দেশের নতুন প্রধান নির্বাচন (সিইসি) কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি শেষ পর্যায়ে। সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি তাদের চূড়ান্ত করা যোগ্য ১০ ব্যক্তির নাম গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। সেখান থেকেই রাষ্ট্রপতি সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, সিইসিসহ পাঁচ সদস্যের নতুন ইসি রাষ্ট্রপতির আজ (শনিবার) চূড়ান্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। নাম চূড়ান্ত হলে বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তা পাঠানো হতে পারে। পরে আজ বা রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
এ ব্যাপারে শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানান, আজ শনিবার তারা অফিস করবেন। অফিস শেষে বোঝা যেতে পারে নতুন ইসি গঠনের তালিকা কখন চূড়ান্ত হবে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সার্চ কমিটির পাঁচ সদস্য বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে নামের তালিকা হস্তান্তর করেন। তবে অসুস্থতার কারণে সার্চ কমিটির প্রধান ওবায়দুল হাসান বঙ্গভবনে যেতে পারেননি।
নামের তালিকা জমা দেওয়ার পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সার্চ কমিটি তাদের রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। সেটা একটু এক্সামিন (পরীক্ষা) করবেন রাষ্ট্রপতি। এক্সামিন শেষে অতিসত্বর উনি নির্দেশনা দেবেন।
ওইসময় সচিব জানান, দু-এক দিনের মধ্যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
১০ জন নাকি ৫ জনের নাম ঘোষণা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ম তো ৫ জনের নাম ঘোষণার। যে ৫ জনের নাম রাষ্ট্রপতি সিলেক্ট করবেন সেই ৫ জনের নামেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে দেশে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন করেছে। মূলত সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন ইসি গঠন করা হচ্ছে। আইন না থাকলেও এর আগে দুই দফা সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করা হয়েছিল।
গত ২৭ জানুয়ারি আইন হওয়ার পর ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি। গত মঙ্গলবার সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করেছে।
ওইদিন পর্যন্ত কমিটি ৭টি বৈঠক করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে চার দফা বৈঠক করেছে। সার্চ কমিটির আহ্বানে রাজনৈতিক দল, ছয়টি পেশাজীবী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের কাছ থেকে তিন শতাধিক নামের প্রস্তাব আসে। প্রস্তাবিত নাম প্রকাশও করা হয়েছে। তবে সার্চ কমিটি তাদের চূড়ান্ত করা ১০ জনের নাম প্রকাশ করেনি।
তবে বিএনপিসহ ১৭টি রাজনৈতিক দল নামের তালিকা জমা দেয়নি।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে ড. মোহাম্মদ সাদিকের নাম। নানা কারণে সিইসি পদে এগিয়ে আছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের সাবেক এই সচিবের নাম অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির সংক্ষিপ্ত তালিকাতে উপরের দিকেই আছে, সমর্থিত-অসমর্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে তা।
শুরু থেকেই সিইসি হিসেবে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন ভূইয়া। সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য ঘন ঘন দেশের বাইরে যেতে হয় তাকে নিয়ে। তাই শেষ মুহূর্তে তাঁকে বেছে নেওয়া হবে কি না, কিংবা তিনিই কতটা আগ্রহী, সংশয় আছে এ নিয়ে।
অন্যদিকে অনুসন্ধান কমিটির ১০ জনের তালিকায় আছেন শফিউল আলম, সূত্রগুলো এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা টাইমসকে।
তবে সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। তাঁকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, এ নিয়েও আছে সিদ্ধান্তহীনতা।
সেদিক থেকে ড. মোহাম্মদ সাদিক এগিয়ে আছেন। ইসির সচিব হিসেবে অতীতে দায়িত্ব পালনের কারণে অভিজ্ঞতাতেও তিনি এগিয়ে। তাই শেষ মুহূর্তে সিইসি হিসেবে তাঁর নামটিই আলোচনা আসছে বারবার। তাঁকে সিইসি করা হলে অতীতের অভিজ্ঞতা দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ড. মোহাম্মদ সাদিক সরকারের শিক্ষা সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তাকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানও করা হয়েছিল। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।সূএ:ঢাকাটাইমস ডটকম