এএসপি আনিসুল হত্যা: ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধরে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও হাসপাতালটির পরিচালক আরিফ মাহমুদসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

গত ৮ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুক্রবার (১১ মার্চ) আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

অভিযোগপত্রে অপর আসামিরা হলেন, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন, ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, হাসপাতালের কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুন।

 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এএসপি আনিসুল করিম সময়মতো বিভাগীয় পদোন্নতি না পাওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার তিন থেকে চার দিন আগে চুপচাপ হয়ে যান। বিষয়টি পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন এএসপি আনিসুল করিমকে মনোচিকিৎসক দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘটনার আগের দিন আনিসুল করিমের একজন ভগ্নিপতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি রোগীর স্বজনদের পরামর্শ দেন, সরকারি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা ব্যবস্থা তেমন উন্নত না। রোগীকে সেবা করার মতো পর্যাপ্ত জনবল সেখানে নেই। তাই রোগীকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসা ভালো হবে। তিনি নিয়মিত সেখানে চেম্বার করেন।

 

এরপর ৯ নভেম্বর সকাল ৮টার সময় এএসপি আনিসুল করিমকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। নিজে হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন দেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার সময় আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নিয়ে আসার পর সবার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন। তবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের সময় হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ সিগারেট খাওয়ার কথা বলে আনিসুলকে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যান। আরিফ ছাড়াও রেদোয়ান, মাসুদ খান, জোবায়ের, তানভীর, তানিফ, সজীব, অসীম, লিটন ও সাইফুল চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আনিসুলকে নিয়ে যান। কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরপরই আনিসুলকে মারধর করে ফেলে দেওয়া হয়। তখন আসামি মাসুদ খান ও তানভীর হাসান রোগীর পিঠের ওপর চেপে বসেন। আর অসীম আনিসুলের দুই হাত পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলেন। সজীব আনিসুলের ঘাড়ে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। তানিফ মোল্লা ঘাড় ও মাথায় আঘাত করেন ও আনিসুলের মাথার ওপর চেপে বসেন। লিটন, জোবায়ের ও সাইফুল রোগীর পা ও শরীর চেপে ধরে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

 

এ ঘটনায় পরের দিন (১০ নভেম্বর) সকালে আদাবর থানায় নিহতের বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এএসপি আনিসুল করিম শিপন ৩১তম বিসিএস পুলিশে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।

সূএ;পূর্ব পশ্চিম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কেয়ামত পর্যন্ত জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারবে না : গয়েশ্বর

» সৎ, নীতিবান ও পেশাদার অফিসাররা পদোন্নতির দাবিদার: প্রধান উপদেষ্টা

» গোপালগঞ্জে গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না, যারা দোষী তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» ষড়যন্ত্রকারীরা নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: শামসুজ্জামান দুদু

» ডা. শফিকুর রহমানের বাসায় ধর্ম উপদেষ্টা

» ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় ছুরিকাঘাত, হামলাকারী গ্রেফতার

» সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

» গুলিস্তান-আজিমপুরে হরতাল সমর্থনে বাস পোড়ানোর তথ্য মিথ্যা: ডিএমপি

» ২৮তম বিসিএস পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে তারেক-মাসুদ

» মদ খেয়ে ৫ জনের মৃত্যুর পর সেই মদ বিক্রেতা আটক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

এএসপি আনিসুল হত্যা: ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধরে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও হাসপাতালটির পরিচালক আরিফ মাহমুদসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

গত ৮ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুক্রবার (১১ মার্চ) আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

অভিযোগপত্রে অপর আসামিরা হলেন, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন, ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, হাসপাতালের কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুন।

 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এএসপি আনিসুল করিম সময়মতো বিভাগীয় পদোন্নতি না পাওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার তিন থেকে চার দিন আগে চুপচাপ হয়ে যান। বিষয়টি পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন এএসপি আনিসুল করিমকে মনোচিকিৎসক দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘটনার আগের দিন আনিসুল করিমের একজন ভগ্নিপতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি রোগীর স্বজনদের পরামর্শ দেন, সরকারি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা ব্যবস্থা তেমন উন্নত না। রোগীকে সেবা করার মতো পর্যাপ্ত জনবল সেখানে নেই। তাই রোগীকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসা ভালো হবে। তিনি নিয়মিত সেখানে চেম্বার করেন।

 

এরপর ৯ নভেম্বর সকাল ৮টার সময় এএসপি আনিসুল করিমকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। নিজে হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন দেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার সময় আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নিয়ে আসার পর সবার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন। তবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের সময় হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ সিগারেট খাওয়ার কথা বলে আনিসুলকে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যান। আরিফ ছাড়াও রেদোয়ান, মাসুদ খান, জোবায়ের, তানভীর, তানিফ, সজীব, অসীম, লিটন ও সাইফুল চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আনিসুলকে নিয়ে যান। কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরপরই আনিসুলকে মারধর করে ফেলে দেওয়া হয়। তখন আসামি মাসুদ খান ও তানভীর হাসান রোগীর পিঠের ওপর চেপে বসেন। আর অসীম আনিসুলের দুই হাত পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলেন। সজীব আনিসুলের ঘাড়ে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। তানিফ মোল্লা ঘাড় ও মাথায় আঘাত করেন ও আনিসুলের মাথার ওপর চেপে বসেন। লিটন, জোবায়ের ও সাইফুল রোগীর পা ও শরীর চেপে ধরে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

 

এ ঘটনায় পরের দিন (১০ নভেম্বর) সকালে আদাবর থানায় নিহতের বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এএসপি আনিসুল করিম শিপন ৩১তম বিসিএস পুলিশে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।

সূএ;পূর্ব পশ্চিম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com