উন্নয়নের বার্তা নিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রবিবার রাজশাহী যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনকে ঘিরে রাজশাহী যেন এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
দিনব্যাপী সফরে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও ৩৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের পর নতুন বছরে প্রথম কোনো জনসভায় যোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর এই ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা উপস্থিত জনতার কাছে নৌকার বিজয়ে ভোট প্রার্থনা করেছিলেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারায় ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি। ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পবার হরিয়ানের বিশাল জনসভায় হাজির হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। গত ২৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় রাজশাহীতে জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগরের উন্নয়নে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন এবং ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে বর্ণিল রূপে সাজছে পদ্মাপাড়ের শহর। রাজশাহীতে জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে সকালে সারদা পুলিশ একাডেমী পরিদর্শন ও পুলিশ প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে বিভাগজুড়ে বিরাজ করছে উৎসব আমেজ।
পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা রাজশাহী। কিছু দূর পরপর শোভা পাচ্ছে সুদৃশ্য রঙিন তোরণ। দেশপ্রধানকে স্বাগত জানাতে পুরো রাজশাহীই সেজেছে নববধূ রূপে। দলটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক ‘নৌকা’র আদলে প্রস্তুত করা হচ্ছে বিশাল মঞ্চ। এই মঞ্চেই আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ ও জাতির উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে পুরো রাজশাহীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। শহরের প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট।
জানদে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর পর রাজশাহীতে আসছেন। সারাদেশের মতো রাজশাহীর সব উন্নয়নের অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। রাজশাহীতে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভা হবে। সবার কাছেই জনসভাটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে জেলা ও মহানগরে ১০টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব উপ-কমিটির সমন্বয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর ছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চলছে। রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনসহ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উদ্যোগে প্রচার মিছিল, গণসংযোগ, হ্যান্ডবিল বিলি, প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজশাহী জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ গোটা শহরজুড়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্রের ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সজ্জিত করা হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়ত আওয়ামী লীগ সভাপতির অংশগ্রহণে রাজশাহীর মাটিতে এটিই হবে শেষ জনসভা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণে সময় পার করছে। এরই মধ্যে সমাবেশস্থলে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজশাহীজুড়ে নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা ও মহানগরের উন্নয়নে এবারও বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রকল্পগুলো হলো- ১. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নির্মাণ। যার নির্মাণ ব্যয় ৫.০২৭ কোটি টাকা। ২. শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ। যার নির্মাণ ব্যয় ৪.৪২৫ কোটি টাকা। ৩.মোহনপুর রেলক্রসিং-এ ফ্লাইওভার নির্মাণ । যার নির্মাণ ব্যয় ৪০.৭৯৭ কোটি টাকা। ৪. ভদ্রা মোড় রেল ক্রসিং হতে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ৪ লেন সড়ক ও রোড ডিভাইডার নির্মাণ। যার ব্যয় ৫৫.৭৮ কোটি টাকা। ৫. বন্ধগেট থেকে সিটি হাট পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ৪ লেন সড়ক ও রোড ডিভাইডার নির্মাণ। যার ব্যয় ৪৪.৯২২ কোটি টাকা। ৬. রেন্টুর খড়ির আড়ৎ হতে হাইটেক পার্ক হয়ে ঢালুর মোড় পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ এবং কোর্ট হতে পশ্চিম শহরতলী ক্লাব পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ কাজ। যার নির্মাণ ব্যয় ১৩.২৯২ কোটি টাকা। ৭. রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজের ব্যয় ১৩১.৩৫৫ কোটি টাকা। ৮. পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক (জেড-৬০০৪) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণে ১১৬.৮২৭ কোটি টাকা। ৯. রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ৬ষ্ঠ তলা হতে ১০ম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজে ১০.২১ কোটি টাকা। ১০. রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স নির্মাণ কাজ ২০.৯৭৮ কোটি টাকা। ১১. রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল স্থাপন প্রকল্পে ১৪.৪৫৫ কোটি টাকা। ১২.৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলায় একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন কাজে ২২.১৭৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া রয়েছে ১৩. রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজে ২২.৯০ কোটি টাকা। ১৪. রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজে ১৫.০০ কোটি টাকা। ১৫. ‘৬৪ জেলায় জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সমাজ সেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজে ১২.৭৭৫ কোটি টাকা। ১৬. ‘পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামত ও পুনর্বাসন খাত’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, বোয়ালিয়া, রাজশাহীর ৬-তলা ভিত বিশিষ্ট দ্বিতল ছাত্রীনিবাস নির্মাণ কাজে ৫.৫৭৮ কোটি টাকা। ১৭. ‘১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, চারঘাট, রাজশাহীর ৫-তলা ভিত বিশিষ্ট ৫তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজে ১৭.১৯৫ কোটি টাকা। ১৮. মাল্টিপারপাস ভবন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮.৯৫৯ কোটি টাকা। ১৯. সিভিল সার্জন অফিসে রাজশাহী ৪.২৭ কোটি টাকা। ২০. রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষার্থে নদী তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পে ৩৪৯.৭২৮ কোটি টাকা। ২১. রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ভূমি পুনরুদ্ধার ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য পদ্মা নদী ড্রেজিং প্রকল্পে ৩৪৪.৬২৫ কোটি টাকা।
প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে ২২. রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (আরসিআইপি) ২২.৪৩ কোটির আওতায় বাগমারা উপজেলাধীন ভবানীগঞ্জ-আহসানগঞ্জ (বাগমারা অংশ) চেইনেজ ৮৫০০ মি. – ১২৭০০ মি.। ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট (বাগমারা অংশ) চেইনেজ ০০মিঃ – ১৩৩০০মিঃ এবং ভবানীগঞ্জ (মাথাভাঙ্গা) হাটগোঙ্গোপাড়া চেইনেজ ০মি. ৫০০০ মি. সড়ক উন্নয়ন। ২৩. রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (আরসিআইপি) ২১.৫২৮ কোটির আওতায় তানোর উপজেলাধীন তানোর-আমনুরা ভায়া মুন্ডুমালা হাট চেইনেজ ০মি-১৬৯৯১ মিটার পবা উপজেলাধীন মল্লিকপুর বাইপাশ (কুখন্ডি বাজার) আরএইচডি-রামচন্দ্রপুর জিসি আরএইচডি চেইনেজ ০মি. – ৪৪০০ মিঃ সড়ক উন্নয়ন। ২৪. চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি ৪) রাজশাহী পিটিআই এর ৩ (তিন) তলা বহুমুখী অডিটরিয়াম নির্মাণে ৮.৯২৩ কোটি টাকা। ২৫. উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প রাজশাহী সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে ২.৮১৩ কোটি টাকা।
রাজশাহী জেলা এবং মহানগরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হলো, ১. রাজশাহী তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ ২৪ কোটি। ২. রাজশাহী আঞ্চলিক পিএসসি অফিস ভবন নির্মাণ কাজ ৮.৩৫১ কোটি। ৩. ‘৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ছোট বনগ্রাম মৌজা সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের (শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) ১০-তলা ভিত বিশিষ্ট ১০-তলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ ৬২ কোটি। ৪. ‘৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বড় বনগ্রাম মৌজা সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের (শহীদ এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়) ১০-তলা ভিত বিশিষ্ট ১০-তলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজে ৫৩ কোটি, রাজশাহী বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজে ১৬২.৯৪ কোটি ৬. রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ কাজে ৬৫.৯৯৩ কোটি টাকা।