এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : আমাগো মতো গরীবের আবার সুখ কোথায়? ছোটবেলা থেকেই যার জীবনের সাথে সংগ্রাম। স্বামীর ভিটে মাটি পাইনি। বাবার দেয়া ১শতক জমির ওপরে প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে কোনমতে বেচে আছি। নদীর পারে ঘর, ঝড় বন্যা এলে আতংকে থাকি কখন যেন ঝুপরি ঘরখানা ভেঙে চাপা খেতে হবে। এরকম অনেক কথা বলতে গিয়ে দুচোখ বেয়ে অশ্রæ জড়ছিলো প্রতিবন্ধী শেফালী বেগম (৭০) ও তার মেয়ে সালমা আক্তারের।
সরেজমিনে খাজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পানগুছি নদীর তীরবর্তী বারইখালী ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেফালী বেগম ও তার মেয়ে সালমা আক্তার দু’জনেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ৫০বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন এ পরিবারের। স্বামী সায়েদ আলী আকন ২২বছর পূর্বে ১০বছরের মেয়ে প্রতিবন্ধী সালমা আক্তার ও ৮বছরের ছেলে হাফিজুল আকনকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর কোন ভিটেমাটি না থাকায় পিতার বাড়ী বারইখালী গ্রামে ১শতকের একটু বেশী জমিতে ঝুপড়ি ঘরে ৫০ বছর ধরে বসবাস করছেন প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ শেফালী বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পরে নিজে একটি হোটেলে ২০বছর ধরে বাবুর্চির কাজ করে ছোট দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে কোনমতে সংসার চলতো তাদের। পরবর্তীতে সংসারের অভাবের তাড়নায় ছোট ছেলে হাফিজুল ১০বছর বয়সে বাড়ী থেকে চলে যায়। পরে আর বাড়ীতে ফিরে আসেনি এমনকি মা শেফালী বেগমের কোন খোজ খবর নিচ্ছেনা। অসুস্থতা আর বার্ধক্যতায় শেফালী বেগমের হোটেলের কাজটি চলে যাওয়ায় সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে তার। নিজের কাছে থাকা প্রতিবিন্ধী মেয়ে সালমা আক্তার মানুষের বাড়ীতে ঝি এর কাজ করে যে টাকা পায় তা থেকে সংসারের কোনদিন বাজার হয় আবার কোন কোন দিন অভূক্ত থাকতে হয় এ প্রতিবন্ধী মা ও মেয়েকে।
প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ শেফালী বেগম বলেন, আমাগো মতে গরীবের আবেদন কে শোনে? বৃদ্ধ বয়সে এসে এখন আর কাজ কর্ম করতে পারিনা। সরকারের কাছে শেষ বয়সে আকূল আবেদন মাথা গোঁজার ঠাই একখানা ঘর তৈরী করে দিলে ঝড় বৃষ্টি এলে ভিজতে হতোনা, মনে আর দূঃখও থাকতোনা।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা এ প্রতিবন্ধী পরিবারটির জন্য সরকারী সহায়তায় একটি ঘর নির্মান করে দেয়ার দাবী জানান পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাবির বলেন, সরকারীভাবে জমি আছে ঘর নেই এ প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে নদী ভাঙন আপদকালীন দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সহায়তার জন্য নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর অথবা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে আবেদন করলে প্রতিবন্ধী শেফালী বেগমের বিষয়টি সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে ওই পরিবারটি সহায়তার প্রাপ্য হলে তাকে সহায়তা করা যেতে পারে বলে এ কর্মকর্তা জানান।