বিলুপ্তপ্রায় রং-বেরঙের প্রজাপতি

নিয়ামুর রশিদ শিহাব

প্রায় এক দশক আগেও বাংলাদেশে ছয় শতাধিক প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে টিকে আছে মাত্র অর্ধেক প্রজাতির প্রজাপতি। নির্বিচারে বনের গাছ কাটা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার এবং ফাঁদ পেতে প্রজাপতি নিধনের ফলে অন্য সব প্রাণীর মতো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বর্ণিল, অপূর্ব সুন্দর রং ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পতঙ্গ প্রজাপতি।

বিজ্ঞাপন

প্রজাপতি লেপিংডোপেট্রা বর্গের এক ধরনের মথ জাতীয় পতঙ্গ। অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন পতঙ্গ প্রজাপতির দেহ লম্বাটে এবং তাদের শরীরে বর্ণিল রঙের ডানা থাকে। প্রজাপতির অধিকাংশ প্রজাতিই দিবাচর। এরা দিনের বেলায়ই ঘুরে বেড়ায়। মধুর সন্ধানে তারা ফুল থেকে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। প্রজাপতির ডানা অত্যন্ত স্বচ্ছ। এদের ডানা মূলত Chitin নামক এক প্রকার প্রোটিন দ্বারা কয়েকটি স্তরে সাজানো। এ প্রোটিন প্রজাপতির Exoskeleton তৈরি করে।

প্রজাপতির ডানার স্তরগুলো এতই সূক্ষ্ম যে, এর মধ্য দিয়ে সব কিছু দেখা যায়। কয়েক হাজার ক্ষুদ্র আঁশ ডানার স্তরগুলোকে আবৃত করে রাখে। আঁশগুলোতে বিভিন্ন রঙের আলো প্রতিফলিত হয়ে নানা রং ধারণ করে। প্রজাপতি পা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ করে। স্ত্রী প্রজাপতি বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছে বসে পা দিয়ে পাতার ওপরে ঘঁষে উদ্ভিদ থেকে রস গ্রহণ করে। প্রজাপতির পায়ের পেছনে Chemotreceptor নামক এক প্রকার সংবেদী অঙ্গ থাকে, যার মাধ্যমে এরা স্বাদ গ্রহণ করে থাকে।

 

পৃথিবীতে ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি আছে। সবচেয়ে বড় প্রজাপতি হলো ‘রানী আলেকজান্দ্রার বার্ডউইং’। এ প্রজাতির প্রজাপতির পাখার আকৃতি ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির প্রজাপতি হলো ‘ওয়েস্টার্ন পিগমি ব্লু’। এরা লম্বায় মাত্র ১ সেন্টিমিটার হয়। অধিকাংশ প্রজাতির প্রজাপতির আয়ুষ্কাল এক থেকে দুই সপ্তাহ। কিছু প্রজাতির প্রজাপতি আবার দেড় বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

প্রজাপতি একসময় আমাদের দেশে বনে-জঙ্গলে, গ্রামে-গঞ্জে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত। এখন অনেকটা কমে গেছে। দেশে এমন কোনো মানুষ পাওয়া দুষ্কর হবে, যিনি ছোটবেলায় প্রজাপতির রঙে মুগ্ধ হয়ে তার পিছু ছোটেননি। দেশের সৌন্দর্যময় বন মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এখনো অনেক প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মেলে। বাংলাদেশের বান্দরবান, উখিয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার প্রভৃতি এলাকার বনগুলোয় প্রচুর পরিমাণে প্রজাপতির দেখা মেলে। এ ছাড়া সুন্দরবন ও মধুপুরে কিছু প্রজাতির প্রজাপতি দেখা যায়।

 

প্রজাপতির সব প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে দেশে গবেষণা হচ্ছে। চট্টগ্রামে প্রজাপতি পার্ক করা হয়েছে। প্রজাপতি টিকিয়ে রাখতে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা। অনেকে বন ভ্রমণে গিয়ে বনের লতাগুল্ম নষ্ট করেন। এতে প্রজাপতি তাদের আবাস হারিয়ে ফেলে। ফলে প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। প্রজনন স্থান ধ্বংস প্রতিরোধ, নতুন আবাসস্থল সৃষ্টি এবং জনসচেতনতাই পারে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রজাপতিকে রক্ষা করতে। তাই অতি দ্রুত আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির লালবাগ উপশাখা উদ্বোধন

» পাঁচবিবিতে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

» বৃষ্টি কামনায় বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ আদায়

» মেটার স্মার্ট সানগ্লাসে দিয়ে করা যাবে ভিডিও কল

» গরমে ট্রাফিক পুলিশ কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে?

» জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরু থেকে কেন খেলবেন না, জানালেন সাকিব

» পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের চালক নিহত

» বাস-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংর্ঘষে ইজিবাইক চালক নিহত,আহত ৩

» বিএনপি নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া: কাদের

» শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে আ.লীগের কর্মসূচি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিলুপ্তপ্রায় রং-বেরঙের প্রজাপতি

নিয়ামুর রশিদ শিহাব

প্রায় এক দশক আগেও বাংলাদেশে ছয় শতাধিক প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে টিকে আছে মাত্র অর্ধেক প্রজাতির প্রজাপতি। নির্বিচারে বনের গাছ কাটা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার এবং ফাঁদ পেতে প্রজাপতি নিধনের ফলে অন্য সব প্রাণীর মতো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বর্ণিল, অপূর্ব সুন্দর রং ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পতঙ্গ প্রজাপতি।

বিজ্ঞাপন

প্রজাপতি লেপিংডোপেট্রা বর্গের এক ধরনের মথ জাতীয় পতঙ্গ। অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন পতঙ্গ প্রজাপতির দেহ লম্বাটে এবং তাদের শরীরে বর্ণিল রঙের ডানা থাকে। প্রজাপতির অধিকাংশ প্রজাতিই দিবাচর। এরা দিনের বেলায়ই ঘুরে বেড়ায়। মধুর সন্ধানে তারা ফুল থেকে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। প্রজাপতির ডানা অত্যন্ত স্বচ্ছ। এদের ডানা মূলত Chitin নামক এক প্রকার প্রোটিন দ্বারা কয়েকটি স্তরে সাজানো। এ প্রোটিন প্রজাপতির Exoskeleton তৈরি করে।

প্রজাপতির ডানার স্তরগুলো এতই সূক্ষ্ম যে, এর মধ্য দিয়ে সব কিছু দেখা যায়। কয়েক হাজার ক্ষুদ্র আঁশ ডানার স্তরগুলোকে আবৃত করে রাখে। আঁশগুলোতে বিভিন্ন রঙের আলো প্রতিফলিত হয়ে নানা রং ধারণ করে। প্রজাপতি পা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ করে। স্ত্রী প্রজাপতি বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছে বসে পা দিয়ে পাতার ওপরে ঘঁষে উদ্ভিদ থেকে রস গ্রহণ করে। প্রজাপতির পায়ের পেছনে Chemotreceptor নামক এক প্রকার সংবেদী অঙ্গ থাকে, যার মাধ্যমে এরা স্বাদ গ্রহণ করে থাকে।

 

পৃথিবীতে ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি আছে। সবচেয়ে বড় প্রজাপতি হলো ‘রানী আলেকজান্দ্রার বার্ডউইং’। এ প্রজাতির প্রজাপতির পাখার আকৃতি ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির প্রজাপতি হলো ‘ওয়েস্টার্ন পিগমি ব্লু’। এরা লম্বায় মাত্র ১ সেন্টিমিটার হয়। অধিকাংশ প্রজাতির প্রজাপতির আয়ুষ্কাল এক থেকে দুই সপ্তাহ। কিছু প্রজাতির প্রজাপতি আবার দেড় বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

প্রজাপতি একসময় আমাদের দেশে বনে-জঙ্গলে, গ্রামে-গঞ্জে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত। এখন অনেকটা কমে গেছে। দেশে এমন কোনো মানুষ পাওয়া দুষ্কর হবে, যিনি ছোটবেলায় প্রজাপতির রঙে মুগ্ধ হয়ে তার পিছু ছোটেননি। দেশের সৌন্দর্যময় বন মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এখনো অনেক প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মেলে। বাংলাদেশের বান্দরবান, উখিয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার প্রভৃতি এলাকার বনগুলোয় প্রচুর পরিমাণে প্রজাপতির দেখা মেলে। এ ছাড়া সুন্দরবন ও মধুপুরে কিছু প্রজাতির প্রজাপতি দেখা যায়।

 

প্রজাপতির সব প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে দেশে গবেষণা হচ্ছে। চট্টগ্রামে প্রজাপতি পার্ক করা হয়েছে। প্রজাপতি টিকিয়ে রাখতে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা। অনেকে বন ভ্রমণে গিয়ে বনের লতাগুল্ম নষ্ট করেন। এতে প্রজাপতি তাদের আবাস হারিয়ে ফেলে। ফলে প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। প্রজনন স্থান ধ্বংস প্রতিরোধ, নতুন আবাসস্থল সৃষ্টি এবং জনসচেতনতাই পারে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রজাপতিকে রক্ষা করতে। তাই অতি দ্রুত আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com