রাজধানীতে ছিনতাইয়ের হিড়িক

রাজধানীর ফার্মগেটে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছিনতাইকারীরা তার হাতব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। ওই হাতব্যাগে ৭ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে ১০টার দিকে ফার্মগেট সেজান পয়েন্টের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এভাবে রাজধানীতে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিতে বেপরোয়া ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহার করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চক্রের সদস্যরা। এদের টার্গেট ভ্যানিটিব্যাগ, হাতব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোনসেট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানান, রাজধানীতে রয়েছে শতাধিক ছিনতাই স্পট। প্রায় ৬০০ ছিনতাইকারী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো রাজধানী। এদের কেউ অজ্ঞান পার্টি, কেউ মলম পার্টি, কেউ বা আবার সালাম পার্টির সদস্য। শুধু রাতের আধারে নয়, প্রকাশ্য দিনের বেলায়ও সর্বস্ব লুটে নিয়ে মুহূর্তে সটকে পড়ে ছিনতাইকারী। সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা আতঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে। ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকতার মতো পেশার কিছু লোকও। রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও। পেশাজীবী থেকে এসব ব্যক্তি হয়ে উঠছেন পেশাদার ছিনতাইকারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ। অনেকে আবার আহত হয়ে ভোগ করছেন করুণ পরিণতি। ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারানো বা নির্মম ঘটনার শিকার এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এর বাইরেও অহরহ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি ছিনতাইয়ের কবল থেকে মন্ত্রী কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রক্ষা পাচ্ছেন না। প্রতিদিন গড়ে ২৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

 

গত ২১ জুলাই রাজধানীর কারওরান বাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোনটি বাসের জানালা দিয়ে ছিনতাই করে একটি চক্র। ওই শিক্ষার্থী ছিনতাইকারীকে ধাওয়া দিয়ে ধরতে পারেননি। ওই সময় আরেক বাসের যাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় পারিশা ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরেন। পারিশার সঙ্গে থাকা তার বন্ধুরা ঘটনাস্থল থেকে আরেক সন্দেহভাজনকে আটক করে। ৩ আগস্ট পারিশার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মো. রিপন ওরফে আকাশ, মো. শফিক এবং একজন কিশোর ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

 

গত ৬ জুন রাতে টঙ্গী ব্রিজের ওপরে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন মো. সাহেদ হোসেন নামে এক যুবক। ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সাহেদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে সাহেদকে উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যান সাহেদ। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাহেদ। সাহেদের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ফতিয়ার দাউড়ে। শুধু তারা দুজন নন, সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রায়ই নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী হারাতে হচ্ছে। রাত গভীর হলে যানবাহন ও মানুষের সমাগম কমে গেলে ছিনতাইকারীরা বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তখন বেশকিছু এলাকায় রিকশা ও পায়ে হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশীয় অস্ত্রধারী ও দলবদ্ধ এসব ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ করাও কঠিন। একটু বল প্রয়োগ করতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় থাকে। ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে বিভিন্ন স্পটে দিনে বা সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রাতে বা ভোরে ছিনতাইকারীরা বের হয় প্রাইভেটকার নিয়ে। মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ, রিকশাযাত্রীদের মোবাইল ফোন সেট, মানিব্যাগ ছিনতাই করছে। এমনকি যাত্রী বা পথচারীদের পথরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করছে। কেড়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। ভয় দেখিয়ে এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনাই থানা-পুলিশের কাছে যায় না। চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার বেশির ভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। এতে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয় কম। মামলা হলেও চুরি ও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। এতে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

 

ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, পুলিশ জানে কোন কোন এলাকা ছিনতাইপ্রবণ। এরপরও ব্যবস্থা নিতে তাদের অনেক অনীহা। আর ঘটনা জানালেও প্রভাবশালী না হলে প্রতিকার পাওয়া যায় না। বরং নানান ভোগান্তি সইতে হয়। তবে পুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) কল করেও এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালকুদার বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চলছে। আগে যারা ছিনতাই করে ধরা পড়েছে তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে যারা ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে টানা পার্টির সংখ্যা বেশি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সমন্বিত তৎপরতার মাধ্যমে ছিনতাইকারীদের রুখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীতে বিভিন্ন ছিনতাই স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্পটে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। কয়েক মাসে সহস্রাধিক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চিহ্নিত স্পটে মাঝে মাঝে ঝটিকা অভিযান চালানো হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধে র‌্যাব সর্বদা তৎপর রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটে ছিনতাই বেড়েছে। বেড়েছে মাদক সেবনও। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা বা মাদকসেবীরা ছিনতাইকে পেশা বা কাজ হিসেবে বেছে নিচ্ছে। যখন জীবন কেন্দ্রীক সংকট বেড়ে যায় তখন এই ধরনের অপরাধ বেড়ে যায়। এটাকে সনাতনী অপরাধ বলে। ছিনতাইকে বড় কোনো ধরনের অপরাধ হিসেবে এখনো গণ্য করা হয় না। ফলে যারা গ্রেফতার হয়, তারা আদালত থেকে দ্রুত জামিনে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাইকারীদের যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। যারা ছিনতাই করছে তাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি যারা পৃষ্ঠপোষক তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ব্যাংকান্স্যুরেন্স ব্যবসা শুরুর অনুমতি পেল প্রাইম ব্যাংক পিএলসি

» বিএটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে শেহজাদ মুনীমের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মনীষা আব্রাহাম

» পাঁচবিবিতে পুকুরের পানি সেচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

» এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশনা রাজনৈতিক : ইসি আলমগীর

» রেললাইনে মোবাইলফোনে কথার সময় ট্রেনের ধাক্কায় রেল কর্মচারীর মৃত্যু

» ১৭ বছর বয়সে অভিনয়ে হাতেখড়ি, এখন তিনি কয়েকশো কোটি টাকার মালিক

» তীব্র গরমে উচ্চ আদালতে আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না

» নিবন্ধন ও আবেদনের বাইরে থাকা পোর্টালগুলো বন্ধ করা হবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

» জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান আইজিপির

» ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মুখে কুলুপ বাইডেন প্রশাসনের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রাজধানীতে ছিনতাইয়ের হিড়িক

রাজধানীর ফার্মগেটে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছিনতাইকারীরা তার হাতব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। ওই হাতব্যাগে ৭ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে ১০টার দিকে ফার্মগেট সেজান পয়েন্টের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এভাবে রাজধানীতে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিতে বেপরোয়া ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহার করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চক্রের সদস্যরা। এদের টার্গেট ভ্যানিটিব্যাগ, হাতব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোনসেট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানান, রাজধানীতে রয়েছে শতাধিক ছিনতাই স্পট। প্রায় ৬০০ ছিনতাইকারী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো রাজধানী। এদের কেউ অজ্ঞান পার্টি, কেউ মলম পার্টি, কেউ বা আবার সালাম পার্টির সদস্য। শুধু রাতের আধারে নয়, প্রকাশ্য দিনের বেলায়ও সর্বস্ব লুটে নিয়ে মুহূর্তে সটকে পড়ে ছিনতাইকারী। সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা আতঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে। ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকতার মতো পেশার কিছু লোকও। রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও। পেশাজীবী থেকে এসব ব্যক্তি হয়ে উঠছেন পেশাদার ছিনতাইকারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ। অনেকে আবার আহত হয়ে ভোগ করছেন করুণ পরিণতি। ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারানো বা নির্মম ঘটনার শিকার এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এর বাইরেও অহরহ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি ছিনতাইয়ের কবল থেকে মন্ত্রী কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রক্ষা পাচ্ছেন না। প্রতিদিন গড়ে ২৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

 

গত ২১ জুলাই রাজধানীর কারওরান বাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোনটি বাসের জানালা দিয়ে ছিনতাই করে একটি চক্র। ওই শিক্ষার্থী ছিনতাইকারীকে ধাওয়া দিয়ে ধরতে পারেননি। ওই সময় আরেক বাসের যাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় পারিশা ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরেন। পারিশার সঙ্গে থাকা তার বন্ধুরা ঘটনাস্থল থেকে আরেক সন্দেহভাজনকে আটক করে। ৩ আগস্ট পারিশার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মো. রিপন ওরফে আকাশ, মো. শফিক এবং একজন কিশোর ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

 

গত ৬ জুন রাতে টঙ্গী ব্রিজের ওপরে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন মো. সাহেদ হোসেন নামে এক যুবক। ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সাহেদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে সাহেদকে উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যান সাহেদ। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাহেদ। সাহেদের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ফতিয়ার দাউড়ে। শুধু তারা দুজন নন, সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রায়ই নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী হারাতে হচ্ছে। রাত গভীর হলে যানবাহন ও মানুষের সমাগম কমে গেলে ছিনতাইকারীরা বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তখন বেশকিছু এলাকায় রিকশা ও পায়ে হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশীয় অস্ত্রধারী ও দলবদ্ধ এসব ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ করাও কঠিন। একটু বল প্রয়োগ করতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় থাকে। ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে বিভিন্ন স্পটে দিনে বা সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রাতে বা ভোরে ছিনতাইকারীরা বের হয় প্রাইভেটকার নিয়ে। মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ, রিকশাযাত্রীদের মোবাইল ফোন সেট, মানিব্যাগ ছিনতাই করছে। এমনকি যাত্রী বা পথচারীদের পথরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করছে। কেড়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। ভয় দেখিয়ে এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনাই থানা-পুলিশের কাছে যায় না। চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার বেশির ভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। এতে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয় কম। মামলা হলেও চুরি ও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। এতে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

 

ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, পুলিশ জানে কোন কোন এলাকা ছিনতাইপ্রবণ। এরপরও ব্যবস্থা নিতে তাদের অনেক অনীহা। আর ঘটনা জানালেও প্রভাবশালী না হলে প্রতিকার পাওয়া যায় না। বরং নানান ভোগান্তি সইতে হয়। তবে পুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) কল করেও এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালকুদার বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চলছে। আগে যারা ছিনতাই করে ধরা পড়েছে তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে যারা ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে টানা পার্টির সংখ্যা বেশি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সমন্বিত তৎপরতার মাধ্যমে ছিনতাইকারীদের রুখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীতে বিভিন্ন ছিনতাই স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্পটে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। কয়েক মাসে সহস্রাধিক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চিহ্নিত স্পটে মাঝে মাঝে ঝটিকা অভিযান চালানো হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধে র‌্যাব সর্বদা তৎপর রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটে ছিনতাই বেড়েছে। বেড়েছে মাদক সেবনও। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা বা মাদকসেবীরা ছিনতাইকে পেশা বা কাজ হিসেবে বেছে নিচ্ছে। যখন জীবন কেন্দ্রীক সংকট বেড়ে যায় তখন এই ধরনের অপরাধ বেড়ে যায়। এটাকে সনাতনী অপরাধ বলে। ছিনতাইকে বড় কোনো ধরনের অপরাধ হিসেবে এখনো গণ্য করা হয় না। ফলে যারা গ্রেফতার হয়, তারা আদালত থেকে দ্রুত জামিনে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাইকারীদের যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। যারা ছিনতাই করছে তাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি যারা পৃষ্ঠপোষক তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com