড়িতরা কোনো ধরনের শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যায়। হলে ছাত্রলীগ করলেই যে সব শিক্ষার্থী নির্বিঘ্নে ও সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হলে থাকতে পারে বিষয়টি এমন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত হলকেন্দ্রিক পরিচালিত হয়। হলগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সংগঠনটির শীর্ষ চার নেতার (কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ) অনুসারী হিসেবে বিভিন্ন গ্রুপ-সাব গ্রুপে বিভক্ত। এ গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে হলের কক্ষগুলো ভাগ করে নেয়। সমপ্রতি হলগুলোতে প্রায় পাঁচ বছর পর নিজেদের কমিটি দিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে প্রতিটি হলের যেকোনো দু’টি গ্রুপ থেকে নেতা (হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচিত হয়েছেন। রীতি অনুসারে এতদিন অন্য নেতাদের পেছনে রাজনীতি করা বাকি গ্রুপগুলো এ সময় কমিটি পাওয়া গ্রুপের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। রুম বণ্টন ও হলে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পদবঞ্চিত এসব গ্রুপের নেতাকর্মীদের অনেক সময় বৈষম্যের শিকার হতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পদবঞ্চিত একটি গ্রুপের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, দীর্ঘদিন যেই গ্রুপের রাজনীতি করেছি সেখান থেকে নেতা আসেনি। এখন নেতৃত্বে আসা গ্রুপের নেতাকর্মীদের সমান সুযোগ-সুবিধা না পেলেও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েই হলে থাকতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে সংগঠনের অনেকেই বছরের পর বছর হলে অবৈধভাবে অবস্থান করেন। হলগুলোতে ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব যে শুধুমাত্র সিটকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ তা নয়, হলের খাবার দোকান, ক্যান্টিনেও তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। হলের দোকানে কোন খাবার কতটুক তৈরি করা যাবে, কি করা যাবে না সেটি হলের শীর্ষ নেতাকর্মীরাই ঠিক করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনগুলোয় দিনগুলোর খাবারের মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ক্যান্টিন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন কর্মচারী-মালিকের অভিযোগ, মান বৃদ্ধি করতে না পারার পেছনে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর নিয়মিত ‘ফাউ’ খাওয়া ক্যান্টিনের ইজারা পেতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ‘চাঁদা’ দেয়াও এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। এমনকি বিভিন্ন হলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও হল ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সরকারসমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রভাব নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগে কম বেশি থাকলেও মূলত বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিগত জোট সরকারের আমল থেকেই এই ধারা শুরু হয়। সে সময় হলে ছাত্রদলের আধিপত্য দেখেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় নিজেদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখে সংগঠনটি হলগুলোতে অনেকটা প্রশাসনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। তিনি এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। হলের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই শিক্ষক  বলেন, হলগুলোতে বর্তমানে যে প্রশাসনিক অবস্থা সেটি আগের যেকোনো সময়ের থেকে ভালো। তবে এর পরও কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। হলগুলোতে পুরোপুরি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণহীনতা দীর্ঘদিনের সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্রমান্বয়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নিয়েছি। সিট প্রদানের ক্ষেত্রে যেসব প্রভোস্টদের দুর্বলতা ছিল তাদের কেন্দ্রীয়ভাবে বলা হয়েছে। আগে যেভাবে হলগুলোতে তালিকা করে বছরে দু’একবার মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করা হতো, আমরা আবার সেই ধারাবাহিকতায় ফেরার চেষ্টা করছি। একটি সহনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হলগুলোকে দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে পারবো বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

পরিস্থিতি পাল্টেছে বুয়েটে: প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। দেশের অন্যতম শীর্ষ এই বিদ্যাপীঠে আটটি হলের অধিকাংশই এক সময় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল ছাত্রলীগের। সংগঠনের নেতাকর্মীদের কথা মতো না চললে বা তাদের মতের অমিল হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসতো অবর্ণনীয় নির্যাতন। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা খুব একটা মুখ না খোলায় ক্যাম্পাসের ভেতরই থেকে যেত নির্যাতনের ঘটনাগুলো। তবে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের নির্যাতনে শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর মুখ খুলতে থাকে সবাই। দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি। তখন থেকে হলগুলো প্রশাসনিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রথম বর্ষ থেকে হলে সিট পান শিক্ষার্থীরা। হলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও তিতুমীর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জুলফিকার সাদিক বলেন, আবরার ফাহাদের ঘটনার পর থেকে হলগুলোতে ছাত্রলীগে বা অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের দৃশ্যমান কোনো ধরনের তৎপরতা চোখে পড়ে না। হলগুলোর আসন খালি থাকা সাপেক্ষে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিট বণ্টন করে দেয়। প্রথম বর্ষেই প্রায় সবাই হলে সিট পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট সংলগ্ন দেশের অন্যতম আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ। তবে রাজনৈতিক চাপ তুলনামূলক কম থাকায় এবং শিক্ষার্থী তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সিট থাকায় এখানে পড়ুয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের খুব একটা অভিযোগ করতে দেখা যায় না।

রাবির আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণে ছাত্রলীগ: কাগজে কলমে হল প্রভোস্ট দায়িত্বে থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ফলে বৈধ উপায়ে আবাসিক হলে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আবাসিক হলের বিভিন্ন রুমে তালা দিয়ে সিট দখল, প্রভোস্টের তুলে দেয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে নামিয়ে দেয়া ও সিটবাণিজ্যের জন্য ফাঁকা সিটের তালিকাকরণসহ নানা অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য মোট ১৭টি আবাসিক হল রয়েছে। এরমধ্যে ছেলেদের ১১টি আবাসিক হলের প্রতিটিতেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের জন্য আলাদা ব্লক রয়েছে। ক্যাম্পাসে ‘পলিটিক্যাল ব্লক’ নামে পরিচিত এ সকল ব্লকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ সকল ব্লকের বাইরেও সাধারণ সিটগুলোও অনেকাংশে ছাত্রলীগের দখলে। অভিযোগ আছে তিন থেকে আট হাজার টাকার বিনিময়ে এ সকল সিট সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলগুলোতেও সিট দখলকে কেন্দ্র করে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন হলের সিট বণ্টনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, গত ২০শে অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ৩৪৪ নম্বর কক্ষ দখল নিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে চারটি তালা দেয়া হয়। এ ছাড়া মাদার বখশ হলেও এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে আরেকজনকে তুলে দেন হল ছাত্রলীগ নেতা। পরবর্তীতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তাকে আবার হলে উঠানো হয়। প্রায় প্রতিটি হলেই এ ধরনের চিত্র পাওয়া যায়। ফলে সিট দখল করতে না পারায় আবাসিক কার্ড থাকা সত্ত্বেও নিজেদের সিটে উঠতে পারেন না শিক্ষার্থীরা।

যদিও সকল অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, সিট দখল বা সিট বাণিজ্যের মতো কার্যক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ জড়িত নয়। তারপরও কেউ যদি উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে আমাদেরকে জানায় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আবাসিক হলের সিট দখল নিয়ে আমরা অবগত আছি। কারা কারা সিট দখলের সঙ্গে জড়িত তাদের একটি তালিকা করার কাজ করছি। আমরা দ্রুতই এ সকল বিষয় সমাধানের চেষ্টা করবো। এ ছাড়া হলের সিটের সুষ্ঠু বণ্টনে হল প্রভোস্টদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর দখলে চবির হল: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর অধিকাংশ কক্ষ ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর দখলে রয়েছে। মেধার পরিবর্তে ছাত্রলীগ করাই সিট পাওয়ার মাপকাঠি হয়ে উঠছে বর্তমানে। হলে নিয়মিত মাদকের আসর বসা ছাড়াও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায় নিয়মিত।

বিভিন্ন হলের রুমের দরজা এবং দেয়ালে লিখে দেয়া হয়েছে দখলদার গ্রুপের নাম। এ ছাড়াও স্যার এ এফ রহমান হলজুড়ে দেখা যায় বিজয় গ্রুপের চিকা। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমবেশি সব আবাসিক হল কোনো না কোনো গ্রুপের দখলে রয়েছে। যার ফলে আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিমাণ হাতেগোনা কয়েকজন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা থাকলেও বগিভিত্তিক রাজনীতি থেকে বের হতে পারছে না চবি ছাত্রলীগ। বর্তমানে বগিভিত্তিক নয়টি গ্রুপ ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। গ্রুপগুলোর নাম- সিক্সটি নাইন, সিএফসি ও বিজয় ভিএক্স, আরএস, একাকার, বাংলার মুখ, কনকর্ড ও এপিটাফ গ্রুপ।

এদিকে ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক রাজনীতি সক্রিয় থাকায় কিছুদিন পরপরই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়ায়। আবাসিক হলগুলোতেও রয়েছে বগিভিত্তিক সিট দখলের প্রথা। অধিকাংশ আবাসিক হলেই কোনো না কোনো বগিভিত্তিক গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। যার ফলে সংঘর্ষে জড়ালে আবাসিক হলের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রবণতা রয়েছে গ্রুপগুলোর মধ্যে।

২০২০ সালের মার্চে বিজয়, সিক্সটি নাইন ও কনকর্ড গ্রুপের মধ্যে ত্রিমুখী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় আলাওল এবং এএফ রহমানের হলের অন্তত ৮০টি কক্ষ ভাঙচুর হয়। আহত হন অর্ধশতাধিক। আটক করা হয় ৫৭ জনকে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ টাকার বেশি। অনেক শিক্ষার্থীর মোবাইল, ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় ডিভাইস, কাগজপত্র হারিয়ে যায়।

চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ সব হলে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেয়া হোক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পরপর দুইবার বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। এরপরও যারা বগির নামে হলের কক্ষগুলো দখলে রেখেছে, আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

হলের সার্বিক বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সমপ্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাইস চ্যান্সেলর ড. শিরীন আখতার বলেন, হলে কোনো অছাত্র থাকতে পারবে না। শিগগিরই সব আবাসিক হলে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, হলগুলোতে আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে থাকি। প্রশাসনের সঙ্গে দরকষাকষি করে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করি। হলগুলোতে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ শক্তিশালী। আমরা চেষ্টা করছি ছাত্রলীগের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, সোনার বাংলা গড়ার জন্য যে লক্ষ্য এগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, আবাসন সংকটের কারণে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু আমরা মনে করি আমাদের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং একাডেমিক কার্যক্রম সমুন্নত রাখার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা এগুলোর কারণে পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। ছাত্রলীগের লক্ষ্য আবাসন সংকট দূর করা। শিক্ষার্থীরা সবসময় ছাত্রলীগকে বন্ধু হিসেবে পাশে পায়। সূএ:মানবজমিন 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com