কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। আগামীকাল বুধবার (১৫ জুন) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে মঙ্গলবারের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে ভোটের সামগ্রী।
আজ রাত পোহালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক) ভোট গ্রহণ। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) টানা ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরাও। বিশেষ নিরাপত্তায় ভোট কেন্দ্রে ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হবে আজ। নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে সব প্রস্তুতি শেষ করছে। ভোট ঘিরে নগরজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটদানে প্রস্তুত ভোটাররাও। নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণে গতকাল কুমিল্লায় এসেছিলেন দুই নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। নির্বাচনী পরিবেশ না থাকলে ভোট গ্রহণ বন্ধ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও বিএনপির সাবেক নেতা কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও স্বেচ্ছাসবক দলের সাবেক নেতা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। সিটি নির্বাচনে অপর দুই মেয়র প্রার্থী হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে রয়েছেন কামরুল আহসান বাবুল। তবে এ নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠে নেমেছে ২২ প্লাটুন বিজিবি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবির সঙ্গে মাঠে রয়েছেন র্যাব-পুলিশের সদস্যরা। কেউ ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী গত রাত ১২টা থেকে ভোটের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। ভোটারদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো ভোটারকে কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে কেউ বাধা দিলে বা ভয়ভীতি দেখালে, কিংবা শক্তি প্রদর্শন করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ নির্বাচনে সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ছয় হাজার সদস্য মাঠে থাকছেন। ভোট গ্রহণের আগের দুই দিন, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোটের পরের দিনসহ মোট চার দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিটি এলাকায় থাকবে। তবে আনসার বাহিনী মোট পাঁচ দিন নিয়োজিত থাকবে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের জন্য র্যাবের একটি রিজার্ভ টিম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত প্রতিটি টিমে বিশেষ করে বিজিবির টহল দলে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত ১৩ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত মোট ২৭ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি নির্বাচন উপলক্ষে ১৩ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত নয়জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী অপরাধ বিচারের দায়িত্বে থাকবেন।
রাত ১২টা থেকে নগরীতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা পুলিশ। নির্বাচনের পরের দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় জরুরি সেবায় নিয়োজিত ও কার্ডধারী সাংবাদিক ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিভাবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করা যায়। সে মোতাবেক এগিয়ে যাচ্ছি। সিটি নির্বাচনে সম্পৃক্ত সবকিছুই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।