জুলাই সনদ আমাদের নতুন পথ দেখায়, এটিই এর শক্তি: প্রেস সচিব

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  জুলাই সনদ আমাদের নতুন পথ দেখায়, এটিই এর শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

 

আজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

 

শফিকুল আলম তার পোস্টে বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস ও জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ প্রণয়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

 

তিনি লিখেছেন, বহু বিপ্লবই ইতিহাসের অন্ধকারে মিলিয়ে যায় যখন রাস্তায় অর্জিত পরিবর্তনগুলো আইনে রূপ নিতে পারে না। তাই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন—সড়ক আন্দোলন, প্রাণঘাতী প্রতিবাদ, ঘেরাও, হরতাল কিংবা অবরোধই বিপ্লবের সহজ অংশ। প্রকৃত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরীক্ষা শুরু হয় তখনই, যখন মানুষ যে আদর্শ ও উদ্দেশ্যে রক্ত ঝরিয়েছে, তা আইনে রূপ দেওয়ার সময় আসে।

 

প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু সেই নয় মাসের সংগ্রাম এবং পাকিস্তানি শাসনামলের দীর্ঘ বঞ্চনা—যে আদর্শ ও স্বপ্নের আগুনে জ্বলছিল, সংবিধান রচনার কুয়াশায় তা অনেকটাই হারিয়ে যায়।

 

‘১৯৭১-এর ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন রাষ্ট্র গঠনের তাড়নায় আমরা ভুলে গিয়েছিলাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি—আমরা কেমন দেশ গড়তে চাই, আমাদের জাতীয় পরিচয় কী হবে? সেই সময়ের নেতারা, ট্র্যাজেডির ভারে ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত, প্রয়োজনীয় দূরদৃষ্টি প্রদর্শন করতে পারেননি। এর ফল আজও আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের বারবার ব্যর্থ করেছে। আমরা একের পর এক মূল ধারা বিকৃত করেছি, তাড়াহুড়ো করে আইন যোগ-বিয়োগ করে তা সাময়িকভাবে টিকিয়ে রেখেছি। কিছুদিনের জন্য মনে হয়েছিল—এই ভাঙাচোরা কাঠামো হয়তো চলবে। কিন্তু না, যখন সেই শক্তিমানরা পতিত হলেন, গোটা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লো। জনগণের ক্ষোভে ভেসে গেলো বহু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া রাজনৈতিক দলও, কারণ ভিত্তিটাই ছিল দুর্বল।

 

শফিকুল আলম আরও বলেন, আইন প্রণয়ন ও সংবিধান সংস্কারের কাজ কেবল ক্ষমতার খেলা নয়—এটা সেই নেতাদের কাজ, যারা সময়ের সীমা পেরিয়ে ভবিষ্যৎকে দেখতে পারেন, যারা জানেন আইনের প্রতিটি শব্দের গুরুত্ব কত গভীর। দুই দশকেরও বেশি আগে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে আমরা একযোগে কঠোর আইন পাস করেছিলাম। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে, সেই আইনের অপ্রত্যাশিত পরিণতিতে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক গ্রামেই এখন প্রায় সব মামলাই এই আইনের অধীনে দায়ের হয়, যার সঙ্গে মূল উদ্দেশ্যের সামান্যও সম্পর্ক নেই।

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, এবারের ‘জুলাই চার্টার’ সেই রাজনৈতিক পরিপক্বতার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এটি আমাদের শিখিয়েছে—শব্দেরও সীমা আছে, কেবল রাস্তায় স্লোগান নয়, আইনের ভাষাই সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকতে হবে। যেমনভাবে আমেরিকার পূর্ববর্তী নেতারা প্রায় আড়াই শতাব্দী আগে তাদের সংবিধান ও অধিকার সনদ নিয়ে গভীর বিতর্ক করেছিলেন।

 

তিনি বলেন, জুলাই চার্টারের বৈপ্লবিক দিকটি এখানে রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান দাবি করছে না। বরং এটি দীর্ঘ আলোচনা, মতবিনিময় ও ঐকমত্যের ফসল। ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকার যখন এটি বাস্তবায়নে এগোবে, তখনো হয়তো এটি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে। তবু এটি ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে—যে অধ্যায়ে আমরা গর্বভরে বলতে পারবো, একসময় আমাদের নেতারা একসঙ্গে বসেছিলেন, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন জাতির দীর্ঘদিনের সংকট সমাধানের।

 

শফিকুল আলম বলেন, তাদের পূর্ণ সফলতা না এলেও এটি ব্যর্থতা নয়। বরং জুলাই চার্টারের শক্তি এখানেই—এটি আমাদের নতুন পথ দেখায়, আমাদের আহ্বান জানায় বারবার আলোচনার টেবিলে ফিরে যেতে, পরস্পরের মত শুনতে, সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখতে—যতক্ষণ না আমরা নিশ্চিত হচ্ছি, এবার আমাদের তৈরি করা শব্দগুলো আর আমাদের ব্যর্থ করবে না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» টানা দ্বিতীয় জয় বাংলাদেশের

» পোস্টাল ভোট অ্যাপ গণতন্ত্রের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন : সিইসি

» জামায়াত আমিরের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের বৈঠক

» তারেক রহমান মানবতার দূত হিসেবে কাজ করছেন : রিজভী

» ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন দেখে যেতে পারেননি মওদুদ, এটা দুঃখজনক’

» তারেক রহমানের জন্মদিন নিয়ে বিএনপির বিশেষ নির্দেশনা

» ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা

» সাংবাদিক মুজতবা খন্দকারের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলায় বিএফইউজের উদ্বেগ

» হাসিনা-কামালকে ফেরাতে ভারতের কাছে পাঠানোর চিঠি প্রস্তুত হচ্ছে

» তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জুলাই সনদ আমাদের নতুন পথ দেখায়, এটিই এর শক্তি: প্রেস সচিব

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  জুলাই সনদ আমাদের নতুন পথ দেখায়, এটিই এর শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

 

আজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

 

শফিকুল আলম তার পোস্টে বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস ও জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ প্রণয়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

 

তিনি লিখেছেন, বহু বিপ্লবই ইতিহাসের অন্ধকারে মিলিয়ে যায় যখন রাস্তায় অর্জিত পরিবর্তনগুলো আইনে রূপ নিতে পারে না। তাই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন—সড়ক আন্দোলন, প্রাণঘাতী প্রতিবাদ, ঘেরাও, হরতাল কিংবা অবরোধই বিপ্লবের সহজ অংশ। প্রকৃত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরীক্ষা শুরু হয় তখনই, যখন মানুষ যে আদর্শ ও উদ্দেশ্যে রক্ত ঝরিয়েছে, তা আইনে রূপ দেওয়ার সময় আসে।

 

প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু সেই নয় মাসের সংগ্রাম এবং পাকিস্তানি শাসনামলের দীর্ঘ বঞ্চনা—যে আদর্শ ও স্বপ্নের আগুনে জ্বলছিল, সংবিধান রচনার কুয়াশায় তা অনেকটাই হারিয়ে যায়।

 

‘১৯৭১-এর ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন রাষ্ট্র গঠনের তাড়নায় আমরা ভুলে গিয়েছিলাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি—আমরা কেমন দেশ গড়তে চাই, আমাদের জাতীয় পরিচয় কী হবে? সেই সময়ের নেতারা, ট্র্যাজেডির ভারে ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত, প্রয়োজনীয় দূরদৃষ্টি প্রদর্শন করতে পারেননি। এর ফল আজও আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের বারবার ব্যর্থ করেছে। আমরা একের পর এক মূল ধারা বিকৃত করেছি, তাড়াহুড়ো করে আইন যোগ-বিয়োগ করে তা সাময়িকভাবে টিকিয়ে রেখেছি। কিছুদিনের জন্য মনে হয়েছিল—এই ভাঙাচোরা কাঠামো হয়তো চলবে। কিন্তু না, যখন সেই শক্তিমানরা পতিত হলেন, গোটা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লো। জনগণের ক্ষোভে ভেসে গেলো বহু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া রাজনৈতিক দলও, কারণ ভিত্তিটাই ছিল দুর্বল।

 

শফিকুল আলম আরও বলেন, আইন প্রণয়ন ও সংবিধান সংস্কারের কাজ কেবল ক্ষমতার খেলা নয়—এটা সেই নেতাদের কাজ, যারা সময়ের সীমা পেরিয়ে ভবিষ্যৎকে দেখতে পারেন, যারা জানেন আইনের প্রতিটি শব্দের গুরুত্ব কত গভীর। দুই দশকেরও বেশি আগে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে আমরা একযোগে কঠোর আইন পাস করেছিলাম। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে, সেই আইনের অপ্রত্যাশিত পরিণতিতে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক গ্রামেই এখন প্রায় সব মামলাই এই আইনের অধীনে দায়ের হয়, যার সঙ্গে মূল উদ্দেশ্যের সামান্যও সম্পর্ক নেই।

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, এবারের ‘জুলাই চার্টার’ সেই রাজনৈতিক পরিপক্বতার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এটি আমাদের শিখিয়েছে—শব্দেরও সীমা আছে, কেবল রাস্তায় স্লোগান নয়, আইনের ভাষাই সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকতে হবে। যেমনভাবে আমেরিকার পূর্ববর্তী নেতারা প্রায় আড়াই শতাব্দী আগে তাদের সংবিধান ও অধিকার সনদ নিয়ে গভীর বিতর্ক করেছিলেন।

 

তিনি বলেন, জুলাই চার্টারের বৈপ্লবিক দিকটি এখানে রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান দাবি করছে না। বরং এটি দীর্ঘ আলোচনা, মতবিনিময় ও ঐকমত্যের ফসল। ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকার যখন এটি বাস্তবায়নে এগোবে, তখনো হয়তো এটি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে। তবু এটি ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে—যে অধ্যায়ে আমরা গর্বভরে বলতে পারবো, একসময় আমাদের নেতারা একসঙ্গে বসেছিলেন, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন জাতির দীর্ঘদিনের সংকট সমাধানের।

 

শফিকুল আলম বলেন, তাদের পূর্ণ সফলতা না এলেও এটি ব্যর্থতা নয়। বরং জুলাই চার্টারের শক্তি এখানেই—এটি আমাদের নতুন পথ দেখায়, আমাদের আহ্বান জানায় বারবার আলোচনার টেবিলে ফিরে যেতে, পরস্পরের মত শুনতে, সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখতে—যতক্ষণ না আমরা নিশ্চিত হচ্ছি, এবার আমাদের তৈরি করা শব্দগুলো আর আমাদের ব্যর্থ করবে না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com