কোরবানির গোশতে আত্মীয়দের হক কতটুকু, না দিলে গুনাহ হবে?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক  :কোরবানি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। শুধু পশু জবাই নয়, বরং কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগ, আত্মীয়তা বজায় রাখা ও সামাজিক সহমর্মিতা প্রকাশ করাও এই ইবাদতের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই কোরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—গোশত সঠিকভাবে বিতরণ করা।

 

কোরআন-হাদিসের নির্দেশ

আল্লাহ বলেন, ‘যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা হজ: ৩৬) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ, অভাবগ্ৰস্তকে আহার করাও।’ (সুরা হজ: ২৮)

 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তোমরা কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করো, খাও এবং অন্যকে খাওয়াও।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৮৯) এসব দলিলের ভিত্তিতে বিশুদ্ধ ফতোয়ার গ্রন্থগুলোতে বলা হয়েছে, কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো মাংস যদি নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪,আলমগিরি: ৫/৩০০)

আত্মীয়দের হক কতটুকু?

ইসলামী শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত। ১. নিজের পরিবার ২. আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী ৩. গরিব ও মিসকিন

 

আত্মীয়-স্বজনের হক এখানে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে। তাই আত্মীয়দের না দিয়ে মাংসের সবটুকু নিজেরা রেখে দিলে সুন্নতের পরিপন্থী কাজ হবে। যদিও ফিকহবিদদের মতে, সবটাই নিজেরা খাওয়া জায়েজ, তবে আত্মীয়-স্বজনকে না দেওয়া ইসলামি আচার-আচরণ ও আদর্শবিরুদ্ধ।

 

আত্মীয়দের বঞ্চিত করলে গুনাহ?

সরাসরি ‘হারাম’ বলা না গেলেও এটি নাফরমানি, সুন্নতের অবজ্ঞা এবং রূহানিয়াত হারানোর সম্ভাবনা তৈরি করে। কেননা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ইসলামে ফরজের কাছাকাছি গুরুত্ব পেয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৪)

 

তাই কোরবানির গোশত আত্মীয়-স্বজনকে না দেওয়ার মধ্যে কৃতিত্ব নেই। বরং, আত্মীয়-স্বজন, গরিব-দুঃখী সবাইকে দেওয়া উত্তম। এমনকি আন্তরিকতা প্রকাশে নিজের হাতে গোশত পৌঁছে দেওয়া উত্তম। এটি শুধু দান নয়, বরং ভালোবাসা প্রকাশের একটি আমলিক রূপ।

 

আর কোরবানির গোশত আত্মীয়দের না দিয়ে শুধু নিজেরা খেলে সওয়াব, সম্পর্করক্ষা, দায়িত্ব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণগুলো হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই কোরবানির মতো মহান আত্মত্যাগের আচারে আত্মীয়দের খেয়াল রাখা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূএ : ঢাকা মেইল ডটকম
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি শেখ হাসিনা-রেহানা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

» যেসব এলাকায় শুক্রবার ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না

» হেয়ার কালারে চুল কি দ্রুত পাকে?

» ঢামেক হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসকসহ দুইজন আটক

» টমটম চালক পিস্তলসহ আটক

» দিনে-দুপুরে পৌনে ৯ লাখ টাকা ছিনতাই

» ১০০ কোটির সাম্রাজ্য, ব্যবসায়ও সফল কৃতি স্যানন

» ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন এফ-৩৫ বিধ্বস্ত, পাইলট অক্ষত

» জুলাই সনদের দাবি নিয়ে শাহবাগ অবরোধ

» তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিকদের আরও সতর্ক হতে হবে : প্রধান বিচারপতির মন্তব্য

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কোরবানির গোশতে আত্মীয়দের হক কতটুকু, না দিলে গুনাহ হবে?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক  :কোরবানি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। শুধু পশু জবাই নয়, বরং কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগ, আত্মীয়তা বজায় রাখা ও সামাজিক সহমর্মিতা প্রকাশ করাও এই ইবাদতের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই কোরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—গোশত সঠিকভাবে বিতরণ করা।

 

কোরআন-হাদিসের নির্দেশ

আল্লাহ বলেন, ‘যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা হজ: ৩৬) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ, অভাবগ্ৰস্তকে আহার করাও।’ (সুরা হজ: ২৮)

 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তোমরা কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করো, খাও এবং অন্যকে খাওয়াও।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৮৯) এসব দলিলের ভিত্তিতে বিশুদ্ধ ফতোয়ার গ্রন্থগুলোতে বলা হয়েছে, কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো মাংস যদি নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪,আলমগিরি: ৫/৩০০)

আত্মীয়দের হক কতটুকু?

ইসলামী শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত। ১. নিজের পরিবার ২. আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী ৩. গরিব ও মিসকিন

 

আত্মীয়-স্বজনের হক এখানে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে। তাই আত্মীয়দের না দিয়ে মাংসের সবটুকু নিজেরা রেখে দিলে সুন্নতের পরিপন্থী কাজ হবে। যদিও ফিকহবিদদের মতে, সবটাই নিজেরা খাওয়া জায়েজ, তবে আত্মীয়-স্বজনকে না দেওয়া ইসলামি আচার-আচরণ ও আদর্শবিরুদ্ধ।

 

আত্মীয়দের বঞ্চিত করলে গুনাহ?

সরাসরি ‘হারাম’ বলা না গেলেও এটি নাফরমানি, সুন্নতের অবজ্ঞা এবং রূহানিয়াত হারানোর সম্ভাবনা তৈরি করে। কেননা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ইসলামে ফরজের কাছাকাছি গুরুত্ব পেয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৪)

 

তাই কোরবানির গোশত আত্মীয়-স্বজনকে না দেওয়ার মধ্যে কৃতিত্ব নেই। বরং, আত্মীয়-স্বজন, গরিব-দুঃখী সবাইকে দেওয়া উত্তম। এমনকি আন্তরিকতা প্রকাশে নিজের হাতে গোশত পৌঁছে দেওয়া উত্তম। এটি শুধু দান নয়, বরং ভালোবাসা প্রকাশের একটি আমলিক রূপ।

 

আর কোরবানির গোশত আত্মীয়দের না দিয়ে শুধু নিজেরা খেলে সওয়াব, সম্পর্করক্ষা, দায়িত্ব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণগুলো হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই কোরবানির মতো মহান আত্মত্যাগের আচারে আত্মীয়দের খেয়াল রাখা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূএ : ঢাকা মেইল ডটকম
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com