বাজারে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে হাত

কখনো পিয়াজ, কাঁচামরিচ। কখনো চাল, লবণ, তেল। আতঙ্কের মধ্যে রাখে সব সময়। প্রতিনিয়তই বাজারের অস্থির মেজাজে সাধারণ মানুষ এখন মহা ভাবনায়। হাবুডুবু খাচ্ছে। তেলে বেগুনে। পেটের চাহিদা মিটাতে প্রতিদিন বাজারে গিয়ে হাত পুড়ছে মানুষ। যেখানেই হাত দেয় তাপে পুড়ে যায়।

সবাই বাজারের এই তাপ সহ্য করতে পারছেন না। জীবনের ওপর দিয়ে উঠেছে তাপ। জ্বলন্ত আগুনের তাপ যেখানে হার মেনেছে। তাপময় বাজার আর উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ কীভাবে চলছে সেই খোঁজ নিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। তারা কেমন আছেন জানতে চেয়েছিলাম। মোটা দাগে সবারই একই কথা লাগামহীন ঘোড়ার মতো লাফিয়ে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা।

 

কথা হয় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মথরপাড়া গ্রামের মোন্তাছির রহমানের সঙ্গে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে কেমন করে চলছে তার সংসার জানতে চেয়েছিলাম। দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে তার চলমান সময়ের সব কথা। জমিতে ধান চাষ হয় দুই মৌসুম। ধানের ওপর ভর করেই বছর চলে যায়। অন্য কোনো ফসল ওই এলাকায় খুব বেশি হয় না। ফলে ধান বিক্রি করেই সবজি কিনতে হয় তাদের। সংসারের অন্যান্য খরচও চালাতে হয় ধান বেচেই। মৌসুমের শুরুতে সিংহভাগ ধান বিক্রি করতে হয়। তখন একেবারেই কম দাম থাকে। তবুও অল্প দামেই বিক্রি করতে হয়। নানামুখী খরচের জোগান দিতে হয় ধান বিক্রির টাকা দিয়ে। গেল কয়েক বছর বাজারের টালমাটাল অবস্থায় অনেকটা দিশাহারা মোন্তাছির। সব কিছুতেই আগুন বরাবর দাম। কোথাও সহজে হাত দিতে পারছেন না তিনি। নাগালের বাইরে সবকিছু। সংসারের যাবতীয় খরচ তবুও করতে হচ্ছে। কষ্টে। নিরুপায় অনেকটা। বাজারের তাপে।

 

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সাংবাদিক আব্দুল বারী স্বপন। কথা হয় তার সঙ্গেও। চলমান বাজার পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের আয় এই দুইয়ের সমন্বয় কীভাবে করছে মানুষ? এক কথায় উত্তর দিলেন তিনি ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা’। মানুষের আয় মোটেও বাড়েনি। গ্রামের মানুষের নির্ধারিত কোনো আয়ও নেই। জমির ফসলের ওপর নির্ভর গ্রাম। ফসল ভালো হলেও অনেক সময় ন্যায্যদাম পায় না গ্রামের কৃষক। কমদামে তাদের কষ্টের ফসল তুলে দিতে হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। এখন ভোজ্য তেলের দামের কাছেই গ্রামের মানুষরা কাবু হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের দোহাই দিয়ে এখন প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। সব মানুষের ক্ষমতা নেই সব জিনিস ক্রয়ের। তিনি মনে করেন বর্তমান দেশের বাজার পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ব্যবসায়ীরা লোক বুঝে একেকজনের কাছে একেক রকম দামে পণ্য বিক্রি করছেন। এতে একেবারেই খেটে-খাওয়া শ্রেণির মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। সেই সঙ্গে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ চরম হতাশায় ভুগছেন। বাজার পরিস্থিতি এরকম থাকলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এক শ্রেণির চাকরিজীবীরাও বাজারের এমন টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। পরিবারের চাহিদা পূরণে ঘামতে হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। চলমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে  কাছে কষ্ট আর হতাশার কথা জানান নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এলাকার হাইস্কুল শিক্ষক আব্দুল বাসেদ বুলবুল। তিনি বলেন, অন্য যেকোনো চাকরিজীবীর তুলনায় শিক্ষকদের বেতন কম। মাসের অর্ধেক না যেতেই বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়। সারা মাস বিভিন্ন দোকানে বাকিতে জিনিস কিনে সংসার চালাতে হয়। বেতন সঠিক সময়ে না পেলে দোকানিরাও বাকি দেয়া বন্ধ করে দেয় অনেক সময়। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে শিক্ষক সমাজের। কোনো ভাবেই সামাল দেয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি। তিনি মনে করেন এরকম চলতে থাকলে শিক্ষকদের সবকিছু ছেড়ে মাঠে গিয়ে চাষাবাদ শুরু করতে হবে। বাজার পরিস্থিতি সরকার চাইলেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু আমরা কোনো সময়েই সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখছি না।

 

এদিকে সরকার টিসিবি’র পণ্য কম দামে দেয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সেই পণ্য চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। টিসিবি’র পণ্য কিনতে যাওয়াদের লম্বা লাইন দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় চলমান পরিস্থিতিকে। অনেক মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ লজ্জা লুকিয়ে টিসিবি’র পণ্য ক্রয়ের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন।

 

নিরুপায় মানুষ। চাল, ডাল, তেল, লবণ ও পিয়াজের দৃশ্যমান মূল্যবৃদ্ধির অন্তরালে বেড়েছে বাজারের প্রায় সব পণ্যের দাম। দশ টাকার লাল শাক বিক্রি হচ্ছে চল্লিশ টাকায়। বিশ টাকার বেগুন ষাট টাকা। দশ টাকার আলু এখন বিশ টাকা কেজি। বেড়েছে প্রত্যেক কনজুমার পণ্য। পেস্ট, শ্যাম্পু, সাবান, মাথার তেলের দামও। সব খানেই লাগামহীন। কোথাও সীমারেখা নেই। ইচ্ছেমতো সবাই সবার পণ্যের দাম বৃদ্ধির উন্মাতাল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। কেউ সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে না। মধ্যবিত্তের চিন্তা করছে না।

 

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় ক্লান্ত এক রিকশাচালক মহিদুল ইসলাম ডাবের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ডাব খাবেন ভাবছিলেন। কিছুক্ষণ ডাব বিক্রেতার সঙ্গে দামাদামি চললো রিকশাওয়ালার। একটি ডাবের দাম চাইলেন সত্তর টাকা। রিকশাচালক ভেবেছিলেন হয়তো ত্রিশ টাকা দাম হবে। কিছুক্ষণ দামাদামির পর ডাব না খেয়েই চলে গেলেন।

 

কিছুদিন আগেও শহরের অলিগলিতে ত্রিশ টাকায় ডাব পাওয়া যেতো। ইচ্ছে হলেই যে কেউ তৃষ্ণা মিটাতে একটি কচি ডাব খেতে পারতেন। বাজারের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডাবের দাম এখন সত্তর টাকা।
কয়েক দিন আগে বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের গেটে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি বানানোর দৃশ্য দেখছিলাম। রাস্তার ধারেই বেশ কয়েকটি দোকানে জিলাপি, খুরমা, নিমকিসহ মুখরোচক খাবার তৈরি করে বিক্রি করছে। রাস্তার ফুটপাথ দিয়ে কয়েকজন মহিলা এবং তাদের সঙ্গে চার/পাঁচ জন শিশু হেঁটে যাচ্ছিলো। বেশভূষায় মনে হলো তারা শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। কোথাও গায়ে গতরে খেটে বাসার দিকে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন। জিলাপির দোকান পার হতেই একটি শিশু দশ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে দোকানিকে বলছেন দশ টাকার জিলাপি দেন। দোকানি শিশুটির দিকে একবার তাকিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শিশুটি আবারো দশ টাকার জিলাপি চাইলেন। দোকানি বিরক্তির সুরে বলে দিলেন, দশ টাকায় জিলাপি পাওয়া যায় না। মা শিশুটির হাত ধরে টেনে নিয়ে আবারো হাঁটতে শুরু করলেন। আমি দূর থেকে এমন দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখলাম।

 

চলমান বাজার পরিস্থিতি দিন দিন যদি এভাবে উপরের দিকে উঠতে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ কোথায় যাবে? কীভাবে চলবে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। কি হবে সংসারের অবস্থা? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর অধরাই রয়ে যায় ।  সূূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» হত্যা মামলার ৬ পলাতক আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার

» সরকারের অব্যবস্থাপনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে: মির্জা ফখরুল

» উচ্ছেদ নিয়ে ব্যবসায়ীরা মিথ্যা বলছে : বঙ্গবাজার মালিক সমিতি

» বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দর্জির মৃত্যু

» তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল করার তৎপরতা চলছে: হানিফ

» মাদক কারবারিকে ধরে হামলার শিকার পুলিশ, ৮ ঘন্টা পর আবারও গ্রেফতার

» বঙ্গবাজারে দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযান চলছে

» লিটারে ১০ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

» উপজেলা নির্বাচন এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: ওবায়দুল কাদের

» পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বাজারে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে হাত

কখনো পিয়াজ, কাঁচামরিচ। কখনো চাল, লবণ, তেল। আতঙ্কের মধ্যে রাখে সব সময়। প্রতিনিয়তই বাজারের অস্থির মেজাজে সাধারণ মানুষ এখন মহা ভাবনায়। হাবুডুবু খাচ্ছে। তেলে বেগুনে। পেটের চাহিদা মিটাতে প্রতিদিন বাজারে গিয়ে হাত পুড়ছে মানুষ। যেখানেই হাত দেয় তাপে পুড়ে যায়।

সবাই বাজারের এই তাপ সহ্য করতে পারছেন না। জীবনের ওপর দিয়ে উঠেছে তাপ। জ্বলন্ত আগুনের তাপ যেখানে হার মেনেছে। তাপময় বাজার আর উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ কীভাবে চলছে সেই খোঁজ নিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। তারা কেমন আছেন জানতে চেয়েছিলাম। মোটা দাগে সবারই একই কথা লাগামহীন ঘোড়ার মতো লাফিয়ে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা।

 

কথা হয় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মথরপাড়া গ্রামের মোন্তাছির রহমানের সঙ্গে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে কেমন করে চলছে তার সংসার জানতে চেয়েছিলাম। দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে তার চলমান সময়ের সব কথা। জমিতে ধান চাষ হয় দুই মৌসুম। ধানের ওপর ভর করেই বছর চলে যায়। অন্য কোনো ফসল ওই এলাকায় খুব বেশি হয় না। ফলে ধান বিক্রি করেই সবজি কিনতে হয় তাদের। সংসারের অন্যান্য খরচও চালাতে হয় ধান বেচেই। মৌসুমের শুরুতে সিংহভাগ ধান বিক্রি করতে হয়। তখন একেবারেই কম দাম থাকে। তবুও অল্প দামেই বিক্রি করতে হয়। নানামুখী খরচের জোগান দিতে হয় ধান বিক্রির টাকা দিয়ে। গেল কয়েক বছর বাজারের টালমাটাল অবস্থায় অনেকটা দিশাহারা মোন্তাছির। সব কিছুতেই আগুন বরাবর দাম। কোথাও সহজে হাত দিতে পারছেন না তিনি। নাগালের বাইরে সবকিছু। সংসারের যাবতীয় খরচ তবুও করতে হচ্ছে। কষ্টে। নিরুপায় অনেকটা। বাজারের তাপে।

 

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সাংবাদিক আব্দুল বারী স্বপন। কথা হয় তার সঙ্গেও। চলমান বাজার পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের আয় এই দুইয়ের সমন্বয় কীভাবে করছে মানুষ? এক কথায় উত্তর দিলেন তিনি ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা’। মানুষের আয় মোটেও বাড়েনি। গ্রামের মানুষের নির্ধারিত কোনো আয়ও নেই। জমির ফসলের ওপর নির্ভর গ্রাম। ফসল ভালো হলেও অনেক সময় ন্যায্যদাম পায় না গ্রামের কৃষক। কমদামে তাদের কষ্টের ফসল তুলে দিতে হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। এখন ভোজ্য তেলের দামের কাছেই গ্রামের মানুষরা কাবু হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের দোহাই দিয়ে এখন প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। সব মানুষের ক্ষমতা নেই সব জিনিস ক্রয়ের। তিনি মনে করেন বর্তমান দেশের বাজার পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ব্যবসায়ীরা লোক বুঝে একেকজনের কাছে একেক রকম দামে পণ্য বিক্রি করছেন। এতে একেবারেই খেটে-খাওয়া শ্রেণির মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। সেই সঙ্গে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ চরম হতাশায় ভুগছেন। বাজার পরিস্থিতি এরকম থাকলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এক শ্রেণির চাকরিজীবীরাও বাজারের এমন টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। পরিবারের চাহিদা পূরণে ঘামতে হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। চলমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে  কাছে কষ্ট আর হতাশার কথা জানান নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এলাকার হাইস্কুল শিক্ষক আব্দুল বাসেদ বুলবুল। তিনি বলেন, অন্য যেকোনো চাকরিজীবীর তুলনায় শিক্ষকদের বেতন কম। মাসের অর্ধেক না যেতেই বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়। সারা মাস বিভিন্ন দোকানে বাকিতে জিনিস কিনে সংসার চালাতে হয়। বেতন সঠিক সময়ে না পেলে দোকানিরাও বাকি দেয়া বন্ধ করে দেয় অনেক সময়। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে শিক্ষক সমাজের। কোনো ভাবেই সামাল দেয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি। তিনি মনে করেন এরকম চলতে থাকলে শিক্ষকদের সবকিছু ছেড়ে মাঠে গিয়ে চাষাবাদ শুরু করতে হবে। বাজার পরিস্থিতি সরকার চাইলেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু আমরা কোনো সময়েই সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখছি না।

 

এদিকে সরকার টিসিবি’র পণ্য কম দামে দেয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সেই পণ্য চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। টিসিবি’র পণ্য কিনতে যাওয়াদের লম্বা লাইন দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় চলমান পরিস্থিতিকে। অনেক মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ লজ্জা লুকিয়ে টিসিবি’র পণ্য ক্রয়ের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন।

 

নিরুপায় মানুষ। চাল, ডাল, তেল, লবণ ও পিয়াজের দৃশ্যমান মূল্যবৃদ্ধির অন্তরালে বেড়েছে বাজারের প্রায় সব পণ্যের দাম। দশ টাকার লাল শাক বিক্রি হচ্ছে চল্লিশ টাকায়। বিশ টাকার বেগুন ষাট টাকা। দশ টাকার আলু এখন বিশ টাকা কেজি। বেড়েছে প্রত্যেক কনজুমার পণ্য। পেস্ট, শ্যাম্পু, সাবান, মাথার তেলের দামও। সব খানেই লাগামহীন। কোথাও সীমারেখা নেই। ইচ্ছেমতো সবাই সবার পণ্যের দাম বৃদ্ধির উন্মাতাল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। কেউ সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে না। মধ্যবিত্তের চিন্তা করছে না।

 

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় ক্লান্ত এক রিকশাচালক মহিদুল ইসলাম ডাবের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ডাব খাবেন ভাবছিলেন। কিছুক্ষণ ডাব বিক্রেতার সঙ্গে দামাদামি চললো রিকশাওয়ালার। একটি ডাবের দাম চাইলেন সত্তর টাকা। রিকশাচালক ভেবেছিলেন হয়তো ত্রিশ টাকা দাম হবে। কিছুক্ষণ দামাদামির পর ডাব না খেয়েই চলে গেলেন।

 

কিছুদিন আগেও শহরের অলিগলিতে ত্রিশ টাকায় ডাব পাওয়া যেতো। ইচ্ছে হলেই যে কেউ তৃষ্ণা মিটাতে একটি কচি ডাব খেতে পারতেন। বাজারের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডাবের দাম এখন সত্তর টাকা।
কয়েক দিন আগে বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের গেটে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি বানানোর দৃশ্য দেখছিলাম। রাস্তার ধারেই বেশ কয়েকটি দোকানে জিলাপি, খুরমা, নিমকিসহ মুখরোচক খাবার তৈরি করে বিক্রি করছে। রাস্তার ফুটপাথ দিয়ে কয়েকজন মহিলা এবং তাদের সঙ্গে চার/পাঁচ জন শিশু হেঁটে যাচ্ছিলো। বেশভূষায় মনে হলো তারা শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। কোথাও গায়ে গতরে খেটে বাসার দিকে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন। জিলাপির দোকান পার হতেই একটি শিশু দশ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে দোকানিকে বলছেন দশ টাকার জিলাপি দেন। দোকানি শিশুটির দিকে একবার তাকিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শিশুটি আবারো দশ টাকার জিলাপি চাইলেন। দোকানি বিরক্তির সুরে বলে দিলেন, দশ টাকায় জিলাপি পাওয়া যায় না। মা শিশুটির হাত ধরে টেনে নিয়ে আবারো হাঁটতে শুরু করলেন। আমি দূর থেকে এমন দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখলাম।

 

চলমান বাজার পরিস্থিতি দিন দিন যদি এভাবে উপরের দিকে উঠতে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ কোথায় যাবে? কীভাবে চলবে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। কি হবে সংসারের অবস্থা? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর অধরাই রয়ে যায় ।  সূূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com