ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো স্পেনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। সোমবার (২ মে) আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটিকে উদযাপন করেন প্রবাসী মুসলমানেরা। করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর স্পেনের রাজধানী শহর মাদ্রিদে খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ আদায়ের অনুমতি ছিলো না।
পরিস্থিতি স্বস্তিজনক পর্যায়ে থাকায় এবারের ঈদে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা লাভাপিয়েস সংলগ্ন ক্যাসিনো পার্কের খোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত দুটি জামাতেই ছিলো প্রবাসী মুসলমান বাংলাদেশিদের উপচেপড়া উপস্থিতি।
এছাড়াও পর্যটন নগরী বার্সেলোনা, কানারিয়াস দ্বীপপুঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে ঈদের দিনকে আনন্দময় করার চেষ্টা করেন। মুখে মাস্ক কিংবা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি বিধিনিষেধ না থাকায় দুইবছর পর ঈদে চিরায়ত আনন্দের অংশ হিসেবে নামাজ শেষে কোলাকুলির রেওয়াজ ছিলো চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘদিন পর মুসল্লিরা ঈদের নামাজ শেষে তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফেরেন।
মাদ্রিদ: স্পেনের সবচেয়ে বৃহৎ মসজিদ ‘সেন্ত্র কুলতুরাল ইসলামিকো দে মাদ্রিদ’ (‘এমে তেরেন্তা’) মসজিদে দেশটির বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল ৮টায়। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা লাভাপিয়েস সংলগ্ন ক্যাসিনো পার্কের খোলা ময়দানে বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত বায়তুল মোকাররম মসজিদ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ঈদের নামাজের ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ৮টা ও ৯টায় অনুষ্ঠিত জামাত দুইটিতে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের অভিবাসী মুসলমানরাও অংশগ্রহণ করেন। প্রথম জামাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা নামাজ আদায় করেন। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বস্তিজনক পর্যায়ে থাকায় দীর্ঘ দুই বছর পর খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ আদায়ের অনুমতি পাওয়ায় মাদ্রিদ ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শহর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জামাত দুইটিতে অংশগ্রহণ করেন।
প্রথম জামাতে উপস্থিত ছিলেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ, মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান আব্দুর রউফ মন্ডলসহ স্থানীয় বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। নামাজ আদায় শেষে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ স্পেনে প্রবাসী সকল বাংলাদেশিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। কুশল বিনিময় করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা লাভাপিয়েস সংলগ্ন ক্যাসিনো পার্কের খোলা ময়দানে প্রবাসীদের সঙ্গে নামাজ পড়েছি। সেখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঈদের জামাতে যোগ দিতে পেরে আনন্দিত।
বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার বলেন, দুই বছর পুনরায় খোলা আকাশে ঈদের জামাতে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তথা স্পেন সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করায় অংশগ্রহণকারী সকল মুসল্লিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
বার্সেলোনা: পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর বাংলাদেশি পরিচালনাধীন মসজিদগুলোতেও ঈদ উল ফিতরের নামাজের বেশ কয়েকটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসবমুখোর পরিবেশে প্রবাসী মুসলমান বাংলাদেশিরা নিজেদের মধ্যেই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
স্থানীয় শাহ জালাল জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে মসজিদের অভ্যন্তরে সকাল ৭টা ও ৮টা ৪৫ মিনিটে ও মসজিদের সামনে খোলা ময়দানে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ঈদের মোট ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়াও বার্সেলোনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে সকাল ৭টা ৩০ ও ১০টায় মসজিদে ও প্লাসা মাকবায় খোলা ময়দানে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ঈদের ৩টি জামাত, লতিফিয়া ফুলতলী জামে মসজিদে সকাল ৭টা ১৫, ৮টা ও ৮টা ৩০ মিনিটে ৩টি জামাত ও প্লাজা তেরেনসির খোলা ময়দানে সকাল ৮টা ও ৮টা ৪৫ মিনিটে ২টি জামাতসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলিম উম্মার আনন্দ উৎসব ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতগুলোতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশের অভিবাসীরা নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে খুতবায় বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য শান্তি কামনা করা হয়। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম