হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে পানির জন্য হাহাকার ! 

নাদিম আহমেদ অনিক-  হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলিয় উপজেলা আজমিরীগঞ্জ। এক দশক আগেও সারা বছরই এই উপজেলার সাথে সারাদেশর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। অথচ পানির ওপরে কচুরিপানার মতো ভেসে থাকা উপজেলাতেই এখন তীব্র পানির সংকট। এই উপজেলাতে ধানী জমিতে পানির চাহিদা এখনও নদী-বিল থেকে মেটানো হলেও খাবার পানির জন্য প্রতিটি গ্রামে চলছে হাহাকার।
হাওরের এই চিত্রই বলে দেয় জেলার অন্য সব উপজেলায় পানির কতটা সংকট।
বিশেষ করে উজান এলাকায় এই সংকটের তীব্রতা আরও বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- জেলা সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর, নবীগঞ্জ, বাহুবল উপজেলার নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। এছাড়া পানি উঠছে না গভীর নলকুপেও। এমনকি কোন কোন প্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় পাম্পের
মাধ্যমেও পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমীতি থেকে জানা যায়, নদী ও বিল শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো জমিতে সেচের জন্য তোলা হচ্ছে ভুগর্ভস্থ পানি। জেলার ৯টি উপজেলায় ৩ হাজার ৩৬৮টি সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। যার মধ্যেই ৩ হাজারের অধিক প্রকল্পে পানি উঠছে মাটির নিচ থেকে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিভিন্ন হাওরে বসানো শক্তিশালী সেচ প্রকল্পগুলো ভ‚গর্ভস্থ পানি টেনে নিচ্ছে। যে কারণে গ্রামের নলকুপগুলোতে পানি ওঠছে না।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ওলিপুর এলাকার ষাটোর্ধ আতাউর মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোন নদী না থাকায় জমিতে সেচ নিয়া সমস্যা হয়। ১০ বছর আগে শৈলজুড়া খাল খনন করে সুতাং নদী থেকে পানি সেচ দেয়া হতো। কিন্তু এখন সেই খাল দিয়ে কোম্পানির ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে আমরা সেচ দিতে পারি না। যে কারণে গ্রামের চারপাশে অনেকগুলো সেচপ্রকল্প বসানো হয়ে। এগুলো মাটির নিচ থেকে পানি টেনে নেয়ায় গ্রামের টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠে না।
বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের প্রবিন্দ্র সরকার বলেন, ‘গ্রামের কোন টিউবওয়েলেই পানি ওঠে না। মাঠের মধ্যে একটা টিউবওয়েল আছে সেখানে কিছুটা পানি ওঠে।’
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফ নগর গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কখনো পানির অভাব পড়ব চিন্তাও করিনি। অথচ এখন টিউবওয়েলে পানি উঠে না। নদীও শুকিয়ে গেছে। কয়েক বছর পর হয়তো আর পানিই মিলত না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘চারপাশের নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মাটির ওপরে পানি না থাকার কারণে মাটি নিচে পানি ধরে রাখতে পারছে না। যে কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া নদী-খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় জমিতে সেচের জন্য ভ‚গর্ভ থেকে পানি তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে মটর বসিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তোলা হচ্ছে। যে কারণে পানির এই সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিপর্যয় কয়েক বছর পর আরও ভয়াবহ হবে।#
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইন্টারনেট ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপে ছবি-ভিডিও পাঠাবেন যেভাবে

» তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে করণীয়

» লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের ভেন্যু চূড়ান্ত

» তীব্র গরমে পুড়ছে ফিলিপাইন, নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে কষ্ট

» ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক মাদরাসা ছাত্র নিহত

» আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

» জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে ছুরিধারী যুবক নিহত

» যে কারণে কাজলের সঙ্গে কথা বলতেন না রানি!

» বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ২৮৮ বিজিপি-সেনাকে হস্তান্তর

» আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকা-মার্কেট বন্ধ

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে পানির জন্য হাহাকার ! 

নাদিম আহমেদ অনিক-  হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলিয় উপজেলা আজমিরীগঞ্জ। এক দশক আগেও সারা বছরই এই উপজেলার সাথে সারাদেশর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। অথচ পানির ওপরে কচুরিপানার মতো ভেসে থাকা উপজেলাতেই এখন তীব্র পানির সংকট। এই উপজেলাতে ধানী জমিতে পানির চাহিদা এখনও নদী-বিল থেকে মেটানো হলেও খাবার পানির জন্য প্রতিটি গ্রামে চলছে হাহাকার।
হাওরের এই চিত্রই বলে দেয় জেলার অন্য সব উপজেলায় পানির কতটা সংকট।
বিশেষ করে উজান এলাকায় এই সংকটের তীব্রতা আরও বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- জেলা সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর, নবীগঞ্জ, বাহুবল উপজেলার নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। এছাড়া পানি উঠছে না গভীর নলকুপেও। এমনকি কোন কোন প্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় পাম্পের
মাধ্যমেও পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমীতি থেকে জানা যায়, নদী ও বিল শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো জমিতে সেচের জন্য তোলা হচ্ছে ভুগর্ভস্থ পানি। জেলার ৯টি উপজেলায় ৩ হাজার ৩৬৮টি সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। যার মধ্যেই ৩ হাজারের অধিক প্রকল্পে পানি উঠছে মাটির নিচ থেকে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিভিন্ন হাওরে বসানো শক্তিশালী সেচ প্রকল্পগুলো ভ‚গর্ভস্থ পানি টেনে নিচ্ছে। যে কারণে গ্রামের নলকুপগুলোতে পানি ওঠছে না।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ওলিপুর এলাকার ষাটোর্ধ আতাউর মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোন নদী না থাকায় জমিতে সেচ নিয়া সমস্যা হয়। ১০ বছর আগে শৈলজুড়া খাল খনন করে সুতাং নদী থেকে পানি সেচ দেয়া হতো। কিন্তু এখন সেই খাল দিয়ে কোম্পানির ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে আমরা সেচ দিতে পারি না। যে কারণে গ্রামের চারপাশে অনেকগুলো সেচপ্রকল্প বসানো হয়ে। এগুলো মাটির নিচ থেকে পানি টেনে নেয়ায় গ্রামের টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠে না।
বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের প্রবিন্দ্র সরকার বলেন, ‘গ্রামের কোন টিউবওয়েলেই পানি ওঠে না। মাঠের মধ্যে একটা টিউবওয়েল আছে সেখানে কিছুটা পানি ওঠে।’
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফ নগর গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কখনো পানির অভাব পড়ব চিন্তাও করিনি। অথচ এখন টিউবওয়েলে পানি উঠে না। নদীও শুকিয়ে গেছে। কয়েক বছর পর হয়তো আর পানিই মিলত না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘চারপাশের নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। মাটির ওপরে পানি না থাকার কারণে মাটি নিচে পানি ধরে রাখতে পারছে না। যে কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া নদী-খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় জমিতে সেচের জন্য ভ‚গর্ভ থেকে পানি তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে মটর বসিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তোলা হচ্ছে। যে কারণে পানির এই সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিপর্যয় কয়েক বছর পর আরও ভয়াবহ হবে।#
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com