আগুন নেভাতে গোলাপি এই পাউডার কতটুকু সাহায্য করে?

ছবি সংগৃহীত

ফিচার ডেস্ক: সম্প্রতি বিশ্ব দেখেছে এক ভয়াবহ এক দাবানল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। এতে গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ভয়ংকর এই আগুনের কারণে শহরটির বিভিন্ন এলাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে।

 

দাবানল রুখতে দেশের সরকার থেকে শুরু করে ফায়ার ফাইটার, সাধারণ অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছেন। তারপরও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়নি লস অ্যাঞ্জেলেস। এই দাবানল রুখতে এবং আগুন নেভাতে বিমান থেকে গোলাপি রঙের পাউডার ছেটাতে দেখা গেছে।

আগুন নেভাতে গোলাপি এই পাউডার কতটুকু সাহায্য করে?ছবি:এএফপি

নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন এসেছে, এই গোলাপি রঙের পাউডার আগুন নেভাতে কতটুকু কাজে লাগে? এই গোলাপি পাউডার আসলে ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যালের মিশ্রণ। আগুন নেভাতে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়া রুখতে ব্যবহার করা হয়। এতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে ‘ফোস-চেক’, অ্যামোনিয়াম ফসফেটের তৈরি একটি সলিউশন। আমেরিকার জঙ্গলে হামেশাই দাবানল লাগে। তখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে।

আগুন লাগলে ‘পিঙ্ক ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যাল’ গাছপালা, ঘরবাড়ির উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন নিভলেও এই পাউডারের জন্য বেশ ক্ষতির মুখেও পড়তে হয় মানুষকে। অ্যামোনিয়াম পলিফসফেট দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে এটি সহজে বাষ্পে পরিণত হয় না এবং দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর থাকে। এই রাসয়নিক একটি স্তর তৈরি করে। যা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে গাছপালা আগুনের হাত থেকে রক্ষা পায়।

 

তবে এই পাউডার গোলাপি রঙের হয় না। এতে গোলাপি রং আলাদা করে মেশানো হয়। যাতে দমকলকর্মীরা দূর থেকে দেখতে পান। ফায়ার রিটারডেন্টের চারপাশে অগ্নিরোধী লাইন তৈরি করতে পারেন। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হয়। আরেকটি কারণেও কেমিক্যালে গোলাপি রঙের ব্যবহার করা হয়। সেটা হল, দেখতে সুন্দর লাগে।

 

আগুন নেভানোর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এরমধ্যে ফোস-চেক অন্যতম। তবে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকরী তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আমেরিকায় ৪৪ কোটি গ্যালনের বেশি পিঙ্ক ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যাল ছড়ানো হয়েছে।

আগুন নেভাতে গোলাপি এই পাউডার কতটুকু সাহায্য করে?ছবি:এএফপি

অন্যদিকে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশবিদরা গবেষণায় দেখেছেন যে কোনো স্থানে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করে সেখানকার আবহাওয়া, জমির ঢাল, এলাকা এবং জ্বালানির প্রকারের উপর।

 

পিঙ্ক ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যালের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, এই কেমিক্যাল ব্যবহারের খরচ যেমন বেশি তেমনই পরিবেশের জন্যও বিপজ্জনক। ২০২৪ সালে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, ফোস-চেক নামের এই কেমিক্যালে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো বিষাক্ত রাসয়নিক থাকে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই সব রাসয়নিক খুব সহজেই বাতাসে মিশে যায়। সেখান থেকে শরীরে ঢোকে। এ থেকে ক্যানসার, হার্ট, লিভার এবং কিডনির সমস্যা হতে পারে।

এই ধাতু যে শুধু মানুষের শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলছে তা নয়, পরিবেশের উপর তাদের প্রতিকূল প্রভাব আরও উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে যখন প্রতিবন্ধক পানিপথে প্রবেশ করে। বিষাক্ত ধাতু জলজ প্রাণির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কোরবানি করবেন? ১০টি জরুরি বিষয় জেনে রাখুন

» আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো জুলুম ও মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবে না

» দেশ রক্ষায় এক ধাক্কায় বন্ধ ভারতের ৩৩ টি পণ্য

» দেশের জন্য সততার সাথে কাজ করবে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’: ইলিয়াস কাঞ্চন

» ভ্যাটিকান সফরে কাতার ত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

» সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পারাপারের সময় নারী-শিশুসহ ২৫ বাংলাদেশি আটক

» দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী খুন

» পারভেজ হত্যায় ২ নারী শিক্ষার্থী আটকের খবর সঠিক নয়: ডিএমপি

» প্রবাসীদের সহযোগিতায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

» বেড়েছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আগুন নেভাতে গোলাপি এই পাউডার কতটুকু সাহায্য করে?

ছবি সংগৃহীত

ফিচার ডেস্ক: সম্প্রতি বিশ্ব দেখেছে এক ভয়াবহ এক দাবানল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। এতে গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ভয়ংকর এই আগুনের কারণে শহরটির বিভিন্ন এলাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে।

 

দাবানল রুখতে দেশের সরকার থেকে শুরু করে ফায়ার ফাইটার, সাধারণ অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছেন। তারপরও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়নি লস অ্যাঞ্জেলেস। এই দাবানল রুখতে এবং আগুন নেভাতে বিমান থেকে গোলাপি রঙের পাউডার ছেটাতে দেখা গেছে।

আগুন নেভাতে গোলাপি এই পাউডার কতটুকু সাহায্য করে?ছবি:এএফপি

নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন এসেছে, এই গোলাপি রঙের পাউডার আগুন নেভাতে কতটুকু কাজে লাগে? এই গোলাপি পাউডার আসলে ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যালের মিশ্রণ। আগুন নেভাতে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়া রুখতে ব্যবহার করা হয়। এতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে ‘ফোস-চেক’, অ্যামোনিয়াম ফসফেটের তৈরি একটি সলিউশন। আমেরিকার জঙ্গলে হামেশাই দাবানল লাগে। তখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে।

আগুন লাগলে ‘পিঙ্ক ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যাল’ গাছপালা, ঘরবাড়ির উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন নিভলেও এই পাউডারের জন্য বেশ ক্ষতির মুখেও পড়তে হয় মানুষকে। অ্যামোনিয়াম পলিফসফেট দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে এটি সহজে বাষ্পে পরিণত হয় না এবং দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর থাকে। এই রাসয়নিক একটি স্তর তৈরি করে। যা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে গাছপালা আগুনের হাত থেকে রক্ষা পায়।

 

তবে এই পাউডার গোলাপি রঙের হয় না। এতে গোলাপি রং আলাদা করে মেশানো হয়। যাতে দমকলকর্মীরা দূর থেকে দেখতে পান। ফায়ার রিটারডেন্টের চারপাশে অগ্নিরোধী লাইন তৈরি করতে পারেন। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হয়। আরেকটি কারণেও কেমিক্যালে গোলাপি রঙের ব্যবহার করা হয়। সেটা হল, দেখতে সুন্দর লাগে।

 

আগুন নেভানোর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এরমধ্যে ফোস-চেক অন্যতম। তবে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকরী তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আমেরিকায় ৪৪ কোটি গ্যালনের বেশি পিঙ্ক ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যাল ছড়ানো হয়েছে।

আগুন নেভাতে গোলাপি এই পাউডার কতটুকু সাহায্য করে?ছবি:এএফপি

অন্যদিকে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশবিদরা গবেষণায় দেখেছেন যে কোনো স্থানে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করে সেখানকার আবহাওয়া, জমির ঢাল, এলাকা এবং জ্বালানির প্রকারের উপর।

 

পিঙ্ক ফায়ার রিটারডেন্ট কেমিক্যালের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, এই কেমিক্যাল ব্যবহারের খরচ যেমন বেশি তেমনই পরিবেশের জন্যও বিপজ্জনক। ২০২৪ সালে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, ফোস-চেক নামের এই কেমিক্যালে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো বিষাক্ত রাসয়নিক থাকে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই সব রাসয়নিক খুব সহজেই বাতাসে মিশে যায়। সেখান থেকে শরীরে ঢোকে। এ থেকে ক্যানসার, হার্ট, লিভার এবং কিডনির সমস্যা হতে পারে।

এই ধাতু যে শুধু মানুষের শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলছে তা নয়, পরিবেশের উপর তাদের প্রতিকূল প্রভাব আরও উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে যখন প্রতিবন্ধক পানিপথে প্রবেশ করে। বিষাক্ত ধাতু জলজ প্রাণির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com