যে নারীরা গোসলের বদলে শরীরে মাখেন লালমাটি

আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত একটি সুন্দর দেশ নামিবিয়া। এখানেই বাস হিম্বা নামের এক উপজাতিদের। যাদের দেখতে অন্যান্য উপজাতিদের মতো হলেও তারা বিশেষ বেশ কিছু কারণে। স্বল্প পোশাক, গা ভর্তি পুঁতির গয়না ছাড়াও শরীরে লেগে থাকা কাদামাটি তাদের আলাদা করেছে।

 

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, হিম্বারা কখনো গোসল করেন না। এই জাতির মানুষেরা হিম্বা, ওমুহিম্বা বা ওভাহিম্বা নামেও পরিচিত। নামিবিয়ার উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে কুনেন অঞ্চলে এদের বাস বেশি। হিম্বারা তাদের লালচে ত্বকের জন্য জনপ্রিয়। আসলে তারা ত্বকে এক ধরনের লাল মাটি ব্যবহার করে।

এখানকার নারীরা শরীরকে চকচকে ও সুগন্ধযুক্ত করতে সর্বদা একটি বিশেষ ধরনরর আয়ুর্বেদিক ওষুধ বা ক্রিম ব্যবহার করে। এই বিশেষ আয়ুর্বেদিক ওষুধ বা ক্রিমটি প্রকৃতপক্ষে নারীদের প্রশান্তি এবং এক ধরনের অনবদ্য গ্ল্যামার দেয়। এর নাম রেড অকরি। হিম্বারা রেড অকরি (গিরিমাটি বিশেষ ও তার রং) নামক ক্রিম তৈরির করার জন্য বিখ্যাত।

 

এই ক্রিম শুধু হিম্বা নারীরাই ব্যবহার করে। এটি সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। পাশাপাশি পোকামাকড়ের কামড়ও প্রতিরোধ করে। ক্রিমটি ব্যবহারের ফলে শরীরে তেমন লোমও হয় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য হিম্বা নারীরা নিয়মিত ধোঁয়ায় স্নান করে নেয়।

 

যেহেতু তারা গোসল করেন তাই শরীর পরিষ্কার রাখতে এবং দুর্গন্ধ মুক্ত রাখেন বিশেষ এক পদ্ধতিতে। পানির বদলে স্মোক বাথ বা ধোঁয়ার মাখেন শরীরে। এভাবেই শরীর পরিষ্কার রাখেন তারা। এর আগে শরীরে বিশেষ লালমাটি মেখে নেন। এরপর একটি পাত্রে কয়লার সঙ্গে কমিফোরা গাছের ডাল এবং পাতা মিশিয়ে নেন।

 

দক্ষিণ আফ্রিকার এই কমিফোরা গাছের পাতা বেশ সুগন্ধি। এজন্য এই পাতা ব্যবহার করেন তারা। যেহেতু দিনের পর দিন গোসল ছাড়াই থাকতে হয় তাই শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে এই পাতা সাহায্য করে। সেই মিশ্রণে আগুন দিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা হয়। শরীরে মোটা কাপড় বা কম্বল পেচিয়ে সেই পাত্রের সামনে বসে পড়েন তারা। যতক্ষণ না শরীর থেকে ঘাম পড়ছে তত ক্ষণ পর্যন্ত তারা এই বিশেষ পদ্ধতিতে স্নান করেন। চুলে মাখেন মাটি এবং গোবরের মিশ্রণ।

 

তবে গোসল না করার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত হিম্বারা যে অঞ্চলে বাস করেন তার পুরোটাই মরুভূমি। ফলে গোসলের জন্য পানি পাওয়া কষ্টসাধ্য। এছাড়াও তাদের প্রথা অনুযায়ী শরীরে পানি ছোঁয়ানো তাদের জন্য অশুভ। বিশেষ করে নারীদের জন্য। তবে এখন অনেক হিম্বা নারী গোসল করেন। সেটাও শুধু বিয়ের দিন।

 

হিম্বাদের প্রধান কাজ হচ্ছে পশুপালন এবং চাষবাস। পুরুষরা এই কাজগুলো করেন। নারীদের শুধু একটিই কাজ তা হচ্ছে- জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করে রান্না করা ও সন্তানদের দেখাশোনা করা। হিম্বা পুরুষরা একাধিক বিয়ে করতে পারেন। অন্যদিকে নিজেদের স্ত্রীদের অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর সুযোগ করে দেয়। যাকে বলা হয় ‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অতিথির কাছে এক রাতের জন্য থাকার অনুমতি দেন।

 

যদিও একজন নারী অতিথির সঙ্গে ঘুমাতে অস্বীকার করতে পারেন। তবে বেশিরভাগই স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটান। তাদের ধারণা, এতে সম্পর্ক ভালো থাকে ও হিংসা দূর হয়।

 

এদের পোশাকও স্বল্প হয়। শরীরের নিচের অংশে কাপড় থাকলেও উপরের অংশে কোনো কাপড় পরেন না তারা। নারীরা বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী গয়না পরেন। হিম্বা নারীরা যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছান তখন ছাগল অথবা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরিকৃত মুকুট যা এরিম্বি নামে পরিচিত। অন্যদিকে সন্তান জন্ম না দেওয়া পর্যন্ত তাকে পূর্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। আবার বিয়ের পর হিম্বা ছেলেকে একজন পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর আগে তাদের রীতিতে পুরুষের যত কাজ আছে তার কিছুই করতে পারেন না অবিবাহিত পুরুষটি।  সূত্র: গার্ডিয়ান, হাডিটিথ আফ্রিকা

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির লালবাগ উপশাখা উদ্বোধন

» পাঁচবিবিতে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

» বৃষ্টি কামনায় বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ আদায়

» মেটার স্মার্ট সানগ্লাসে দিয়ে করা যাবে ভিডিও কল

» গরমে ট্রাফিক পুলিশ কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে?

» জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরু থেকে কেন খেলবেন না, জানালেন সাকিব

» পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের চালক নিহত

» বাস-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংর্ঘষে ইজিবাইক চালক নিহত,আহত ৩

» বিএনপি নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া: কাদের

» শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে আ.লীগের কর্মসূচি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যে নারীরা গোসলের বদলে শরীরে মাখেন লালমাটি

আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত একটি সুন্দর দেশ নামিবিয়া। এখানেই বাস হিম্বা নামের এক উপজাতিদের। যাদের দেখতে অন্যান্য উপজাতিদের মতো হলেও তারা বিশেষ বেশ কিছু কারণে। স্বল্প পোশাক, গা ভর্তি পুঁতির গয়না ছাড়াও শরীরে লেগে থাকা কাদামাটি তাদের আলাদা করেছে।

 

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, হিম্বারা কখনো গোসল করেন না। এই জাতির মানুষেরা হিম্বা, ওমুহিম্বা বা ওভাহিম্বা নামেও পরিচিত। নামিবিয়ার উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে কুনেন অঞ্চলে এদের বাস বেশি। হিম্বারা তাদের লালচে ত্বকের জন্য জনপ্রিয়। আসলে তারা ত্বকে এক ধরনের লাল মাটি ব্যবহার করে।

এখানকার নারীরা শরীরকে চকচকে ও সুগন্ধযুক্ত করতে সর্বদা একটি বিশেষ ধরনরর আয়ুর্বেদিক ওষুধ বা ক্রিম ব্যবহার করে। এই বিশেষ আয়ুর্বেদিক ওষুধ বা ক্রিমটি প্রকৃতপক্ষে নারীদের প্রশান্তি এবং এক ধরনের অনবদ্য গ্ল্যামার দেয়। এর নাম রেড অকরি। হিম্বারা রেড অকরি (গিরিমাটি বিশেষ ও তার রং) নামক ক্রিম তৈরির করার জন্য বিখ্যাত।

 

এই ক্রিম শুধু হিম্বা নারীরাই ব্যবহার করে। এটি সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। পাশাপাশি পোকামাকড়ের কামড়ও প্রতিরোধ করে। ক্রিমটি ব্যবহারের ফলে শরীরে তেমন লোমও হয় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য হিম্বা নারীরা নিয়মিত ধোঁয়ায় স্নান করে নেয়।

 

যেহেতু তারা গোসল করেন তাই শরীর পরিষ্কার রাখতে এবং দুর্গন্ধ মুক্ত রাখেন বিশেষ এক পদ্ধতিতে। পানির বদলে স্মোক বাথ বা ধোঁয়ার মাখেন শরীরে। এভাবেই শরীর পরিষ্কার রাখেন তারা। এর আগে শরীরে বিশেষ লালমাটি মেখে নেন। এরপর একটি পাত্রে কয়লার সঙ্গে কমিফোরা গাছের ডাল এবং পাতা মিশিয়ে নেন।

 

দক্ষিণ আফ্রিকার এই কমিফোরা গাছের পাতা বেশ সুগন্ধি। এজন্য এই পাতা ব্যবহার করেন তারা। যেহেতু দিনের পর দিন গোসল ছাড়াই থাকতে হয় তাই শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে এই পাতা সাহায্য করে। সেই মিশ্রণে আগুন দিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা হয়। শরীরে মোটা কাপড় বা কম্বল পেচিয়ে সেই পাত্রের সামনে বসে পড়েন তারা। যতক্ষণ না শরীর থেকে ঘাম পড়ছে তত ক্ষণ পর্যন্ত তারা এই বিশেষ পদ্ধতিতে স্নান করেন। চুলে মাখেন মাটি এবং গোবরের মিশ্রণ।

 

তবে গোসল না করার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত হিম্বারা যে অঞ্চলে বাস করেন তার পুরোটাই মরুভূমি। ফলে গোসলের জন্য পানি পাওয়া কষ্টসাধ্য। এছাড়াও তাদের প্রথা অনুযায়ী শরীরে পানি ছোঁয়ানো তাদের জন্য অশুভ। বিশেষ করে নারীদের জন্য। তবে এখন অনেক হিম্বা নারী গোসল করেন। সেটাও শুধু বিয়ের দিন।

 

হিম্বাদের প্রধান কাজ হচ্ছে পশুপালন এবং চাষবাস। পুরুষরা এই কাজগুলো করেন। নারীদের শুধু একটিই কাজ তা হচ্ছে- জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করে রান্না করা ও সন্তানদের দেখাশোনা করা। হিম্বা পুরুষরা একাধিক বিয়ে করতে পারেন। অন্যদিকে নিজেদের স্ত্রীদের অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর সুযোগ করে দেয়। যাকে বলা হয় ‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অতিথির কাছে এক রাতের জন্য থাকার অনুমতি দেন।

 

যদিও একজন নারী অতিথির সঙ্গে ঘুমাতে অস্বীকার করতে পারেন। তবে বেশিরভাগই স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটান। তাদের ধারণা, এতে সম্পর্ক ভালো থাকে ও হিংসা দূর হয়।

 

এদের পোশাকও স্বল্প হয়। শরীরের নিচের অংশে কাপড় থাকলেও উপরের অংশে কোনো কাপড় পরেন না তারা। নারীরা বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী গয়না পরেন। হিম্বা নারীরা যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছান তখন ছাগল অথবা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরিকৃত মুকুট যা এরিম্বি নামে পরিচিত। অন্যদিকে সন্তান জন্ম না দেওয়া পর্যন্ত তাকে পূর্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। আবার বিয়ের পর হিম্বা ছেলেকে একজন পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর আগে তাদের রীতিতে পুরুষের যত কাজ আছে তার কিছুই করতে পারেন না অবিবাহিত পুরুষটি।  সূত্র: গার্ডিয়ান, হাডিটিথ আফ্রিকা

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com