সংসার খরচ, ধার ছাড়া উপায় কি?

২০১১ সালে রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন রাজশাহীর আলমগীর হোসেন। কিছুদিন পর মিরপুরে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। সে সময় তার বেতন ধরা হয় ১৪ হাজার টাকা। টানা ১০ বছর একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এ সময়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের দামসহ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয়। সে সময় ১৪ হাজার টাকায় বাসা ভাড়াসহ সব খরচ কোনোমতে মেটানো যেতো। কিন্তু এখন বেতন বেড়ে ২২ হাজার টাকা হলেও তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। আলমগীর হোসেন জানালেন, মাস শেষের আগেই  বেতনের টাকা ফুরিয়ে যায়।

পরের মাসে বেতন পাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্যের কাছ থেকে ধার করে চলতে হয়।

আলমগীরের চেয়ে ৮ হাজার টাকা বেশি বেতনের চাকরি করেন মিরপুরের আরেক বাসিন্দা রেজাউল। মনে হতে পারে ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে পরিবার নিয়ে হয়তো বেশ আরামেই কাটছে তার দিনকাল। কিন্তু না, বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে কীভাবে টিকে আছেন, তার চিত্র তুলে ধরলেন রেজাউল। জানান, প্রতি মাসে মায়ের ওষুধ কিনতেই চলে যায় ২-৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাসা ভাড়া বাবদই খরচ প্রায় ১৯ হাজার টাকা। আর বাজার সদাই, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচসহ অন্য ব্যয় তো রয়েছেই। তার খরচের হিসাব শুনে কেমন চলছে রেজাউলের সংসার তা সহজেই অনুমান করা যায়।

শুধু রেজাউল কিংবা আলমগীর নন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জীবনযাত্রার অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন অনেকেরই এখন টিকে থাকা দায়। নিম্ন এবং মধ্য আয়ের ৮টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় কি প্রভাব পড়েছে- তার একটি রূপরেখা পাওয়া যায়। এমন পরিবারও পাওয়া গেছে, যাদের মাছ-মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। ভোজ্য তেল, চাল-ডালসহ বাজারের অধিকাংশ পণ্যের দাম চড়া হওয়ায় শুধু কম দামি সবজি খেয়ে দিন পার করছেন তারা।

রাজধানীর ইব্রাহিমপুর এলাকায় থাকেন রাবেয়া আক্তার। কাজ করেন একটি গার্মেন্ট কারখানায়। বলেন, ‘মাস গেলে যা বেতন পাই, সব বাজার সদাই করতেই শেষ হইয়া যায়। ৮ বছর ধরে ঢাকায় থাহি। দিন যত যাইতেছে ততোই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। চাকরি  করছি ৩ বছর ধইরা। এই তিন বছরে সবকিছুর দাম ডাবল বাইড়া গেছে। তয় বেতন কিন্তু তেমন বাড়ে নাই। তহন ৮ হাজার টাহা ছিল, এহন হইছে সাড়ে ১০ হাজার। কিন্তু আগে ৮ হাজার টাহায় সংসার যেমনে চলছে এহন সাড়ে ১০ হাজারেও তেমন চলে না। মাছ-মাংস তো কেনাই হয় না। সবজি কিনমু সেইডার দামও বেশি। এহন আলুর দাম একটু কম। আলু ভর্তার লগে যে ডাইল খামু তাও দাম বেশি। তেলের দামও ডাবল। রাবেয়া বলেন, বাজারে যহন যে সবজির দাম একটু কম সেইডাই কিনি। পোলাপানরে তো দুই মাস ধইরা কোনো মাংসই খাওয়াইতে পারি নাই। গরুর মাংস তো দূরের কথা।

দিন যত যাচ্ছে সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতি নামক পাগলা ঘোড়া যে গতিতে ছুটছে, ঠিক তার বিপরীত গতি মানুষের আয়-রোজগারে। বাজারের অনেক পণ্যের দাম এক বছরের মধ্যেই প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। একইসময়ে মানুষের আয়-রোজগার তুলনামূলক আরও কমে গেছে। মহামারির ধাক্কায় অনেক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। অনেক পণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে আবার দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির খবরও শুনছেন তারা। অন্যদিকে দেশে আয়বৈষম্য ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাওয়ার তথ্য জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রা আরও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত মঙ্গলবার আরেক দফা দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির খবর জানা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৫৯১ ডলার হয়েছে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলনে তথ্যগত ভিত্তি নিয়ে প্রচণ্ড সন্দেহ আছে। এখন যেটা হচ্ছে সেটা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে এবং সেই তথ্যের ভেতরেই বড় ধরনের বৈপরীত্য আছে। যেই সমস্ত সূচকের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির হারের মিল থাকার কথা সেগুলো নেই। সুতরাং এই প্রাক্কলনের ওপর আস্থা রাখা খুবই কষ্টকর। তিনি  বলেন, আয় যদি বেড়েও থাকে, এটা খুব পরিষ্কার যে এই আয় খুবই অসমভাবে বণ্টিত হচ্ছে, আয় বৈষম্য রয়েছে। বিকাশমান মধ্যবিত্ত বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষের ভোগের জন্য প্রকৃত আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আর যে সমস্ত উচ্চবিত্তরা তাদের পুঁজির ভিত্তিতে আয় করে তার সঙ্গে শ্রমের ভিত্তিতে আয়ের ভেতরে অনেক বড় প্রার্থক্য হয়ে গেছে। সেজন্য এখন সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হলো নিম্ন মধ্যবিত্তের অংশ এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্তের অংশ। যারা স্বল্প বেতনের চাকরি করে, একইসঙ্গে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এই নিম্ন মধ্যবিত্ত বাংলাদেশে একটি নব্য দরিদ্র শ্রেণি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বলে মত দেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের উন্নয়নের যে বিবরণ দেয়া হয় সেখানে এই সমস্যার কোনো স্বীকৃতি নেই। যেহেতু এই নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নব্য দরিদ্রের আবির্ভাবের কোনো স্বীকৃতি নেই, সেহেতু এদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো প্রয়োজনও মনে করে না। তিনি বলেন, এখন মানুষ যেহেতু কষ্টে আছে সেজন্য তাদেরকে এই বিষয়টি প্রকাশের মাধ্যম খুঁজে বের করতে হবে। তাদের দুশ্চিন্তা, তাদের যে অসন্তোষ সেটা তো নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছাতে হবে। সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্য কিংবা আমাদের মতো বিশ্লেষকদের বক্তব্য এখন নীতি প্রণেতাদের ভেতরে কোনো দাগ কাটে না। উনারা এগুলোকে গ্রাহ্যের ভেতরে নেন না। সুতরাং মানুষের দুঃখ কষ্ট, তাদের অস্বস্তি, অসন্তোষের বিষয়টি পৌঁছানোর জন্য আরও কার্যকর মাধ্যম তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।

কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, মানুষ এখন নিঃসন্দেহে অনেক সমস্যায় আছে। তাদের আয় বাড়ে না। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ঠিকই বাড়ছে। আয় বৈষম্য বেড়ে গেছে। সরকারের উচিত মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানো, তাদের আয় কীভাবে বাড়বে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের হিসাব বলছে আমাদের গড় আয় নাকি বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা স্বল্প আয়ের নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষ তাদের আয় বাড়ছে বলে তো আমরা দেখছি না। তাই সরকারের উচিত মানুষের আয় রোজগার কীভাবে বাড়ানো যায় তার ব্যবস্থা করা। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা। তা না হলে সরকারের সব বড় বড় অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। কারণ, দেশের উন্নতি হচ্ছে এটা বললে তো আমি এতে সন্তুষ্ট থাকতে পারবো না। আমার জীবনমানের কি উন্নতি হচ্ছে সেটা আমাকে দেখতে হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নতি না করে বড় বড় অট্টালিকা, ব্রিজ, রাস্তাঘাট করলে সেটা মানুষ শুধু দেখবে, কিন্তু তাদের তো কোনো লাভ হবে না।  সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» হাওরে কৃষকদের বোরো ধানের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী

» বাসচাপায় সিএনজি যাত্রী নিহত

» ‌‌‘বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা’

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

» বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রাজনৈতিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের ভবনে আগুন

» শনিবার ২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

» মাদক বিক্রি ও সেবন করার অপরাধে ১০ জন গ্রেফতার

» ‘জীবনে অনেক ভুল করেছি’—হঠাৎ কী হলো পরিণীতির?

» ‘মুস্তাফিজকে কেন পুরো আইপিএল খেলতে দিচ্ছে না বাংলাদেশ’

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সংসার খরচ, ধার ছাড়া উপায় কি?

২০১১ সালে রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন রাজশাহীর আলমগীর হোসেন। কিছুদিন পর মিরপুরে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। সে সময় তার বেতন ধরা হয় ১৪ হাজার টাকা। টানা ১০ বছর একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এ সময়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের দামসহ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয়। সে সময় ১৪ হাজার টাকায় বাসা ভাড়াসহ সব খরচ কোনোমতে মেটানো যেতো। কিন্তু এখন বেতন বেড়ে ২২ হাজার টাকা হলেও তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। আলমগীর হোসেন জানালেন, মাস শেষের আগেই  বেতনের টাকা ফুরিয়ে যায়।

পরের মাসে বেতন পাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্যের কাছ থেকে ধার করে চলতে হয়।

আলমগীরের চেয়ে ৮ হাজার টাকা বেশি বেতনের চাকরি করেন মিরপুরের আরেক বাসিন্দা রেজাউল। মনে হতে পারে ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে পরিবার নিয়ে হয়তো বেশ আরামেই কাটছে তার দিনকাল। কিন্তু না, বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে কীভাবে টিকে আছেন, তার চিত্র তুলে ধরলেন রেজাউল। জানান, প্রতি মাসে মায়ের ওষুধ কিনতেই চলে যায় ২-৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাসা ভাড়া বাবদই খরচ প্রায় ১৯ হাজার টাকা। আর বাজার সদাই, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচসহ অন্য ব্যয় তো রয়েছেই। তার খরচের হিসাব শুনে কেমন চলছে রেজাউলের সংসার তা সহজেই অনুমান করা যায়।

শুধু রেজাউল কিংবা আলমগীর নন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জীবনযাত্রার অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন অনেকেরই এখন টিকে থাকা দায়। নিম্ন এবং মধ্য আয়ের ৮টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় কি প্রভাব পড়েছে- তার একটি রূপরেখা পাওয়া যায়। এমন পরিবারও পাওয়া গেছে, যাদের মাছ-মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। ভোজ্য তেল, চাল-ডালসহ বাজারের অধিকাংশ পণ্যের দাম চড়া হওয়ায় শুধু কম দামি সবজি খেয়ে দিন পার করছেন তারা।

রাজধানীর ইব্রাহিমপুর এলাকায় থাকেন রাবেয়া আক্তার। কাজ করেন একটি গার্মেন্ট কারখানায়। বলেন, ‘মাস গেলে যা বেতন পাই, সব বাজার সদাই করতেই শেষ হইয়া যায়। ৮ বছর ধরে ঢাকায় থাহি। দিন যত যাইতেছে ততোই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। চাকরি  করছি ৩ বছর ধইরা। এই তিন বছরে সবকিছুর দাম ডাবল বাইড়া গেছে। তয় বেতন কিন্তু তেমন বাড়ে নাই। তহন ৮ হাজার টাহা ছিল, এহন হইছে সাড়ে ১০ হাজার। কিন্তু আগে ৮ হাজার টাহায় সংসার যেমনে চলছে এহন সাড়ে ১০ হাজারেও তেমন চলে না। মাছ-মাংস তো কেনাই হয় না। সবজি কিনমু সেইডার দামও বেশি। এহন আলুর দাম একটু কম। আলু ভর্তার লগে যে ডাইল খামু তাও দাম বেশি। তেলের দামও ডাবল। রাবেয়া বলেন, বাজারে যহন যে সবজির দাম একটু কম সেইডাই কিনি। পোলাপানরে তো দুই মাস ধইরা কোনো মাংসই খাওয়াইতে পারি নাই। গরুর মাংস তো দূরের কথা।

দিন যত যাচ্ছে সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতি নামক পাগলা ঘোড়া যে গতিতে ছুটছে, ঠিক তার বিপরীত গতি মানুষের আয়-রোজগারে। বাজারের অনেক পণ্যের দাম এক বছরের মধ্যেই প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। একইসময়ে মানুষের আয়-রোজগার তুলনামূলক আরও কমে গেছে। মহামারির ধাক্কায় অনেক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। অনেক পণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে আবার দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির খবরও শুনছেন তারা। অন্যদিকে দেশে আয়বৈষম্য ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাওয়ার তথ্য জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রা আরও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত মঙ্গলবার আরেক দফা দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির খবর জানা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৫৯১ ডলার হয়েছে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলনে তথ্যগত ভিত্তি নিয়ে প্রচণ্ড সন্দেহ আছে। এখন যেটা হচ্ছে সেটা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে এবং সেই তথ্যের ভেতরেই বড় ধরনের বৈপরীত্য আছে। যেই সমস্ত সূচকের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির হারের মিল থাকার কথা সেগুলো নেই। সুতরাং এই প্রাক্কলনের ওপর আস্থা রাখা খুবই কষ্টকর। তিনি  বলেন, আয় যদি বেড়েও থাকে, এটা খুব পরিষ্কার যে এই আয় খুবই অসমভাবে বণ্টিত হচ্ছে, আয় বৈষম্য রয়েছে। বিকাশমান মধ্যবিত্ত বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষের ভোগের জন্য প্রকৃত আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আর যে সমস্ত উচ্চবিত্তরা তাদের পুঁজির ভিত্তিতে আয় করে তার সঙ্গে শ্রমের ভিত্তিতে আয়ের ভেতরে অনেক বড় প্রার্থক্য হয়ে গেছে। সেজন্য এখন সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হলো নিম্ন মধ্যবিত্তের অংশ এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্তের অংশ। যারা স্বল্প বেতনের চাকরি করে, একইসঙ্গে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এই নিম্ন মধ্যবিত্ত বাংলাদেশে একটি নব্য দরিদ্র শ্রেণি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বলে মত দেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের উন্নয়নের যে বিবরণ দেয়া হয় সেখানে এই সমস্যার কোনো স্বীকৃতি নেই। যেহেতু এই নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নব্য দরিদ্রের আবির্ভাবের কোনো স্বীকৃতি নেই, সেহেতু এদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো প্রয়োজনও মনে করে না। তিনি বলেন, এখন মানুষ যেহেতু কষ্টে আছে সেজন্য তাদেরকে এই বিষয়টি প্রকাশের মাধ্যম খুঁজে বের করতে হবে। তাদের দুশ্চিন্তা, তাদের যে অসন্তোষ সেটা তো নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছাতে হবে। সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্য কিংবা আমাদের মতো বিশ্লেষকদের বক্তব্য এখন নীতি প্রণেতাদের ভেতরে কোনো দাগ কাটে না। উনারা এগুলোকে গ্রাহ্যের ভেতরে নেন না। সুতরাং মানুষের দুঃখ কষ্ট, তাদের অস্বস্তি, অসন্তোষের বিষয়টি পৌঁছানোর জন্য আরও কার্যকর মাধ্যম তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।

কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, মানুষ এখন নিঃসন্দেহে অনেক সমস্যায় আছে। তাদের আয় বাড়ে না। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ঠিকই বাড়ছে। আয় বৈষম্য বেড়ে গেছে। সরকারের উচিত মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানো, তাদের আয় কীভাবে বাড়বে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের হিসাব বলছে আমাদের গড় আয় নাকি বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা স্বল্প আয়ের নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষ তাদের আয় বাড়ছে বলে তো আমরা দেখছি না। তাই সরকারের উচিত মানুষের আয় রোজগার কীভাবে বাড়ানো যায় তার ব্যবস্থা করা। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা। তা না হলে সরকারের সব বড় বড় অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। কারণ, দেশের উন্নতি হচ্ছে এটা বললে তো আমি এতে সন্তুষ্ট থাকতে পারবো না। আমার জীবনমানের কি উন্নতি হচ্ছে সেটা আমাকে দেখতে হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নতি না করে বড় বড় অট্টালিকা, ব্রিজ, রাস্তাঘাট করলে সেটা মানুষ শুধু দেখবে, কিন্তু তাদের তো কোনো লাভ হবে না।  সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com