সেজদা কেন শয়তানের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :সেজদা হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত নিদর্শন। আর এই সেজদাই শয়তানের জন্য সবচেয়ে বড় বেদনা ও অপমানের কারণ। এর পেছনে রয়েছে এক গভীর ইতিহাস, চিরশত্রুতার কাহিনি এবং এক অমোঘ আধ্যাত্মিক সত্য।

 

অতীতের স্মৃতি: যে সেজদা করতে শয়তান অস্বীকার করেছিল

শয়তানের এই বেদনার শুরু হয়েছিল সৃষ্টির সূচনালগ্নে। যখন আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদেরকে তাঁর কাছে সেজদা করার নির্দেশ দিলেন, সকল ফেরেশতা আদেশ পালন করলেও ইবলিস (শয়তান) অহংকারবশতঃ তা প্রত্যাখ্যান করল। সে বলল, ‘আমি তাকে সেজদা করব না, আমি তার চেয়ে উৎকৃষ্ট। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’ (সুরা সাদ: ৭৬) এই এক অহংকার ও আল্লাহর নির্দেশ অমান্যের কারণে শয়তান চিরকালের জন্য অভিশপ্ত ও জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়।

মানুষের সেজদা দেখলে শয়তান কাঁদে

আজ শয়তান যখন দেখে, যে আদম সন্তানকে সম্মান দেওয়ার জন্য সে সেজদা করতে অস্বীকার করেছিল, সেই মানুষরাই সেজদাবনত হচ্ছে, তখন তার অতীতের সেই অপমান ও চরম ব্যর্থতার স্মৃতি উসকে ওঠে। মানুষের প্রতিটি সেজদা যেন শয়তানের জন্য তার সেই চিরন্তন ভুল সিদ্ধান্তের জীবন্ত প্রমাণ।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করে ও সেজদা করে, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে সরে যায় এবং বলে, ‘হায় দুর্ভোগ! মানুষকে সেজদার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সে সেজদা করল এবং তার জন্য জান্নাত। আর আমাকেও সেজদার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, আমি অস্বীকার করলাম, তাই আমার জন্য জাহান্নাম।’ (সহিহ মুসলিম: ৮১)

 

সেজদা শয়তানের পরাজয়ের প্রতীক

শয়তানের একমাত্র লক্ষ্য হলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করে জাহান্নামের সঙ্গী করা। কিন্তু যখন কোনো বান্দা সেজদার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটতম বান্দায় পরিণত হয়, তখন সে শয়তানের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের স্বীকারোক্তি দেয়। সেজদা হলো শয়তানের অহংকারের বিরুদ্ধে মানুষের বিনয়ের বিজয়। এটি শয়তানকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তার অহংকার তাকে কীভাবে চিরস্থায়ী ক্ষতির দিকে নিয়ে গেল, আর মানুষের বিনয় তাকে কীভাবে চিরস্থায়ী মুক্তির পথ দেখাল।

 

সেজদা আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে দেয়

সেজদা এমন একটি মুহূর্ত যখন বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে থাকে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘বান্দা সেজদার অবস্থায় আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তাই তোমরা সেজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।’ (মুসলিম: ৪৮২) শয়তান জানে, এই নৈকট্য ও দোয়া কবুলের মুহূর্তই তার জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। কারণ, এতে করে মানুষ তার প্রভুর সান্নিধ্য ও ক্ষমা লাভ করে, যা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

 

অতএব, সেজদা কেবল একটি ইবাদতই নয়; এটি আধ্যাত্মিক যুদ্ধের ময়দানে শয়তানের অহংকারের বিরুদ্ধে মানুষের বিনয়ের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীক। শয়তানের বেদনা আমাদের জন্য একটি বার্তা বয়ে আনে: আমাদের প্রতিটি সেজদা শয়তানের হতাশাকে আরও গভীর করে এবং আমাদেরকে আল্লাহর বিশেষ রহমতের কাছাকাছি নিয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি সেজদা দেওয়ার মাধ্যমে এই চিরশত্রুকে হতাশ ও লাঞ্ছিত করা এবং আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ লাভ করা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শেখ হাসিনার বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে : জোনায়েদ সাকি

» ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে : মাওলানা ইমতিয়াজ

» হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনেই সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন অনেকে

» শেখ হাসিনার বিচারের রায়ে সন্তুষ্ট আইন উপদেষ্টা

» শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ৩২ নম্বরে ছাত্রজনতার উল্লাস

» হাসিনার মামলার রায় নিয়ে ফেসবুকে যা লিখলেন ফখরুল

» মিরপুর সড়ক বন্ধ, স্লোগান চলছে আন্দোলনকারীদের

» চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড

» গণতন্ত্রের লড়াইয়ে মওলানা ভাসানী পথপ্রদর্শক : তারেক রহমান

» ডাকাতি ও খুনের মামলায় পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সেজদা কেন শয়তানের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :সেজদা হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত নিদর্শন। আর এই সেজদাই শয়তানের জন্য সবচেয়ে বড় বেদনা ও অপমানের কারণ। এর পেছনে রয়েছে এক গভীর ইতিহাস, চিরশত্রুতার কাহিনি এবং এক অমোঘ আধ্যাত্মিক সত্য।

 

অতীতের স্মৃতি: যে সেজদা করতে শয়তান অস্বীকার করেছিল

শয়তানের এই বেদনার শুরু হয়েছিল সৃষ্টির সূচনালগ্নে। যখন আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদেরকে তাঁর কাছে সেজদা করার নির্দেশ দিলেন, সকল ফেরেশতা আদেশ পালন করলেও ইবলিস (শয়তান) অহংকারবশতঃ তা প্রত্যাখ্যান করল। সে বলল, ‘আমি তাকে সেজদা করব না, আমি তার চেয়ে উৎকৃষ্ট। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’ (সুরা সাদ: ৭৬) এই এক অহংকার ও আল্লাহর নির্দেশ অমান্যের কারণে শয়তান চিরকালের জন্য অভিশপ্ত ও জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়।

মানুষের সেজদা দেখলে শয়তান কাঁদে

আজ শয়তান যখন দেখে, যে আদম সন্তানকে সম্মান দেওয়ার জন্য সে সেজদা করতে অস্বীকার করেছিল, সেই মানুষরাই সেজদাবনত হচ্ছে, তখন তার অতীতের সেই অপমান ও চরম ব্যর্থতার স্মৃতি উসকে ওঠে। মানুষের প্রতিটি সেজদা যেন শয়তানের জন্য তার সেই চিরন্তন ভুল সিদ্ধান্তের জীবন্ত প্রমাণ।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করে ও সেজদা করে, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে সরে যায় এবং বলে, ‘হায় দুর্ভোগ! মানুষকে সেজদার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সে সেজদা করল এবং তার জন্য জান্নাত। আর আমাকেও সেজদার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, আমি অস্বীকার করলাম, তাই আমার জন্য জাহান্নাম।’ (সহিহ মুসলিম: ৮১)

 

সেজদা শয়তানের পরাজয়ের প্রতীক

শয়তানের একমাত্র লক্ষ্য হলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করে জাহান্নামের সঙ্গী করা। কিন্তু যখন কোনো বান্দা সেজদার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটতম বান্দায় পরিণত হয়, তখন সে শয়তানের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের স্বীকারোক্তি দেয়। সেজদা হলো শয়তানের অহংকারের বিরুদ্ধে মানুষের বিনয়ের বিজয়। এটি শয়তানকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তার অহংকার তাকে কীভাবে চিরস্থায়ী ক্ষতির দিকে নিয়ে গেল, আর মানুষের বিনয় তাকে কীভাবে চিরস্থায়ী মুক্তির পথ দেখাল।

 

সেজদা আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে দেয়

সেজদা এমন একটি মুহূর্ত যখন বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে থাকে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘বান্দা সেজদার অবস্থায় আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তাই তোমরা সেজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।’ (মুসলিম: ৪৮২) শয়তান জানে, এই নৈকট্য ও দোয়া কবুলের মুহূর্তই তার জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। কারণ, এতে করে মানুষ তার প্রভুর সান্নিধ্য ও ক্ষমা লাভ করে, যা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

 

অতএব, সেজদা কেবল একটি ইবাদতই নয়; এটি আধ্যাত্মিক যুদ্ধের ময়দানে শয়তানের অহংকারের বিরুদ্ধে মানুষের বিনয়ের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীক। শয়তানের বেদনা আমাদের জন্য একটি বার্তা বয়ে আনে: আমাদের প্রতিটি সেজদা শয়তানের হতাশাকে আরও গভীর করে এবং আমাদেরকে আল্লাহর বিশেষ রহমতের কাছাকাছি নিয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি সেজদা দেওয়ার মাধ্যমে এই চিরশত্রুকে হতাশ ও লাঞ্ছিত করা এবং আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ লাভ করা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com