আওয়ামী লীগের কাউন্সিল কবে

ঘর গোছানোর জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার তিন মাসের আলটিমেটামের পর নড়েচড়ে বসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। করোনার মধ্যেও থেমে নেই জেলা-উপজেলার সম্মেলন। তৃণমূল গোছাতে জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতা এবং দলীয় এমপিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। সম্মেলন কিছুটা এগিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরকে উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।

 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘তৃণমূল গোছানোর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। করোনার মধ্যেও থেমে নেই ঘর গোছানোর কাজ। জাতীয় সম্মেলন যথাসময়ই হবে।’ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় কাউন্সিল এগিয়ে আসতে পারে কি না- জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘সে সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দু-এক মাস আগেও হতে পারে। আবার দু-এক মাস পিছিয়েও যেতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে টানা নবমবারের মতো সভানেত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। তিন বছর মেয়াদি এ সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জের এ নির্বাচনে জনগণের মন জয় করে টানা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, তৃণমূলে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে গুরুত্ব দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

 

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের সহিংসতা মোকাবিলায় রাজপথে শক্ত বলয় তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য আগে থেকেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে ছক কষছেন দলটির হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে ঝিমিয়ে পড়া জেলা-উপজেলাকে উদ্দীপ্ত করতে নতুন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে। সর্বশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে তৃণমূল ঢেলে সাজাতে তিন মাসের আলটিমেটাম দেন শেখ হাসিনা। ১০ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিভাগের মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার শীর্ষ নেতা-দলীয় এমপিদের নিয়ে বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গতকালও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ বিভাগের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলার সম্মেলনের তাগিদ দেওয়া হয়।

 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ভার্চুয়ালি বৈঠক করছি জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে। পাশাপাশি সম্মেলনও চলছে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূল আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী হচ্ছে।

 

৯ ফেব্রুয়ারি দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকের পর থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শোডাউন বাড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। আবার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে বর্তমান কমিটিতে থাকা অনেক নেতাও পিছিয়ে নেই। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঢুকছেন। এ প্রতিযোগিতা বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পরিকল্পনার আমাদের একটা সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি আছে। সে অনুযায়ী বিগত জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্মেলনগুলো করা হয়। সংগঠনকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানো হয়। ধাপে ধাপে এ কর্মকান্ডের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে আবার পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক  বলেন, ‘তৃণমূলে আমরা জোরেশোরেই সম্মেলন করছি। তৃণমূল গোছানোর কাজ শেষ হলেই জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু হবে।

 

সূত্রমতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলে বড় ধরনের রদবদল আনতে যাচ্ছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দেশব্যাপী পরিচিতি রয়েছে, ক্লিন ইমেজ ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষদের স্থান দেবেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া ৩৩ শতাংশ নারী কোটাও পূরণ করা হতে পারে এবারের সম্মেলনে। এতে বর্তমান কমিটির অনেকেই ছিটকে পড়তে পারেন এবং নতুন মুখ যুক্ত হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত দিনে সাংগঠনিকভাবে সফল ছিলেন কিন্তু মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার কারণে বাদ পড়েছেন, তারাও এবারের সম্মেলনে যুক্ত হতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন  বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে তিন মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলার সম্মেলন ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলার জন্য জোর তাগাদা দিয়েছেন।

 

দলীয় সূত্রমতে আওয়ামী লীগের ৭৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪২টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৬৫০ সাংগঠনিক উপজেলা-থানা-পৌরসভার মধ্যে ৩০০-এর মেয়াদ নেই। অগোছালো তৃণমূলকে দ্রুত ঢেলে সাজাতে দলীয় সভানেত্রীর কড়া বার্তা পাওয়ার পর জেলা-উপজেলায় ছুটে চলেছেন নেতারা। করোনার মধ্যেও থেমে নেই তৃণমূলের সম্মেলন। গতকাল বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম  বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা সেভাবেই কাজ শুরু করছি।’ এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন  বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা-উপজেলায় সম্মেলন চলছে। যেখানে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হচ্ছে সেখানে সেভাবেই কমিটি করা হচ্ছে। যেখানে সমঝোতা নয়, সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) নওগাঁ পৌরসভা, ১৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ সদর উপজেলা, ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলা, ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা, ২৩ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলকুচি, ২৫ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার নন্দীগ্রাম, ২৭ ফেব্রুয়ারি গাবতলী উপজেলা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। ৩১ মার্চ নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের জেলা সম্মেলন শেষ হবে।’সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করলো বাংলাদেশ

» ভারতের অপপ্রচারে ক্ষতি নেই, আমাদের চিকিৎসা ও বাজার সবই আছে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন

» আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে কোনো আপস নেই : নুর

» দরিদ্র দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

» নির্বাচন কমিশনে ৪টি নতুন কমিটি গঠন

» ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে প্রতিবেশীর মতো : সারজিস

» বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে যত বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হোক না কেন আমরা জিতবেই.. মাওলানা মামুনুল হক

» ব্র্যাক ব্যাংক-কে ‘বেস্ট ব্যাংকিং পার্টনার অফ দ্যা ইয়ার ২০২৩’ স্বীকৃতি দিয়েছে জেডটিই বাংলাদেশ

» পলাশে নবাগত ইউএনওর সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা

» অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে বড় বিদ্রোহ হবে: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল কবে

ঘর গোছানোর জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার তিন মাসের আলটিমেটামের পর নড়েচড়ে বসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। করোনার মধ্যেও থেমে নেই জেলা-উপজেলার সম্মেলন। তৃণমূল গোছাতে জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতা এবং দলীয় এমপিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। সম্মেলন কিছুটা এগিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরকে উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।

 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘তৃণমূল গোছানোর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। করোনার মধ্যেও থেমে নেই ঘর গোছানোর কাজ। জাতীয় সম্মেলন যথাসময়ই হবে।’ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় কাউন্সিল এগিয়ে আসতে পারে কি না- জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘সে সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দু-এক মাস আগেও হতে পারে। আবার দু-এক মাস পিছিয়েও যেতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে টানা নবমবারের মতো সভানেত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। তিন বছর মেয়াদি এ সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জের এ নির্বাচনে জনগণের মন জয় করে টানা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, তৃণমূলে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে গুরুত্ব দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

 

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের সহিংসতা মোকাবিলায় রাজপথে শক্ত বলয় তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য আগে থেকেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে ছক কষছেন দলটির হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে ঝিমিয়ে পড়া জেলা-উপজেলাকে উদ্দীপ্ত করতে নতুন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে। সর্বশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে তৃণমূল ঢেলে সাজাতে তিন মাসের আলটিমেটাম দেন শেখ হাসিনা। ১০ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিভাগের মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার শীর্ষ নেতা-দলীয় এমপিদের নিয়ে বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গতকালও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ বিভাগের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলার সম্মেলনের তাগিদ দেওয়া হয়।

 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ভার্চুয়ালি বৈঠক করছি জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে। পাশাপাশি সম্মেলনও চলছে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূল আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী হচ্ছে।

 

৯ ফেব্রুয়ারি দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকের পর থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শোডাউন বাড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। আবার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে বর্তমান কমিটিতে থাকা অনেক নেতাও পিছিয়ে নেই। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঢুকছেন। এ প্রতিযোগিতা বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পরিকল্পনার আমাদের একটা সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি আছে। সে অনুযায়ী বিগত জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্মেলনগুলো করা হয়। সংগঠনকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানো হয়। ধাপে ধাপে এ কর্মকান্ডের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে আবার পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক  বলেন, ‘তৃণমূলে আমরা জোরেশোরেই সম্মেলন করছি। তৃণমূল গোছানোর কাজ শেষ হলেই জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু হবে।

 

সূত্রমতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলে বড় ধরনের রদবদল আনতে যাচ্ছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দেশব্যাপী পরিচিতি রয়েছে, ক্লিন ইমেজ ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষদের স্থান দেবেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া ৩৩ শতাংশ নারী কোটাও পূরণ করা হতে পারে এবারের সম্মেলনে। এতে বর্তমান কমিটির অনেকেই ছিটকে পড়তে পারেন এবং নতুন মুখ যুক্ত হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত দিনে সাংগঠনিকভাবে সফল ছিলেন কিন্তু মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার কারণে বাদ পড়েছেন, তারাও এবারের সম্মেলনে যুক্ত হতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন  বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে তিন মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলার সম্মেলন ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলার জন্য জোর তাগাদা দিয়েছেন।

 

দলীয় সূত্রমতে আওয়ামী লীগের ৭৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪২টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৬৫০ সাংগঠনিক উপজেলা-থানা-পৌরসভার মধ্যে ৩০০-এর মেয়াদ নেই। অগোছালো তৃণমূলকে দ্রুত ঢেলে সাজাতে দলীয় সভানেত্রীর কড়া বার্তা পাওয়ার পর জেলা-উপজেলায় ছুটে চলেছেন নেতারা। করোনার মধ্যেও থেমে নেই তৃণমূলের সম্মেলন। গতকাল বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম  বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা সেভাবেই কাজ শুরু করছি।’ এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন  বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা-উপজেলায় সম্মেলন চলছে। যেখানে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হচ্ছে সেখানে সেভাবেই কমিটি করা হচ্ছে। যেখানে সমঝোতা নয়, সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) নওগাঁ পৌরসভা, ১৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ সদর উপজেলা, ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলা, ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা, ২৩ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলকুচি, ২৫ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার নন্দীগ্রাম, ২৭ ফেব্রুয়ারি গাবতলী উপজেলা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। ৩১ মার্চ নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের জেলা সম্মেলন শেষ হবে।’সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com