সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) নির্বাচন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ।
বুধবার (৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্যের ব্যানারে সুপ্রিম কোর্ট বারের দ্বিতীয় তলায় আয়োজিত তলবি সভায় সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্যের ব্যানারে আমরা ‘তলবি সাধারণ সভা’ করেছি। সভায় ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠেয় সমিতির নির্বাচন আপাতত স্থগিতসহ তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
সভার সভাপতি শাহ আহমেদ বাদল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, সমিতির সংবিধানের ১৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাধারণ সভা হয়েছে। নির্বাচন স্থগিত করা ছাড়া সভায় গৃহীত অপর দুটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে, নির্বাচন উপকমিটি বাতিল ও দ্রুত নির্বাচনের জন্য ৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা।
এসব সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মসিউজ্জামান (নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক) বরাবর চিঠিটি পাঠানো হয়।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুবের সঞ্চালনায় তলবী সভায় সংবিধান প্রণেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম. আমির-উল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ্জামান, অ্যাডভোকেট এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা ও ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ কয়েকশ আইনজীবী অংশ নেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী সম্মতি জানিয়েছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির (২০২২-২৩) দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ ও ১৬ মার্চ। এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মসিউজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে প্রার্থী পরিচিতি সভাও অনুষ্ঠিত হবে। তলবি সভাকে ঘিরে আইনজীবী সদস্যদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তবে এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি কে—এটিসহ তিনটি প্রশ্ন তুলে সমিতির চারজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বর্তমান সম্পাদকের মাধ্যমে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি বরাবর চিঠি দেন। সমিতির সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ এই চার আইনজীবী হলেন ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও মঈনুল হোসেন।
চিঠিতে বলা হয়, সমিতির সভাপতি (২০২১-২২ মেয়াদে নির্বাচিত) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু গত বছরের ১৪ এপ্রিল মারা যান, যিনি গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ অবস্থায় সমিতির সভাপতি কে? অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব ভোটার তালিকা সংশোধনের পাশাপাশি বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বানের মাধ্যমে অ্যাডহক কমিটি গঠনের কথাও বলা হয় চিঠিতে।
এরপর বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে সমিতির দক্ষিণ হলে তলবি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর উল ইসলাম, সুব্রত চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, তানিয়া আমীর, ইউনুছ আলী আকন্দ, শাহ আহমেদ বাদল, সৈয়দ মামুন মাহবুব, এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ প্রমুখ অংশ নেন।
এর আগে ২০২১-২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। নির্বাচনে বিজয় হলেও দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি করোনা আক্রান্ত হন। এরপর গত ১৪ এপ্রিল মারা যান। তারপরই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপরই নতুন করে সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গতবারের নির্বাচনে ১৪ পদের মধ্যে সভাপতিসহ ৮টিতে আওয়ামী আইনজীবীদের সাদা প্যানেল এবং সম্পাদকসহ ছয়টি পদে বিএনপিপন্থী নীল প্যানেল জয়লাভ করে।,