শহীদ জননী জাহানার ইমামের ৯৪তম জন্মদিন আজ

শহীদ জননী জাহানার ইমামের ৯৪তম জন্মদিন আজ। ১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মৃত্যুবরণ করেন ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে। তার ডাক নাম জুড়ূ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়াগো স্টেট কলেজ থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন থেকে ডিগ্রি অর্যন করেন তিনি। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ আবদুল আলী ও সৈয়দা হামিদা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহন করেন জাহানারা ইমাম। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী।

তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি। একাত্তরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।পরবর্তীতে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সব মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷ রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন৷

 

একাত্তরে একই সঙ্গে স্বামী ও সন্তানকে হারিয়েছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। জাহানারা ইমামের পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাঁর ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমি আমেরিকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ ত্যাগ করে দেশের ডাকে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রিয়জনকে হারানোর সেই বেদনা তাঁর ভেতর জ্বেলে দিয়েছিল দ্রোহের আগুন।

 

১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ তাঁর নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের মাধ্যমে একাত্তরের শীর্ষ নরঘাতক গোলাম আযমের প্রতীকী ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এরপর আমৃত্যু এই সংগ্রামী নারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিবেদিত করেন। যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচারে আনার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।

 

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমির ঘোষণা করলে দেশের জনগণ এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। জামায়াতের এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ৭০টি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ১৯৯২ সালের ২১ জানুয়ারি গড়ে ওঠে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

 

পরবর্তীতে আরও বিস্তৃত কলেবরে ১১ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। সর্বসম্মতিক্রমে এই কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও সন্তানহারা, দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গোলাম আযম এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে ওঠে।

 

আন্দোলনের অংশ হিসেবে জনগণের আকাঙ্ক্ষায় ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে ঐতিহাসিক গণআদালত। শহীদ জননীর সভাপতিত্বে লাখ লাখ বিচারপ্রার্থীর উপস্থিতিতে ঘাতকদের হোতা গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার হয়। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নির্দিষ্ট ১০টি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।

শহীদ জননী জাহানার কর্মজীবন

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত জাহানারা ইমাম ময়মনসিংহে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেন। এ ছাড়া কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। মৃত্যুবরণ

 

দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের কাছে জাহানারা ইমাম দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অনন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে আজও অবিস্মরণীয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ব্যাংকান্স্যুরেন্স ব্যবসা শুরুর অনুমতি পেল প্রাইম ব্যাংক পিএলসি

» বিএটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে শেহজাদ মুনীমের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মনীষা আব্রাহাম

» পাঁচবিবিতে পুকুরের পানি সেচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

» এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশনা রাজনৈতিক : ইসি আলমগীর

» রেললাইনে মোবাইলফোনে কথার সময় ট্রেনের ধাক্কায় রেল কর্মচারীর মৃত্যু

» ১৭ বছর বয়সে অভিনয়ে হাতেখড়ি, এখন তিনি কয়েকশো কোটি টাকার মালিক

» তীব্র গরমে উচ্চ আদালতে আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না

» নিবন্ধন ও আবেদনের বাইরে থাকা পোর্টালগুলো বন্ধ করা হবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

» জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান আইজিপির

» ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মুখে কুলুপ বাইডেন প্রশাসনের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শহীদ জননী জাহানার ইমামের ৯৪তম জন্মদিন আজ

শহীদ জননী জাহানার ইমামের ৯৪তম জন্মদিন আজ। ১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মৃত্যুবরণ করেন ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে। তার ডাক নাম জুড়ূ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়াগো স্টেট কলেজ থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন থেকে ডিগ্রি অর্যন করেন তিনি। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ আবদুল আলী ও সৈয়দা হামিদা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহন করেন জাহানারা ইমাম। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী।

তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি। একাত্তরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।পরবর্তীতে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সব মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷ রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন৷

 

একাত্তরে একই সঙ্গে স্বামী ও সন্তানকে হারিয়েছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। জাহানারা ইমামের পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাঁর ১৯ বছর বয়সী বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমি আমেরিকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ ত্যাগ করে দেশের ডাকে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রিয়জনকে হারানোর সেই বেদনা তাঁর ভেতর জ্বেলে দিয়েছিল দ্রোহের আগুন।

 

১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ তাঁর নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের মাধ্যমে একাত্তরের শীর্ষ নরঘাতক গোলাম আযমের প্রতীকী ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এরপর আমৃত্যু এই সংগ্রামী নারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিবেদিত করেন। যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচারে আনার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।

 

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমির ঘোষণা করলে দেশের জনগণ এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। জামায়াতের এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ৭০টি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ১৯৯২ সালের ২১ জানুয়ারি গড়ে ওঠে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

 

পরবর্তীতে আরও বিস্তৃত কলেবরে ১১ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। সর্বসম্মতিক্রমে এই কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও সন্তানহারা, দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গোলাম আযম এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে ওঠে।

 

আন্দোলনের অংশ হিসেবে জনগণের আকাঙ্ক্ষায় ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে ঐতিহাসিক গণআদালত। শহীদ জননীর সভাপতিত্বে লাখ লাখ বিচারপ্রার্থীর উপস্থিতিতে ঘাতকদের হোতা গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার হয়। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নির্দিষ্ট ১০টি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।

শহীদ জননী জাহানার কর্মজীবন

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত জাহানারা ইমাম ময়মনসিংহে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেন। এ ছাড়া কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। মৃত্যুবরণ

 

দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের কাছে জাহানারা ইমাম দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অনন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে আজও অবিস্মরণীয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com