হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট সাধারণ বর্জ্য থেকে চিকিৎসাবর্জ্য পৃথক করে সিটি করপোরেশন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
আজ (৩০ নভেম্বর) দুপুরে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থান ও মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র শেখ তাপস বলেন, চিকিৎসাবর্জ্য ধ্বংসে আমাদের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে- এখন পর্যন্ত হাসপাতালগুলো যথানিয়মে সাধারণ বর্জ্য থেকে চিকিৎসাবর্জ্য পৃথক করছে না। এটা স্ব স্ব হাসপাতাল, ক্লিনিককে পৃথক করতে হবে। কিন্তু তারা সাধারণ বর্জের সঙ্গেই চিকিৎসাবর্জ্য মিলিয়ে এগুলো ফেলে দিচ্ছি বা দিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং সব হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইনস্টিটিউটসহ চিকিৎসার কাজে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকেই সাধারণ বর্জ্য থেকে চিকিৎসাবর্জ্য পৃথকীকরণ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে চিকিৎসাবর্জ্য সংগ্রহের জন্য আমরা নিবন্ধন দেবো, তাদের কাছে এটা হস্তান্তর করতে হবে। তারা সরাসরি আমাদের মাতুয়াইল ভাগাড়ে ইনসিনারেশন প্ল্যান্টে নিয়ে এলে আমরা পরিপূর্ণভাবেই চিকিৎসাবর্জ্য থেকে ঢাকাবাসীকে মুক্ত করতে পারবো।
চিকিৎসাবর্জ্য সংগ্রহে অঞ্চলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চিকিৎসাবর্জ্য সংগ্রহ ও ধ্বংস করার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে একটি ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। ২০০৬ সালে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। পরে সেই চুক্তির মেয়াদও বাড়ানো হয়নি। আমরা কিন্তু আমাদের কেন্দ্রীয় মাতুয়াইল ভাগাড়ে জায়গা দিয়েছি। সেখানে একটি ইনসিনারেশন, অটোক্লেভ করা হয়েছে। যাতে করে চিকিৎসাবর্জ্য আলাদাভাবে নেওয়া যায় এবং যেসব বর্জ্য ধ্বংসযোগ্য বা ধ্বংস করা অত্যাবশ্যক সেগুলো ধ্বংস করা যায়। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও করা হয়। সেই নীতিমালা অবলম্বন করে আমরা এখন প্রতিটি অঞ্চলে আলাদা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করছি। যারা নীতিমালার আলোকে সবকিছু পরিপালন করে সুষ্ঠুভাবে এগুলো সংরক্ষণ করবে এবং আমাদের মাতুয়াইল ভাগাড়ে নিয়ে সেগুলো ধ্বংস করবে।
পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর কল্যাণে সব উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে- উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র শেখ তাপস বলেন, আজ আমরা এখানে একটি কবরস্থান ও মসজিদের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করলাম। এই কবরস্থানের জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল অবস্থায় ছিল। জমি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা ছিল। আমরা পুরোটা দখলমুক্ত করেছি। পরিপূর্ণ জায়গা নিয়ে আমরা একটি সুন্দর কবরস্থান করছি। তার সঙ্গে কবরস্থানের জন্য সার্বিক যে বিষয়গুলো থাকে- একটি মসজিদ, গোসলখানা নির্মাণ, জানাজা যাতে পড়াতে পারে- সেজন্য সব অবকাঠামো নিয়ে ওই এলাকার জনগণসহ ঢাকাবাসীর জন্য আমরা আরেকটি নতুন কবরস্থান এবং তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নের শুভসূচনা আমরা করতে পারছি। ঢাকাবাসীর কবরের জন্য যে চাহিদা রয়েছে, এই এলাকায় সেই চাহিদা মেটাতে পারবো বলে আমরা মনে করি।
আইন অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠান চিকিৎসাবর্জ্য উৎপাদন করে তাদের উৎসেই তা আলাদা করার বিধান আছে উল্লেখ করে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ আইনেই এই বিধানটি সুস্পষ্ট বলা আছে। আসলে অতীতে কিন্তু এটা নিয়ে আমরা কেউ ভাবিনি। এখন আমরা প্রতিটি বর্জ্য এবং বর্জ্যের উৎসস্থল কোথায় সেটা কিন্তু আমরা চিহ্নিত করছি। আমরা যেটা বলি, এট সোর্স বা উৎসে যদি এটা পৃথক না করা হয় তাহলে সিটি করপোরেশনের খুব একটা বেশি কিছু করার নেই। যেমন আমাদের এলাকায় মুগদা হাসপাতাল আছে। সেখানে আমরা একটা প্রটোকল চালু করেছি। তারা এটা কীভাবে ডিসপোজাল করবে সেজন্য সেখানে আমাদের একটা কমিটিও আছে। ঢাকা শহর ছাড়াও বাংলাদেশের আরও বিভাগে চিকিৎসালয় আছে। সেখানেও নানা ধরনের চিকিৎসাবর্জ্য উৎপাদিত হয়। সুতরাং এটা আমাদের একটি জাতীয় কনসার্ন।
কবরস্থান ও মসজিদের উন্নয়ন কাজের ভিত্তিস্থাপন শেষে মেয়র শেখ তাপস কবরস্থান প্রাঙ্গণে একটি কৃষ্ণচূড়া ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী একটি রাধাচূড়া গাছের চারা রোপণ করেন।
এর আগে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস টিকাটুলি জামে মসজিদ পুনর্নির্মাণ, বাংলাদেশ মাঠভবন ও ধানমন্ডি নগর সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং এলিফ্যান্ট রোডে নবনির্মিত গণশৌচাগার উদ্বোধন করেন।