অজু গোসলে কোনো অঙ্গ শুকনো থাকলে যে ক্ষতি

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :শীতের ঠাণ্ডার কারণে অনেকে অজু-গোসলে অসতর্ক থাকেন। যা মোটেই কাম্য নয়। কারণ অজুর অঙ্গ ও ফরজ গোসলের সময় পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো জরুরি। অন্যথায় পবিত্রতা অর্জিত হবে না। অজুতে কোনো অঙ্গ সামান্যও শুকনা থেকে গেলে তার জন্য হাদিসে জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, কোনো এক সফরে আল্লাহর রাসুল (স.) আমাদের পেছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন। এদিকে আমরা (আছরের) নামাজ আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম। তাই (তা আদায় করার জন্য) অজু করা শুরু করলাম। এ সময় আমরা আমাদের পা কোনোমতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলেন, ‘সর্বনাশ! গোড়ালির নিম্নাংশগুলোর জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে।’ তিনি দুই বা তিনবার এ কথা বললেন। (সহিহ বুখারি: ৯৬)

অজুর ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
অজু করার সময় নখে যদি এমন বস্তু লেগে থাকে, যার কারণে নখ পর্যন্ত পানি পৌঁছতে পারে না; যেমন—মোম, আঠা ও পালিশ ইত্যাদি তাহলে সেগুলো পরিষ্কার করে এমনভাবে ধৌত করতে হবে, যেন সর্বাঙ্গে পানি পৌঁছে। (সুনানে কুবরা: ৩৬৭) সংকীর্ণ আংটিকে যদি নাড়াচড়া করা ছাড়া ভেতরে পানি না পৌঁছে, তাহলে তা নাড়াচড়া করতে হবে। (ইবনে মাজাহ: ৪৪৩)

 

ভাঙা-মচকা ইত্যাদি কারণে যদি শরীরের কোনো অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে, তবে অজু বা গোসল করার সময় সে স্থান ধোয়ার পরিবর্তে তার ওপর মাসেহ (ভেজা হাত বোলানো) করবে। মনে রাখতে হবে, এ জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ হবে না। কেননা ইসলামি শরিয়তে মাসেহকে গোসল বা ধোয়ার বিকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে। যত দিন শরীরে ব্যান্ডেজ থাকবে, ততদিন পর্যন্ত মাসেহ করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। মাসেহ করার পদ্ধতি হলো ব্যান্ডেজের জায়গাটুকু পলিথিন জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে গোসল করবে। এরপর পলিথিন খুলে যে অংশটুকু ধোয়া হয়নি তার ওপর মাসেহ করবে। কিন্তু যদি এভাবেও অজু বা গোসল করা না যায় তবে তার পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। (বাদায়িউস সানায়ে : ১/৯০)

 

গোসলের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
সঠিক পদ্ধতিতে ফরজ গোসল আদায় না করলে ওই ব্যক্তি গোসলের পরও নাপাক থাকে। বিষয়টি না জানার কারণে অনেকে সপ্তাহ, মাস এমনকি সর্বদাই নাপাক অবস্থায় রয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের নামাজ ইত্যাদি ইবাদত শুদ্ধ হয় না। মনে রাখা জরুরি, গোসলের তিন ফরজ অবশ্যই আদায় করতে হবে। কোনো একটি ছুটে গেলেও ফরজ গোসল আদায় হবে না। এক. কুলি করা। দুই. নাকে পানি দেওয়া। তিন. পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো। (হেদায়া: ১/২৯)

 

ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি হলো- গোসলের আগে ইস্তিনজা (প্রস্রাব-পায়খানা) সেরে নেবে। প্রথমে দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা ধুয়ে পরিষ্কার করবে। এবার বাঁ হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলবে। তারপর অজু করবে, তবে পা ধৌত করবে না। অতঃপর পুরো শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে, তারপর তিনবার বাঁয়ে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো লোমও শুকনো না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। সব শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুয়ে নেবে। (হেদায়া: ১/৩০)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে যাচ্ছেন ৪ রাজনীতিবিদকে নিয়ে

» এবারের দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুর্গাপূজায় আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি থাকতে হবে: তারেক রহমান

» পিআর দাবি জনগণের আঙ্খাকার সঙ্গে ‘মুনাফেকি’: রিজভী

» পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরী হোন: নেতা-কর্মীদের মির্জা ফখরুল

» সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

» মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে মিষ্টি শসার বাম্পার ফলন, ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি

» বড়াইগ্রামের বনপাড়া-পাবনা মহাসড়ক খানা-খন্দে এখন মৃত্যুফাঁদ

» দেশে এলো বাজেটে কড়া দেশের সেরা স্মার্টফোন ভিভো ওয়াই২১ডি

» রাজশাহীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ কার্যক্রমবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অজু গোসলে কোনো অঙ্গ শুকনো থাকলে যে ক্ষতি

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :শীতের ঠাণ্ডার কারণে অনেকে অজু-গোসলে অসতর্ক থাকেন। যা মোটেই কাম্য নয়। কারণ অজুর অঙ্গ ও ফরজ গোসলের সময় পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো জরুরি। অন্যথায় পবিত্রতা অর্জিত হবে না। অজুতে কোনো অঙ্গ সামান্যও শুকনা থেকে গেলে তার জন্য হাদিসে জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, কোনো এক সফরে আল্লাহর রাসুল (স.) আমাদের পেছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন। এদিকে আমরা (আছরের) নামাজ আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম। তাই (তা আদায় করার জন্য) অজু করা শুরু করলাম। এ সময় আমরা আমাদের পা কোনোমতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলেন, ‘সর্বনাশ! গোড়ালির নিম্নাংশগুলোর জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে।’ তিনি দুই বা তিনবার এ কথা বললেন। (সহিহ বুখারি: ৯৬)

অজুর ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
অজু করার সময় নখে যদি এমন বস্তু লেগে থাকে, যার কারণে নখ পর্যন্ত পানি পৌঁছতে পারে না; যেমন—মোম, আঠা ও পালিশ ইত্যাদি তাহলে সেগুলো পরিষ্কার করে এমনভাবে ধৌত করতে হবে, যেন সর্বাঙ্গে পানি পৌঁছে। (সুনানে কুবরা: ৩৬৭) সংকীর্ণ আংটিকে যদি নাড়াচড়া করা ছাড়া ভেতরে পানি না পৌঁছে, তাহলে তা নাড়াচড়া করতে হবে। (ইবনে মাজাহ: ৪৪৩)

 

ভাঙা-মচকা ইত্যাদি কারণে যদি শরীরের কোনো অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে, তবে অজু বা গোসল করার সময় সে স্থান ধোয়ার পরিবর্তে তার ওপর মাসেহ (ভেজা হাত বোলানো) করবে। মনে রাখতে হবে, এ জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ হবে না। কেননা ইসলামি শরিয়তে মাসেহকে গোসল বা ধোয়ার বিকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে। যত দিন শরীরে ব্যান্ডেজ থাকবে, ততদিন পর্যন্ত মাসেহ করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। মাসেহ করার পদ্ধতি হলো ব্যান্ডেজের জায়গাটুকু পলিথিন জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে গোসল করবে। এরপর পলিথিন খুলে যে অংশটুকু ধোয়া হয়নি তার ওপর মাসেহ করবে। কিন্তু যদি এভাবেও অজু বা গোসল করা না যায় তবে তার পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। (বাদায়িউস সানায়ে : ১/৯০)

 

গোসলের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
সঠিক পদ্ধতিতে ফরজ গোসল আদায় না করলে ওই ব্যক্তি গোসলের পরও নাপাক থাকে। বিষয়টি না জানার কারণে অনেকে সপ্তাহ, মাস এমনকি সর্বদাই নাপাক অবস্থায় রয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের নামাজ ইত্যাদি ইবাদত শুদ্ধ হয় না। মনে রাখা জরুরি, গোসলের তিন ফরজ অবশ্যই আদায় করতে হবে। কোনো একটি ছুটে গেলেও ফরজ গোসল আদায় হবে না। এক. কুলি করা। দুই. নাকে পানি দেওয়া। তিন. পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো। (হেদায়া: ১/২৯)

 

ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি হলো- গোসলের আগে ইস্তিনজা (প্রস্রাব-পায়খানা) সেরে নেবে। প্রথমে দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা ধুয়ে পরিষ্কার করবে। এবার বাঁ হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলবে। তারপর অজু করবে, তবে পা ধৌত করবে না। অতঃপর পুরো শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে, তারপর তিনবার বাঁয়ে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো লোমও শুকনো না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। সব শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুয়ে নেবে। (হেদায়া: ১/৩০)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com