বিপদ যখন অ্যান্টিবায়োটিকে

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তালহা বিন তারেক। আট বছরের ছেলের হঠাৎ জ্বর আসে ১১ সেপ্টেম্বর। তিন দিন পর চলে যায়। ডাক্তার দেখানো হলে তিনি ওষুধ দেন। তবে কোনো টেস্ট দেননি। ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে নাভির গোড়ায় ব্যথা হয় তালহার। ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে ইবনে সিনা হাসপাতালে গেলে তারা দ্রুত কোনো পিআইসিইউতে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ভর্তি করতে বলেন। এরপর মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। টেস্ট করে দেখা যায় তালহা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। সেখানে নানা রকমের চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ১৬ সেপ্টেম্বর না-ফেরার দেশে চলে যায় তালহা। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা বাবা-মা। তালহার বাবা আবু হেনা মুহাম্মদ তারেক বলেন, ‘ডেঙ্গুজ্বরে আমাদের একমাত্র ছেলে চলে গেল। এ কষ্টের কোনো সীমা নেই। এমন করে যেন আর কারও সন্তান হারিয়ে না যায়।’ সেপ্টেম্বরের ১৯ দিনে ২৪ জন ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন। এ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৮৮ জন। গতকাল আরও ৩৯২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৪৮৩-এ। তবে এ সময় ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার একই সময়ের মধ্যে সারা দেশে নতুন করে আক্রান্ত ৩৯২ জনের মধ্যে ২৫৩ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 

এ নিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ১ হাজার ৪৮৩ জন ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে ঢাকার ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ১০২ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৮১ জন। চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১১ হাজার ৫৬৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ হাজার ৪১ জন। এ সময়ে ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৬৮ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৯৪৫ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৫০১ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৯৬ জন। ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। জ্বর এলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এতে বিপদ ডেকে আনছেন তারা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ  বলেন, ‘জ্বর এলে ডেঙ্গু কি না তা অবশ্যই টেস্ট করে দেখতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি পান করতে হবে। ঠিকমতো ফ্লুইড পেলে ডেঙ্গু রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১-এ সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বৃষ্টি কামনায় বায়তুল মোকাররমে ইসতিসকার নামাজ আদায়

» মেটার স্মার্ট সানগ্লাসে দিয়ে করা যাবে ভিডিও কল

» গরমে ট্রাফিক পুলিশ কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে?

» জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরু থেকে কেন খেলবেন না, জানালেন সাকিব

» পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের চালক নিহত

» বাস-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংর্ঘষে ইজিবাইক চালক নিহত,আহত ৩

» বিএনপি নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া: কাদের

» শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে আ.লীগের কর্মসূচি

» দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী

» ‘উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে’

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিপদ যখন অ্যান্টিবায়োটিকে

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তালহা বিন তারেক। আট বছরের ছেলের হঠাৎ জ্বর আসে ১১ সেপ্টেম্বর। তিন দিন পর চলে যায়। ডাক্তার দেখানো হলে তিনি ওষুধ দেন। তবে কোনো টেস্ট দেননি। ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে নাভির গোড়ায় ব্যথা হয় তালহার। ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে ইবনে সিনা হাসপাতালে গেলে তারা দ্রুত কোনো পিআইসিইউতে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ভর্তি করতে বলেন। এরপর মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। টেস্ট করে দেখা যায় তালহা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। সেখানে নানা রকমের চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ১৬ সেপ্টেম্বর না-ফেরার দেশে চলে যায় তালহা। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা বাবা-মা। তালহার বাবা আবু হেনা মুহাম্মদ তারেক বলেন, ‘ডেঙ্গুজ্বরে আমাদের একমাত্র ছেলে চলে গেল। এ কষ্টের কোনো সীমা নেই। এমন করে যেন আর কারও সন্তান হারিয়ে না যায়।’ সেপ্টেম্বরের ১৯ দিনে ২৪ জন ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন। এ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৮৮ জন। গতকাল আরও ৩৯২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৪৮৩-এ। তবে এ সময় ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার একই সময়ের মধ্যে সারা দেশে নতুন করে আক্রান্ত ৩৯২ জনের মধ্যে ২৫৩ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 

এ নিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ১ হাজার ৪৮৩ জন ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে ঢাকার ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ১০২ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৮১ জন। চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১১ হাজার ৫৬৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ হাজার ৪১ জন। এ সময়ে ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৬৮ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৯৪৫ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৫০১ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৯৬ জন। ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। জ্বর এলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এতে বিপদ ডেকে আনছেন তারা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ  বলেন, ‘জ্বর এলে ডেঙ্গু কি না তা অবশ্যই টেস্ট করে দেখতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি পান করতে হবে। ঠিকমতো ফ্লুইড পেলে ডেঙ্গু রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১-এ সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com