সক্রিয় বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র বাঁচে না

নূরে আলম সিদ্দিকী: ষাটের দশকের গোড়াতেই আমি লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় আসি। যেহেতু ঝিনাইদহ কেশবচন্দ্র কলেজটির প্রতিষ্ঠা ও প্রতিস্থাপনের সঙ্গে আমার পিতা মরহুম নূর নবী সিদ্দিকী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাই তখনকার ম্যাট্রিক পাসের সঙ্গে সঙ্গে আমার মায়ের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি ঢাকায় আসতে পারিনি। ইন্টারমিডিয়েট পড়ার পর্বটি আমাকে ঝিনাইদহের কে সি কলেজে সম্পন্ন করতে হয়েছিল। তখনো সারা বাংলাদেশে একটিই শিক্ষাবোর্ড। সেই ঢাকা বোর্ডের অধীনে ঝিনাইদহ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৬২ সালে ঢাকায় পড়তে এসেছিলাম। আমাদের কে সি কলেজের অধ্যক্ষ সরকার প্রেষণে প্রদান করত। দর্শনের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাককে সরকার সে সময় কে সি কলেজের অধ্যক্ষ করে পাঠায়। তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ছিল। তিনি এবং তাঁর কলেজের সব অধ্যাপক এমনকি ঝিনাইদহ মডেল হাইস্কুলের (ঝিনাইদহে তখনকার একমাত্র উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) প্রধান শিক্ষক বাবু মুরারি মোহন ঘোষাল আমার পরিবারের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে আমাকে লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় পাঠান। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোসিওলজির অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়ে যাই।

 

ঝিনাইদহে থাকতেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে। যেহেতু আমার শ্রদ্ধেয় পিতাসহ পরিবারের সবাই রাজনৈতিক সত্তায় উজ্জীবিত ছিলেন, তাই আমার উদ্গত, উদ্যত, উদ্ধত যৌবনের সেই প্রারম্ভিক সূচনায়ও রাজনীতির আবিরমাখা একটি স্বপ্নিল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই ঢাকায় আমার পথচলা শুরু হয়। সেই বাষট্টিতে আমি যখন ঢাকায় আসি, তখন ঢাকা মহানগরীতে শিক্ষা আন্দোলনের প্রচ- উত্তাপ। ছাত্র রাজনীতির অগ্রভাগে তখনো ছাত্রলীগ ছিল। তখন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি। ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক জনাব এনায়েতুর রহমান তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা ছাত্রনেতা। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ফজলুল হক মণি, কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শহীদুল হক মুন্সী; পরবর্তীতে সৈয়দ মযহারুল হক বাকী, আমিনুল হক বাদশাসহ আরও অসংখ্য প্রথিতযশা ছাত্রনেতার গর্বিত প্রতিভাপ্রদীপ্ত আলোকোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের সমাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্বলজ্বল করে উঠত।

সেই প্রজ্বলিত ছাত্ররাজনীতির আলোকে উদ্ভাসিত হয়েই ঢাকার শিক্ষাজীবন শুরু হওয়ার কারণে আমি নিজের অজান্তেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। প্রচন্ড ডাকসাইটে ছাত্রনেতা রাশভারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর তখনকার আবাসন আগামসি লেনের নিম ভিলায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম দিনই তাঁর ব্যক্তিত্বে আমি বিমুগ্ধ হই এবং পার্শ্ববর্তী অন্য ছাত্রলীগ নেতৃত্বের নেতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সুশীল আচরণ আমাকে এতটাই বিমুগ্ধ করে যে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে একটা দৃঢ় প্রত্যয় ও প্রতীতি আমার মনের মধ্যে দানা বাঁধে। সেই প্রতীতি ও প্রত্যয়ের কারণে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সূচনার অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই এবং স্টুডেন্ট ফ্রন্টের ব্যানারে ছাত্রলীগের নির্দেশ মেনে চলতে থাকি। কিন্তু বিধিবাম! ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনের স্রোতধারায় আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকা কলেজ থেকে রাজনৈতিকভাবে অন্য আরও ১০ জন ছাত্রনেতার সঙ্গে আমাকে প্রথমে এক্সপেলড ও পরে তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রীর সহৃদয়তায় ঢাকা কলেজ থেকে শুধু বহিষ্কৃত (ফোর্সড টিসি) হয়ে যখন অসহায়ের মতো ঘুরছিলাম, তখনই জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান আমাকে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি করে নেন। তখনই ছাত্ররাজনীতির দিগন্তবিস্তৃত সিংহদ্বার আমার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। ছাত্রলীগের রাজনীতি তখন স্বায়ত্তশাসনের দাবিতেই উচ্চকিত ছিল। পরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ছয় দফা কর্মসূচি প্রদত্ত হলে তা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ, বিকাশ, ব্যাপ্তি ও সফলতা ঘটায়। যে চেতনা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বর্ণসৈকতে পৌঁছে দেয়।

 

সেদিনের সেই প্রচ- প্রকট উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহাওয়ায় গড়ে ওঠা মন আজকের নীরব, নিথর, নিস্তব্ধ বাংলাদেশ দেখে একটু হতচকিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। আমি একদম দলকানা নই। আমার বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় উন্নয়ন, সার্বিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল- আমার দৃষ্টির বাইরে থাকে না। তবু সংসদ বিরোধী দলের বিতর্কবিবর্জিত অনেকটাই নিষ্প্রভ থাকবে- এটাও হৃদয় সর্বান্তঃকরণে মানতে পারে না। আজকের এ সক্রিয়, সরব ও অর্থবহ বিরোধী দলশূন্য দেশ এত ম্রিয়মাণ কেন? দেশের নির্বাচন, মিছিল ও জনসভার পূর্ণ অধিকার থাকা সত্ত্বেও কেন গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় বাংলাদেশ আর সেই আগের মতো বিস্ফোরিত হয় না- ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে ওঠে না? এ অবস্থার দায়ভার কার কাঁধে তুলে দেওয়া যায়?

 

শেখ হাসিনা তো অনায়াসেই বলতে পারেন, দেশে তো পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে। সভা ও মিছিলের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার দেশে অবারিত রয়েছে। বিরোধী দলের এ ম্রিয়মাণতা অথবা মৌনতা ভঙ্গ করে কি আমি বিরোধী দলের মধ্যে প্রাণস্পন্দন সৃষ্টি করব? বিরোধী দল স্পন্দিত হচ্ছে না- এটা হয় বিএনপির দুর্বলতা নতুবা উন্নয়নের স্রোতধারায় জনগণ আওয়ামী লীগের সপক্ষে চলে এসেছে। যুক্তিটা একেবারেই ছুড়ে ফেলার মতো নয়। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি আজ বিবৃতি ও কার্যালয়ে বসে সংবাদ সম্মেলন এবং তর্জন-গর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের রাজপথে দেখা যায় না। এ ব্যাপারে তাদের শীর্ষ নেতাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা সাফ জবাব দেন- টুঁশব্দটি করলেই শেখ হাসিনার নির্যাতন-নিগ্রহ নেমে আসে।

 

সেই ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবির ছত্রচ্ছায়ায় যখন ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে প্রচ- গণআন্দোলন সৃষ্টি করে সারা বাংলাদেশকে আলোড়িত করে, তখনকার পথও তো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রদানের পর ছাত্রলীগ এটিকে বাংলার মুক্তিসনদ হিসেবে গ্রহণ করে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানকে যেভাবে উচ্চকিত করেছিল- সেটিই ১৯৭০-এর নির্বাচনের বিজয় এবং ’৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্যে বাঙালির চেতনাকে শানিত করে। আন্দোলন তো এক দিনে হয় না। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিস্তীর্ণ রাজনৈতিক পথ অতিক্রম করে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সাফল্যের স্বর্ণসৈকতে পৌঁছাতে হয়। এটিই স্বাধীনতা আন্দোলনের শিক্ষা- বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষার আলোকবর্তিকা আমাদের দিয়েছিলেন।

 

আদালতের শাস্তি মাথায় নিয়ে জেল খাটার আতঙ্কে লন্ডনে অবস্থান করে বাংলার মানুষকে তারেক রহমান রাজপথে নামাতে পারবেন, এটা সম্ভব নয়। সুদূর লন্ডনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তিনি যত নসিহতই করুন না কেন, তাতে মানুষ কর্ণপাত করবে না। আন্দোলন সৃষ্টি করতে হলে বিএনপির নেতৃত্বকে বাংলাদেশে আসতে হবে। নির্যাতন-নিগ্রহকে অকুণ্ঠ চিত্তে বাংলার মাটির ওপর দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু নিজেও তা করেছেন। আমাদেরও করতে শিখিয়েছেন।

 

বিএনপি একটার পর একটা নির্বাচন বর্জন করে চলেছে। অন্যদিকে সফল-সার্থক আন্দোলন গড়ে তুলতেও তারা অপারগ। নির্বাচনেও নেই, আন্দোলন সৃষ্টিতেও কোনো দৃশ্যমান ভূমিকায় তাদের দেখা যাচ্ছে না। তারেক রহমানও তো ধরাছোঁয়ার বাইরে লন্ডনপ্রবাসী। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে মহাকাশে পাঠানো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গতিধারা পর্যবেক্ষণ করা যায় কিন্তু লন্ডনে বসে বাংলাদেশে গণআন্দোলন সৃষ্টি সম্ভব নয়। তারেক রহমান সমস্ত ঝুঁকির বাইরে লন্ডনে বসে থাকবেন আর বাংলাদেশের মানুষ তার নির্দেশে রাজপথে আন্দোলন করবে- এটা বাংলাদেশের নিরিখে অলীক স্বপ্নমাত্র। আন্দোলনেও নেই, নির্বাচনেও নেই, তাহলে আর থাকলটা কী? উত্তরপাড়া থেকে গায়েবিভাবে কেউ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে- এ ভাবনা চেতনাকে যে আবৃত করে রেখেছে তা অনুমান করা যায়। কিন্তু ১২ মন ঘিও হবে না, রাধিকাও নাচবে না।

 

ফলপ্রসূ গণআন্দোলন করতে হলে তাদের গায়ে নির্যাতনের আঁচ লাগাতে হবে। আজকের প্রেক্ষাপটে এটা অসম্ভব বলেই নির্বাচন বর্জন বিএনপির জন্য আত্মঘাতী বলে আমার মনে হয়। আন্দোলন অথবা নির্বাচন- দুটোর একটিতে পূর্ণোদ্যমে আত্মনিয়োগ করতে ব্যর্থ হলে তেল ছাড়া প্রদীপের মতো দলটি আস্তে আস্তে নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। তার চেয়ে প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করাই বিএনপির বেঁচে থাকার একমাত্র পথ। এমনিতেই আওয়ামী লীগের একটি বিরুদ্ধ জনমত রয়েছে। তাকে সংগঠিত করা খুব দুরূহ কাজ নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কোনো অবস্থাতেই আপসকামিতা নয়। পাকিস্তান আমলে সেই ১৯৫৪-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে ১৯৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনই আওয়ামী লীগ বর্জন করেনি। বরং নির্বাচনে হারজিত যা-ই হোক না কেন, সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী ও দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে। ’৭০-এর নির্বাচনে সামরিক ব্যক্তিত্ব ইয়াহিয়া খানের শাসন ও ইএলএফও (ইলেকশন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডিন্যান্স)-এর মধ্যেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ইএলএফও অথবা ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক জয় আটকাতে পারেনি। আর এ বিজয়কে অস্বীকার করতে গিয়েই স্বাধীনতাযুদ্ধের মোকাবিলা করতে হয় পাকিস্তানি সামরিক চক্রকে। ’৭০-এর নির্বাচন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার অধিকার প্রদান করে এবং ইয়াহিয়া খানের সামরিক আঘাতকে প্রত্যাঘাত করে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার আহ্বান জানানোর শক্তিতে উজ্জীবিত করে। বঙ্গবন্ধু সুদক্ষ নাবিকের মতো প্রাপ্য সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই স্বাধীনতার তরণিকে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্র পেরিয়ে সাফল্যের সৈকতে নোঙর করাতে সক্ষম হন। আন্দোলনের দিকনির্দেশনায় ব্যত্যয়-ব্যতিক্রম, ভ্রান্তি ও ভুল হলে স্বাধীনতার আন্দোলনটি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারত। অথবা উদগ্র বিপ্লবী ও ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক চেতনার আশ্রয়ীদের কবলে নিপতিত হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। পরিণাম হতো ভারতবর্ষের চারু মজুমদার, কানু সান্যাল এবং বাংলাদেশের সিরাজ সিকদার ও জাসদের উগ্র বিপ্লবীদের মতো।

 

বিএনপির রাজনীতিতে একটা ভিন্ন ভিন্ন এমনকি বিপরীতধর্মী রাজনৈতিক মতাদর্শের সন্নিবেশ ঘটেছে। তা সত্ত্বেও সঠিক পথ চিনতে ভুল করলে তা তাদেরই শুধু পথভ্রষ্ট করবে না, দেশের গণতান্ত্রিক স্রোতধারাকেও সমূলে বিনষ্ট করবে। কারণ সুষ্ঠু, সবল ও সৃজনশীল বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র বাঁচে না। আর গণতন্ত্র না বাঁচলে সমাজে অস্থিরতাই শুধু বাড়ে না, শাসনতান্ত্রিক সংকটের মুখে দেশ নিপতিত হয়।

 

শুনেছি বেগম খালেদা জিয়া এখন কানে কম শ্রবণ করেন। তাই বলে তাঁর দলও তালকানা হয়ে যাবে- এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আবারও বলি, সক্রিয় সৃজনশীল, সরব ও সচল বিবেকাশ্রিত বিরোধী দল ও তাদের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড গণতন্ত্র বাঁচাতেই আজ অত্যন্ত আবশ্যক।

 

লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চিনির উৎপাদন বৃদ্ধি সময়ের দাবি- ধর্মমন্ত্রী

» কৃষি জমি রক্ষায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে – ভূমিমন্ত্রী

» ইসলামপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন

» বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা

» জয়পুরহাটে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শন -২০২৪

» বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়ল, কমল খোলা তেলের

» নানার বাড়িতে শিশুকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে ১জন আটক

» নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ইসি আলমগীর

» অপপ্রচার রোধে ভারতের সহযোগিতা চাইলো বাংলাদেশ

» উপজেলা নির্বাচনে নেতাদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা আ.লীগের : কাদের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সক্রিয় বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র বাঁচে না

নূরে আলম সিদ্দিকী: ষাটের দশকের গোড়াতেই আমি লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় আসি। যেহেতু ঝিনাইদহ কেশবচন্দ্র কলেজটির প্রতিষ্ঠা ও প্রতিস্থাপনের সঙ্গে আমার পিতা মরহুম নূর নবী সিদ্দিকী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাই তখনকার ম্যাট্রিক পাসের সঙ্গে সঙ্গে আমার মায়ের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি ঢাকায় আসতে পারিনি। ইন্টারমিডিয়েট পড়ার পর্বটি আমাকে ঝিনাইদহের কে সি কলেজে সম্পন্ন করতে হয়েছিল। তখনো সারা বাংলাদেশে একটিই শিক্ষাবোর্ড। সেই ঢাকা বোর্ডের অধীনে ঝিনাইদহ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৬২ সালে ঢাকায় পড়তে এসেছিলাম। আমাদের কে সি কলেজের অধ্যক্ষ সরকার প্রেষণে প্রদান করত। দর্শনের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাককে সরকার সে সময় কে সি কলেজের অধ্যক্ষ করে পাঠায়। তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ছিল। তিনি এবং তাঁর কলেজের সব অধ্যাপক এমনকি ঝিনাইদহ মডেল হাইস্কুলের (ঝিনাইদহে তখনকার একমাত্র উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) প্রধান শিক্ষক বাবু মুরারি মোহন ঘোষাল আমার পরিবারের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে আমাকে লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় পাঠান। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোসিওলজির অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়ে যাই।

 

ঝিনাইদহে থাকতেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে। যেহেতু আমার শ্রদ্ধেয় পিতাসহ পরিবারের সবাই রাজনৈতিক সত্তায় উজ্জীবিত ছিলেন, তাই আমার উদ্গত, উদ্যত, উদ্ধত যৌবনের সেই প্রারম্ভিক সূচনায়ও রাজনীতির আবিরমাখা একটি স্বপ্নিল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই ঢাকায় আমার পথচলা শুরু হয়। সেই বাষট্টিতে আমি যখন ঢাকায় আসি, তখন ঢাকা মহানগরীতে শিক্ষা আন্দোলনের প্রচ- উত্তাপ। ছাত্র রাজনীতির অগ্রভাগে তখনো ছাত্রলীগ ছিল। তখন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি। ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক জনাব এনায়েতুর রহমান তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা ছাত্রনেতা। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ফজলুল হক মণি, কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শহীদুল হক মুন্সী; পরবর্তীতে সৈয়দ মযহারুল হক বাকী, আমিনুল হক বাদশাসহ আরও অসংখ্য প্রথিতযশা ছাত্রনেতার গর্বিত প্রতিভাপ্রদীপ্ত আলোকোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের সমাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্বলজ্বল করে উঠত।

সেই প্রজ্বলিত ছাত্ররাজনীতির আলোকে উদ্ভাসিত হয়েই ঢাকার শিক্ষাজীবন শুরু হওয়ার কারণে আমি নিজের অজান্তেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। প্রচন্ড ডাকসাইটে ছাত্রনেতা রাশভারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর তখনকার আবাসন আগামসি লেনের নিম ভিলায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম দিনই তাঁর ব্যক্তিত্বে আমি বিমুগ্ধ হই এবং পার্শ্ববর্তী অন্য ছাত্রলীগ নেতৃত্বের নেতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সুশীল আচরণ আমাকে এতটাই বিমুগ্ধ করে যে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে একটা দৃঢ় প্রত্যয় ও প্রতীতি আমার মনের মধ্যে দানা বাঁধে। সেই প্রতীতি ও প্রত্যয়ের কারণে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সূচনার অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই এবং স্টুডেন্ট ফ্রন্টের ব্যানারে ছাত্রলীগের নির্দেশ মেনে চলতে থাকি। কিন্তু বিধিবাম! ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনের স্রোতধারায় আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকা কলেজ থেকে রাজনৈতিকভাবে অন্য আরও ১০ জন ছাত্রনেতার সঙ্গে আমাকে প্রথমে এক্সপেলড ও পরে তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রীর সহৃদয়তায় ঢাকা কলেজ থেকে শুধু বহিষ্কৃত (ফোর্সড টিসি) হয়ে যখন অসহায়ের মতো ঘুরছিলাম, তখনই জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান আমাকে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি করে নেন। তখনই ছাত্ররাজনীতির দিগন্তবিস্তৃত সিংহদ্বার আমার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। ছাত্রলীগের রাজনীতি তখন স্বায়ত্তশাসনের দাবিতেই উচ্চকিত ছিল। পরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ছয় দফা কর্মসূচি প্রদত্ত হলে তা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ, বিকাশ, ব্যাপ্তি ও সফলতা ঘটায়। যে চেতনা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বর্ণসৈকতে পৌঁছে দেয়।

 

সেদিনের সেই প্রচ- প্রকট উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহাওয়ায় গড়ে ওঠা মন আজকের নীরব, নিথর, নিস্তব্ধ বাংলাদেশ দেখে একটু হতচকিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। আমি একদম দলকানা নই। আমার বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় উন্নয়ন, সার্বিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল- আমার দৃষ্টির বাইরে থাকে না। তবু সংসদ বিরোধী দলের বিতর্কবিবর্জিত অনেকটাই নিষ্প্রভ থাকবে- এটাও হৃদয় সর্বান্তঃকরণে মানতে পারে না। আজকের এ সক্রিয়, সরব ও অর্থবহ বিরোধী দলশূন্য দেশ এত ম্রিয়মাণ কেন? দেশের নির্বাচন, মিছিল ও জনসভার পূর্ণ অধিকার থাকা সত্ত্বেও কেন গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় বাংলাদেশ আর সেই আগের মতো বিস্ফোরিত হয় না- ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে ওঠে না? এ অবস্থার দায়ভার কার কাঁধে তুলে দেওয়া যায়?

 

শেখ হাসিনা তো অনায়াসেই বলতে পারেন, দেশে তো পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে। সভা ও মিছিলের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার দেশে অবারিত রয়েছে। বিরোধী দলের এ ম্রিয়মাণতা অথবা মৌনতা ভঙ্গ করে কি আমি বিরোধী দলের মধ্যে প্রাণস্পন্দন সৃষ্টি করব? বিরোধী দল স্পন্দিত হচ্ছে না- এটা হয় বিএনপির দুর্বলতা নতুবা উন্নয়নের স্রোতধারায় জনগণ আওয়ামী লীগের সপক্ষে চলে এসেছে। যুক্তিটা একেবারেই ছুড়ে ফেলার মতো নয়। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি আজ বিবৃতি ও কার্যালয়ে বসে সংবাদ সম্মেলন এবং তর্জন-গর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের রাজপথে দেখা যায় না। এ ব্যাপারে তাদের শীর্ষ নেতাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা সাফ জবাব দেন- টুঁশব্দটি করলেই শেখ হাসিনার নির্যাতন-নিগ্রহ নেমে আসে।

 

সেই ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবির ছত্রচ্ছায়ায় যখন ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে প্রচ- গণআন্দোলন সৃষ্টি করে সারা বাংলাদেশকে আলোড়িত করে, তখনকার পথও তো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রদানের পর ছাত্রলীগ এটিকে বাংলার মুক্তিসনদ হিসেবে গ্রহণ করে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানকে যেভাবে উচ্চকিত করেছিল- সেটিই ১৯৭০-এর নির্বাচনের বিজয় এবং ’৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্যে বাঙালির চেতনাকে শানিত করে। আন্দোলন তো এক দিনে হয় না। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিস্তীর্ণ রাজনৈতিক পথ অতিক্রম করে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সাফল্যের স্বর্ণসৈকতে পৌঁছাতে হয়। এটিই স্বাধীনতা আন্দোলনের শিক্ষা- বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষার আলোকবর্তিকা আমাদের দিয়েছিলেন।

 

আদালতের শাস্তি মাথায় নিয়ে জেল খাটার আতঙ্কে লন্ডনে অবস্থান করে বাংলার মানুষকে তারেক রহমান রাজপথে নামাতে পারবেন, এটা সম্ভব নয়। সুদূর লন্ডনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তিনি যত নসিহতই করুন না কেন, তাতে মানুষ কর্ণপাত করবে না। আন্দোলন সৃষ্টি করতে হলে বিএনপির নেতৃত্বকে বাংলাদেশে আসতে হবে। নির্যাতন-নিগ্রহকে অকুণ্ঠ চিত্তে বাংলার মাটির ওপর দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু নিজেও তা করেছেন। আমাদেরও করতে শিখিয়েছেন।

 

বিএনপি একটার পর একটা নির্বাচন বর্জন করে চলেছে। অন্যদিকে সফল-সার্থক আন্দোলন গড়ে তুলতেও তারা অপারগ। নির্বাচনেও নেই, আন্দোলন সৃষ্টিতেও কোনো দৃশ্যমান ভূমিকায় তাদের দেখা যাচ্ছে না। তারেক রহমানও তো ধরাছোঁয়ার বাইরে লন্ডনপ্রবাসী। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে মহাকাশে পাঠানো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গতিধারা পর্যবেক্ষণ করা যায় কিন্তু লন্ডনে বসে বাংলাদেশে গণআন্দোলন সৃষ্টি সম্ভব নয়। তারেক রহমান সমস্ত ঝুঁকির বাইরে লন্ডনে বসে থাকবেন আর বাংলাদেশের মানুষ তার নির্দেশে রাজপথে আন্দোলন করবে- এটা বাংলাদেশের নিরিখে অলীক স্বপ্নমাত্র। আন্দোলনেও নেই, নির্বাচনেও নেই, তাহলে আর থাকলটা কী? উত্তরপাড়া থেকে গায়েবিভাবে কেউ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে- এ ভাবনা চেতনাকে যে আবৃত করে রেখেছে তা অনুমান করা যায়। কিন্তু ১২ মন ঘিও হবে না, রাধিকাও নাচবে না।

 

ফলপ্রসূ গণআন্দোলন করতে হলে তাদের গায়ে নির্যাতনের আঁচ লাগাতে হবে। আজকের প্রেক্ষাপটে এটা অসম্ভব বলেই নির্বাচন বর্জন বিএনপির জন্য আত্মঘাতী বলে আমার মনে হয়। আন্দোলন অথবা নির্বাচন- দুটোর একটিতে পূর্ণোদ্যমে আত্মনিয়োগ করতে ব্যর্থ হলে তেল ছাড়া প্রদীপের মতো দলটি আস্তে আস্তে নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। তার চেয়ে প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করাই বিএনপির বেঁচে থাকার একমাত্র পথ। এমনিতেই আওয়ামী লীগের একটি বিরুদ্ধ জনমত রয়েছে। তাকে সংগঠিত করা খুব দুরূহ কাজ নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কোনো অবস্থাতেই আপসকামিতা নয়। পাকিস্তান আমলে সেই ১৯৫৪-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে ১৯৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনই আওয়ামী লীগ বর্জন করেনি। বরং নির্বাচনে হারজিত যা-ই হোক না কেন, সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী ও দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে। ’৭০-এর নির্বাচনে সামরিক ব্যক্তিত্ব ইয়াহিয়া খানের শাসন ও ইএলএফও (ইলেকশন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডিন্যান্স)-এর মধ্যেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ইএলএফও অথবা ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক জয় আটকাতে পারেনি। আর এ বিজয়কে অস্বীকার করতে গিয়েই স্বাধীনতাযুদ্ধের মোকাবিলা করতে হয় পাকিস্তানি সামরিক চক্রকে। ’৭০-এর নির্বাচন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার অধিকার প্রদান করে এবং ইয়াহিয়া খানের সামরিক আঘাতকে প্রত্যাঘাত করে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার আহ্বান জানানোর শক্তিতে উজ্জীবিত করে। বঙ্গবন্ধু সুদক্ষ নাবিকের মতো প্রাপ্য সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই স্বাধীনতার তরণিকে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্র পেরিয়ে সাফল্যের সৈকতে নোঙর করাতে সক্ষম হন। আন্দোলনের দিকনির্দেশনায় ব্যত্যয়-ব্যতিক্রম, ভ্রান্তি ও ভুল হলে স্বাধীনতার আন্দোলনটি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারত। অথবা উদগ্র বিপ্লবী ও ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক চেতনার আশ্রয়ীদের কবলে নিপতিত হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। পরিণাম হতো ভারতবর্ষের চারু মজুমদার, কানু সান্যাল এবং বাংলাদেশের সিরাজ সিকদার ও জাসদের উগ্র বিপ্লবীদের মতো।

 

বিএনপির রাজনীতিতে একটা ভিন্ন ভিন্ন এমনকি বিপরীতধর্মী রাজনৈতিক মতাদর্শের সন্নিবেশ ঘটেছে। তা সত্ত্বেও সঠিক পথ চিনতে ভুল করলে তা তাদেরই শুধু পথভ্রষ্ট করবে না, দেশের গণতান্ত্রিক স্রোতধারাকেও সমূলে বিনষ্ট করবে। কারণ সুষ্ঠু, সবল ও সৃজনশীল বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র বাঁচে না। আর গণতন্ত্র না বাঁচলে সমাজে অস্থিরতাই শুধু বাড়ে না, শাসনতান্ত্রিক সংকটের মুখে দেশ নিপতিত হয়।

 

শুনেছি বেগম খালেদা জিয়া এখন কানে কম শ্রবণ করেন। তাই বলে তাঁর দলও তালকানা হয়ে যাবে- এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আবারও বলি, সক্রিয় সৃজনশীল, সরব ও সচল বিবেকাশ্রিত বিরোধী দল ও তাদের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড গণতন্ত্র বাঁচাতেই আজ অত্যন্ত আবশ্যক।

 

লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com