রাজগঞ্জের ঝাঁপার দুটি ভাসমান সেতু বদলে দিয়েছে এলাকার চিত্র

উত্তম চক্রবর্তী,মণিরামপুর অফিস।। যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের প্রচীনতম বাণিজ্যিক বাজার রাজগঞ্জ। এই বাজার থেকে কয়েক কদম এগোলেই ঝাঁপা বাঁওড়। এক কথায় বলা যায়, বাজারের গা-ঘেসে বয়ে গেছে বাঁওড়টি। এযেনো একটি বিশাল জলরাশি। রাতারাতি ঝাঁপা বাঁওড় দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তার পরিচয়ের কারণ দুটি ভাসমান সেতু। ঝাঁপা গ্রামের ১০৮ জন লোক একত্রিত হয়ে ১ কোটির অধিক টাকা খরচ করে দেশের প্রথম ও দীর্ঘতম জেলা প্রশাসক ও বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু নামের দুটি সেতু ঝাঁপা বাঁওড়ের উপর নির্মাণ করেছেন। এই ভাসমান সেতু দুটিকে কেন্দ্র করেই ঝাঁপা বাঁওড় পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ বড় একটি পিকনিক স্পট। সব বয়সের মানুষ সেতু দেখার জন্য সারাদেশ থেকে এখানে আসেন এবং পিকনিক মৌসুমে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে পিকনিক করতে এই দৃষ্টনন্দন সেতু পাড়ে ছুটে আসেন ভ্রমণপ্রেমীরা। সারাদিন সময় কাটিয়ে নাচ, গান, আনন্দ, উল্লাশ করে পড়ন্ত বিকালের পর একে একে সেতু ছাড়েন ভ্রমণপ্রেমীরা। এই ভাসমান সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, ভ্যান, ইজিবাইক, এমনকি প্রাইভেট কারও চলছে।
সেতু দুটি নির্মাণ হওয়ার পর পাল্টে গেছে পুরো রাজগঞ্জ এলাকার চেহারা, পাশাপাশি ইতিহাসও বদলে গেছে। সেতুতে আগত দর্শনার্থীদের কেন্দ্র করে বাঁওড় পাড়ে গড়ে উঠেছে গাড়ি পার্কিং স্পট, সেতু পার্কে বসানো হয়েছে নাগরদোলা, বিরিয়ানী, চটপটি, ফুচকাসহ বিভিন্ন ধরণের খাবারের দোকান, বাচ্চাদের খেলনা ও ফুলের দোকান। এছাড়াও মনোরম পরিবেশের বিশাল আকৃতির ঝাঁপা বাঁওড়ে ভ্রমণপ্রেমীদের বিনোদন, নৌকা ও ট্রলার ভ্রমণের জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন অর্ধশত মাঝি।মণিরামপুর উপজেলার দ্বীপখ্যাত ঝাঁপা গ্রামটি রাজগঞ্জ বাজারসহ উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। গ্রামটির তিন পাশদিয়ে ঘেরা এই বাঁওড় ও একপাশ কপোতাক্ষ নদ দ্বারা বেষ্টিত। গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে নৌকায় চড়ে রাজগঞ্জ বাজারসহ উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াত করতে হতো। শিক্ষার্থীরা নৌকা চেপে ঝুঁকি নিয়ে বাঁওড় পার হতো। মুমুর্শ রোগী সময়মত পার করা যেতো না। ফলে অনেক মুমুর্শ রোগী মারা যেতো। স্থানীয়রা সুত্রে জানা গেছে, ঝাঁপা বাঁওড়ে এক সময় মেশিন দিয়ে বালি তোলা হচ্ছিলো। সেই মেশিনটি রাখা হয়েছিল প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ভাসমান অবস্থায়। এ দৃশ্যদেখে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করেন ঝাঁপা গ্রামবাসী। এরপর গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বৈঠক এবং তহবিল গঠনের কাজ শুরু করেন। জেলা প্রশাসক ভাসমান সেতু নির্মাণের জন্য ঝাঁপা গ্রামের ৬০ ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করা হয় এবং স্থানীয় লেদ শ্রমিকদের সহায়তায় প্লাষ্টিকের ড্রামের আর স্টীলের পাত দিয়ে নির্মান করা হয় ১ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট চওড়া ভাসমান সেতু। সেতুটি সেসময়ের যশোর জেলা প্রশাসক আশরাফুল ইসলাম উৎসব মুখর পরিবেশে ও আনুষ্ঠানিকতার সাথে উদ্বোধন করেছিলেন। সেতুটি উদ্বোধনের পর ঝাঁপা বাঁওড়ের দু’পাশের (ঝাঁপা ও রাজগঞ্জ) প্রায় ২০ হাজার মানুষের মধ্যে চলাচলের সেতুবন্ধন হয়েছে। এরপর এ সেতুর পাশেই ঝাঁপা গ্রামের ১৪৮জন একত্রিত হয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ্য টাকা খরচ করে বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু নামের আরেকটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেন। এই সেতুটিও ব্যাপক পরিসরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি উদ্বোধন করেন। কথা হয় বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ও জেলা প্রশাসক ভাসমান সেতু পরিচালনা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন তাঁরা বলেন, ঝাঁপা বাঁওড়ের উপর এই ভাসমান সেতু আমরা (গ্রামবাসী) পারাপার হওয়ার জন্য নির্মাণ করেছিলাম। কিন্তু দেশখ্যাত হবে আমরা বুঝতে পারিনি।
সেতু নির্মাণ হওয়ার পর স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরা প্রচার করে এবং দেশখ্যাত হয়। তারপর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসে এই দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু দেখতে। এখন সেতু এলাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপ্রেমী মানুষেরা এই সেতুতে ভ্রমণে আসে।
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মাদক বিক্রি ও সেবন করার অপরাধে ১০ জন গ্রেফতার

» ‘জীবনে অনেক ভুল করেছি’—হঠাৎ কী হলো পরিণীতির?

» ‘মুস্তাফিজকে কেন পুরো আইপিএল খেলতে দিচ্ছে না বাংলাদেশ’

» কমেছে সবজির দাম, চড়া মাছের বাজার

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ২৭ জন গ্রেপ্তার

» জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাসের মৃত্যু

» যে যায় সবুজ অরণ্যে

» ক্যানসার প্রতিরোধে আশা-ভরসা হয়ে উঠেছে এআই

» মালয়েশিয়ায় বহু প্রতিক্ষিত ই-পাসপোর্ট সেবা চালু

» কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরান

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রাজগঞ্জের ঝাঁপার দুটি ভাসমান সেতু বদলে দিয়েছে এলাকার চিত্র

উত্তম চক্রবর্তী,মণিরামপুর অফিস।। যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের প্রচীনতম বাণিজ্যিক বাজার রাজগঞ্জ। এই বাজার থেকে কয়েক কদম এগোলেই ঝাঁপা বাঁওড়। এক কথায় বলা যায়, বাজারের গা-ঘেসে বয়ে গেছে বাঁওড়টি। এযেনো একটি বিশাল জলরাশি। রাতারাতি ঝাঁপা বাঁওড় দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তার পরিচয়ের কারণ দুটি ভাসমান সেতু। ঝাঁপা গ্রামের ১০৮ জন লোক একত্রিত হয়ে ১ কোটির অধিক টাকা খরচ করে দেশের প্রথম ও দীর্ঘতম জেলা প্রশাসক ও বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু নামের দুটি সেতু ঝাঁপা বাঁওড়ের উপর নির্মাণ করেছেন। এই ভাসমান সেতু দুটিকে কেন্দ্র করেই ঝাঁপা বাঁওড় পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ বড় একটি পিকনিক স্পট। সব বয়সের মানুষ সেতু দেখার জন্য সারাদেশ থেকে এখানে আসেন এবং পিকনিক মৌসুমে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে পিকনিক করতে এই দৃষ্টনন্দন সেতু পাড়ে ছুটে আসেন ভ্রমণপ্রেমীরা। সারাদিন সময় কাটিয়ে নাচ, গান, আনন্দ, উল্লাশ করে পড়ন্ত বিকালের পর একে একে সেতু ছাড়েন ভ্রমণপ্রেমীরা। এই ভাসমান সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, ভ্যান, ইজিবাইক, এমনকি প্রাইভেট কারও চলছে।
সেতু দুটি নির্মাণ হওয়ার পর পাল্টে গেছে পুরো রাজগঞ্জ এলাকার চেহারা, পাশাপাশি ইতিহাসও বদলে গেছে। সেতুতে আগত দর্শনার্থীদের কেন্দ্র করে বাঁওড় পাড়ে গড়ে উঠেছে গাড়ি পার্কিং স্পট, সেতু পার্কে বসানো হয়েছে নাগরদোলা, বিরিয়ানী, চটপটি, ফুচকাসহ বিভিন্ন ধরণের খাবারের দোকান, বাচ্চাদের খেলনা ও ফুলের দোকান। এছাড়াও মনোরম পরিবেশের বিশাল আকৃতির ঝাঁপা বাঁওড়ে ভ্রমণপ্রেমীদের বিনোদন, নৌকা ও ট্রলার ভ্রমণের জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন অর্ধশত মাঝি।মণিরামপুর উপজেলার দ্বীপখ্যাত ঝাঁপা গ্রামটি রাজগঞ্জ বাজারসহ উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। গ্রামটির তিন পাশদিয়ে ঘেরা এই বাঁওড় ও একপাশ কপোতাক্ষ নদ দ্বারা বেষ্টিত। গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে নৌকায় চড়ে রাজগঞ্জ বাজারসহ উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াত করতে হতো। শিক্ষার্থীরা নৌকা চেপে ঝুঁকি নিয়ে বাঁওড় পার হতো। মুমুর্শ রোগী সময়মত পার করা যেতো না। ফলে অনেক মুমুর্শ রোগী মারা যেতো। স্থানীয়রা সুত্রে জানা গেছে, ঝাঁপা বাঁওড়ে এক সময় মেশিন দিয়ে বালি তোলা হচ্ছিলো। সেই মেশিনটি রাখা হয়েছিল প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ভাসমান অবস্থায়। এ দৃশ্যদেখে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করেন ঝাঁপা গ্রামবাসী। এরপর গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বৈঠক এবং তহবিল গঠনের কাজ শুরু করেন। জেলা প্রশাসক ভাসমান সেতু নির্মাণের জন্য ঝাঁপা গ্রামের ৬০ ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করা হয় এবং স্থানীয় লেদ শ্রমিকদের সহায়তায় প্লাষ্টিকের ড্রামের আর স্টীলের পাত দিয়ে নির্মান করা হয় ১ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট চওড়া ভাসমান সেতু। সেতুটি সেসময়ের যশোর জেলা প্রশাসক আশরাফুল ইসলাম উৎসব মুখর পরিবেশে ও আনুষ্ঠানিকতার সাথে উদ্বোধন করেছিলেন। সেতুটি উদ্বোধনের পর ঝাঁপা বাঁওড়ের দু’পাশের (ঝাঁপা ও রাজগঞ্জ) প্রায় ২০ হাজার মানুষের মধ্যে চলাচলের সেতুবন্ধন হয়েছে। এরপর এ সেতুর পাশেই ঝাঁপা গ্রামের ১৪৮জন একত্রিত হয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ্য টাকা খরচ করে বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু নামের আরেকটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেন। এই সেতুটিও ব্যাপক পরিসরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি উদ্বোধন করেন। কথা হয় বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ও জেলা প্রশাসক ভাসমান সেতু পরিচালনা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন তাঁরা বলেন, ঝাঁপা বাঁওড়ের উপর এই ভাসমান সেতু আমরা (গ্রামবাসী) পারাপার হওয়ার জন্য নির্মাণ করেছিলাম। কিন্তু দেশখ্যাত হবে আমরা বুঝতে পারিনি।
সেতু নির্মাণ হওয়ার পর স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরা প্রচার করে এবং দেশখ্যাত হয়। তারপর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসে এই দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু দেখতে। এখন সেতু এলাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপ্রেমী মানুষেরা এই সেতুতে ভ্রমণে আসে।
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com