ঈদে এবারও ভাড়া নৈরাজ্য

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানবাহনের ভাড়া। রেলে টিকিট পেতে বাড়তি টাকা গুনতে না হলেও সড়ক ও আকাশপথে গুনতে হচ্ছে। ভাড়া বেড়েছে লঞ্চেও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য এবং চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল ফাউন্ডেশনের এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়। গতকাল সরেজমিন গিয়ে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট কিনতে কমলাপুর রেলস্টেশনে কাউন্টারগুলোয় টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। কেউ স্টেশনে আসেন সাহরি খেয়ে, কেউবা আসেন আগের দিন রাতে বা বিকালে। আগের দিন দুপুরে স্টেশনে আসছেন- এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের জন্য বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৯ এপ্রিলের ঈদযাত্রার টিকিট। ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ স্লোগান বাস্তবায়নে এবার প্রথমবারের মতো টিকিটে এনআইডি ও জন্মসনদ নম্বর যোগ করার নিয়ম রাখা হয়েছে। ঈদের সময় চলন্ত ট্রেনে সাধারণত টিকিট চেকিংয়ের সুযোগ থাকে না। তাই কাউন্টার থেকে নিজের এনআইডি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র। প্রতিবারের ঈদের মতো এবারের ঈদ সামনে রেখেও অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিটের আকাশচুম্বী দাম। বাড়তি চাহিদায় টিকিট স্বল্পতার অজুহাত দিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরগামী বিভিন্ন ফ্লাইটে এর আগে ৩ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ থাকলেও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে যাত্রী চাহিদার কারণে আদায় করা হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভাড়া নৈরাজ্য লক্ষ্য করা গেছে সড়কপথের বিভিন্ন বাসের টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। প্রথম দিকে বাসের টিকিটের জন্য যাত্রীদের আগ্রহ কম থাকলেও বর্তমানে বাসের টিকিটের চাহিদাও বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার টিকিট সংগ্রহের জন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। নন এসি বাসের ক্ষেত্রে এই বাড়তি ভাড়া দুই থেকে চার শ টাকা বেশি হলেও এসি বাসের ক্ষেত্রে এই ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত বেশি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা এক যুক্ত বিবৃতিতে গতকাল বলেন, এ বছর ঈদুল ফিতর উদযাপনে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাত্রা করবেন। যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হবে। মাত্র ৫ দিনে এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী সুষ্ঠুভাবে পরিবহন করার মতো যানবাহন আমাদের নেই। ফলে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার যানবাহনের সংকট ও নৈরাজ্য বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অতি ধীরগতিতে সংস্কার ও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশের অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কের বহু স্থানেও বেহাল দশা রয়েছে। ফলে ঈদযাত্রায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়বে উল্লেখ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, এই নাজুক অবস্থায় সড়কে ও নৌ-পথের ঘাটে-ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে, যা ঈদ যাত্রাকে অসহনীয় করে তুলবে। ইতোমধ্যে ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সড়ক ও নৌপথে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, শুধু ঈদ মৌসুমেই কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজনৈতিক চাঁদাবাজি হয়। দুর্ভাগ্যজনক যে, এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে অনেক পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকে। ঈদযাত্রার শুরুতেই চাঁদাবাজি বন্ধ করে যানবাহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, বিষয়টি সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে হবে। এই ব্যবস্থা ঈদের ফিরতি যাত্রা পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। তা না হলে এবার পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশে বিপজ্জনক শক্তির উত্থান ঘটছে: রিজভী

» লোক দেখানো নয়, ফাঁসিই হবে খুনি হাসিনার শেষ গন্তব্য: সারজিস আলম

» তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: বাবর

» নুরকে দেখতে গেলেন আইন উপদেষ্টা

» নাশকতার মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ফখরুল-আব্বাসসহ ৭০ জন

» গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে: তারেক রহমান

» ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে’

» লোক দেখানোর জন্য খুনি হাসিনার বিচার করবো না: সারজিস আলম

» জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা

» প্রায় ১৮ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঈদে এবারও ভাড়া নৈরাজ্য

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানবাহনের ভাড়া। রেলে টিকিট পেতে বাড়তি টাকা গুনতে না হলেও সড়ক ও আকাশপথে গুনতে হচ্ছে। ভাড়া বেড়েছে লঞ্চেও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য এবং চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল ফাউন্ডেশনের এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়। গতকাল সরেজমিন গিয়ে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট কিনতে কমলাপুর রেলস্টেশনে কাউন্টারগুলোয় টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। কেউ স্টেশনে আসেন সাহরি খেয়ে, কেউবা আসেন আগের দিন রাতে বা বিকালে। আগের দিন দুপুরে স্টেশনে আসছেন- এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের জন্য বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৯ এপ্রিলের ঈদযাত্রার টিকিট। ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ স্লোগান বাস্তবায়নে এবার প্রথমবারের মতো টিকিটে এনআইডি ও জন্মসনদ নম্বর যোগ করার নিয়ম রাখা হয়েছে। ঈদের সময় চলন্ত ট্রেনে সাধারণত টিকিট চেকিংয়ের সুযোগ থাকে না। তাই কাউন্টার থেকে নিজের এনআইডি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র। প্রতিবারের ঈদের মতো এবারের ঈদ সামনে রেখেও অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিটের আকাশচুম্বী দাম। বাড়তি চাহিদায় টিকিট স্বল্পতার অজুহাত দিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরগামী বিভিন্ন ফ্লাইটে এর আগে ৩ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ থাকলেও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে যাত্রী চাহিদার কারণে আদায় করা হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভাড়া নৈরাজ্য লক্ষ্য করা গেছে সড়কপথের বিভিন্ন বাসের টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। প্রথম দিকে বাসের টিকিটের জন্য যাত্রীদের আগ্রহ কম থাকলেও বর্তমানে বাসের টিকিটের চাহিদাও বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার টিকিট সংগ্রহের জন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। নন এসি বাসের ক্ষেত্রে এই বাড়তি ভাড়া দুই থেকে চার শ টাকা বেশি হলেও এসি বাসের ক্ষেত্রে এই ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত বেশি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা এক যুক্ত বিবৃতিতে গতকাল বলেন, এ বছর ঈদুল ফিতর উদযাপনে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাত্রা করবেন। যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হবে। মাত্র ৫ দিনে এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী সুষ্ঠুভাবে পরিবহন করার মতো যানবাহন আমাদের নেই। ফলে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার যানবাহনের সংকট ও নৈরাজ্য বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অতি ধীরগতিতে সংস্কার ও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশের অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কের বহু স্থানেও বেহাল দশা রয়েছে। ফলে ঈদযাত্রায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়বে উল্লেখ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, এই নাজুক অবস্থায় সড়কে ও নৌ-পথের ঘাটে-ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে, যা ঈদ যাত্রাকে অসহনীয় করে তুলবে। ইতোমধ্যে ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সড়ক ও নৌপথে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, শুধু ঈদ মৌসুমেই কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজনৈতিক চাঁদাবাজি হয়। দুর্ভাগ্যজনক যে, এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে অনেক পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকে। ঈদযাত্রার শুরুতেই চাঁদাবাজি বন্ধ করে যানবাহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, বিষয়টি সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে হবে। এই ব্যবস্থা ঈদের ফিরতি যাত্রা পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। তা না হলে এবার পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com