সন্তান জন্মের পর করণীয়

বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে কত-শত নবজাতক। বাবা-মা নবজাতককে নিয়ে বুনছেন ভবিষ্যতের রঙিন সব স্বপ্ন। প্রত্যেক মুসলিম অভিভাবকের উচিত সন্তান জন্মের পর ইসলামী নির্দেশনা অনুসরণ করা। 

 

নবীজি ( সা.) যেভাবে নবজাতককে স্বাগত জানিয়েছেন নিজের সন্তানের ক্ষেত্রেও তা পালন করা। তবে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামতের (সন্তান) যথাযথ শুকরিয়া আদায় করা হবে। সন্তান ভূমিষ্ঠের পর হাদিসে বর্ণিত নির্দিষ্ট সুন্নাত ও আদবগুলো তুলে ধরা হলো। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সন্তান জন্মের পর বাবা-মায়ের করণীয় কি সে সম্পর্কে-

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই প্রথমে নবজাতককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ডান কানে আজান ও বাঁ কানে ইকামত দেওয়া। রাসুল (সা.) হজরত হাসান (রা.)-এর কানে আজান দিয়েছিলেন। (তিরমিজি ১/২৭৮)

 

হযরত হুসাইন ( রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল ( সা.) বলেছেন, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়। -(শুয়াবুল ঈমান, হাদীস, ৮৬১৯, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস, ৬৭৮০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস, ৭৯৮৫)

 

আজান শেষ হলেই নবজাতককে কোলে তুলে নেয়া। (সহিহ বুখারি, ২/৮২২)

 

তাহনিক করানো, অর্থাৎ নবজাতকের মুখে খেজুর চিবিয়ে নরম করে দেওয়া। খেজুর না থাকলে মিষ্টি দ্রব্যের মধ্যে মধু দেওয়া উত্তম। (সহিহ বুখারি, ২/৮২১)

 

হজরত আবু মুসা আশআরি ( রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার একটি ছেলে জন্ম নিল, আমি তাকে রাসূল ( সা.)- এর কাছে নিয়ে এলাম, তখন রাসূল ( সা.) তার নাম রাখেন ইবরাহীম এবং তাকে তাহনীক করান খেজুর দিয়ে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস, ৫৭৩৯, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস, -২৩৯৪৮)

 

নবজাতকের জন্য দোয়া করা এবং বরকত কামনা করা। (সহিহ বুখারি, হা. ২৮২১)

 

জন্মের সপ্তম দিন নবজাতকের উত্তম ও সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা। (তিরমিজি ২/১১০)

 

হজরত জাসামী ( রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ( সা.) বলেছেন, তোমরা শিশুদের নাম নবী রাসূলদের নামে রাখো। সুতরাং এমন নাম নির্বাচন করা উচিত যা অর্থবহ এবং সত্যতার ওপর যার ভিত্তি রয়েছে। – (মুসনাদে ইমাম আহমাদ, ৫৩৩)

 

জন্মের সপ্তম দিনে মাথার চুল, হাত-পায়ের নখ ইত্যাদি পরিষ্কার করা। (তিরমিজি)

রাসূলুল্লাহ ( সা.) ইরশাদ করেছেন, সন্তান আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করবে, নাম রাখবে ও মাথা মুণ্ডন করে দিবে। -(জামে তিরমিজি, হাদীস ১৫২২)

 

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ( সা.) হাসান ( রা.) -এর আকীকা দিয়ে ফাতেমা ( রা.) -কে বললেন, তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সদকা করে দাও। -(জামে তিরমিজি, হাদীস ১৫১৯)

 

মাথা মুণ্ডানোর পর জাফরান দিয়ে তার মাথা ধৌত করা। (আবু দাউদ, ২/৩৯৩)

 

সন্তানের পুরো মাথার চুলের সমপরিমাণ ওজনের রৌপ্য সদকা করা। (জাদুল মাআদ, ২/৪)

হজরত জাফর বিন মুহাম্মদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বলেছেন, রাসূল ( সা.) হজরত হাসান, হুসাইন, জয়নব ও উম্মে কুলসুমের চুল ওজন করে সে পরিমাণ রোপা সদকা করে দিয়েছেন। (মুয়াত্তা মালিক, ১৮৩৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস,৮২৬২)

 

জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে অথবা একুশতম দিনে আকিকা করা। (বাজলুল মাজহুদ, ৪/৮৬)

 

হজরত সামুরা বিন জুন্দুর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক সন্তান রাহানস্বরূপ (বন্ধক) ঐ আকিকার পরিবর্তে, যে আকিকা ঐ ছেলের পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবাই করা হয় এবং তার নাম রাখা হয়, তার মাথা মুণ্ডন করা হয়।’ (আবু দাউদ : ২/৩৯২)

 

ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকিকা করা উত্তম। (আবু দাউদ, ২/৩৯২)

উম্মে কুরযিল কাবিয়্যাহ রা. বলেন, আমি রাসূল সা.- কে বলতে শুনেছি যে, ছেলের জন্য দুইটি একইমানের বকরী ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী (আকিকা দিবে)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ২৮৩৬, সুনানে তিরমিজি, হাদীস, ১৫১৩)

সূএ: ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চিনির উৎপাদন বৃদ্ধি সময়ের দাবি- ধর্মমন্ত্রী

» কৃষি জমি রক্ষায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে – ভূমিমন্ত্রী

» ইসলামপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন

» বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা

» জয়পুরহাটে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শন -২০২৪

» বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়ল, কমল খোলা তেলের

» নানার বাড়িতে শিশুকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে ১জন আটক

» নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ইসি আলমগীর

» অপপ্রচার রোধে ভারতের সহযোগিতা চাইলো বাংলাদেশ

» উপজেলা নির্বাচনে নেতাদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা আ.লীগের : কাদের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সন্তান জন্মের পর করণীয়

বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে কত-শত নবজাতক। বাবা-মা নবজাতককে নিয়ে বুনছেন ভবিষ্যতের রঙিন সব স্বপ্ন। প্রত্যেক মুসলিম অভিভাবকের উচিত সন্তান জন্মের পর ইসলামী নির্দেশনা অনুসরণ করা। 

 

নবীজি ( সা.) যেভাবে নবজাতককে স্বাগত জানিয়েছেন নিজের সন্তানের ক্ষেত্রেও তা পালন করা। তবে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামতের (সন্তান) যথাযথ শুকরিয়া আদায় করা হবে। সন্তান ভূমিষ্ঠের পর হাদিসে বর্ণিত নির্দিষ্ট সুন্নাত ও আদবগুলো তুলে ধরা হলো। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সন্তান জন্মের পর বাবা-মায়ের করণীয় কি সে সম্পর্কে-

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই প্রথমে নবজাতককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ডান কানে আজান ও বাঁ কানে ইকামত দেওয়া। রাসুল (সা.) হজরত হাসান (রা.)-এর কানে আজান দিয়েছিলেন। (তিরমিজি ১/২৭৮)

 

হযরত হুসাইন ( রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল ( সা.) বলেছেন, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়। -(শুয়াবুল ঈমান, হাদীস, ৮৬১৯, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস, ৬৭৮০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস, ৭৯৮৫)

 

আজান শেষ হলেই নবজাতককে কোলে তুলে নেয়া। (সহিহ বুখারি, ২/৮২২)

 

তাহনিক করানো, অর্থাৎ নবজাতকের মুখে খেজুর চিবিয়ে নরম করে দেওয়া। খেজুর না থাকলে মিষ্টি দ্রব্যের মধ্যে মধু দেওয়া উত্তম। (সহিহ বুখারি, ২/৮২১)

 

হজরত আবু মুসা আশআরি ( রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার একটি ছেলে জন্ম নিল, আমি তাকে রাসূল ( সা.)- এর কাছে নিয়ে এলাম, তখন রাসূল ( সা.) তার নাম রাখেন ইবরাহীম এবং তাকে তাহনীক করান খেজুর দিয়ে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস, ৫৭৩৯, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস, -২৩৯৪৮)

 

নবজাতকের জন্য দোয়া করা এবং বরকত কামনা করা। (সহিহ বুখারি, হা. ২৮২১)

 

জন্মের সপ্তম দিন নবজাতকের উত্তম ও সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা। (তিরমিজি ২/১১০)

 

হজরত জাসামী ( রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ( সা.) বলেছেন, তোমরা শিশুদের নাম নবী রাসূলদের নামে রাখো। সুতরাং এমন নাম নির্বাচন করা উচিত যা অর্থবহ এবং সত্যতার ওপর যার ভিত্তি রয়েছে। – (মুসনাদে ইমাম আহমাদ, ৫৩৩)

 

জন্মের সপ্তম দিনে মাথার চুল, হাত-পায়ের নখ ইত্যাদি পরিষ্কার করা। (তিরমিজি)

রাসূলুল্লাহ ( সা.) ইরশাদ করেছেন, সন্তান আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করবে, নাম রাখবে ও মাথা মুণ্ডন করে দিবে। -(জামে তিরমিজি, হাদীস ১৫২২)

 

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ( সা.) হাসান ( রা.) -এর আকীকা দিয়ে ফাতেমা ( রা.) -কে বললেন, তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সদকা করে দাও। -(জামে তিরমিজি, হাদীস ১৫১৯)

 

মাথা মুণ্ডানোর পর জাফরান দিয়ে তার মাথা ধৌত করা। (আবু দাউদ, ২/৩৯৩)

 

সন্তানের পুরো মাথার চুলের সমপরিমাণ ওজনের রৌপ্য সদকা করা। (জাদুল মাআদ, ২/৪)

হজরত জাফর বিন মুহাম্মদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বলেছেন, রাসূল ( সা.) হজরত হাসান, হুসাইন, জয়নব ও উম্মে কুলসুমের চুল ওজন করে সে পরিমাণ রোপা সদকা করে দিয়েছেন। (মুয়াত্তা মালিক, ১৮৩৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস,৮২৬২)

 

জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে অথবা একুশতম দিনে আকিকা করা। (বাজলুল মাজহুদ, ৪/৮৬)

 

হজরত সামুরা বিন জুন্দুর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক সন্তান রাহানস্বরূপ (বন্ধক) ঐ আকিকার পরিবর্তে, যে আকিকা ঐ ছেলের পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবাই করা হয় এবং তার নাম রাখা হয়, তার মাথা মুণ্ডন করা হয়।’ (আবু দাউদ : ২/৩৯২)

 

ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকিকা করা উত্তম। (আবু দাউদ, ২/৩৯২)

উম্মে কুরযিল কাবিয়্যাহ রা. বলেন, আমি রাসূল সা.- কে বলতে শুনেছি যে, ছেলের জন্য দুইটি একইমানের বকরী ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী (আকিকা দিবে)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ২৮৩৬, সুনানে তিরমিজি, হাদীস, ১৫১৩)

সূএ: ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com