শেখ হাসিনা ও একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি-২

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : হজরত খোয়াজ খিজিরের চশমা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের দুটি লেখা পড়লাম। অসাধারণ, তুলনাহীন, আন্তরিকতায় ভরপুর। এমনিতেই নঈম নিজামের লেখার আমি ভীষণ ভক্ত। সেই সময় মুসা (আ.)-এর জমানায় চশমা ছিল কি ছিল না জানি না। কিন্তু পর্দা আর বেপর্দা সে সময়ও ছিল। তাই একটা আসল-নকল তো সব সময়ই ছিল। দোয়া করি আল্লাহ রব্বুল আলামিন নঈম নিজামের ক্ষুরধার লেখা যেন অব্যাহত রাখার তৌফিক দেন। আসলেই সত্য বড় কঠিন। আমরা একমুহূর্ত আগেও জানি না পরমুহূর্তে কী হতে চলেছে। অথচ আমাদের কত দেমাক, কত অহংকার যার কোনো সীমা নেই। লিখতে চেয়েছিলাম সেই বুলেটপ্রুফ গাড়িটি নিয়ে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। কিন্তু মনটা বড়ই খারাপ। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বুঝে ওঠার আগেই ট্রেন দুর্ঘটনায় মুহূর্তে ১১টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। কারও কিছু করার ছিল না। বাপ-মা হারা সন্তান যেমন এতিম-অসহায়, ঠিক আমরাও কেন যেন তেমন অসহায় লাচার। কারও কোনো কিছু করার নেই। কবে যেন প্রিয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে একটু সজাগ হতে, রাস্তাঘাটে ছোটবড় সব পরিবহন বা যান চালকদের একটু প্রশিক্ষণ একটু যত্ন নিতে বলেছিলাম। বলেছিলাম তারা স্বাভাবিক কি না, নেশা স্পর্শ করেছে কি না খোঁজখবর করে দেখতে। অনুরোধের রেশ কাটতে না কাটতেই এমন ভয়াবহ দুর্বিষহ রেল দুর্ঘটনা সহ্য করা যায় না।

একটি রেল দুর্ঘটনায় এ উপমহাদেশের এক প্রবীণ নেতা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর বন্ধুবান্ধব-সহকর্মীরা তাঁকে বোঝাতে গিয়েছিলেন কেন পদত্যাগ করবেন। আপনি তো আর রেল চালান না যে দুর্ঘটনার জন্য আপনি দায়ী। পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভার রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি পরে মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। আমাদের মাননীয় রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন কি পদত্যাগ করবেন? নাকি এসব দুর্ঘটনা তাঁর কাছে কোনো ধর্তব্যই নয়, সবই পানি পানি। রেলমন্ত্রীর বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম একজন নামকরা নেতা, দরদি মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে ‘আমার পাগল’ বলে আদর করতেন। সিরাজ ভাই বেঁচে থাকলে তিনি রেলমন্ত্রী হলে এ রকম বেপরোয়া রেল দুর্ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করতেন- এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। পাকিস্তান আমলে আমাদের রেলপথ ছিল হাজার-বারো শ মাইল। এখন সেটা দুই-আড়াই হাজার মাইলে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু অনিয়ম-দুর্ঘটনা বেড়েছে হাজার গুণ। শুনলাম, রেলক্রসিং নাকি সাড়ে ৩ হাজারের মতো। তার ২ হাজারই অবৈধ। নিজেরাই রাস্তা করে নিয়েছে। এও কি সম্ভব! দুনিয়ার আর কোথাও নিজেরা ইচ্ছামতো রেলক্রসিং বানাতে পারে কখনো শুনিনি। তবে বাংলাদেশে সবই সম্ভব। শুনেছি গেটম্যানকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। জানি না ওই ক্রসিংয়ে আদৌ কোনো বৈধ গেটম্যান ছিল কি না। থাকলে সে নিয়মিত বেতন পায় কি না বা একজনের কাজ আরেকজনকে দিয়ে চালায় কি না। আর শুধু রেলকেই বলব কেন, শুধু রেলকে দায়ী করে কী লাভ। যে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়েছে তারও খোঁজখবর নেওয়া দরকার, গাড়িটি রেললাইনের ওপর নষ্ট হবে কেন বা দাঁড়িয়ে যাবে কেন। গাড়ির কোনো ত্রুটি ছিল কি না। রেললাইনের ওপর গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ার তো কোনো কথা নয়। রেললাইন পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাস চালকের তো এপাশ-ওপাশ দেখা উচিত। আশপাশে গাড়ি না থাকলে কিছুটা গতি নিয়েই তো রেললাইনের ওপর মাইক্রোবাসটি ওঠার কথা। তাহলে রেললাইনের ওপরে দাঁড়িয়ে যাবে কেন? এখানে মাইক্রোবাস চালকের কোনো ত্রুটি নেই তো? আর যে মাইক্রোবাসের ১১ জন লোক মারা গেছেন, আর কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাড়ি থেকে দু-চার জন নেমে ধাক্কা দিলেই তো মাইক্রোবাসটি রেললাইন থেকে সরে যেতে পারত। সবাই কি দিশাহারা বোধশক্তিহীন ছিল কিছুই বুঝতে পারছি না। সাধারণত সব ক্রসিং পার হওয়ার সময় রেলগাড়ি অনেক দূর থেকে হুইসেল দেয়। সবকিছু খতিয়ে দেখা দরকার।

 

২৭ জুলাই বুধবার ছিল নির্বাচন কমিশনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বৈঠক। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১৭ জন প্রতিনিধি নিয়ে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা। আগের নূরুল হুদা কমিশনের চেয়ে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ধীরস্থির একজন স্বতঃস্ফূর্ত মানুষ মনে হয়েছে। প্রথমেই শুনেছিলাম আওয়ামী লীগের জন্য দুই ঘণ্টা, বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা। বিষয়টা একেবারে ভালো লাগেনি। তবে নির্বাচন কমিশন ও রকম কারও জন্য বেশি কারও জন্য কম এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা সবার জন্য সমান সময় দিতে চেয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেও দিয়েছেনও। আলোচনায় কতটা কাজ হবে জানি না, এর আগে নির্বাচন কমিশনে ইভিএম দেখার আমন্ত্রণে যাইনি। এখন দেশটা দুই ভাগে বিভক্ত। কোনো কিছু হলেই হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপি। তবে আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি নই। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জনগণের পক্ষের জনগণের দল। জনগণের কথা বলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই আমরা চেষ্টা করেছি। তলোয়ার রাইফেল নিয়ে কথা হয়েছে, কথা হয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার নিয়েও। ইভিএমের ভুল ধরতে পারলে ওই পুরস্কার নির্বাচন কমিশন দেবে, না যিনি বলেছেন সেই কমিশনার ব্যক্তিগতভাবে দেবেন। কারণ এখন তো আর কারও টাকাপয়সা কম নেই। সবাই টাকার ওপর ভাসে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল যেভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছেন আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ ভুল সবারই হয়। ভুল ধরে বসে থাকলে তার কোনো সমাধান নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় শক্ত মেরুদন্ড থাকা উচিত। নির্বাচন কমিশনের সময় দুই ধরনের। একটা নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর, আরেকটা ঘোষণার আগে। নির্বাচন কমিশনের দুই ধরনের ক্ষমতা। জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে ৯০ দিনের জন্য নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের সবকিছু। নির্বাচন কমিশন মন্ত্রিসভা, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি সবকিছু। তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রের সবকিছু নির্বাচন কমিশনের অধীন। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আলাদা নন। এ ক্ষমতা সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে। সেটা ব্যবহার করতে না পারলে, তেমন মেরুদন্ড না থাকলে সেটা সংবিধানের কোনো ত্রুটি নয়, ত্রুটি নির্বাচন কমিশনের, যাদের নিয়ে কমিশন তাদের। আমরা সব সময় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চাই। দেশবাসী তেমনটাই আশা করে, আমরাও তা-ই আশা করি। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়। তবে আমরা কেন, দেশের মানুষ কেউ ত্রুটিযুক্ত ইভিএম চায় না। আওয়ামী লীগ কেন চায় বুঝতে পারছি না। আওয়ামী লীগের বিরোধীরা যদি ইভিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পায় তার পরও কি তারা ইভিএম চাইবেন? মনে হয় না। ইভিএম নির্বাচনের জন্য কোনো ভালো কিছু নয়। তাই এ চুরির যন্ত্র বাদ দেওয়াই ভালো।

 

‘শেখ হাসিনা ও একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি’ লেখাটিতে অনেক সাড়া পেয়েছি, অনেক খুদে বার্তা পেয়েছি। দাদু আলাউদ্দিন নাসিম। আলাউদ্দিন নাসিম একসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস বা প্রধান সচিব হিসেবে অনেকদিন কাজ করেছেন। আমার দাদার নাম আলাউদ্দিন সিদ্দিকী। তাই নাসিমকে দাদু বলেই ডাকি। ভীষণ ভালো মানুষ। আরেকজনকে দাদু বলে ডাকতাম রাজশাহীর বাঘার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। কীভাবে যেন বিএনপি তাকে বাগিয়ে নিয়ে মন্ত্রী করেছিল। আওয়ামী লীগে থাকতে তাঁর সঙ্গে একবার সাংগঠনিক সফরে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম। বাঘায় চমৎকার নকশিকাঁথা তৈরি হয়। মায়েরা, বোনেরা, মেয়েরা ঘরে ঘরে নকশিকাঁথা বানায়। কি চমৎকার সেলাই, তুলনাহীন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সেসব কাঁথার সঠিক বিপণন নেই, মায়েরা-বোনেরা-মেয়েরা সত্যিকারের মজুরি পায় না। তাদের রাতদিনের পরিশ্রমের ফসল যায় ইন্দুর বাইতানের পেটে। সেই আলাউদ্দিন নাসিম খুদে বার্তায় জানিয়েছেন, ২১ আগস্ট ওই নির্মম ঘটনার সময় বুলেটপ্রুফ গাড়িটি চালাচ্ছিল মতিন নামে একজন ড্রাইভার। মিটিংয়ে যাওয়ার সময় আলাউদ্দিন নাসিম নেত্রীর সঙ্গেই ছিলেন। সেই মতিনই নাকি গাড়ি চালিয়ে পল্টন থেকে সুধা সদনে ফিরেছিলেন।

 

আমি তখন ঢাকায় ছিলাম না। তাই ঢাকার তেমন কিছুই জানতাম না। প্রণবদার বাড়ি থেকে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলাম। বাবর রোডের বাড়িতেও বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছিলাম, দীপের আম্মুকে বোনের খোঁজ নিতে বলেছিলাম। আমার স্ত্রী খুবই সাদামাটা মানুষ, ভালো করে ফোনে ডায়াল করতে জানতেন না। এখনো বোতাম টিপতে জানেন না। যা হোক, দিল্লিতে একটা থমথমে ভাব। ওরপর যেখানেই গেছি সবার আগে জানতে চেয়েছে ঢাকার খবর কী, নেত্রীর খবর কী, তিনি নিরাপদ কি না। একদিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে শুধু ঢাকার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। হাত মিলিয়ে গামছা গলায় পরিয়ে দেওয়ার পর তিনি প্রথমেই বলেছিলেন, ‘আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আরও অনেকেই প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আপনার যে অবদান আপনার যে ভূমিকা এটা আর কারও হবে না। আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ মানে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা।’ এরপর আর তেমন অন্য কথা হয়নি। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো শুধু ঢাকা, ঢাকা আর ঢাকার দুঃসময়ের কথা। তখন বাংলাদেশে ভারতের বর্তমান হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারের সময় ছিলেন। অমায়িক এক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। এরপর সকালে গিয়ে রাতেই ফিরেছিলাম আজমির শরিফ থেকে। কিছুই ভালো লাগছিল না। মনে হচ্ছিল তখনই ফিরে আসি। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট ছিল। ফোন করেছিলাম দিল্লির অফিসে। তারা বলছিল যখন চাইবেন তখনই টিকিট পাবেন। টিকিট নিশ্চিত করতে লোক পাঠিয়েছিলাম। ঠিক সে সময়ই কে যেন বলল ২১ আগস্টের অনেক আহত দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে আসছেন। টিকিট নিশ্চিত না করে এক দিন বা দুই দিন দেরি করেছিলাম। জীবনে প্রথম গিয়েছিলাম দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে। সে তো হাসপাতাল নয়, যেন ফাইভ স্টার হোটেল। দিল্লির অশোকা হোটেলের চেয়েও চমৎকার।

 

অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়ে দেখি অনুপ কুমার সাহা তুলসীকে। তুলসী ফরিদপুরের ছেলে। জননেতা রাজ্জাক ভাইকে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তুলসী আহতের প্রায় সবাইকে দেখিয়ে ছিল। প্রথমে দেখা হয়েছিল বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে। খুবই অসুস্থ ছিল। বাহাউদ্দিন নাছিমের জন্য সেদিন বড় মায়া হয়েছিল, বড় কষ্ট হয়েছিল। সে যে আমার হাত ধরে ছিল তাতে উষ্ণতা ছিল, আবেগ ছিল। এরপর গিয়েছিলাম প্রিয় ওবায়দুল কাদেরের কাছে। খুবই খারাপ ছিল তাঁর অবস্থা। তিনি দুই হাত চেপে বলেছিলেন, ‘কাদের ভাই, আমরা কি শেষ হয়ে যাব? একটা কিছু করেন। আমাদের শেষ করে দেবে।’ তাঁর আকুলতা বড় বেশি আমার বুকে বেঁধেছিল। নাসিম, ওবায়দুল কাদের, আবদুর রাজ্জাক, মমতাজ হোসেন, নজরুল ইসলাম বাবু, অজয় কর খোকন, বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম ভর্তি ছিলেন। রাজ্জাক ভাই তাঁর ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে ড্রেসিংরুমে গিয়েছিলেন। সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত আমি যাওয়ার কিছু আগে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর আঘাত একটু কম ছিল। বড় কষ্ট নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতাল ছেড়েছিলাম। সেসব দিনের কথা মনে হলে এখনো বড় বেশি খারাপ লাগে। পরদিন ফিরেছিলাম ঢাকার পথে। বিমান কিছুটা দেরিতে ছিল। তাই ভিআইপিতে বসে ছিলাম। সেখানে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বীণা সিক্রি ছিলেন। বিমানে উঠে দেখি আমাদের দুজনের পাশাপাশি সিট। ভদ্রমহিলাকে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে মুচকুন্দ দুবে আর বীণা সিক্রির মতো অমন সফল হাইকমিশনার আর দেখিনি। বিমান দেরিতে দিল্লি পৌঁছলেও ওড়ার সময় যা ছিল তার চাইতে ১০ মিনিট কম সময়ে ঢাকায় নেমেছিল। আমার স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে বীণা সিক্রির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। পরে দাওয়াত করে বেশ কয়েকবার বীণা সিক্রির বাড়িতে আমার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের খাইয়েছেন। মান্যবর হাইকশিনার আমার বাড়িতে এসে খাবার গ্রহণ করেছেন। সত্যিই একজন যথার্থ যোগ্য মানুষ ছিলেন বীণা সিক্রি। বিমানবন্দর থেকে সোজা সুধা সদনে বোনকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি বড় উৎকণ্ঠিত ছিলেন, চিন্তিত ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯০-এ দেশে ফিরলে যেভাবে আকুল হয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন, ঠিক তেমনি সেদিনও ওভাবে ব্যাকুল হয়ে আমাকে, ছেলেমেয়েকে, নাসরীনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আমাদের সবার চোখে ছিল পানি। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে, তাকে শেষ করে দিতে এটা যে জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র তা বারবার বলছিলেন। আমরাও খুব ব্যথিত ছিলাম। কারণ এভাবে কারও জনসভায় আক্রমণ কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। অথচ তা-ই হয়েছে। এ ধরনের আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে, এবার নেত্রী শেখ হাসিনাকে আক্রমণ। এমন নিন্দনীয় কাজ প্রাণ দিয়ে প্রতিহত করা উচিত, প্রতিরোধ করা উচিত। যতটা সম্ভব আমরা তা-ই করার চেষ্টা করছি, এখনো করি।

 

বোন শেখ হাসিনাকে দেখে বাড়ি ফিরলে মা প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হাসিনাকে কেমন দেখলি? মা আমার কেমন আছে?’ বলেছিলাম, খুব একটা ভালো না। মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন, চিন্তিত ছিলেন। মনে হয় না সারা জীবনে কখনো বাড়ির কাছে এসে মাকে না দেখে অন্য কোথাও গেছি। সেই ছিল জীবনে প্রথম। বিমান থেকে নেমে মাকে দেখতে বাবর রোডে না গিয়ে বোনের খবর নিতে তাঁকে দেখতে সুধা সদনে গিয়েছিলাম।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com    সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ম্যাপ সংযুক্ত মালিকানা ভিত্তিক খতিয়ান চালু করা সম্ভব হবে – ভূমিমন্ত্রী

» বিএটি বাংলাদেশের ৫১তম এজিএম অনুষ্ঠিত

» ইসলামপুরে কৃষকরা পেল উন্নত মানের বীজ

» ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সাথে ব্র্যাক ব্যাংকের কাস্টোডিয়াল সার্ভিস চুক্তি

» এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট কাউন্সিল”এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কমিটি গঠিত

» ২ লাখ টাকার ফ্যামিলি ট্রিপের সেরা ঈদ অফার দিচ্ছে রিয়েলমি

» ঘূর্ণিঝড়ে আলফাডাঙ্গার ২২ গ্রাম বিধ্বস্ত

» প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আগামীকাল

» আইপিইউর এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন স্পিকার

» এক শহরের মধ্যে দুই দেশ

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শেখ হাসিনা ও একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি-২

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : হজরত খোয়াজ খিজিরের চশমা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের দুটি লেখা পড়লাম। অসাধারণ, তুলনাহীন, আন্তরিকতায় ভরপুর। এমনিতেই নঈম নিজামের লেখার আমি ভীষণ ভক্ত। সেই সময় মুসা (আ.)-এর জমানায় চশমা ছিল কি ছিল না জানি না। কিন্তু পর্দা আর বেপর্দা সে সময়ও ছিল। তাই একটা আসল-নকল তো সব সময়ই ছিল। দোয়া করি আল্লাহ রব্বুল আলামিন নঈম নিজামের ক্ষুরধার লেখা যেন অব্যাহত রাখার তৌফিক দেন। আসলেই সত্য বড় কঠিন। আমরা একমুহূর্ত আগেও জানি না পরমুহূর্তে কী হতে চলেছে। অথচ আমাদের কত দেমাক, কত অহংকার যার কোনো সীমা নেই। লিখতে চেয়েছিলাম সেই বুলেটপ্রুফ গাড়িটি নিয়ে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। কিন্তু মনটা বড়ই খারাপ। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বুঝে ওঠার আগেই ট্রেন দুর্ঘটনায় মুহূর্তে ১১টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। কারও কিছু করার ছিল না। বাপ-মা হারা সন্তান যেমন এতিম-অসহায়, ঠিক আমরাও কেন যেন তেমন অসহায় লাচার। কারও কোনো কিছু করার নেই। কবে যেন প্রিয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে একটু সজাগ হতে, রাস্তাঘাটে ছোটবড় সব পরিবহন বা যান চালকদের একটু প্রশিক্ষণ একটু যত্ন নিতে বলেছিলাম। বলেছিলাম তারা স্বাভাবিক কি না, নেশা স্পর্শ করেছে কি না খোঁজখবর করে দেখতে। অনুরোধের রেশ কাটতে না কাটতেই এমন ভয়াবহ দুর্বিষহ রেল দুর্ঘটনা সহ্য করা যায় না।

একটি রেল দুর্ঘটনায় এ উপমহাদেশের এক প্রবীণ নেতা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর বন্ধুবান্ধব-সহকর্মীরা তাঁকে বোঝাতে গিয়েছিলেন কেন পদত্যাগ করবেন। আপনি তো আর রেল চালান না যে দুর্ঘটনার জন্য আপনি দায়ী। পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভার রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি পরে মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। আমাদের মাননীয় রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন কি পদত্যাগ করবেন? নাকি এসব দুর্ঘটনা তাঁর কাছে কোনো ধর্তব্যই নয়, সবই পানি পানি। রেলমন্ত্রীর বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম একজন নামকরা নেতা, দরদি মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে ‘আমার পাগল’ বলে আদর করতেন। সিরাজ ভাই বেঁচে থাকলে তিনি রেলমন্ত্রী হলে এ রকম বেপরোয়া রেল দুর্ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করতেন- এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। পাকিস্তান আমলে আমাদের রেলপথ ছিল হাজার-বারো শ মাইল। এখন সেটা দুই-আড়াই হাজার মাইলে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু অনিয়ম-দুর্ঘটনা বেড়েছে হাজার গুণ। শুনলাম, রেলক্রসিং নাকি সাড়ে ৩ হাজারের মতো। তার ২ হাজারই অবৈধ। নিজেরাই রাস্তা করে নিয়েছে। এও কি সম্ভব! দুনিয়ার আর কোথাও নিজেরা ইচ্ছামতো রেলক্রসিং বানাতে পারে কখনো শুনিনি। তবে বাংলাদেশে সবই সম্ভব। শুনেছি গেটম্যানকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। জানি না ওই ক্রসিংয়ে আদৌ কোনো বৈধ গেটম্যান ছিল কি না। থাকলে সে নিয়মিত বেতন পায় কি না বা একজনের কাজ আরেকজনকে দিয়ে চালায় কি না। আর শুধু রেলকেই বলব কেন, শুধু রেলকে দায়ী করে কী লাভ। যে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়েছে তারও খোঁজখবর নেওয়া দরকার, গাড়িটি রেললাইনের ওপর নষ্ট হবে কেন বা দাঁড়িয়ে যাবে কেন। গাড়ির কোনো ত্রুটি ছিল কি না। রেললাইনের ওপর গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ার তো কোনো কথা নয়। রেললাইন পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাস চালকের তো এপাশ-ওপাশ দেখা উচিত। আশপাশে গাড়ি না থাকলে কিছুটা গতি নিয়েই তো রেললাইনের ওপর মাইক্রোবাসটি ওঠার কথা। তাহলে রেললাইনের ওপরে দাঁড়িয়ে যাবে কেন? এখানে মাইক্রোবাস চালকের কোনো ত্রুটি নেই তো? আর যে মাইক্রোবাসের ১১ জন লোক মারা গেছেন, আর কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাড়ি থেকে দু-চার জন নেমে ধাক্কা দিলেই তো মাইক্রোবাসটি রেললাইন থেকে সরে যেতে পারত। সবাই কি দিশাহারা বোধশক্তিহীন ছিল কিছুই বুঝতে পারছি না। সাধারণত সব ক্রসিং পার হওয়ার সময় রেলগাড়ি অনেক দূর থেকে হুইসেল দেয়। সবকিছু খতিয়ে দেখা দরকার।

 

২৭ জুলাই বুধবার ছিল নির্বাচন কমিশনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বৈঠক। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১৭ জন প্রতিনিধি নিয়ে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা। আগের নূরুল হুদা কমিশনের চেয়ে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ধীরস্থির একজন স্বতঃস্ফূর্ত মানুষ মনে হয়েছে। প্রথমেই শুনেছিলাম আওয়ামী লীগের জন্য দুই ঘণ্টা, বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা। বিষয়টা একেবারে ভালো লাগেনি। তবে নির্বাচন কমিশন ও রকম কারও জন্য বেশি কারও জন্য কম এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা সবার জন্য সমান সময় দিতে চেয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেও দিয়েছেনও। আলোচনায় কতটা কাজ হবে জানি না, এর আগে নির্বাচন কমিশনে ইভিএম দেখার আমন্ত্রণে যাইনি। এখন দেশটা দুই ভাগে বিভক্ত। কোনো কিছু হলেই হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপি। তবে আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি নই। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জনগণের পক্ষের জনগণের দল। জনগণের কথা বলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই আমরা চেষ্টা করেছি। তলোয়ার রাইফেল নিয়ে কথা হয়েছে, কথা হয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার নিয়েও। ইভিএমের ভুল ধরতে পারলে ওই পুরস্কার নির্বাচন কমিশন দেবে, না যিনি বলেছেন সেই কমিশনার ব্যক্তিগতভাবে দেবেন। কারণ এখন তো আর কারও টাকাপয়সা কম নেই। সবাই টাকার ওপর ভাসে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল যেভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছেন আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ ভুল সবারই হয়। ভুল ধরে বসে থাকলে তার কোনো সমাধান নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় শক্ত মেরুদন্ড থাকা উচিত। নির্বাচন কমিশনের সময় দুই ধরনের। একটা নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর, আরেকটা ঘোষণার আগে। নির্বাচন কমিশনের দুই ধরনের ক্ষমতা। জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে ৯০ দিনের জন্য নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের সবকিছু। নির্বাচন কমিশন মন্ত্রিসভা, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি সবকিছু। তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রের সবকিছু নির্বাচন কমিশনের অধীন। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আলাদা নন। এ ক্ষমতা সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে। সেটা ব্যবহার করতে না পারলে, তেমন মেরুদন্ড না থাকলে সেটা সংবিধানের কোনো ত্রুটি নয়, ত্রুটি নির্বাচন কমিশনের, যাদের নিয়ে কমিশন তাদের। আমরা সব সময় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চাই। দেশবাসী তেমনটাই আশা করে, আমরাও তা-ই আশা করি। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়। তবে আমরা কেন, দেশের মানুষ কেউ ত্রুটিযুক্ত ইভিএম চায় না। আওয়ামী লীগ কেন চায় বুঝতে পারছি না। আওয়ামী লীগের বিরোধীরা যদি ইভিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পায় তার পরও কি তারা ইভিএম চাইবেন? মনে হয় না। ইভিএম নির্বাচনের জন্য কোনো ভালো কিছু নয়। তাই এ চুরির যন্ত্র বাদ দেওয়াই ভালো।

 

‘শেখ হাসিনা ও একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি’ লেখাটিতে অনেক সাড়া পেয়েছি, অনেক খুদে বার্তা পেয়েছি। দাদু আলাউদ্দিন নাসিম। আলাউদ্দিন নাসিম একসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস বা প্রধান সচিব হিসেবে অনেকদিন কাজ করেছেন। আমার দাদার নাম আলাউদ্দিন সিদ্দিকী। তাই নাসিমকে দাদু বলেই ডাকি। ভীষণ ভালো মানুষ। আরেকজনকে দাদু বলে ডাকতাম রাজশাহীর বাঘার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। কীভাবে যেন বিএনপি তাকে বাগিয়ে নিয়ে মন্ত্রী করেছিল। আওয়ামী লীগে থাকতে তাঁর সঙ্গে একবার সাংগঠনিক সফরে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম। বাঘায় চমৎকার নকশিকাঁথা তৈরি হয়। মায়েরা, বোনেরা, মেয়েরা ঘরে ঘরে নকশিকাঁথা বানায়। কি চমৎকার সেলাই, তুলনাহীন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সেসব কাঁথার সঠিক বিপণন নেই, মায়েরা-বোনেরা-মেয়েরা সত্যিকারের মজুরি পায় না। তাদের রাতদিনের পরিশ্রমের ফসল যায় ইন্দুর বাইতানের পেটে। সেই আলাউদ্দিন নাসিম খুদে বার্তায় জানিয়েছেন, ২১ আগস্ট ওই নির্মম ঘটনার সময় বুলেটপ্রুফ গাড়িটি চালাচ্ছিল মতিন নামে একজন ড্রাইভার। মিটিংয়ে যাওয়ার সময় আলাউদ্দিন নাসিম নেত্রীর সঙ্গেই ছিলেন। সেই মতিনই নাকি গাড়ি চালিয়ে পল্টন থেকে সুধা সদনে ফিরেছিলেন।

 

আমি তখন ঢাকায় ছিলাম না। তাই ঢাকার তেমন কিছুই জানতাম না। প্রণবদার বাড়ি থেকে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলাম। বাবর রোডের বাড়িতেও বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছিলাম, দীপের আম্মুকে বোনের খোঁজ নিতে বলেছিলাম। আমার স্ত্রী খুবই সাদামাটা মানুষ, ভালো করে ফোনে ডায়াল করতে জানতেন না। এখনো বোতাম টিপতে জানেন না। যা হোক, দিল্লিতে একটা থমথমে ভাব। ওরপর যেখানেই গেছি সবার আগে জানতে চেয়েছে ঢাকার খবর কী, নেত্রীর খবর কী, তিনি নিরাপদ কি না। একদিন পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে শুধু ঢাকার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। হাত মিলিয়ে গামছা গলায় পরিয়ে দেওয়ার পর তিনি প্রথমেই বলেছিলেন, ‘আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আরও অনেকেই প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আপনার যে অবদান আপনার যে ভূমিকা এটা আর কারও হবে না। আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ মানে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা।’ এরপর আর তেমন অন্য কথা হয়নি। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো শুধু ঢাকা, ঢাকা আর ঢাকার দুঃসময়ের কথা। তখন বাংলাদেশে ভারতের বর্তমান হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারের সময় ছিলেন। অমায়িক এক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। এরপর সকালে গিয়ে রাতেই ফিরেছিলাম আজমির শরিফ থেকে। কিছুই ভালো লাগছিল না। মনে হচ্ছিল তখনই ফিরে আসি। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট ছিল। ফোন করেছিলাম দিল্লির অফিসে। তারা বলছিল যখন চাইবেন তখনই টিকিট পাবেন। টিকিট নিশ্চিত করতে লোক পাঠিয়েছিলাম। ঠিক সে সময়ই কে যেন বলল ২১ আগস্টের অনেক আহত দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে আসছেন। টিকিট নিশ্চিত না করে এক দিন বা দুই দিন দেরি করেছিলাম। জীবনে প্রথম গিয়েছিলাম দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে। সে তো হাসপাতাল নয়, যেন ফাইভ স্টার হোটেল। দিল্লির অশোকা হোটেলের চেয়েও চমৎকার।

 

অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়ে দেখি অনুপ কুমার সাহা তুলসীকে। তুলসী ফরিদপুরের ছেলে। জননেতা রাজ্জাক ভাইকে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তুলসী আহতের প্রায় সবাইকে দেখিয়ে ছিল। প্রথমে দেখা হয়েছিল বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে। খুবই অসুস্থ ছিল। বাহাউদ্দিন নাছিমের জন্য সেদিন বড় মায়া হয়েছিল, বড় কষ্ট হয়েছিল। সে যে আমার হাত ধরে ছিল তাতে উষ্ণতা ছিল, আবেগ ছিল। এরপর গিয়েছিলাম প্রিয় ওবায়দুল কাদেরের কাছে। খুবই খারাপ ছিল তাঁর অবস্থা। তিনি দুই হাত চেপে বলেছিলেন, ‘কাদের ভাই, আমরা কি শেষ হয়ে যাব? একটা কিছু করেন। আমাদের শেষ করে দেবে।’ তাঁর আকুলতা বড় বেশি আমার বুকে বেঁধেছিল। নাসিম, ওবায়দুল কাদের, আবদুর রাজ্জাক, মমতাজ হোসেন, নজরুল ইসলাম বাবু, অজয় কর খোকন, বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম ভর্তি ছিলেন। রাজ্জাক ভাই তাঁর ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে ড্রেসিংরুমে গিয়েছিলেন। সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত আমি যাওয়ার কিছু আগে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর আঘাত একটু কম ছিল। বড় কষ্ট নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতাল ছেড়েছিলাম। সেসব দিনের কথা মনে হলে এখনো বড় বেশি খারাপ লাগে। পরদিন ফিরেছিলাম ঢাকার পথে। বিমান কিছুটা দেরিতে ছিল। তাই ভিআইপিতে বসে ছিলাম। সেখানে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বীণা সিক্রি ছিলেন। বিমানে উঠে দেখি আমাদের দুজনের পাশাপাশি সিট। ভদ্রমহিলাকে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে মুচকুন্দ দুবে আর বীণা সিক্রির মতো অমন সফল হাইকমিশনার আর দেখিনি। বিমান দেরিতে দিল্লি পৌঁছলেও ওড়ার সময় যা ছিল তার চাইতে ১০ মিনিট কম সময়ে ঢাকায় নেমেছিল। আমার স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে বীণা সিক্রির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। পরে দাওয়াত করে বেশ কয়েকবার বীণা সিক্রির বাড়িতে আমার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের খাইয়েছেন। মান্যবর হাইকশিনার আমার বাড়িতে এসে খাবার গ্রহণ করেছেন। সত্যিই একজন যথার্থ যোগ্য মানুষ ছিলেন বীণা সিক্রি। বিমানবন্দর থেকে সোজা সুধা সদনে বোনকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি বড় উৎকণ্ঠিত ছিলেন, চিন্তিত ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯০-এ দেশে ফিরলে যেভাবে আকুল হয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন, ঠিক তেমনি সেদিনও ওভাবে ব্যাকুল হয়ে আমাকে, ছেলেমেয়েকে, নাসরীনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আমাদের সবার চোখে ছিল পানি। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে, তাকে শেষ করে দিতে এটা যে জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র তা বারবার বলছিলেন। আমরাও খুব ব্যথিত ছিলাম। কারণ এভাবে কারও জনসভায় আক্রমণ কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। অথচ তা-ই হয়েছে। এ ধরনের আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে, এবার নেত্রী শেখ হাসিনাকে আক্রমণ। এমন নিন্দনীয় কাজ প্রাণ দিয়ে প্রতিহত করা উচিত, প্রতিরোধ করা উচিত। যতটা সম্ভব আমরা তা-ই করার চেষ্টা করছি, এখনো করি।

 

বোন শেখ হাসিনাকে দেখে বাড়ি ফিরলে মা প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হাসিনাকে কেমন দেখলি? মা আমার কেমন আছে?’ বলেছিলাম, খুব একটা ভালো না। মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন, চিন্তিত ছিলেন। মনে হয় না সারা জীবনে কখনো বাড়ির কাছে এসে মাকে না দেখে অন্য কোথাও গেছি। সেই ছিল জীবনে প্রথম। বিমান থেকে নেমে মাকে দেখতে বাবর রোডে না গিয়ে বোনের খবর নিতে তাঁকে দেখতে সুধা সদনে গিয়েছিলাম।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com    সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com