যে গ্রামের সবাই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটেন

বিভিন্ন সার্কাস অনুষ্ঠানে নিশ্চয়ই এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখেছেন, যিনি দক্ষতার সঙ্গে উঁচুতে বেঁধে রাখা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছেন! এমন দৃশ্য দেখে সবার বুকের মধ্যেই যেন কেঁপে ওঠে!

 

কখন না জানি ওই ব্যক্তি পা ফসকে পড়ে যান, এই ভয় আসে সবার মনেই। তবে উপস্থিত সবাইকে চমকে দিয়ে ঠিকই দড়ির উপর দিয়ে দিব্যি হাঁটেন এই পারফর্মার।

55

এমন ভিন্নধর্মী অনুশীলন রপ্ত করা বেশ কঠিন। তাই তো যারা এমন অসম্ভবকে সম্ভব করতে জানেন, তাদেরকে দেখতে টিকিট কাটার প্রয়োজন পড়ে।

তবে বিশ্বের এমন এক গ্রাম আছে, যেখানকার ছোট থেকে বড় সবাই দড়ির উপর দক্ষতার সঙ্গে হাঁটতে জানেন। এমনকি চোখ বেঁধে দিলেও তারা স্বাভাবিকভাবেই দড়ির উপরে হাঁটতে পারেন।

 

গ্রামটির নাম হলো টিসোভ্করা-১। রাশিয়ার দাগেস্তান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা ছোট্ট গ্রাম। এটিই বিশ্বের একমাত্র গ্রাম যেখানকার সব বাসিন্দারাই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটেন।

qw

এই গ্রামবাসীদের প্রতিভা দেখতে অনেক পর্যটকরাই সেখানে ভিড় জমান। এ কারণে গ্রামটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘টাইটরোপ ভিলেজ’। গ্রামবাসীদের নেশা ও পেশা হিসেবে এই শিল্প সেখানে টিকে আছে ১০০ বছর ধরে।

 

তবে সেখানে টাইটরোপে হাঁটার প্রচলন ঘটলো কীভাবে তা জানা নেই কারও। তবে দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে এই খেলা চলমান আছে বলে নিশ্চিত করেন সেখানকার বয়স্করা।

 

অবাক করা বিষয় হলেও সত্যিই, এই গ্রামের ছোট শিশুরাও নিখুঁতভাবে পেশাদারের মতো উঁচুতে বেঁধে রাখা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে পারে। আসলে ছোটবেলা থেকেই পরিবারের বড়দের হাত ধরে শূন্যে বেঁধে রাখা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা শেখে শিশুরা।

kk

এই গ্রামে ছোট-বড় সবাই কমবেশি আশেপাশে কিংবা দেশের বাইরেও বিভিন্ন সার্কাস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালের দিকে এই গ্রামের জনসংখ্যা ছিলো ৩ হাজার। যা কমতে কমতে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০০ জনে।

 

জনশ্রুতি আছে, টিসোভ্করা-১ গ্রামের পুরুষরা তাদের প্রেমিকার কাছে দ্রুত পৌঁছানোর উপায় হিসেবে টাইট্রোপ হাঁটার কৌশল আয়ত্তে আনেন। কারণ এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড় অতিক্রম করা বেশ কষ্টকর। তাই আশেপাশের পাহাড়ের গ্রামগুলোতে যাওয়ার শর্টকাট উপায় হিসেবে টাইটরোপের ব্যবহার বাড়ে।

 

তবে খুব কম মানুষই এই রোমান্টিক তত্ত্ব বিশ্বাস করেন। তবে স্থানীয়দের মতে, একসময় সেতু না থাকায় নদী ও খাল পার হওয়ার একটি কার্যকর উপায় ছিল এই টাইটরোপ। আবার অন্যরা দাবি করেন, যাদের চাষের জন্য জমি নেই, শস্য বা খাবার নেই তারা পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য এই খেলা দেখিয়ে অর্থ উপর্জান করতেন।

55

ইতিহাসের তথ্যমতে, ঐতিহ্যবাহী টাইটরোপে হাঁটার চ্যালেঞ্জ ১৯ শতকের দিকে দাগেস্তানিতে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তখন থেকেই হয়তো এই খেলার জনপ্রিয় বেড়েছে। টিসোভ্করা-১ গ্রামটি এখন ‘রোপ-ওয়াকিং স্কুল’ হয়ে উঠেছে।

 

যেখানে ছোট শিশুদেরকে সার্কাস পারফর্মার হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা বিস্তৃত রাশিয়ান সাম্রাজ্য জুড়ে জনসাধারণকে বিনোদন দেয়। এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও জিতে নেয়।

 

তবে গ্রামবাসীরা এখন আফসোস করে বলেন, টাইটরোপ হাঁটার গৌরবময় দিনগুলো অনেক আগেই চলে গেছে। বর্তমানে নতুন প্রজন্মরা শিক্ষিত হয়ে শহরে গিয়ে চাকরি বা ব্যবসা করছেন। তবে সবাই কমবেশি নিজ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পচর্চা করেন।

555

রামাজান গাজিয়েভ নামক এই গ্রামের এক শিক্ষক জানান, সবাই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কৌশল রপ্ত করতে পারেন না। এজন্য শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হয়। তাই তো গ্রামের বয়স্করাও এখন আর আগের মতো টাইটরোপ অনুশীলন করতে পারেন না।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল/দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বৃষ্টি কামনায় বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ আদায়

» মেটার স্মার্ট সানগ্লাসে দিয়ে করা যাবে ভিডিও কল

» গরমে ট্রাফিক পুলিশ কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে?

» জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরু থেকে কেন খেলবেন না, জানালেন সাকিব

» পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের চালক নিহত

» বাস-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংর্ঘষে ইজিবাইক চালক নিহত,আহত ৩

» বিএনপি নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া: কাদের

» শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে আ.লীগের কর্মসূচি

» দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী

» ‘উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে’

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যে গ্রামের সবাই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটেন

বিভিন্ন সার্কাস অনুষ্ঠানে নিশ্চয়ই এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখেছেন, যিনি দক্ষতার সঙ্গে উঁচুতে বেঁধে রাখা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছেন! এমন দৃশ্য দেখে সবার বুকের মধ্যেই যেন কেঁপে ওঠে!

 

কখন না জানি ওই ব্যক্তি পা ফসকে পড়ে যান, এই ভয় আসে সবার মনেই। তবে উপস্থিত সবাইকে চমকে দিয়ে ঠিকই দড়ির উপর দিয়ে দিব্যি হাঁটেন এই পারফর্মার।

55

এমন ভিন্নধর্মী অনুশীলন রপ্ত করা বেশ কঠিন। তাই তো যারা এমন অসম্ভবকে সম্ভব করতে জানেন, তাদেরকে দেখতে টিকিট কাটার প্রয়োজন পড়ে।

তবে বিশ্বের এমন এক গ্রাম আছে, যেখানকার ছোট থেকে বড় সবাই দড়ির উপর দক্ষতার সঙ্গে হাঁটতে জানেন। এমনকি চোখ বেঁধে দিলেও তারা স্বাভাবিকভাবেই দড়ির উপরে হাঁটতে পারেন।

 

গ্রামটির নাম হলো টিসোভ্করা-১। রাশিয়ার দাগেস্তান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা ছোট্ট গ্রাম। এটিই বিশ্বের একমাত্র গ্রাম যেখানকার সব বাসিন্দারাই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটেন।

qw

এই গ্রামবাসীদের প্রতিভা দেখতে অনেক পর্যটকরাই সেখানে ভিড় জমান। এ কারণে গ্রামটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘টাইটরোপ ভিলেজ’। গ্রামবাসীদের নেশা ও পেশা হিসেবে এই শিল্প সেখানে টিকে আছে ১০০ বছর ধরে।

 

তবে সেখানে টাইটরোপে হাঁটার প্রচলন ঘটলো কীভাবে তা জানা নেই কারও। তবে দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে এই খেলা চলমান আছে বলে নিশ্চিত করেন সেখানকার বয়স্করা।

 

অবাক করা বিষয় হলেও সত্যিই, এই গ্রামের ছোট শিশুরাও নিখুঁতভাবে পেশাদারের মতো উঁচুতে বেঁধে রাখা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে পারে। আসলে ছোটবেলা থেকেই পরিবারের বড়দের হাত ধরে শূন্যে বেঁধে রাখা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা শেখে শিশুরা।

kk

এই গ্রামে ছোট-বড় সবাই কমবেশি আশেপাশে কিংবা দেশের বাইরেও বিভিন্ন সার্কাস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালের দিকে এই গ্রামের জনসংখ্যা ছিলো ৩ হাজার। যা কমতে কমতে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০০ জনে।

 

জনশ্রুতি আছে, টিসোভ্করা-১ গ্রামের পুরুষরা তাদের প্রেমিকার কাছে দ্রুত পৌঁছানোর উপায় হিসেবে টাইট্রোপ হাঁটার কৌশল আয়ত্তে আনেন। কারণ এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড় অতিক্রম করা বেশ কষ্টকর। তাই আশেপাশের পাহাড়ের গ্রামগুলোতে যাওয়ার শর্টকাট উপায় হিসেবে টাইটরোপের ব্যবহার বাড়ে।

 

তবে খুব কম মানুষই এই রোমান্টিক তত্ত্ব বিশ্বাস করেন। তবে স্থানীয়দের মতে, একসময় সেতু না থাকায় নদী ও খাল পার হওয়ার একটি কার্যকর উপায় ছিল এই টাইটরোপ। আবার অন্যরা দাবি করেন, যাদের চাষের জন্য জমি নেই, শস্য বা খাবার নেই তারা পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য এই খেলা দেখিয়ে অর্থ উপর্জান করতেন।

55

ইতিহাসের তথ্যমতে, ঐতিহ্যবাহী টাইটরোপে হাঁটার চ্যালেঞ্জ ১৯ শতকের দিকে দাগেস্তানিতে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তখন থেকেই হয়তো এই খেলার জনপ্রিয় বেড়েছে। টিসোভ্করা-১ গ্রামটি এখন ‘রোপ-ওয়াকিং স্কুল’ হয়ে উঠেছে।

 

যেখানে ছোট শিশুদেরকে সার্কাস পারফর্মার হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা বিস্তৃত রাশিয়ান সাম্রাজ্য জুড়ে জনসাধারণকে বিনোদন দেয়। এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও জিতে নেয়।

 

তবে গ্রামবাসীরা এখন আফসোস করে বলেন, টাইটরোপ হাঁটার গৌরবময় দিনগুলো অনেক আগেই চলে গেছে। বর্তমানে নতুন প্রজন্মরা শিক্ষিত হয়ে শহরে গিয়ে চাকরি বা ব্যবসা করছেন। তবে সবাই কমবেশি নিজ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পচর্চা করেন।

555

রামাজান গাজিয়েভ নামক এই গ্রামের এক শিক্ষক জানান, সবাই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কৌশল রপ্ত করতে পারেন না। এজন্য শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হয়। তাই তো গ্রামের বয়স্করাও এখন আর আগের মতো টাইটরোপ অনুশীলন করতে পারেন না।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল/দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com