সুন্দরবনের উপকূলে মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে বেকার নাসির এখন সফল কমলা চাষী  

এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির,  বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি :বেকার জীবন যে কত কষ্টকর, তা ভালো করেই জানেন নাসির উদ্দিন মল্লিক। পাঁচ সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন কষ্টে দিন কাটিয়েছেন তিনি। কোথাও চাকরি বা আয়ের পথ না পেয়ে অবশেষে নিজ প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন এই সফল উদ্যোক্তা। সুন্দরবনের উপকূলে মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে বেকার নাসির এখন সফল কমলা চাষী

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলে, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুটিখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পুটিখালী গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন মল্লিক। তার পিতা তৈয়ব আলী মল্লিক একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাসির বড়। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বও তার কাঁধে।ছোট দুই ভাই খুলনা বিভাগীয় শহরে থাকে। সংসারের বড় ছেলে হিসাবে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ পিতা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। পিতার সামান্য বসত বাড়ি সহ ২ বিঘা জমি থেকে কোন মত সংসার চলে। বেকারে জীবনে পার করতে হয় তার। চাষী নাসির উদ্দিনের দীর্ঘ বছরের বেকার জীবনে অনেক কষ্টে দিনপাত করতে হয়েছে। তবে তার স্বপ্ন ছিল বেকার থাকবে না। কিছু একটা করে সংসারের চাকা ঘুরাতে হবে। এমনি করে ইউটিউব দেখে চুয়াডাঙ্গার একটি কমলা বাগান থেকে প্রথমে তিনি ৫০ টি চায়না কমলার চারা ক্রয় করে আনেন প্রতিপিস ১২৫ টাকা দরে। ২০২০ সালে সাড়ে ৭ কাঠা জমিতে ৫০টি এ কমলা চারা রোপন করে চাষ শুরু করেন। ১ বছর পরে সফল এ চাষীর নাসির উদ্দিন মল্লিকের গাছে ফলন আসে। প্রাথমিক ভাবে এক একটি গাছে ২৫/৩০ টি কমলা ফল হয়। গত বছর তিনি এ বাগান থেকে ১৭ মন ২৩ কেজি কমলা ফল বিক্রী করেছেন প্রতি মন ১৩ হাজার ২ শত টাকা দরে। প্রায় তিনি ৩ লক্ষ টাকার ফল বিক্রী করেছে এ বাগান থেকে। এ বছরে তার কমলা বাগানে ফলন হয়েছে দ্বিগুন যদিও বাজার দর একটু কম। তারপরেও এ কমলা বাগান থেকে ২০ মনের অধিক ফল বাজারজাত করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

দীর্ঘ বেকার জীবনের কষ্ট পেরিয়ে তিনি ইউটিউব দেখে চুয়াডাঙ্গার একটি কমলা বাগানের অনুকরণে চাষের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২০ সালে ৫০টি চায়না কমলার চারা ক্রয় করেন প্রতিটি ১২৫ টাকা দরে এবং সাড়ে ৭ কাঠা জমিতে রোপণ করেন। এক বছর পরেই ফলন আসে। প্রথম বছর প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি করে ফল হয়।

গত বছর তার বাগান থেকে ১৭ মণ ২৩ কেজি কমলা বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন। এ বছর ফলন হয়েছে দ্বিগুণ, যদিও বাজারদর কিছুটা কম। তিনি জানান, এবারও প্রায় ৪ লাখ টাকার বেশি বিক্রি আশা করছেন।

নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, অতিরিক্ত লবণাক্ততায় যেখানে অন্য ফসল ফলাতে খুবই কষ্ট হয় তার মধ্যেও এ চায়না কমলা তার বাগানে অতিরিক্ত ফলন হয়েছে। এটি সবই সৃষ্টিকর্তার দান। তবে পরিচর্যায় সার্বক্ষনিক পরিবারের লোকজন থাকি। কমলাগুলো খেতেও খুবই মিষ্টি। যে কারনে স্থানীয় বাজারে যতেষ্ট চাহিদা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা উপজেলার বেপারীরা এসে বাগান থেকে ফল কেটে নিয়া যায়। গত বছর ১৩ হাজার টাকার বেশি দরে প্রতি মন এ চায়না কমলা বিক্রী হয়েছে। এ বছর বেপারিরা দাম বলছে প্রতি মন ১১ হাজার টাকা। দু একদিনে মধ্য বাগান থেকে কমলা ফল কর্তন করা হবে। তার এ বাগান থেকে প্রায় ৪ লাক্ষ টাকার চায়না কমলা ফল এ বছর তিনি বিক্রী করতে পারবেন বলে আশা করছেন। একজন সফল চাষী হিসাবে নাসির মল্লিক আরও বলেন লেখা পড়া শেষ করে সরকারী চাকুরি করতে হবে এমনটা নয়, বিদেশের মাটিতে অর্থ উপার্জনের জন্য লাগাম ঘোড়ার মত ছোটার প্রয়োজন হবে না। এ দেশে বসেই দেশের মাটিতেই সোনা ফলানো সম্ভব হতে পারে একজন সফল উদ্যেক্তা। যদি থাকে অধ্যাবসা আর পরিশ্রম।

“আমার বাগানে লবণাক্ত মাটিতেও ভালো ফলন হয়েছে। এটা আল্লাহর আশীর্বাদ। পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করে। কমলাগুলো খুব মিষ্টি, তাই স্থানীয় বাজারে চাহিদাও ভালো। অনেক বেপারী বাগান থেকেই ফল কিনে নেয়।”

তিনি আরও বলেন,  “লেখাপড়া শেষে সরকারি চাকরি করতেই হবে — এটা ভুল ধারণা। বিদেশে না গিয়েও দেশের মাটিতে পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন সম্ভব। পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি।”

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “এ উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কমলা চাষে আলাদা কোনো প্রকল্প না থাকলেও কিছু উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে চাষ করছেন। নাসির উদ্দিন মল্লিকের বাগানের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং তাঁকে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে যুবক নিহত

» ‘ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা পুনর্বহাল করবে বিএনপি’

» গণভোটের চারটি প্রশ্নের একটিতে ‘না’ বলার সুযোগ কোথায়: রিজভী

» আজ যেসব এলাকায় টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না

» সুদের টাকা চাইতে গিয়ে যুবককে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

» ঢাকার ৪৪টি পুকুর ও জলাশয় সংস্কার কাজের উদ্বোধন করলেন পরিবেশ উপদেষ্টা

» মুসলমানদের মৌলিক দাবি আদায় না হলে আমরা সেই সংবিধান মানি না

» খতমে নবুওয়ত সম্মেলনে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা

» গত ৩ বারের মতো নির্বাচন হলে জাতির ভাগ্যে নামবে চরম দুর্ভোগ: মিয়া গোলাম পরওয়ার

» রাজনৈতিক দলের পদধারী কেউ প্রেসক্লাবের কমিটিতে থাকতে পারবে না: সারজিস আলম

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সুন্দরবনের উপকূলে মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে বেকার নাসির এখন সফল কমলা চাষী  

এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির,  বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি :বেকার জীবন যে কত কষ্টকর, তা ভালো করেই জানেন নাসির উদ্দিন মল্লিক। পাঁচ সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন কষ্টে দিন কাটিয়েছেন তিনি। কোথাও চাকরি বা আয়ের পথ না পেয়ে অবশেষে নিজ প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন এই সফল উদ্যোক্তা। সুন্দরবনের উপকূলে মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে বেকার নাসির এখন সফল কমলা চাষী

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলে, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুটিখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পুটিখালী গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন মল্লিক। তার পিতা তৈয়ব আলী মল্লিক একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাসির বড়। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বও তার কাঁধে।ছোট দুই ভাই খুলনা বিভাগীয় শহরে থাকে। সংসারের বড় ছেলে হিসাবে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ পিতা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। পিতার সামান্য বসত বাড়ি সহ ২ বিঘা জমি থেকে কোন মত সংসার চলে। বেকারে জীবনে পার করতে হয় তার। চাষী নাসির উদ্দিনের দীর্ঘ বছরের বেকার জীবনে অনেক কষ্টে দিনপাত করতে হয়েছে। তবে তার স্বপ্ন ছিল বেকার থাকবে না। কিছু একটা করে সংসারের চাকা ঘুরাতে হবে। এমনি করে ইউটিউব দেখে চুয়াডাঙ্গার একটি কমলা বাগান থেকে প্রথমে তিনি ৫০ টি চায়না কমলার চারা ক্রয় করে আনেন প্রতিপিস ১২৫ টাকা দরে। ২০২০ সালে সাড়ে ৭ কাঠা জমিতে ৫০টি এ কমলা চারা রোপন করে চাষ শুরু করেন। ১ বছর পরে সফল এ চাষীর নাসির উদ্দিন মল্লিকের গাছে ফলন আসে। প্রাথমিক ভাবে এক একটি গাছে ২৫/৩০ টি কমলা ফল হয়। গত বছর তিনি এ বাগান থেকে ১৭ মন ২৩ কেজি কমলা ফল বিক্রী করেছেন প্রতি মন ১৩ হাজার ২ শত টাকা দরে। প্রায় তিনি ৩ লক্ষ টাকার ফল বিক্রী করেছে এ বাগান থেকে। এ বছরে তার কমলা বাগানে ফলন হয়েছে দ্বিগুন যদিও বাজার দর একটু কম। তারপরেও এ কমলা বাগান থেকে ২০ মনের অধিক ফল বাজারজাত করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

দীর্ঘ বেকার জীবনের কষ্ট পেরিয়ে তিনি ইউটিউব দেখে চুয়াডাঙ্গার একটি কমলা বাগানের অনুকরণে চাষের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২০ সালে ৫০টি চায়না কমলার চারা ক্রয় করেন প্রতিটি ১২৫ টাকা দরে এবং সাড়ে ৭ কাঠা জমিতে রোপণ করেন। এক বছর পরেই ফলন আসে। প্রথম বছর প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি করে ফল হয়।

গত বছর তার বাগান থেকে ১৭ মণ ২৩ কেজি কমলা বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন। এ বছর ফলন হয়েছে দ্বিগুণ, যদিও বাজারদর কিছুটা কম। তিনি জানান, এবারও প্রায় ৪ লাখ টাকার বেশি বিক্রি আশা করছেন।

নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, অতিরিক্ত লবণাক্ততায় যেখানে অন্য ফসল ফলাতে খুবই কষ্ট হয় তার মধ্যেও এ চায়না কমলা তার বাগানে অতিরিক্ত ফলন হয়েছে। এটি সবই সৃষ্টিকর্তার দান। তবে পরিচর্যায় সার্বক্ষনিক পরিবারের লোকজন থাকি। কমলাগুলো খেতেও খুবই মিষ্টি। যে কারনে স্থানীয় বাজারে যতেষ্ট চাহিদা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা উপজেলার বেপারীরা এসে বাগান থেকে ফল কেটে নিয়া যায়। গত বছর ১৩ হাজার টাকার বেশি দরে প্রতি মন এ চায়না কমলা বিক্রী হয়েছে। এ বছর বেপারিরা দাম বলছে প্রতি মন ১১ হাজার টাকা। দু একদিনে মধ্য বাগান থেকে কমলা ফল কর্তন করা হবে। তার এ বাগান থেকে প্রায় ৪ লাক্ষ টাকার চায়না কমলা ফল এ বছর তিনি বিক্রী করতে পারবেন বলে আশা করছেন। একজন সফল চাষী হিসাবে নাসির মল্লিক আরও বলেন লেখা পড়া শেষ করে সরকারী চাকুরি করতে হবে এমনটা নয়, বিদেশের মাটিতে অর্থ উপার্জনের জন্য লাগাম ঘোড়ার মত ছোটার প্রয়োজন হবে না। এ দেশে বসেই দেশের মাটিতেই সোনা ফলানো সম্ভব হতে পারে একজন সফল উদ্যেক্তা। যদি থাকে অধ্যাবসা আর পরিশ্রম।

“আমার বাগানে লবণাক্ত মাটিতেও ভালো ফলন হয়েছে। এটা আল্লাহর আশীর্বাদ। পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করে। কমলাগুলো খুব মিষ্টি, তাই স্থানীয় বাজারে চাহিদাও ভালো। অনেক বেপারী বাগান থেকেই ফল কিনে নেয়।”

তিনি আরও বলেন,  “লেখাপড়া শেষে সরকারি চাকরি করতেই হবে — এটা ভুল ধারণা। বিদেশে না গিয়েও দেশের মাটিতে পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন সম্ভব। পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি।”

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “এ উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কমলা চাষে আলাদা কোনো প্রকল্প না থাকলেও কিছু উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে চাষ করছেন। নাসির উদ্দিন মল্লিকের বাগানের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং তাঁকে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com