করোনায় মানুষের ভীতিহীন চলাফেরা

প্রতিদিনই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দিনে দিনে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি দেখা যাচ্ছে না। ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েও অনেকে অবাধে চলাফেরা করছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে বিপণিবিতান, পথেঘাটে ও গণপরিবহনে সবখানে মানুষের ভিড়। কারণে-অকারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে, ঘোরাফেরা করছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন মাসুদ। সপ্তাহখানেক ধরেই ঠাণ্ডা ও নাক বন্ধ হয়ে আছে।

তিনদিন পেট খারাপও ছিল। করোনার সব রকম উপসর্গ নিয়ে তিনি অফিস করেছেন। শুধু  মাসুদই নয়, তার অফিসের আরও কয়েক জনেরই একই রকম অবস্থা। মাসুদ বলেন- করোনার সব রকম উপসর্গ নিয়ে অনেকেই অফিস করছেন। যারা টেস্ট করছেন তাদের পজেটিভ আসছে। এরই মধ্যে তিনজন পজেটিভ হয়ে ছুটিতে আছেন। যদি আমরা টেস্ট করাই দেখা যাবে বেশির ভাগই পজেটিভ আসবে। ব্রাঞ্চ তো চালাতে হবে। হাতেগোনা কয়েকজন লোক দিয়ে কাজ হচ্ছে। তাই আমি আর টেস্ট করাইনি। শরীর খুব একটা খারাপ লাগছে না। নাক বন্ধ আর তিন দিন পেট খারাপ ছিল। এখন অনেকটা ভালো অনুভব করছি। ইবরাহীম একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত শনিবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে তার। একদিন জ্বর ছিল। এখনো গলায় ঠাণ্ডা তার। করোনা টেস্ট না করেই একদিন ছুটি কাটিয়ে সোমবার থেকে অফিস শুরু করেন তিনি। ইবরাহিম জানান, যারা করোনা টেস্ট করছে, দেখা যাচ্ছে তাদেরই পজেটিভ আসছে। আমার শরীর তেমন খারাপ লাগছে না। শুধু প্রথম দুই দিন দুর্বল লেগেছিল। গত দুই বছরে কয়েকবার এমন জ্বর-ঠাণ্ডা লেগেছে। কিন্তু  কোনোবারই আমি টেস্ট করাইনি। আর এখন তো মানুষ করোনাকে আর ভয়ও পায় না। আমার  জ্বর আসার পর অফিসে প্রথম যেদিন  গেলাম- দেখলাম আমার সহকর্মীরা আমাকে দেখে ভয় পেলো না। বরং তারা খুব স্বাভাবিকভাবে আমার সঙ্গে কাজ করছে। ফার্মগেইট মোড়ে দশ-বারোজন ছেলে এক সঙ্গে আড্ডা মারছে। কেউ কারও হাত ধরে আছে আবার কেউ ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। এরা সবাই এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। কোচিং করছে এক সঙ্গে। কোচিং শেষ হলেও  কারও বাড়ি ফেরার তাড়া নেই তাদের। প্রতিদিনই কোচিং শেষে এভাবে আড্ডা দেয় তারা। রবিন জানান, তারা সবাই এক কলেজে পড়েছেন। করোনার কারণে গত দুই বছর তাদের বন্ধুদের সেভাবে দেখা হয়নি। আবার অনেকদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এজন্য কোচিংয়ের পর তারা কিছুক্ষণ আড্ডা দেন তারা। করোনাকে এখন আর ভয় পান না জানিয়ে রবিন বলেন, করোনা বেড়েছে কিন্তু মানুষ তেমন অসুস্থ হচ্ছে না। স্বাভাবিক ঠাণ্ডা জ্বরের মতোই  এখন করোনা উপসর্গ ঘরে ঘরে। করোনাকে ভয় পেয়ে আর কি হবে? এটাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। রবিনের আরেক বন্ধু ইমন জানান, সবকিছু খোলা রেখে আর মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। আগে যেমন মানুষ করোনাকে ভয় পেতো এখন আর ভয় পায় না। আমাদের এখানে অনেকের এর মধ্যে ঠাণ্ডা জ্বর হয়ে আবার ভালো হয়ে গেছে। এখন আর করোনাকে ভয় লাগে না। মানুষ যেভাবে রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে তাতে তো মনে হয় না দেশে করোনা আছে। তিন বছরের মুমুকে নিয়ে মার্কেটে গরম কাপড় কিনতে এসেছেন সেলিমা বেগম। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বাচ্চা নিয়ে বের হতে এতটুকু ভয় করেনি তার। সেলিনা বেগম বলেন, জানি করোনা বাড়ছে। এর মধ্যেও বাচ্চাকে নিয়ে আসছি। কারণ  বাচ্চাকে নিয়ে না আসলে কাপড়ের মাপ সঠিক হবে না। আল্লাহর রহমতে আমাদের দেশে তো বাচ্চারা  আক্রান্ত হয়েছে কম। আর এখন বেশির ভাগ মানুষ টিকা দিয়ে ফেলেছে। এজন্য আমাদের ভয়ও এখন কম। মানুষের মন থেকে যদি ভয় চলে যায় তখন তো আর আপনি জোর করে ভয় ঢোকাতে পারবেন না। ঘরেও আটকে রাখতে পারবেন না।

একদিকে বাণিজ্যমেলা চলছে অন্যদিকে বড় কোনো জমায়েত সরকার নিষিদ্ধ করেছে। মানুষ এখন নিজের মতোই চলা শুরু করেছে। শীত আসার আগে এবং শীতের সময় আমাদের মানুষ এমনিতেই ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। সূএ:মানবজমিন
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নেত্রকোনায় হাজতির মৃত্যু

» ছাত্র আন্দোলনে চাপাতি নিয়ে হামলা: শুটার লিটনসহ গ্রেফতার ৩

» ভারতে স্বৈরাচার হাসিনা চুপচাপ বসে নেই, ঐক্যবদ্ধ থাকুন: সেলিমা রহমান

» শেখ হাসিনার ১০০ বছরের জেল হওয়া উচিত : ফারুক

» মার্কিন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরে বহুমাত্রিক আলোচনা হবে: পররাষ্ট্র সচিব

» সাবেক এমপি নায়েব আলী ৪ দিনের রিমান্ডে

» ভারতীয় রুপিসহ যুবক আটক

» ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় ৪৪০ কেজি অবৈধ ইলিশ মাছ জব্দ

» ডিমের দাম আরও বেড়েছে, আগের মতোই মাছ-মাংস-সবজি

» সালমানের সঙ্গী হচ্ছেন কাজল!

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

করোনায় মানুষের ভীতিহীন চলাফেরা

প্রতিদিনই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দিনে দিনে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি দেখা যাচ্ছে না। ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েও অনেকে অবাধে চলাফেরা করছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে বিপণিবিতান, পথেঘাটে ও গণপরিবহনে সবখানে মানুষের ভিড়। কারণে-অকারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে, ঘোরাফেরা করছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন মাসুদ। সপ্তাহখানেক ধরেই ঠাণ্ডা ও নাক বন্ধ হয়ে আছে।

তিনদিন পেট খারাপও ছিল। করোনার সব রকম উপসর্গ নিয়ে তিনি অফিস করেছেন। শুধু  মাসুদই নয়, তার অফিসের আরও কয়েক জনেরই একই রকম অবস্থা। মাসুদ বলেন- করোনার সব রকম উপসর্গ নিয়ে অনেকেই অফিস করছেন। যারা টেস্ট করছেন তাদের পজেটিভ আসছে। এরই মধ্যে তিনজন পজেটিভ হয়ে ছুটিতে আছেন। যদি আমরা টেস্ট করাই দেখা যাবে বেশির ভাগই পজেটিভ আসবে। ব্রাঞ্চ তো চালাতে হবে। হাতেগোনা কয়েকজন লোক দিয়ে কাজ হচ্ছে। তাই আমি আর টেস্ট করাইনি। শরীর খুব একটা খারাপ লাগছে না। নাক বন্ধ আর তিন দিন পেট খারাপ ছিল। এখন অনেকটা ভালো অনুভব করছি। ইবরাহীম একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত শনিবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে তার। একদিন জ্বর ছিল। এখনো গলায় ঠাণ্ডা তার। করোনা টেস্ট না করেই একদিন ছুটি কাটিয়ে সোমবার থেকে অফিস শুরু করেন তিনি। ইবরাহিম জানান, যারা করোনা টেস্ট করছে, দেখা যাচ্ছে তাদেরই পজেটিভ আসছে। আমার শরীর তেমন খারাপ লাগছে না। শুধু প্রথম দুই দিন দুর্বল লেগেছিল। গত দুই বছরে কয়েকবার এমন জ্বর-ঠাণ্ডা লেগেছে। কিন্তু  কোনোবারই আমি টেস্ট করাইনি। আর এখন তো মানুষ করোনাকে আর ভয়ও পায় না। আমার  জ্বর আসার পর অফিসে প্রথম যেদিন  গেলাম- দেখলাম আমার সহকর্মীরা আমাকে দেখে ভয় পেলো না। বরং তারা খুব স্বাভাবিকভাবে আমার সঙ্গে কাজ করছে। ফার্মগেইট মোড়ে দশ-বারোজন ছেলে এক সঙ্গে আড্ডা মারছে। কেউ কারও হাত ধরে আছে আবার কেউ ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। এরা সবাই এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। কোচিং করছে এক সঙ্গে। কোচিং শেষ হলেও  কারও বাড়ি ফেরার তাড়া নেই তাদের। প্রতিদিনই কোচিং শেষে এভাবে আড্ডা দেয় তারা। রবিন জানান, তারা সবাই এক কলেজে পড়েছেন। করোনার কারণে গত দুই বছর তাদের বন্ধুদের সেভাবে দেখা হয়নি। আবার অনেকদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এজন্য কোচিংয়ের পর তারা কিছুক্ষণ আড্ডা দেন তারা। করোনাকে এখন আর ভয় পান না জানিয়ে রবিন বলেন, করোনা বেড়েছে কিন্তু মানুষ তেমন অসুস্থ হচ্ছে না। স্বাভাবিক ঠাণ্ডা জ্বরের মতোই  এখন করোনা উপসর্গ ঘরে ঘরে। করোনাকে ভয় পেয়ে আর কি হবে? এটাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। রবিনের আরেক বন্ধু ইমন জানান, সবকিছু খোলা রেখে আর মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। আগে যেমন মানুষ করোনাকে ভয় পেতো এখন আর ভয় পায় না। আমাদের এখানে অনেকের এর মধ্যে ঠাণ্ডা জ্বর হয়ে আবার ভালো হয়ে গেছে। এখন আর করোনাকে ভয় লাগে না। মানুষ যেভাবে রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে তাতে তো মনে হয় না দেশে করোনা আছে। তিন বছরের মুমুকে নিয়ে মার্কেটে গরম কাপড় কিনতে এসেছেন সেলিমা বেগম। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বাচ্চা নিয়ে বের হতে এতটুকু ভয় করেনি তার। সেলিনা বেগম বলেন, জানি করোনা বাড়ছে। এর মধ্যেও বাচ্চাকে নিয়ে আসছি। কারণ  বাচ্চাকে নিয়ে না আসলে কাপড়ের মাপ সঠিক হবে না। আল্লাহর রহমতে আমাদের দেশে তো বাচ্চারা  আক্রান্ত হয়েছে কম। আর এখন বেশির ভাগ মানুষ টিকা দিয়ে ফেলেছে। এজন্য আমাদের ভয়ও এখন কম। মানুষের মন থেকে যদি ভয় চলে যায় তখন তো আর আপনি জোর করে ভয় ঢোকাতে পারবেন না। ঘরেও আটকে রাখতে পারবেন না।

একদিকে বাণিজ্যমেলা চলছে অন্যদিকে বড় কোনো জমায়েত সরকার নিষিদ্ধ করেছে। মানুষ এখন নিজের মতোই চলা শুরু করেছে। শীত আসার আগে এবং শীতের সময় আমাদের মানুষ এমনিতেই ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। সূএ:মানবজমিন
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com