অফিস না থাকায়… চায়ের দোকানে চলছে মণিরামপুরের চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের কার্যক্রম

উত্তম চক্রবর্তী,নিজস্ব প্রতিবেদক মণিরামপুর।। যশোরের মণিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়নের চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের দৈনন্দীন কার্যক্রম চলছে পোস্টমাস্টার মো. খলিলুর রহমানের জরাজীর্ণ চায়ের দোকানে। টালি দিয়ে ছাওয়া চায়ের দোকানটি বাঁসের বেড়া আর প্রাস্টিকের বস্তা দিয়ে ঘেরা।

 

সেখানে কোনো চেয়ার-টেবিল নেই। একটি বেঞ্চির পরে বসে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছেন পোস্টমাস্টার। অতি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাখারও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। সরেজমিনে (২৫ জানুয়ারি-২০২২ সকালে) গিয়ে দেখা যায়, চায়ের দোকানের মধ্যে দাড়িয়ে আছে প্রায় ৫৫-৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান। তার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম চাচা পোস্ট অফিসের কার্যক্রম কোথায় হয় ? তিনি বললেন, এখানে। এরপর দেখলাম কয়েকজন চিঠি নিয়ে আসলো পোস্ট করার জন্য। পোস্টমাস্টার তার চায়ের দোকানের ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে গাথা বেঞ্চের পরে বসে একটি পলিথিনের প্যাকেট থেকে প্রয়োজনী নথিপত্র আর সীল বের করে চিঠিগুলো পোস্ট করার জন্য নথিভুক্ত করে গ্রহণ করলো। কথায় কথায় পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান বললেন, ওই প্রাইমারি স্কুলের পাশে একটা ঘরে চলতো পোস্ট অফিসের কার্যক্রম। সেই ঘরটি ভেঙ্গে গেছে প্রায় ২০-২৫ বছর আগে। সেই থেকে আমি, আমার এই চায়ের দোকানে পোস্ট অফিসের কাজ চালায়। জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা এভাবে কাজ চালাতে অসুবিধা হয়না ? তিনি বললেন, অসুবিধা হলেও, কিছু করার নেই। পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান প্রতিনিধিকে জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের দায়িত্বে আছি। পর্যায়ক্রমে এই পোস্ট অফিসের এখন এই অবস্থা। পোস্ট অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ব্যাগেভরে বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। আবার সকালে আনতে হয়। তিনি আরও জানায়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মানুষ অনেক সেবা পাই। প্রায় প্রতিদিনই এ এলাকার মানুষের গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র ও পার্সেল আসে এই পোস্ট অফিসে। সেগুলো সংরক্ষন করে রাখা ও বিতরণ করতে হয় আমার নিজের। এই পোস্ট অফিসে কোনো পোস্ট পিয়ন নেই। সকল কার্যক্রম আমার চালাতে হয়। এক প্রশ্নের জবাবে পোসমাস্টার খলিলুর রহমান বলেন, চার শতক জমি দেওয়া হয়েছে এই পোস্ট অফিসের ঘর নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু কবে এই ঘর নির্মাণ হবে জানিনা। পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান জানান, পোস্ট অফিসের কাজ করে আমি অতিসামান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাই। আর চন্ডিপুর স্কুলমোড়ে চায়ের দোকানদারি করি।

 

এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলে যায় সংসার। স্থানীয় এলাকাবাসি এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকে চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে ভাসমান অবস্থায় চলছে এ পোস্ট অফিসের কার্যক্রম। তাই আমরা এলাকাবাসি, ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পাকাঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঐকমত্য জরুরি : মান্না

» আরএসএফের হামলায় পালিয়েছে সুদানের এক গ্রামের ৮ হাজার পরিবার

» সাবেক এমপি মজিদ খান গ্রেফতার

» ‘দেশে যেন সহিংসতা ও হানাহানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে’

» ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারাদেশে আরও ৩৪৩ জন গ্রেফতার

» রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক ১৫ ফেব্রুয়ারি

» অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করুন : মাহফুজ আলম

» ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : মির্জা ফখরুল

» ইসলামপুরে ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল

» বিঞ্জে আসছে ভিকি জাহেদের ‘নীল সুখ’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অফিস না থাকায়… চায়ের দোকানে চলছে মণিরামপুরের চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের কার্যক্রম

উত্তম চক্রবর্তী,নিজস্ব প্রতিবেদক মণিরামপুর।। যশোরের মণিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়নের চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের দৈনন্দীন কার্যক্রম চলছে পোস্টমাস্টার মো. খলিলুর রহমানের জরাজীর্ণ চায়ের দোকানে। টালি দিয়ে ছাওয়া চায়ের দোকানটি বাঁসের বেড়া আর প্রাস্টিকের বস্তা দিয়ে ঘেরা।

 

সেখানে কোনো চেয়ার-টেবিল নেই। একটি বেঞ্চির পরে বসে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছেন পোস্টমাস্টার। অতি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাখারও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। সরেজমিনে (২৫ জানুয়ারি-২০২২ সকালে) গিয়ে দেখা যায়, চায়ের দোকানের মধ্যে দাড়িয়ে আছে প্রায় ৫৫-৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান। তার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম চাচা পোস্ট অফিসের কার্যক্রম কোথায় হয় ? তিনি বললেন, এখানে। এরপর দেখলাম কয়েকজন চিঠি নিয়ে আসলো পোস্ট করার জন্য। পোস্টমাস্টার তার চায়ের দোকানের ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে গাথা বেঞ্চের পরে বসে একটি পলিথিনের প্যাকেট থেকে প্রয়োজনী নথিপত্র আর সীল বের করে চিঠিগুলো পোস্ট করার জন্য নথিভুক্ত করে গ্রহণ করলো। কথায় কথায় পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান বললেন, ওই প্রাইমারি স্কুলের পাশে একটা ঘরে চলতো পোস্ট অফিসের কার্যক্রম। সেই ঘরটি ভেঙ্গে গেছে প্রায় ২০-২৫ বছর আগে। সেই থেকে আমি, আমার এই চায়ের দোকানে পোস্ট অফিসের কাজ চালায়। জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা এভাবে কাজ চালাতে অসুবিধা হয়না ? তিনি বললেন, অসুবিধা হলেও, কিছু করার নেই। পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান প্রতিনিধিকে জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের দায়িত্বে আছি। পর্যায়ক্রমে এই পোস্ট অফিসের এখন এই অবস্থা। পোস্ট অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ব্যাগেভরে বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। আবার সকালে আনতে হয়। তিনি আরও জানায়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মানুষ অনেক সেবা পাই। প্রায় প্রতিদিনই এ এলাকার মানুষের গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র ও পার্সেল আসে এই পোস্ট অফিসে। সেগুলো সংরক্ষন করে রাখা ও বিতরণ করতে হয় আমার নিজের। এই পোস্ট অফিসে কোনো পোস্ট পিয়ন নেই। সকল কার্যক্রম আমার চালাতে হয়। এক প্রশ্নের জবাবে পোসমাস্টার খলিলুর রহমান বলেন, চার শতক জমি দেওয়া হয়েছে এই পোস্ট অফিসের ঘর নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু কবে এই ঘর নির্মাণ হবে জানিনা। পোস্টমাস্টার খলিলুর রহমান জানান, পোস্ট অফিসের কাজ করে আমি অতিসামান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাই। আর চন্ডিপুর স্কুলমোড়ে চায়ের দোকানদারি করি।

 

এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলে যায় সংসার। স্থানীয় এলাকাবাসি এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকে চন্ডিপুর পোস্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে ভাসমান অবস্থায় চলছে এ পোস্ট অফিসের কার্যক্রম। তাই আমরা এলাকাবাসি, ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পাকাঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com