আজ ভারত যাচ্ছেন মালদ্বীপ প্রেসিডেন্ট, কী গুরুত্ব এই সফরের?

ছবি সংগৃহীত

 

আজ রবিবার ভারত সফরে যাচ্ছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। ধারণা করা হচ্ছে, পাঁচ দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে মুইজ্জু ভারতের কাছে তার দেশের জন্য ‘বেল আউট’ চাইবেন। কারণ, বর্তমানে দ্বীপ রাষ্ট্রটি অর্থনৈতিক সংকটে আছে। এমনকি ঋণখেলাপি হওয়ার শঙ্কায় আছে দেশটি।

 

‘বেল আউট’ কী?

‘বেল আউট’ হচ্ছে যখন কোনও দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেনার দায়ে বা মূলধনসংকটে পড়ে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়, তখন সেই দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা।

 

সফরের গুরুত্ব

মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন গত বছরের শেষ দিকে। দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম তিনি আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন।

 

নির্বাচনী প্রচারে জনগণের কাছে মুইজ্জুর প্রধান অঙ্গীকার ছিল- ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ‘ভারত হটাও’ নীতি। মূলত তার দেশের ওপর নয়াদিল্লির প্রভাব কমানোই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। সে অনুযায়ী, মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কেও টানাপোড়েন চলে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালদ্বীপ যে তার বড় প্রতিবেশী ভারতকে উপেক্ষা করতে পারে না, তার ইঙ্গিত দিচ্ছে মুইজ্জুর এই সফর।

 

গত সেপ্টেম্বর মাসে মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ দিয়ে দেশটির দেড় মাসের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব।

 

গত মাসে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স মালদ্বীপের ক্রেডিট রেটিং (ঋণমান) কমিয়ে দেয়। সংস্থাটি বলে, মালদ্বীপের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাস্তবিক অর্থে বেড়ে গেছে।

 

এই পরিস্থিতিতে ভারত ‘বেল আউট’ দিলে মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হবে।

 

ইতোমধ্যে তুরস্ক ও চীন সফর করেছেন মুইজ্জু। গত জানুয়ারিতে তিনি চীন সফর করেন। তার এই সফরকে নয়াদিল্লির প্রতি বড় ধরনের কূটনৈতিক অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ হিসেবে বিবেচনায় করা হয়। কারণ, এর আগে মালদ্বীপের নির্বাচিত নেতারা তাদের প্রথম বিদেশ সফরের জন্য ভারতকেই বেছে নিতেন।

 

শুধু তাই নয়, মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মালদ্বীপের তিনজন কর্মকর্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য কেরন। এর জেরে ভারতে বিতর্কও শুরু হয়।

 

মালদ্বীপের বিশ্লেষক ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রভাষক আজিম জহির বলেন, মুইজ্জুর ভারত সফর একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- মালদ্বীপ প্রতিবেশী ভারতের ওপর কতটা নির্ভরশীল, এর প্রতিফলন মুইজ্জুর এই সফর। ভারতের ওপরে মালদ্বীপের যে নির্ভরতা, তা অন্য কোনও দেশ সহজে পূরণ করতে পারবে না।

 

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত প্রায় ১ হাজার ২০০টি প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার।

 

ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ তার বেশির ভাগ খাদ্য, অবকাঠামো নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশে বিপজ্জনক শক্তির উত্থান ঘটছে: রিজভী

» লোক দেখানো নয়, ফাঁসিই হবে খুনি হাসিনার শেষ গন্তব্য: সারজিস আলম

» তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: বাবর

» নুরকে দেখতে গেলেন আইন উপদেষ্টা

» নাশকতার মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ফখরুল-আব্বাসসহ ৭০ জন

» গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে: তারেক রহমান

» ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে’

» লোক দেখানোর জন্য খুনি হাসিনার বিচার করবো না: সারজিস আলম

» জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা

» প্রায় ১৮ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আজ ভারত যাচ্ছেন মালদ্বীপ প্রেসিডেন্ট, কী গুরুত্ব এই সফরের?

ছবি সংগৃহীত

 

আজ রবিবার ভারত সফরে যাচ্ছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। ধারণা করা হচ্ছে, পাঁচ দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে মুইজ্জু ভারতের কাছে তার দেশের জন্য ‘বেল আউট’ চাইবেন। কারণ, বর্তমানে দ্বীপ রাষ্ট্রটি অর্থনৈতিক সংকটে আছে। এমনকি ঋণখেলাপি হওয়ার শঙ্কায় আছে দেশটি।

 

‘বেল আউট’ কী?

‘বেল আউট’ হচ্ছে যখন কোনও দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেনার দায়ে বা মূলধনসংকটে পড়ে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়, তখন সেই দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা।

 

সফরের গুরুত্ব

মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন গত বছরের শেষ দিকে। দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম তিনি আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন।

 

নির্বাচনী প্রচারে জনগণের কাছে মুইজ্জুর প্রধান অঙ্গীকার ছিল- ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ‘ভারত হটাও’ নীতি। মূলত তার দেশের ওপর নয়াদিল্লির প্রভাব কমানোই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। সে অনুযায়ী, মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কেও টানাপোড়েন চলে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালদ্বীপ যে তার বড় প্রতিবেশী ভারতকে উপেক্ষা করতে পারে না, তার ইঙ্গিত দিচ্ছে মুইজ্জুর এই সফর।

 

গত সেপ্টেম্বর মাসে মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ দিয়ে দেশটির দেড় মাসের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব।

 

গত মাসে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স মালদ্বীপের ক্রেডিট রেটিং (ঋণমান) কমিয়ে দেয়। সংস্থাটি বলে, মালদ্বীপের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাস্তবিক অর্থে বেড়ে গেছে।

 

এই পরিস্থিতিতে ভারত ‘বেল আউট’ দিলে মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হবে।

 

ইতোমধ্যে তুরস্ক ও চীন সফর করেছেন মুইজ্জু। গত জানুয়ারিতে তিনি চীন সফর করেন। তার এই সফরকে নয়াদিল্লির প্রতি বড় ধরনের কূটনৈতিক অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ হিসেবে বিবেচনায় করা হয়। কারণ, এর আগে মালদ্বীপের নির্বাচিত নেতারা তাদের প্রথম বিদেশ সফরের জন্য ভারতকেই বেছে নিতেন।

 

শুধু তাই নয়, মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মালদ্বীপের তিনজন কর্মকর্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য কেরন। এর জেরে ভারতে বিতর্কও শুরু হয়।

 

মালদ্বীপের বিশ্লেষক ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রভাষক আজিম জহির বলেন, মুইজ্জুর ভারত সফর একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- মালদ্বীপ প্রতিবেশী ভারতের ওপর কতটা নির্ভরশীল, এর প্রতিফলন মুইজ্জুর এই সফর। ভারতের ওপরে মালদ্বীপের যে নির্ভরতা, তা অন্য কোনও দেশ সহজে পূরণ করতে পারবে না।

 

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত প্রায় ১ হাজার ২০০টি প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার।

 

ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ তার বেশির ভাগ খাদ্য, অবকাঠামো নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com