বৃষ্টির রং

তাহের টিপু :

বৃষ্টি ভালো লাগে সামান্থার। খুব প্রিয়। মাঝে মাঝে কল্পনা করে, ঝুম বৃষ্টির মধ্যে রাফাতের হাত ধরে কাশবনের মাঝ দিয়ে মেঠোপথে হেঁটে যাচ্ছে। বর্ষার পানিতে দু’কূল ছাপানো নদীর পাশ দিয়ে। অতি বৃষ্টিতে চারপাশ ঝাপসা হয়ে আছে।

এ স্বপ্ন কোনো দিন পূরণ হওয়ার নয়। রাফাতের মধ্যে এ ধরনের রোমান্টিকতা নেই। ওর চিন্তা আর কাজ বাহুল্য বর্জিত। মনের দিক দিয়ে খুব ভালো, কিন্তু যে কাজের প্রয়োজন নেই; তার কাছে সে কাজে সময় ব্যয় করার কোনো মানে নেই।

সামান্থা ক্যাফের জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখে আনমনা হয়ে এসব ভাবছিল। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে সবকিছু ঝাপসা। ধূসর মায়ায় পৃথিবী ডুবে আছে। এরমধ্যে ধূসর অন্ধকার কেটে দিয়ে হেডলাইট জ্বেলে যানবহনগুলো এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে যাচ্ছে। হেডলাইটের আলো বৃষ্টির কণায় পড়ে চিকমিক চিকমিক করছে।

আধঘণ্টা হলো বসে আছে। রাফাতের অপেক্ষায়। রাফাত ফোন করে বলে দিয়েছে, আসতে আধঘণ্টা দেরী হবে। হঠাৎ আর্জেন্ট মিটিং ডাকতে হলো।

সরি, দেরী হয় গেল! রাফাতের কথায় সামান্থা কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে।
রাফাত ঝকঝক করছে। সারাদিনের কাজের চাপ আর দুশ্চিন্তার কোনো লক্ষণ নেই ওর মাঝে। পূর্ণোদ্যম ও প্রাণবন্ত। বলল, কী এমন জরুরি তলব ম্যাডামের, বলেন দেখি!
বসো। সামান্থার নিষ্প্রাণ কণ্ঠ!
মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু!
জানি না! তোমার জন্য সিরিয়াস হতেও পারে, না-ও পারে!
কী হয়েছে?
দেখো রাফাত, ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছি। সামান্থাকে আসলেই বেশ চিন্তিত মনে হয়।
বল…
তোমার সাথে রিলেশনটা আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওয়ার্ক আউট করছে না!

আরও কিছু বলতে গিয়ে সামান্থা থেমে গেল। ইতস্তত করছে। রিফাত কথা জোগালো, হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ?
হঠাৎ না রাফাত। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝ না… তোমাকে আমি কখনোই মনের মতো করে পাই না। তোমার কাছে আমার চেয়ে কাজই ইম্পর্টেন্ট! আমার সাথে যখন থাকো; তখনো তোমার মনোযোগ পুরোপুরি আমার দিকে থাকে না। কিন্তু যখন কাজে থাকো, কখনো কোনো দিন আমাকে মনে কর না। কখনো আমাকে ভুলেও ফোন তো দূরের কথা, মেসেজও দাও না!

সামান্থার কথায় যদিও যথেষ্ট আবেগ আছে, কিন্তু কণ্ঠস্বর দৃঢ়, অনড়। রাফাত অনুভব করল, মেয়েটি আসলেই বেশ মনোকষ্টে আছে। ওর কষ্ট বাড়াতে আর মন চাচ্ছে না। তবু ব্যাপারটা কত সিরিয়াস বোঝার জন্য বলল, কাজে তো অবহেলা করতে পারি না। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হয়। কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি, তার মানে এই নয় যে তোমাকে ভুলে যাই। যা করছি আমাদের দু’জনের জন্যই তো করছি।
হ্যাঁ, কাজে অবহেলা করতে পারো না, আমাকে অবহেলা করতে পারো!
তোমাকে কখন অবহেলা করলাম? তোমার জন্য প্রতিটি দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেছি।
হ্যাঁ, যা করেছো দায়িত্ব হিসেবে করেছো। ভালোবেসে কি করেছো?
দায়িত্ব পালন কি ভালোবাসার মধ্যে পড়ে না?
তা পড়ে। কিন্তু সত্যিকার ভালোবাসা থাকলে দায়িত্বের চেয়ে বেশি কিছু করা যায়। দায়িত্ব তো ভালোবাসা না থাকলেও পালন করতে হয়। মনের টান থাকলে ভালোবাসা দায়িত্বের মধ্যেই শেষ হয় যায় না।
ঠিক আছে, তোমার কথাই মানলাম। আমার দোষ। এখন কীভাবে প্রায়শ্চিত্ত করব বলে দাও।

কথাটি শুনে সামান্থার নিজেকে অসহায় লাগে। তার মনের কথা কোনোভাবেই রাফাতকে বোঝাতে পারবে না। ব্যবসায়ী মানুষ, সমস্যা বোঝার চেষ্টা করার চেয়ে সমাধান করার দিকে বেশি আগ্রহ। এখন ও যা-ই বলুক, রাফাত মেনে নেবে; যাতে সমস্যা তাড়াতাড়ি শেষ হয় যায়। কিন্তু এতে ওর সমস্যার সমাধান হবে না। ওর চাই মনোযোগ। একটু মন খুলে কথা বলার সময়। আরও অনেক কিছু। যেগুলো শুধু কল্পনায়ই ভাবা যায়, মুখে বলা যায় না। তাই সামান্থা বলল, প্রায়শ্চিত্ত তুমি করবে না, আমি করব। আমি আর রিলেশন কন্টিনিউ করতে চাই না। আজই আমাদের শেষ দেখা। আমি এখন উঠে চলে যাবো। তুমি আসবে না সাথে। এখানে বসে থাকবে। আধঘণ্টা। দেখো আধঘণ্টা একা বসে থাকতে কেমন লাগে। এরপর যাবে।

বলেই সামান্থা উঠে দাঁড়ায়। রাফাত কিছু বলল না। আহত চোখে তাকিয়ে রইল। ও জানে, এসব ক্ষেত্রে চুপ থাকার চেয়ে বড় কোনো জবাব নেই। সামান্থা এক মুহূর্ত জবাবের অপেক্ষা না করে ঝড়ের বেগে ক্যাফে ছেড়ে বেরিয়ে গেল। বাইরে। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে। রাফাত চেয়ে চেয়ে দেখলো।

পরবর্তী আধঘণ্টা রাফাত তাদের সম্পর্কের কথা ভাবার চেষ্টা করল। সামান্থার অভিযোগ পুরোপুরি সত্য। ও আসলে বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসা দেখাতে পারে না। সামান্থা ওর জীবন, কিন্তু এ কথা সামান্থার সামনে কখনো স্বীকার করতে পারবে না। এই যে সামান্থা এভাবে কষ্ট পেয়ে চলে গেল, ওর বুকটা সামান্থার জন্য মায়ায় দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয় যাচ্ছে। এটাকে হয়তো ভালোবাসার হাহাকার বলে। মনে হচ্ছে সামান্থার কষ্ট দূর করার জন্য প্রাণটা দিয়ে দেয়। কিন্তু সে এত বড় একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, এতগুলো কর্মী-কর্মচারীর দায়িত্ব তার ঘাড়ে, সে তো দায়িত্বে অবহেলা করতে পারে না। তার কাছে ভালোবাসা মানে সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাওয়া। বাড়তি কাজগুলো সব সময় সমস্যার সৃষ্টি করে। সামান্থার অভিজ্ঞতা নেই, তাই জানে না। যখনই একটা বাড়াবাড়ি করা হলো, তখনই এর বিল কেটে নেওয়া হলো। এর মূল্য পরিশোধ করতেই হবে, আজ হোক বা কাল। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুখকর হয় না।

রাফাত আধঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা একা বসে থাকল। বৃষ্টি মনে হয় আজ আর থামবে না। চারদিক ভাসিয়ে নেওয়া বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় পানি জমে গেছে। রাত সাড়ে দশটার দিকে ক্যাফে এবং রাস্তাঘাট দু-ই নীরব হয় গেল। পথচারী চলাচল বন্ধ হয়েছে অনেক আগে। এখন যানবাহনের হেডলাইটের সংখ্যাও কমে এসেছে। রাফাত উঠে পড়ে। মনটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে আছে। ব্রেকআপ নিয়ে সে ভাবে না। জানে সামান্থার রাগ বেশিদিন থাকবে না। কিন্তু সামান্থাকে ব্যাপারটা বোঝানো যাচ্ছে না। একসময় অবশ্যই বুঝবে, কিন্তু তার আগে রাগ-অভিমান আর ঝগড়া-ঝাটির পাহাড় ডিঙাতে হবে। মানুষ বড়ই অসহায় প্রাণী, দু’জন মানুষ পরস্পরকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলেও কখনো সব ব্যাপারে মতের মিল হয় না। ভালোবাসার সাথে না বোঝা আর না মানার কষ্টটাও থাকে।

রাফাত বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে আসে। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে বাড়ি চলে যেতে। সে আজ একা কিছুটা সময় কাটাতে চায়। বৃষ্টির রাতে রাস্তায় একা হেঁটে যাওয়ার চেয়ে বেশি একাকিত্ব আর কোথায় পাবে?  সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কোনো সমস্যা হলে ট্রিপল নাইনে জানাতে বললেন আইজিপি

» নোয়াখালীর সেই পুকুরে এবার মিলল ৪০ রুপালি ইলিশ

» রমজানের তৃতীয় জুমায় বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের ঢল

» রাজার আমন্ত্রণে ভুটান সফরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী

» কারিনা-কারিশমার রাজনীতিতে নামার গুঞ্জন

» ‘জিয়া মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের দোসর ছিলেন’

» কবি মুক্তাদির চৌধুরী তরুণের ইন্তেকাল

» পুলিশের সোর্সকে চাকু মেরে হত্যা মামলার পলাতক দুই আসামি গ্রেফতার

» ব্যবহৃত অলংকারের জাকাত দিতে হবে কি?

» ফেসবুক দীর্ঘদিন লগ আউট না করলে কী হয়?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বৃষ্টির রং

তাহের টিপু :

বৃষ্টি ভালো লাগে সামান্থার। খুব প্রিয়। মাঝে মাঝে কল্পনা করে, ঝুম বৃষ্টির মধ্যে রাফাতের হাত ধরে কাশবনের মাঝ দিয়ে মেঠোপথে হেঁটে যাচ্ছে। বর্ষার পানিতে দু’কূল ছাপানো নদীর পাশ দিয়ে। অতি বৃষ্টিতে চারপাশ ঝাপসা হয়ে আছে।

এ স্বপ্ন কোনো দিন পূরণ হওয়ার নয়। রাফাতের মধ্যে এ ধরনের রোমান্টিকতা নেই। ওর চিন্তা আর কাজ বাহুল্য বর্জিত। মনের দিক দিয়ে খুব ভালো, কিন্তু যে কাজের প্রয়োজন নেই; তার কাছে সে কাজে সময় ব্যয় করার কোনো মানে নেই।

সামান্থা ক্যাফের জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখে আনমনা হয়ে এসব ভাবছিল। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে সবকিছু ঝাপসা। ধূসর মায়ায় পৃথিবী ডুবে আছে। এরমধ্যে ধূসর অন্ধকার কেটে দিয়ে হেডলাইট জ্বেলে যানবহনগুলো এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে যাচ্ছে। হেডলাইটের আলো বৃষ্টির কণায় পড়ে চিকমিক চিকমিক করছে।

আধঘণ্টা হলো বসে আছে। রাফাতের অপেক্ষায়। রাফাত ফোন করে বলে দিয়েছে, আসতে আধঘণ্টা দেরী হবে। হঠাৎ আর্জেন্ট মিটিং ডাকতে হলো।

সরি, দেরী হয় গেল! রাফাতের কথায় সামান্থা কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে।
রাফাত ঝকঝক করছে। সারাদিনের কাজের চাপ আর দুশ্চিন্তার কোনো লক্ষণ নেই ওর মাঝে। পূর্ণোদ্যম ও প্রাণবন্ত। বলল, কী এমন জরুরি তলব ম্যাডামের, বলেন দেখি!
বসো। সামান্থার নিষ্প্রাণ কণ্ঠ!
মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু!
জানি না! তোমার জন্য সিরিয়াস হতেও পারে, না-ও পারে!
কী হয়েছে?
দেখো রাফাত, ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছি। সামান্থাকে আসলেই বেশ চিন্তিত মনে হয়।
বল…
তোমার সাথে রিলেশনটা আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওয়ার্ক আউট করছে না!

আরও কিছু বলতে গিয়ে সামান্থা থেমে গেল। ইতস্তত করছে। রিফাত কথা জোগালো, হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ?
হঠাৎ না রাফাত। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝ না… তোমাকে আমি কখনোই মনের মতো করে পাই না। তোমার কাছে আমার চেয়ে কাজই ইম্পর্টেন্ট! আমার সাথে যখন থাকো; তখনো তোমার মনোযোগ পুরোপুরি আমার দিকে থাকে না। কিন্তু যখন কাজে থাকো, কখনো কোনো দিন আমাকে মনে কর না। কখনো আমাকে ভুলেও ফোন তো দূরের কথা, মেসেজও দাও না!

সামান্থার কথায় যদিও যথেষ্ট আবেগ আছে, কিন্তু কণ্ঠস্বর দৃঢ়, অনড়। রাফাত অনুভব করল, মেয়েটি আসলেই বেশ মনোকষ্টে আছে। ওর কষ্ট বাড়াতে আর মন চাচ্ছে না। তবু ব্যাপারটা কত সিরিয়াস বোঝার জন্য বলল, কাজে তো অবহেলা করতে পারি না। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হয়। কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি, তার মানে এই নয় যে তোমাকে ভুলে যাই। যা করছি আমাদের দু’জনের জন্যই তো করছি।
হ্যাঁ, কাজে অবহেলা করতে পারো না, আমাকে অবহেলা করতে পারো!
তোমাকে কখন অবহেলা করলাম? তোমার জন্য প্রতিটি দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেছি।
হ্যাঁ, যা করেছো দায়িত্ব হিসেবে করেছো। ভালোবেসে কি করেছো?
দায়িত্ব পালন কি ভালোবাসার মধ্যে পড়ে না?
তা পড়ে। কিন্তু সত্যিকার ভালোবাসা থাকলে দায়িত্বের চেয়ে বেশি কিছু করা যায়। দায়িত্ব তো ভালোবাসা না থাকলেও পালন করতে হয়। মনের টান থাকলে ভালোবাসা দায়িত্বের মধ্যেই শেষ হয় যায় না।
ঠিক আছে, তোমার কথাই মানলাম। আমার দোষ। এখন কীভাবে প্রায়শ্চিত্ত করব বলে দাও।

কথাটি শুনে সামান্থার নিজেকে অসহায় লাগে। তার মনের কথা কোনোভাবেই রাফাতকে বোঝাতে পারবে না। ব্যবসায়ী মানুষ, সমস্যা বোঝার চেষ্টা করার চেয়ে সমাধান করার দিকে বেশি আগ্রহ। এখন ও যা-ই বলুক, রাফাত মেনে নেবে; যাতে সমস্যা তাড়াতাড়ি শেষ হয় যায়। কিন্তু এতে ওর সমস্যার সমাধান হবে না। ওর চাই মনোযোগ। একটু মন খুলে কথা বলার সময়। আরও অনেক কিছু। যেগুলো শুধু কল্পনায়ই ভাবা যায়, মুখে বলা যায় না। তাই সামান্থা বলল, প্রায়শ্চিত্ত তুমি করবে না, আমি করব। আমি আর রিলেশন কন্টিনিউ করতে চাই না। আজই আমাদের শেষ দেখা। আমি এখন উঠে চলে যাবো। তুমি আসবে না সাথে। এখানে বসে থাকবে। আধঘণ্টা। দেখো আধঘণ্টা একা বসে থাকতে কেমন লাগে। এরপর যাবে।

বলেই সামান্থা উঠে দাঁড়ায়। রাফাত কিছু বলল না। আহত চোখে তাকিয়ে রইল। ও জানে, এসব ক্ষেত্রে চুপ থাকার চেয়ে বড় কোনো জবাব নেই। সামান্থা এক মুহূর্ত জবাবের অপেক্ষা না করে ঝড়ের বেগে ক্যাফে ছেড়ে বেরিয়ে গেল। বাইরে। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে। রাফাত চেয়ে চেয়ে দেখলো।

পরবর্তী আধঘণ্টা রাফাত তাদের সম্পর্কের কথা ভাবার চেষ্টা করল। সামান্থার অভিযোগ পুরোপুরি সত্য। ও আসলে বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসা দেখাতে পারে না। সামান্থা ওর জীবন, কিন্তু এ কথা সামান্থার সামনে কখনো স্বীকার করতে পারবে না। এই যে সামান্থা এভাবে কষ্ট পেয়ে চলে গেল, ওর বুকটা সামান্থার জন্য মায়ায় দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয় যাচ্ছে। এটাকে হয়তো ভালোবাসার হাহাকার বলে। মনে হচ্ছে সামান্থার কষ্ট দূর করার জন্য প্রাণটা দিয়ে দেয়। কিন্তু সে এত বড় একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, এতগুলো কর্মী-কর্মচারীর দায়িত্ব তার ঘাড়ে, সে তো দায়িত্বে অবহেলা করতে পারে না। তার কাছে ভালোবাসা মানে সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাওয়া। বাড়তি কাজগুলো সব সময় সমস্যার সৃষ্টি করে। সামান্থার অভিজ্ঞতা নেই, তাই জানে না। যখনই একটা বাড়াবাড়ি করা হলো, তখনই এর বিল কেটে নেওয়া হলো। এর মূল্য পরিশোধ করতেই হবে, আজ হোক বা কাল। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুখকর হয় না।

রাফাত আধঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা একা বসে থাকল। বৃষ্টি মনে হয় আজ আর থামবে না। চারদিক ভাসিয়ে নেওয়া বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় পানি জমে গেছে। রাত সাড়ে দশটার দিকে ক্যাফে এবং রাস্তাঘাট দু-ই নীরব হয় গেল। পথচারী চলাচল বন্ধ হয়েছে অনেক আগে। এখন যানবাহনের হেডলাইটের সংখ্যাও কমে এসেছে। রাফাত উঠে পড়ে। মনটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে আছে। ব্রেকআপ নিয়ে সে ভাবে না। জানে সামান্থার রাগ বেশিদিন থাকবে না। কিন্তু সামান্থাকে ব্যাপারটা বোঝানো যাচ্ছে না। একসময় অবশ্যই বুঝবে, কিন্তু তার আগে রাগ-অভিমান আর ঝগড়া-ঝাটির পাহাড় ডিঙাতে হবে। মানুষ বড়ই অসহায় প্রাণী, দু’জন মানুষ পরস্পরকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলেও কখনো সব ব্যাপারে মতের মিল হয় না। ভালোবাসার সাথে না বোঝা আর না মানার কষ্টটাও থাকে।

রাফাত বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে আসে। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে বাড়ি চলে যেতে। সে আজ একা কিছুটা সময় কাটাতে চায়। বৃষ্টির রাতে রাস্তায় একা হেঁটে যাওয়ার চেয়ে বেশি একাকিত্ব আর কোথায় পাবে?  সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com